()()() আসুন আমরা আমাদের অবস্থানটা যাচাই করে নিই;-()()()
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ১৭ নভেম্বর, ২০১৫, ০৯:৪৩:৫২ সকাল
أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ فَمَا جَزَاء مَن يَفْعَلُ ذَلِكَ مِنكُمْ إِلاَّ خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَى أَشَدِّ الْعَذَابِ وَمَا اللّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ
আয়াতটি সুরা বাক্বারার ৮৫ নং আয়াত হতে নেয়া হয়েছে৷ অর্থ;-তবেকি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর (মেনে চল) আর বাকী অংশ অস্বীকার কর৷তোমাদের মধ্যে যারা এ রূপ করে, পার্থিব জীবনে তাদের দূর্গতি ছাড়া পথ নেই এবং কেয়ামতের দিন কঠোরতর শাস্তির দিকে তাদের নিক্ষেপ করা হবে৷ তোমরা যা কর আল্লাহ সে বিষয়ে বে-খবর নন৷
আমরা জানি ইবাদতের মূল অংশ ইতায়াত বা আনুগত্য যার সাথে মুহব্বত মিশে আছে৷ এবংতা অবশ্যই পূর্ণাঙ্গ হতে হবে, আংশীক আনুগত্য আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য নয়৷তাই আল্লাহর আদেশ নিষেধ, বীধি বিধানও আংশিক গ্রহণযোগ্য নয়৷ তাই উরের আয়াতে যারা আল্লাহর কিতাবের কিছু বিধান মানে আর কিছু মানে না বা আমলে আনেনা তাদের প্রপ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, দুনিয়ায় তাদের জন্য রয়েছে দূর্গতি,তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য,অপদস্থতা৷ এখানেই শেষ নয়৷ কেয়ামতেও তাদের জন্য নিকৃষ্টতর আজাব অপেক্ষা করছে৷
এ আয়াত ছাড়াও সুা মায়েদার ৭ম রুকুর ৪৪,৪৫ও ৪৭ আয়াতের শেষে বলা হয়েছে যে, যারা আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী ফায়সালা করেনা তারা কাফের, জালিম, ফাসেক৷
আজ আল্লাহর দুনিয়ার এমন কোন ভূখণ্ড নেই যেখানে তার কিতাবের আইন পূরোপুরি মানা হচ্ছে৷ সেইসঙ্গে এও বলাযেতে পারে যেখানে যত রক্ত ঝরছে তা মুসলমানের৷ কারণটা কি ভেবে দেখার বিষয় নয়? মনে রাখুন আমাদের অবস্থান কোথায়৷
وَإِن تُطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ لَا يَلِتْكُم مِّنْ أَعْمَالِكُمْ شَيْئًا إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
এটি সুরা হুজরাতের ১৪ নং আয়াতের দ্বিতীয়াংশ৷ এ টুকুর অর্থ হচ্ছে, আর যদি তোমরা আল্লাহ ও তার রসুলের আনুগত্য কর তবে তোমাদের কর্ম সমুহ থেকে একটুও কম করবেন না৷ নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু৷
মুমিন না হলেও বেদুইনরা মুসলীম হয়েছিল৷ এ আশ্বাস প্রকৃত পক্ষে তাদের দেওয়া হলেও তা প্রত্যেকের জন্যই প্রযোজ্য৷ মুসলীম অবস্থায়ও যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আনুগত্য করবে, তাদের আমলের উচিৎ পাওনা তাদের দিয়ে দেওয়া হবে৷ তাতে কোন কম বেশী করা হবে না৷ কারণ হিসেবে বলা হয়েছে আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু৷
