@@@ ধৈর্য ধারণ কর, কারণ আল্লাহ তো নেককারদের শ্রম বিনষ্ট করেন না৷@@@
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ১৬ অক্টোবর, ২০১৫, ০৩:১৪:১১ রাত
(উর্দু বয়ানুল কোরআনের ধারাবাহিক বাংলা অনুবাদ)
সুরা হুদ রুকু;-১০ আয়াত;-১১০-১২৩
১১০/وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ فَاخْتُلِفَ فِيهِ وَلَوْلاَ كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِن رَّبِّكَ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ وَإِنَّهُمْ لَفِي شَكٍّ مِّنْهُ مُرِيبٍ
অর্থ;-আর আমি অবশ্যই মূসা কে কিতাব দিয়ে ছিলাম, তার পর তাতেও মতভেদ সৃষ্টি হল৷ যদি আপনার রবের পক্ষ থেকে পূর্ব সিদ্ধান্ত না থাকত তবে, তাদের মধ্যে চুড়ান্ত ফায়সালা হয়ে যেত৷ তারা এ ব্যাপারে এমন সন্দেহের মধ্যে আছে যা তাদেরকে সংশয়ে ফেলে রেখেছে৷
# এ সুরায় ইতি মধ্যে যে পাঁচজন রসুলের বর্ণনা পাওয়া গেছে তদের কাছে ওহী এসেছে কিন্তু কিতাব আসার কথা বলা হয়নি৷ মূসা আঃ কে আল্লাহ কিতাব দিলেন৷ তা আল্লহ প্রেরিত জেনেও তাঁর কওম তাতে মতভেদ সৃষ্টি করেছে৷ নবীর কিতাবের উত্তরাধিকারী তাঁর উম্মতই হয়ে থাকে৷ যখন সেই উম্মতের মধ্যে অধঃপতন শুরু হয় তখনই তারা কিতাবে আস্থা হারায় আর মতভেদ শুরু হয়৷ বণী ইস্রাঈল গন তাদের কিতাবের বিষয়ে নিজেরাই সংশয়ে আছে৷
আল্লাহর নিয়ম পূর্ব নির্ধারিত না হয়ে থাকলে, যাকে ‘আজল’ বলা হয়েছে, তাদের হিসাব আগেই শেষ হয়ে যেত৷
১১১/وَإِنَّ كُـلاًّ لَّمَّا لَيُوَفِّيَنَّهُمْ رَبُّكَ أَعْمَالَهُمْ إِنَّهُ بِمَا يَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
অর্থ;-আর যখন সময় আসবে তখন আপনার রব তাদের প্রত্যেককে অবশ্যই নিজ নিজ কর্মের প্রতিদান পুরো পুরি দান করবেন৷ নিশ্চয় তিনি তাা যা করে সে বিষয়ে পূর্ণ খবর রাখেন৷
১১২/فَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ وَمَن تَابَ مَعَكَ وَلاَ تَطْغَوْاْ إِنَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
অর্থ;-অতএব আপনি স্থির থাকুন যে ভাবে আপনি আদিষ্ট হয়েছেন৷ এবং যারা তওবাকরে আপনার সাথে আছে তারাও স্থির থাকুক, আর সীমা লঙ্ঘন করবে না৷ নিশ্চয় তিনি তোমরা যা কর সে বিষয়ে পূর্ণ দৃষ্টি রাখেন৷
# পারত পক্ষে কথা গুলি রসুল সঃ কে বলা হলেও তা সাহাবীদেরও বলা হচ্ছে৷ সকলকে দৃঢ়পদ থাকার জন্য বলা হল৷ অতিষ্ঠ হয়ে অগ্রিম কিছু কামনা করা যাবেনা, এটাকেই সীমা লঙ্ঘণ বলা হয়েছে৷
১১৩/وَلاَ تَرْكَنُواْ إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُواْ فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُم مِّن دُونِ اللّهِ مِنْ أَوْلِيَاء ثُمَّ لاَ تُنصَرُونَ
