{}{}{}{}{ "তিনি বললেন, হে বৎস, তোমার এ স্বপ্ন তোমার ভাইদের কাছে বর্ণনা কোরনা, তা হলে তারা তোমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে"৷}{}{}{}{}
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ২২ অক্টোবর, ২০১৫, ০৮:০৯:১৮ রাত
(উর্দু বয়ানুল কোরআনের ধারাবাহিক বাংলা অনুবাদ)
(১২) সুরা ইউসুফ (মক্কী) রুকু সংখ্যা;-১২ আয়াত;-১১১
১৪ টি মক্কী সুরার গ্রুপের প্রতি তিনটি সুরার সাব গ্রুপের পথমটির এটি তৃতীয় সুরা৷ প্রথম দুটি ছিল জোড়ায় আর এটি সম্পুর্ণ আলাদা৷ পবিত্র কোরআনে এ সুরাটি ভিন্ন আঙ্গীকে বর্ণনা হয়েছে৷ এ এযাবৎ আমরা ‘আম্বাউ রুসুল’ নিয়মে রসুলগনের কথা পড়ে এসেছি, যদিও তার মাঝে সুরা ‘আনআম’ ও সুরা ‘হুদ’ এ হজরত ইব্রাহীম আঃ এর কিছু আলোচনা যা ‘কাসাসুন নাবিঈন’ নিয়মে পেয়েছি৷ এ সুরাটি সেই কাসাসুন নাবিঈন নিয়মেই এসেছে এবং পুরো সুরাটাতে মাত্র একজন নবী, হজরত ইউসুফ আঃ এর আলোচনায় সীমাবদ্ধ হয়েছে৷
রসুল ও নবী এ দুয়ের মাঝের মৌলিক পার্থক্যটিও এ সুরায় বোঝা যাবে৷ একজন নবীকে যখন রসুল হিসেবে কোন কওমে মনোনিত করা হয়েছে, তিনি প্রথমেই ঘোষনা দিয়েছেন, ‘আল্লাহর উপর ইমান আনো, তার ইবাদত করো আর আমার আনুগত্য কর, অন্যথায় আজাব আসবে’৷ এ সুরায় তেমন কিছুই নাই৷
আল্লাহর পথে অধিক অগ্রগামী ওলী আওলীয়াদের যাঁকে আল্লাহ ওহী দিয়েছেন তিনিই নবীর মর্যাদা পেয়েছেন৷ এই সূত্রে বনী ইস্রাঈলে অনেক নবী এসেছেন৷ মহানবী সঃ এর পর যেহেতু ওহীর পথ বন্ধ তাই অনেক ওলী আউলিয়া এসেছেন কিন্তু কোন নবী আসেন নি৷
আগেই বলা হয়েছে, এ গ্রুরুপের সুরা গুলি রসুল সঃ এর মক্কী জীবনের শেষের চার বছরে নাজিল হয়েছে৷ ইতিমধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে রসুল সঃ মদীনায় আলোচিত হচ্ছেন৷ ইহুদী ওলামাদের জানা ছিল শেষ নবী আসবেন, সে সঙ্গে তাদের দৃঢ় ধারনা ছিল, তাদেরই বনী ইস্রাঈল বংশেই আসবেন৷ কিন্তু তিনি এসেছেন এবং তা বনী ইসমাঈল বংশে৷ এটা তাদের কাছে হিংসাও সংশয়ের বিষয় হয়ে ওঠে৷ তাই তারাও নবী সঃ কে পরখ করার জন্য মাঝে মাঝে লোক মারফত বিভিন্ন প্রশ্ন করে পাঠাত৷ এখানের প্রশ্নটি ছিল, ইব্রাহীম আঃ ইরাক থেকে হিজরত করে ইস্রাঈলে এসে বসতি গড়েন৷ তার বংশধরেরা সেখানেই ছিল, কিভাবে তারা মিশরে গিয়ে আস্তানা গাড়ল? এমনই এক প্রশ্নের জবাবে আল্লাহ এ সুরাটি নাজিল করেন, যার ইশারা আয়াত নং ৭ এ পাওয়া যাবে৷
সুরা ইউসুফ রুকু;-১ আয়াত;-১-৬
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
অর্থ;-পরম করুনাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি৷
১/الر تِلْكَ آيَاتُ الْكِتَابِ الْمُبِينِ
অর্থ;-‘আলিফ’ ‘লাম’ ‘রা’ এ গুলি সুস্পষ্ঠ গ্রন্থের আয়াত৷