এই অবস্থার প্রক্ষাপটে বলতে হয় যে, মক্কায় যারা ইমানের ঘোষণা দিত, তারা জেনে বুঝেই দিত যে, পরক্ষনেই তার উপর জুলুম অত্যাচার অবধারিত৷আর তার জন্য কোন প্রতিবাদ প্রতিরোধ, সুপারিশ চলবে না৷ সত্য তাদের অন্তরে প্র্রকাশ হলেই মহুর্ত দেরী না করেই তারা শাহাদাহ গ্রহণ করত৷ এখানে ছিল আগে ইমান আর পরে ইসলাম৷ ইমান সাথে সাথেই তাদের অন্তরে গেঁথে যেত৷ মক্কার মুমিনদের জন্য এমন কোন আয়াত আসেনি৷ এই সঙ্গে আরও বলা যায় মক্কায় কোন মুনাফেকও ছিলনা৷ কিন্তু মদীনার প্রেক্ষাপট ভিন্ন৷ সেখানে ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া৷ মুমিন মুসলীম ও মুনাফেক সব রকমই ছিল৷ পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে;-
‘ইজা জা-আ নাসরুল্লাহে ওাল ফাতহু, ওয়া রাআইতান্নাসা ইয়াদ খুলুনা ফি দ্বীনিল্লাহে আফওয়াজা৷’-----৷ অর্থ, যখন আল্লাহর সাহায্য এসে যাব, দেখবে মানুষ দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করছে৷
এই দলে দলে যখন মানুষ ইসলামে প্রবেশ করল, তারাই হল মুসলীম, মুমিন নয়৷ তাদের জন্যই নাজিল হল সুরা হুজরাতের ১৪ নং আয়তটি৷ আর এ দলেই ছিল মুনাফেকও, যারা ধোঁকা দেবার জন্যই ইমান এনেছিল৷
আবারও ফিরে আসি নিজেদের কথায়৷ আমরাকি বিচার-বিবেচনা, চিন্তা-ভাবনা করে মুসলমান হয়েছি? মোটেও নয়, বরং মদীনার যারা দলে দলে ইমান এনেছিল তাদের শ্রেনীতেও পড়িনা৷ আমরা মুসলীম ঘটনা চক্রে৷ জন্মের অবস্থানের কারণে বা উত্তরাধীকার সূত্রে৷ এ প্রক্রিয়ায় ইসলাম পাওয়া যায়, ইমান পাওয়া যায়না৷ বেদুঈনদের মত আমাদের অন্তরেও ইমান বাসা বাঁধতে পারেনি৷
স্মরণ করুন, ইমান দুই রকমের, একটি কানুনী ইমান যা কলেমা উচ্চারণের দ্বারা অর্জিত হয়, এটি ইসলামের সমান সমান৷ অন্যটি হাক্বিকী বা প্রকৃত ইমান, যার থাকবে আখেরাতে তাকে মুমিন মানা হবে৷ প্রকৃত ইমানের সংজ্ঞা আগে দেওয়া হয়েছে, আসুন তাতে নিজেদের ফিট করার চেষ্টা করি৷
সুরা মায়ীদার ৬৮ আয়াতে বলা হয়েছে-
৬৮/قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لَسْتُمْ عَلَى شَيْءٍ حَتَّىَ تُقِيمُواْ التَّوْرَاةَ وَالإِنجِيلَ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلَيَزِيدَنَّ كَثِيرًا مِّنْهُم مَّا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ طُغْيَانًا وَكُفْرًا فَلاَ تَأْسَ عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
অর্থাৎ;-বলেদিন, হে আহলে কিতাবগন, তোমাদের কোন ভিত্তি নেই, যতক্ষন না তোমরা পুরোপরি পালন করবে, তওরাত, ইঞ্জিল ও তোমাদের রবের পক্ষ হতে যা নাজিল করা হয়েছে তা। আপনার প্রতি আপনার রবের তরফ থেকে যা নাজিল করা হয়েছে তা অনেকের অবাধ্যতা ও কুফরী বৃদ্ধি করবে। অতএব কাফের সম্প্রদায়ের জন্য দুঃখ করবেন না।
এ আয়াতে আহলে কিতাবদের অবস্থানের কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, তারা যতক্ষন না তওরাত, ইঞ্জিল সহ অন্যান্ন নাজিল কৃত কিতাব যথা যত পালন করবে, ততক্ষন তারা কোন পদেই নেই। অর্থাৎ ধর্মের কোন অবস্থানেই তারা নেই।
যদিও আয়াতটি আহলে কিতাবদের জন্য কিন্তু আল্লাহর সুন্নতের বদল হয়না তাই যদি তাওরাত ও ইঞ্জীলের যায়গায় কোরআন শব্দটি বসানো হয় তাহলে আমরা যে এর শিকার তা পরিষ্কার৷ অবশ্য এ আয়াতের তাফসীরে একটি হাদিশের উল্লেখ আছে যাতে বলা হয়েছে, ‘হে মুসলীমগণ, তোমরা কোরআনকে বালিশের মত পিছনে ফেলে রেখো না, উপকার হাসিল করো৷’