অর্থ;-আর তোমরা পাপিষ্ঠদের প্রতি ঝুঁকবে না নতুবা তোমাদেরকেও আগুন স্পর্শ করবে৷ আর আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোন বন্ধু নেই৷ অতএব তোমাদেরকে কোন সাহায্যও করা হবেনা৷
# অনেকের অনেক নিকট আত্মিয় কাফের রয়ে গেছে৷ তাই সম্পর্ক থাকতেই পারে৷ তাই বলা হল করুনায় যেন তাদের প্রতি কেউ ঝুঁকে না পড়ে৷ মুমিনদের বন্ধ বা আভিভাবক শুধুই আল্লাহ৷ কেউ যদি মুশরিকদের প্রতি ঝুঁকে যায় তবে তাদের কোন রকম সাহায্য করা হবেনা৷ তাদেরকেও আগুন পাকড়াও করবে৷
১১৪/وَأَقِمِ الصَّلاَةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّـيِّئَاتِ ذَلِكَ ذِكْرَى لِلذَّاكِرِينَ
অর্থ;-নামাজ কায়েম করবে রাতের দুই প্রান্ত ভাগে৷ নেক কাজ অবশ্যই বদ কাজকে দূর করে দেয়৷ যারা উপদেশ গ্রহন করে এটি তাদের জন্য এটি এক উপদেশ৷
# ভাল আমল খারাব কাজগুলিকে মুছে দেয়৷ ১১ নববী সালের আগে নামাজ এমনই বিক্ষিপ্ত ছিল৷ এখানে তিন ওয়াক্তের কথা বলা হয়েছে৷ রসুলের মে’রাজের পর নামাজ পাঁচ ওয়াক্তে নির্দিষ্ট হয় ও সময় নির্দিষ্ট হয়৷ সুরা বনী ইস্রাঈলে এ বিষয়ে অধিক জানা যাবে৷
১১৫/وَاصْبِرْ فَإِنَّ اللّهَ لاَ يُضِيعُ أَجْرَ الْمُحْسِنِينَ
অর্থ;-ধৈর্য ধারণ কর৷ কারণ আল্লাহতো নেককারদের শ্রমফল বিনষ্ট করেন না৷
১১৬/فَلَوْلاَ كَانَ مِنَ الْقُرُونِ مِن قَبْلِكُمْ أُوْلُواْ بَقِيَّةٍ يَنْهَوْنَ عَنِ الْفَسَادِ فِي الأَرْضِ إِلاَّ قَلِيلاً مِّمَّنْ أَنجَيْنَا مِنْهُمْ وَاتَّبَعَ الَّذِينَ ظَلَمُواْ مَا أُتْرِفُواْ فِيهِ وَكَانُواْ مُجْرِمِينَ
অর্থ;-যে সমস্ত জাতি তোমাদের আগে গত হয়েছে, তাদের মধ্যে এমন নেক লোক কেন রইল না! যারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টিতে বাধা দিত৷ তবে মুষ্টিমেয় কিছু ছিল, যাদেরকে আমি তাদের মধ্য হতে রক্ষা করে ছিলাম৷ আর পাপিষ্ঠরাতো ভোগ বিলাসে মত্ত ছিল, যা তাদেরকে দেওয়া হয়েছিল৷ আর তারা ছিল অপরাধী৷
# অধিকাংশ মানুষই আল্লাহ ও তার রসুলের অবাধ্য হয়েছে৷ মাত্র অল্প কিছু মানুষ ইমান এনেছিল৷ যারা ইমান এনেছিল আল্লাহ তাদের কৌশলে রক্ষা করেছেন৷ আর অবিশ্বাসীরা আল্লাহর দেয়া আরাম আয়েশে মগ্ন হয়েই থেকেছে আর ধ্বংস হয়েছে৷ সেই অল্প কিছু লোকেই সমাজে ভাল কাজের আদেশ আর খারাপ কাজ হতে বিরত রাখার চেষ্টা করে গেছে৷
১১৭/فَلَوْلاَ كَانَ مِنَ الْقُرُونِ مِن قَبْلِكُمْ أُوْلُواْ بَقِيَّةٍ يَنْهَوْنَ عَنِ الْفَسَادِ فِي الأَرْضِ إِلاَّ قَلِيلاً مِّمَّنْ أَنجَيْنَا مِنْهُمْ وَاتَّبَعَ الَّذِينَ ظَلَمُواْ مَا أُتْرِفُواْ فِيهِ وَكَانُواْ مُجْرِمِينَ