২/إِنَّا أَنزَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
অর্থ;-আমিই একে আরবী ভাষায় কোরআন রূপে নাজিল করেছি যাতে তোমরা বুঝতে পার৷৷
# একে বলতে বোঝানো হয়েছে, ‘লওহে মাহফুজে’ অতি পবিত্র ফেরেশ্তাদের তত্ববধানে রক্ষিত সেই কিতাবকে বলা হয়েছে৷ তাকেই আরবী ভাষায় পাঠানো হয়ছে একারণে যে, যাদের কাছে পাঠানো হচ্ছে আর যার কাছে একে বোঝাবার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে উভয়ের ভাষাই আরবী৷ অতএব বোঝার শুবিধা বিবেচনায় রেখেই পাঠানো হয়েছে৷
৩/نَحْنُ نَقُصُّ عَلَيْكَ أَحْسَنَ الْقَصَصِ بِمَا أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ هَـذَا الْقُرْآنَ وَإِن كُنتَ مِن قَبْلِهِ لَمِنَ الْغَافِلِينَ
অর্থ;-আমি আপনার কাছে অতি উত্তম ঘটনা বর্ণনা করছি, ওহী যোগে (এ কোরআন) প্রেরণ করে৷ যদিও আপনি এর আগে এ ব্যাপারে অনবহিতদের শামিল ছিলেন৷
# ‘ক্বেসাস’ মানে বর্ণনা আর ‘ক্বাসাস’ মানে ঘটনা৷ ঘটনা তা যা ঘটে বাস্তবে৷ তাই এই বাস্তব ঘটনাই রসুল সঃ কে ওহীর মাধ্যমে, যা তিনি জানতেন না তা জানানো হচ্ছে৷
৪/إِذْ قَالَ يُوسُفُ لِأَبِيهِ يَا أَبتِ إِنِّي رَأَيْتُ أَحَدَ عَشَرَ كَوْكَبًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ رَأَيْتُهُمْ لِي سَاجِدِينَ
অর্থ;-আর যখন ইউসুফ তার পিতাকে বলল; হে আমার আব্বাজান, আমি স্বপ্নে দেখছি এগারোটি নক্ষত্রকে চন্দ্র সূর্যের উপস্থিতিতে৷ আমি তাদের আমাকে সেজদাহ করতে দেখেছি৷
# বালক ইউসুফ আঃ স্বপ্নে দেখলেন যে এগারোটি তারোকা তাকে সেজদা করছে যেখানে চাঁদ ও সূর্য ও উপস্থিত আছে৷ ‘ওয়াও’ অক্ষরটি এখানে ‘হাল’ বা অবস্থা বর্ণনার জন্য ব্যবহার হয়েছে৷ যেমন আমরা সুরা আলে ইমরাণে পড়েছি; ‘ওয়া হুয়া কায়েমুই ইয়ুসাল্লি ফিল মেহরাব’, অর্থ, যখন তিনি মেহরাবে নামাজ রত অবস্থায় ছিলেন৷ পরে জানা যাবে এ চন্দ্র সূর্য বলতে ইউসুফ আঃ এর পিতা মাতাকে বোঝানো হয়েছে৷ পিতামাতা সন্তানকে সেজদাহ করতে পারেন না৷
৫/قَالَ يَا بُنَيَّ لاَ تَقْصُصْ رُؤْيَاكَ عَلَى إِخْوَتِكَ فَيَكِيدُواْ لَكَ كَيْدًا إِنَّ الشَّيْطَانَ لِلإِنسَانِ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
অর্থ;-তিনি (আব্বা) বললেন, হে বৎস, তোমার এ স্বপ্ন তোমার ভাইদের কাছে বর্ণনা কোরনা, তাহলে তারা তোমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে, নিশ্চয় শয়তান মানুষের জন্য প্রকাশ্য শত্রু৷
# ঘটনাটি তালমুদ ও বাইবেলে ভিন্ন ভাবে এসেছে, সেখানে বলা হয়েছে ইয়াকুব আঃ তার পুত্র ইউসুফ কে এ উদ্ভট স্বপ্নের জন্য তিরষ্কার করে ছিলেন৷ পবিত্র কোরআন তা খণ্ডন করে দিল৷
৬/وَكَذَلِكَ يَجْتَبِيكَ رَبُّكَ وَيُعَلِّمُكَ مِن تَأْوِيلِ الأَحَادِيثِ وَيُتِمُّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكَ وَعَلَى آلِ يَعْقُوبَ كَمَا أَتَمَّهَا عَلَى أَبَوَيْكَ مِن قَبْلُ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْحَقَ إِنَّ رَبَّكَ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