আরও প্রমান রয়েছে আবু হুরাইরা রাঃ বর্ণীত হাদীশে, যার সংক্ষেপ হল;-ইমান সাথে থাকলে জেনা হবেনা, ইমান থাকা অবস্থায় চুরি হবেনা, ইমান থাকা অবস্থায় মদ্যপান হবেনা৷ অথচ আমাদের চারিপাশে অহরহ তা হয়ে চলেছে, সরা সরি অনেকেই জড়িত না হলেও মৌন সম্মতি দিয়ে চলছি, প্রতিবাদ না করে৷
আসুন একটি সমীকরণের দ্বারা আমরা আমাদের অবস্থান নির্ণয় করি;-একটা বিন্দু বা জিরো কল্পনা করুন৷ যার ডানদিকে প্লাস ও বাম দিকে মাইনাস৷ ডানদিকে এগুতে থাকলে,
মুমিন+মুত্তাকী+মুহসীন+++ইনফাইনিটিতে হজরত আবু বকর রাঃ৷ এবার বামে চলুন-মুনাফেক---ইনফাইনিটিতে পাবেন আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই৷ কল্পিত ঐ জিরোটিই আমাদের মত মুসলীম৷ কারণ যেমন আমরা মুমিন হতে পারিনি, তেমনই মাশাআল্লাহ মুনাফেকও নই৷ আমাদের আইনী ইমান আছে, আমরা নামাজ রোজা, জাকাত, হজ্জ করি৷
আশার কথা এই যে উপরে উল্লেখিত সুরা হুজরাতের ১৪ নং আয়াতের শেষটুকু আমাদের জন্যই৷
বলা হয়েছে যে;-
, “আর যদি তোমরা আল্লাহ ও তার রসুলের আনুগত্য কর তবে তোমাদের কর্ম সমুহ থেকে একটুও কম করবেন না৷ নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু৷”
এ টুকু পেতে হলে আসুন আমরা নিজ নফসের আনুগত্য না করে আল্লাহ ও তার রসুলের পূ্র্ণ আনুগত্য করি৷
রসুল সঃ বলেছেন যে, আমি তোমাদের পাঁচটি বিষয়ের হুকুম দিচ্ছি যা আল্লাহ আমাকে আদেশ করেছেন৷ যদিও রসুলের আদেশই তাঁর উম্তের জন্য যথেষ্ট৷ বিষয় পাঁচটি হল, ‘বিল জামাতে, ওয়াস্সাময়ে, ওয়াত্তায়াতে, ওয়াল হিজরতে, ওয়াল জিহাদে৷’ (হজরত আবু আশয়ারী রাঃ তিরমিজী)
জামাত;-জাামাত বদ্ধ হয়ে থাকবে৷ যদি দুজন নামাজ পড় তবে জামাতে পড়বে৷ জামাত বদ্ধ হতে খোঁজ করুন এমন জামাত যাদের একমাত্র লক্ষ আল্লাহর দ্বীন কায়েম করা৷ সেখানে থাকবেনা আপন স্বার্থ ও ক্ষমতার লোভ বা অহংবোধ৷ এমন জামাত অমিল হলে নিজেই ময়দানে নেমে ডাক দিন, ‘মান আনসারী ইলাল্লাহ’৷
ওয়াস্সাময়ে;-যেখানে থাকবে নিয়মানুবর্তিতা,শৃঙ্খলা, সেনা বাহিনীর মত৷
ওয়াত্তায়াতে;-থাকবে দলীয় আনুগত্য৷ কেউ কাউকে ল্যাং মারার কল্পনাও করবে না৷ আমীরের কথা বিনা বাক্যব্যায়ে মেনে নেবে যদি তা শরিয়ত বিরোধী না হয়৷৷
ওয়াল হিজরাতে;-নিজ দেশে যদি আল্লাহর দ্বীন আচরণে বাধা থাকে তবে সুবিধামত দেশে হিজরত করতে হবে৷ দুনিয়ার বর্তমান অবস্থায় এমন কোন ভূখণ্ড নেই যেখানে আল্লাহর দ্বীন পূর্ণাঙ্গ কায়েম আছে৷ কোন হিজরত সব চাইতে উত্তম প্রশ্ন করা হলে রসুল সঃ বলেন যে, যে বিষয়গুলি আল্লাহ পছন্দ করেননা তা ত্যাগ করা৷
ওয়াল জিহাদে;-জিহাদের কথা আগে বলা হয়েছে৷ তবে শ্রেষ্ঠ জিহাদ হল প্রয়োজনে জীবন হাতে নিয়ে ময়দানের জিহাদে শামিল হওয়া৷
আসুন আমরা খন্দকের সাহাবী রাঃ দের মত কোরাস গাই;-নাহনুল্লাজিনা বা-ইয়ায়ু মোহাম্মাদা সঃ আলাল জিহাদে মা বাকীনা আবাদা৷
বিষয়: বিবিধ
১১৫৬ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সত্যিই বলেছেন, মুসলিমদের রক্তে রঞ্জিত বিশ্ব। তাই ভেবে দেখার সময় এসেছে। অবশ্যই সবই মুসলমানদের হাতের কামাই। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমীন।
জাযাকাল্লাহ খাইর
জাজাকাল্লাহ খায়ের চাচাজান ।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন