@@ "ইউসুফ ও তার ভাইদের কাহিনীতে জিজ্ঞাসুদের জন্য নিদর্শণাবলী রয়েছে"৷@@
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ২৯ অক্টোবর, ২০১৫, ০১:২২:৫৯ রাত
(বয়ানুল কোরআনের ধারাবাহিক বাংলা অনুবাদ)
সুরা ইউসুফ রুকু;-২ আয়াত;-৭-২০
প্রশ্নকারীদের প্রশ্নের উত্তর নিয়েই শুরু হচ্ছে এ রুকুটি;-
৭/لَّقَدْ كَانَ فِي يُوسُفَ وَإِخْوَتِهِ آيَاتٌ لِّلسَّائِلِينَ
অর্থ;-ইউসুফ ও তার ভাইদের কাহিনীতে জিজ্ঞাসুদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে৷
# মদীনার সংশয়াতংক গ্রস্থ ইহুদী ওলামা গন মিশরে বণী ইস্রাঈল গন কি ভাবে এল তা রসুল সঃ এর কাছে লোক মারফত প্রশ্ন পাঠিয়ে ছিল৷ তারই উওরে আল্লাহ এ সুরা নাজিল করেন৷ এ আয়াতে তাই বলা হয়েছে, তাদের জন্য ইউসুফ আঃ ও তার হিংসুক ও ষড়যন্ত্র কারী ভাইদের আচরণে যথেষ্ট নিদর্শন রয়েছে৷
৮/إِذْ قَالُواْ لَيُوسُفُ وَأَخُوهُ أَحَبُّ إِلَى أَبِينَا مِنَّا وَنَحْنُ عُصْبَةٌ إِنَّ أَبَانَا لَفِي ضَلاَلٍ مُّبِينٍ
অর্থ;-যখন তারা বলল, অবশ্যই ইউসুফ ও তার ভাই আমাদের পিতার কাছে আমাদের চাইতে বেশী প্রীয় অথচ আমরা একটি সংহত শক্তি৷ নিশ্চয় আমাদের পিতা প্রকাশ্য ভ্রান্তির মধ্যে রয়েছেন৷
# যাযাবর গোত্রীয় সমাজ ব্যবস্থায় বাহুবলের বিশেষ স্থান আছে৷ হজরত ইয়াকুব আঃ এর প্রথমা স্ত্রীর দশটি পুত্র৷ বয়স ও শক্তি সামর্থে বেশ পরিপক্ক৷ আর দ্বিতীয়া স্ত্রীর দুই পুত্র, মাতৃ হারা ইউসুফ ও বেনইয়ামীন বালক মাত্র৷ ইয়াকুব আঃ তাঁর উপযুক্ত বলিষ্ঠ দশ পুত্র অপেক্ষা সৎ নম্র বালক ইউসুফকেই বেশী পছন্দ করতেন৷ যা সংহত শক্তির বড় ভাইদের গাত্রদাহের কারণ হয়৷ তাই তারা তাদের পিতাকে বিভ্রান্ত বলে মত প্রকাশ করে৷
৯/اقْتُلُواْ يُوسُفَ أَوِ اطْرَحُوهُ أَرْضًا يَخْلُ لَكُمْ وَجْهُ أَبِيكُمْ وَتَكُونُواْ مِن بَعْدِهِ قَوْمًا صَالِحِينَ
অর্থ;-ইউসুফকে হত্যা কর অথবা দূরে কোন স্থানে ফেলে এস৷ তোমাদের পিতার মনোযোগ তোমাদের দিকে নিয়ে এস, তার পর তোমরা সৎ হয়ে যেও৷
# একভাই অন্যদের প্রস্তাব দিল যে তোমরা ইউসুফকে মেরে ফেলো নয়তো দূর কোন জায়গায় ছেড়ে এস, তাহলে আমাদের আব্বার মনোযোগ আমাদের দিকে চলে আসবে৷ যদি এ কাজকে অন্যায় বলে মনে কর তবে, এ কাজ করার পরে ভাল হয়ে যেও৷ অর্থাৎ তওবা করে নিও৷
১০/قَالَ قَآئِلٌ مَّنْهُمْ لاَ تَقْتُلُواْ يُوسُفَ وَأَلْقُوهُ فِي غَيَابَةِ الْجُبِّ يَلْتَقِطْهُ بَعْضُ السَّيَّارَةِ إِن كُنتُمْ فَاعِلِينَ