অর্থ;-এমনই ভাবে তোমার রব তোমাকে মনোনিত করবেন এবং তোমাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা বুঝিয়ে দেবেন৷ তোমার প্রতি ও ইয়াকুবের পরিবার পরিজনদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করবেন, যেমন ইতি পূর্বে তিনি তা পূর্ণ করেছিলেন তোমার পিতৃ পুরুষ ইসহাক ও ইব্রাহীমের প্রতি৷ নিশ্চয় তোমার রব সর্বজ্ঞ, হেকমত ওয়ালা৷
# হজরত ইয়াকুবের প্রথমা স্ত্রীর দশটি পুত্র ছিল, তারা বেশ উপযুক্ত, বেশ বলশালী৷ আর দ্বিতীয় স্ত্রীর দুটি পুত্র, ইউসুফ ও বেনইয়ামীন৷ বড় ছেলেরা সৎ ছিলনা অন্যদিকে বালক ইউসুফ বেশ সৎ ভদ্র ছিলেন৷ তাঁর এ স্বপ্ন ইয়াকুব আঃ এর মনে আশার সঞ্চার করে৷ তিনি বুঝতে পারলেন নবুওতের ধারা বজায় থাকবে ইউসুফের মাধ্যমেই৷ তাই তিনি বললেন যে, আল্লাহ ইউসুফকে পছন্দ করেছেন৷ তার মাধ্যমে বাপ দাদাদের মর্যাদাকে অক্ষুন্ন রাখবেন৷ আর তাই বড় ভাইদের রোষানল থেকে তাকে দূরে রাখার জন্য এ স্বপ্ন তাদের কাছে প্রকাশ করতে নিষেধ করলেন৷ আর স্বপ্নের ব্যাখ্যা স্বয়ং আল্লাহই তাকে দেবেন বলে আশ্বস্থ করলেন৷
‘তা’বিলুল আহাদীস, শব্দটির দুভাবে অর্থ হতে পারে৷ স্বপ্নের ব্যাখ্যা আর কোন বিষয়ের অন্তর্নিহীত সত্য উদ্ঘাটন৷ এ দুটোরই শিক্ষা আল্লাহ তায়ালা হজরত ইউসুফ আঃ কে দিয়ে ছিলেন৷
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৬ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
সাবলীল ভাষায় দারুন উপস্থপনা।
আল্লাহ তায়ালা আপনার জ্ঞানকে ইসলামের কাজে ব্যবহার করার তাওফীক দান করুক।
জাযাকাল্লাহ খাইর
আমরা উত্তম ধারণাই রাখি!
আল্লাহ ছাড়া আর কে আছেন যিনি গুণাহ ক্ষমা করবেন?
তিনি পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ, পাপ ক্ষমাকারী, তওবা কবুলকারী, কঠোর শাস্তিদাতা ও সামর্থবান, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তাঁরই দিকে হবে প্রত্যাবর্তন।
বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
এই সূরাটি আমি পড়েছি কয়েকদিন আগে তাই জানাটা পড়তে একটু বেশী ভাল লাগল ।
ধন্যবাদ চাচাজান ।
কয়েকদিন ধরেই ভাবছিলাম আপনার কোরআন তাফসীর কবে পাবো? আলহামদুলিল্লাহ! পড়ে নিলাম।
আমার ব্যক্তিগত অধ্যয়ন ইবন কাসীর থেকে হচ্ছে , এই সূরাতেই তাই পড়তে বেশি ভালো লাগছে ! দুই আলোচনাতে বিষয়টা অনেক বেশি পরিষ্কার ! শুকরিয়া!
জাযাকাল্লাহ খাইর!
অনেক অনেক শুকরিয়া!
মন্তব্য করতে লগইন করুন