অর্থ;-হত্যাকারীদের একজন বলল; ইউসুফকে হত্যা কোরনা বরং তাকে কোন কূপের বাউলী তে রেখে এস৷ (বাউলী হল এমন কূপ যার পানির স্তরের পাশেই ঘাট বা তাক থাকতো, যাতে কেউ কূপে পড়ে গেলেও সেখানে নিরাপদে থাকতে পারতো) যাতে কোন পথিক তাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়, যদি তোমরা করতেই চাও৷
# তাদের বড় ভাই, ইয়াহুদা কিছুটা ভাল প্রকৃতির, ইহুদী শব্দটি তারই নামানুসারে হয়েছে৷ সে পরামর্শ দিল ইউসুফকে জানে না মেরে কোন কূয়ায় ফেলে দিতে৷ তাতে করে কোন কাফেলা তাকে পেয়ে দূর দেশে নিয়ে চলে যাবে৷ তোমরা যা করতে চাচ্ছ তা করা হবে হয়ে যাবে৷
১১/قَالُواْ يَا أَبَانَا مَا لَكَ لاَ تَأْمَنَّا عَلَى يُوسُفَ وَإِنَّا لَهُ لَنَاصِحُونَ
অর্থ;-তারা বলল; হে আমাদের আব্বা, আপনার কি হয়েছে যে, আপনি ইউসুফের ব্যাপারে আপনি আমাদের বিশ্বাস করেন না৷ অথচ আমরাতো তার হিতাকাঙ্খী!
# ইয়াকুব আঃ তাঁর সন্তানদের ভালই জানতেন৷ তারাযে ইউসুফকে সহ্য করতে পারেনা তাও জানতেন৷ তাই বড়রা যখন জীবিকার জন্য মাঠে জঙ্গলে যেত তাদের সাথে ইউসুফ আঃ কে পাঠাতেন না৷ অথচ তাদের ষড়যন্ত্র কার্যকরি করতে ইউসুফকে বাইরে নিতেই হয়৷ তাই এ ছলনা৷
১২/أَرْسِلْهُ مَعَنَا غَدًا يَرْتَعْ وَيَلْعَبْ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
অর্থ;-আগামীকাল তাকে আমাদের সাথে পাঠাবেন, তৃপ্তি সহ খাবে ও খেলাধুলা করবে আর আমরা অবশ্যই তার হেফাজত করব৷
১৩/قَالَ إِنِّي لَيَحْزُنُنِي أَن تَذْهَبُواْ بِهِ وَأَخَافُ أَن يَأْكُلَهُ الذِّئْبُ وَأَنتُمْ عَنْهُ غَافِلُونَ
অর্থ;-তিনি বললেন, অবশ্যই আমি এ ব্যাপারে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ যে, তোমরা তাকে নিয়ে যাবে আর আমি আশংকা করি যে তোমরা তার থেকে অমনোযোগী হলে নেকড়ে তাকে খেয়ে ফেলবে৷
১৪/قَالُواْ لَئِنْ أَكَلَهُ الذِّئْبُ وَنَحْنُ عُصْبَةٌ إِنَّا إِذًا لَّخَاسِرُونَ
অর্থ;-তারা বলল; আমরা একটি সংহত দল থাকা সত্বেও যদি নেকড়ে তাকে খেয়ে ফেলে তবেতো আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্থ হব৷
# বাপের কথা শুনে তারা আবারও ছলনার আশ্রয় নিল আর জানাল, আমরা এত বলিষ্ঠ দশ ভাই যেখানে আছি সেখানে তাকে যদি বাঘে খায় তবে তা হবে তাদের সবার বিরাট পরাজয়৷
১৫/فَلَمَّا ذَهَبُواْ بِهِ وَأَجْمَعُواْ أَن يَجْعَلُوهُ فِي غَيَابَةِ الْجُبِّ وَأَوْحَيْنَآ إِلَيْهِ لَتُنَبِّئَنَّهُم بِأَمْرِهِمْ هَـذَا وَهُمْ لاَ يَشْعُرُونَ
অর্থ;-তার পর তারা যখন তাকে সাথে নিয়ে গেল এবং তাকে কূপে নিক্ষেপ করতে একমত হল, তখন আমি (আল্লাহ) তাকে ইঙ্গিতে জানিয়ে দিলাম, ‘অবশ্যই তুমি তাদেরকে তাদের এ কাজের কথা বলবে, অথচ তারা তখন তোমাকে চিনতে পারবে না৷’
# তাদের ষড়যন্ত্র কার্যকরী হল কিন্তু আল্লাহ তায়ালা ইউসুফ আঃ কে ইলহামের দ্বারা জানিয়ে দিলেন যে, এমন একদিন আসবে যখন ইউসুফ আঃ তার ভাইদের এ কূ কর্মের কথা মনে করাবেন আর তারা সে সময়ে ইউসুফকে চিনতেও পারবে না৷ আয়াতে ‘ওহী’ শব্দটি এসেছে কিন্ত তখনও তিনি নবুয়ত পাবার উপযুক্ত বয়স পাননি, তাই একে ইলহাম বলা হয়েছে৷
১৬/وَجَاؤُواْ أَبَاهُمْ عِشَاء يَبْكُونَ
অর্থ;-আর তারা রাতের বেলায় তাদের পিতার কাছে কাঁদতে কাঁদতে এল৷
১৭/قَالُواْ يَا أَبَانَا إِنَّا ذَهَبْنَا نَسْتَبِقُ وَتَرَكْنَا يُوسُفَ عِندَ مَتَاعِنَا فَأَكَلَهُ الذِّئْبُ وَمَا أَنتَ بِمُؤْمِنٍ لِّنَا وَلَوْ كُنَّا صَادِقِينَ
অর্থ;-তারা বলল; হে আমাদের আব্বা, আমরা দৌড় প্রতিযোগিতা করছিলাম এবং ইউসুফকে আমাদের জিনিষ পত্রের কাছে রেখে গিয়ে ছিলাম, তার পর তাকে নেকড়ে খেয়ে ফেলেছে; কিন্তু আপনি তো আমাদের কথা বিশ্বাস করবেন না; যদিও আমরা সত্যবাদী৷
১৮/وَجَآؤُوا عَلَى قَمِيصِهِ بِدَمٍ كَذِبٍ قَالَ بَلْ سَوَّلَتْ لَكُمْ أَنفُسُكُمْ أَمْرًا فَصَبْرٌ جَمِيلٌ وَاللّهُ الْمُسْتَعَانُ عَلَى مَا تَصِفُونَ
অর্থ;-তারা তার জামায় কৃত্রিম রক্ত লাগিয়ে নিয়ে এল৷ তিনি (ইয়াকুব আঃ) বললেন; বরং তোমাদের মন তোমাদের একটা গল্প সাজিয়ে দিয়েছে, অতএব, পূর্ণ ধৈর্যধারণ করাই শ্রেয়ঃ৷ তোমাদের বর্ণনায় একমাত্র আল্লাহই আমার আশ্রয় স্থল৷
# তারা জানত যে ইউসুফ মারা যাবে না কিন্ত বাপের কাছে বিশ্বস্থ হবার জন্য তার জামা কাপড়ে কিছু রক্ত মাখিয়ে নিয়ে এসে মিথ্যা গল্প ফেঁদে বসল৷ অসহায় বৃদ্ধ বাপ ইউসুফের প্রানহানী বিশ্বাস না করলেও ছেলেদের কাছে পরাজয় মেনেই আল্লাহর উপর ভরসা করে ধৈর্য ধারণ করার সিদ্ধান্ত নিলেন৷
১৯/وَجَاءتْ سَيَّارَةٌ فَأَرْسَلُواْ وَارِدَهُمْ فَأَدْلَى دَلْوَهُ قَالَ يَا بُشْرَى هَـذَا غُلاَمٌ وَأَسَرُّوهُ بِضَاعَةً وَاللّهُ عَلِيمٌ بِمَا يَعْمَلُونَ
অর্থ;-যখন একটি কাফেলা এল৷ অতঃপর তারা তাদের পানি সংগ্রাহককে পাঠালো৷ সে তার ডোল (বালতি) নামালো, বলল; কি আনন্দ! এযে একটি কিশোর! আর তারা তাকে পণ্যরূপে গোপন করে রাখলো৷
২০/وَشَرَوْهُ بِثَمَنٍ بَخْسٍ دَرَاهِمَ مَعْدُودَةٍ وَكَانُواْ فِيهِ مِنَ الزَّاهِدِينَ
অর্থ;-তারা তাকে অল্পমূল্যে, হাতে গনা কয়েকটি দিরহামের বদলে বেচে দিল৷ আর তারা ছিল তাদের ব্যাপারে নিরাসক্ত৷
# বালক ইউসুফ আঃ কত সময় ঐ অন্ধকূপে ছিলেন তা আল্লাহই জানেন৷ এক সময় ঐ পথে এক বানিজ্য কাফেলা মিশর যাচ্ছিল৷ এমন কাফেলা বিশ্রামের জন্য পানি আছে এমন যায়গায় ঘাঁটি গাড়তো৷ আর কাফেলায় বিভিন্ন লোককে বিভিন্ন দায়িত্ব দেওয়া হত৷ যার উপর পানি সংগ্রহের দায়িত্ব ছিল সে, ঐ কূয়ায় পানির আশায় তার বালতি নামাল আর ইউসুফ আঃ তা ধরে বসলেন৷ পানি ভেবে যখন বালতি উপরে এল, গ্রাহক চিৎকার দিয়ে উঠলো, ভয়ে নয় আনন্দে৷ কারণ তখন মানুষ কেনা বেচা হত৷ বিনা চালানে পণ্য পাওয়ার আনন্দে৷ আর যাতে তার দাবীদার কেউ এসে দেখে ফেলে না ফেরত নিতে পারে, তার জন্য তাকে গোপন করে রাখলো৷ যেহেতু বিনা চালান আর ফেরতের ভয় ছিল তাই তারা মিশর পৌঁছে, যা পাই তাই ভাল মনে করে অল্প দামেই তাকে বেচে দিল৷ কিশোরটিকে, তারে দিয়ে ভবিষ্যতে আরও ভাল কিছূ হতে পারে এসব চিন্তা তাদের ছিলনা৷
বিষয়: বিবিধ
১২১৮ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনুবাদটির ভাষা খুব সরল যা সহজেই পাঠকের মন কে আকৃষ্ট করে তোলে, সাথের ছোট ব্যাখ্যা পড়ে সুন্দর ভাবে অধ্যয়ন করা সম্ভব হয়।
এই সূরাটি যত অধ্যয়ন করি তত ভালো লাগে, নৈতিকতার শিক্ষায় পরিপূর্ণ সূরাটি ।
আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান করুণ।শুকরিয়া
কুরানিক তাফসির উপস্হাপনায় জাযাকুমুল্লাহু খাইর মুহতারাম!
সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন কোরআনকে
মন্তব্য করতে লগইন করুন