অর্থ;-আর আপনার পালনকর্তা এমন নয় যে, জনপদ গুলিকে অন্যায় ভাবে ধ্বংস করেছেন, এমতাবস্থায় যে, সেখানের লোকেরা সৎকর্মশীল ছিল৷
# যে সমাজে ‘আমর বিল মা’রুফ আর নেহী আনিল মুনকার’ করার লোক অবস্থান করে সে জনপদ অন্যায় ভাবে আল্লাহ ধ্বংস করেন না৷ আমরা দেখেছি রসুল ও তাঁর সাহাবীদের আল্লাহ জনপদ ধ্বংস করার আগে সরিয়ে নিয়ে ছেন৷
১১৮/وَلَوْ شَاء رَبُّكَ لَجَعَلَ النَّاسَ أُمَّةً وَاحِدَةً وَلاَ يَزَالُونَ مُخْتَلِفِينَ
অর্থ;-যদি আপনার রব ইচ্ছে করতেন তবে সকল মানুষকে একই উম্মত করতে পারতেন৷ কিন্তু না, তারা
মতভেদ করতেই থাকবে;
১১৯/إِلاَّ مَن رَّحِمَ رَبُّكَ وَلِذَلِكَ خَلَقَهُمْ وَتَمَّتْ كَلِمَةُ رَبِّكَ لأَمْلأنَّ جَهَنَّمَ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ
অর্থ;-শুধু তারা ছাড়া যাদের আপনার রব রহমত করবেন৷ এ জন্যই তাদের সৃষ্টি করা হয়েছিল৷ আপনার রবের এ কথা পূর্ণ হয়েই গেছে, ‘আমি জাহান্নামকে পূর্ণ করব জ্বীন ও মানুষ দ্বারা’৷
# মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন স্বাধীনতা দিয়ে, আর বিভিন্ন জাতিতে, তাই তারা মতভেদ করবেই৷ তবে আল্লাহ যাদের উপর রহমত করবেন তারা এই মত বিরোধের বাইরে থাকবে৷
মতবিরোধ থাকতেই পারে কেননা আল্লা বিচার বিবেচনা মেধা সকলকে একই দেন নাই৷ যেমন আমাদের চার ইমাম অনেক ব্যাপারে মতভেদ দেখিয়েছেন, কিন্ত কেউ কাউকে আলাদাকরে রাখেননি৷ কিন্তু আমরা তাদের মতামতের ভিত্তিতে নিজেদের আলাদা করে ফেলেছি৷
১২০/وَكُـلاًّ نَّقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنبَاء الرُّسُلِ مَا نُثَبِّتُ بِهِ فُؤَادَكَ وَجَاءكَ فِي هَـذِهِ الْحَقُّ وَمَوْعِظَةٌ وَذِكْرَى لِلْمُؤْمِنِينَ
অর্থ;-রসুলদের এ সমস্ত বৃত্তান্ত আমি আপনার কাছে বর্ণনা করছি, যাতে আপনার অন্তরকে মজবুত করি৷ আর এভাবে আপনার কাছে সত্য এসেছে আর মুমিনদের জন্য এসেছে উপদেশ ও সতর্ক বাণী৷
# মুশরীকদের অবহেলা অত্যাচারে রসুল বিচলিত হয়ে ভেঙ্গে না পড়েন, যাতে তিনি উৎসাহ পান ও মনোবল না হারান, সেজন্যই আল্লাহ তায়ালা অতীতের রসুল গনের বর্ণনা তাঁকে শোনাচ্ছেন৷ এতে করে তিনি সত্য উপলব্ধি করবেন আর মুমিনরা পাবে উপদেশ ও সাবধানী সতর্কতা৷
১২১/وَكُـلاًّ نَّقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنبَاء الرُّسُلِ مَا نُثَبِّتُ بِهِ فُؤَادَكَ وَجَاءكَ فِي هَـذِهِ الْحَقُّ وَمَوْعِظَةٌ وَذِكْرَى لِلْمُؤْمِنِينَ
অর্থ;-আর আপনি তাদেরকে বলেদিন যারা ইমান আনেনা, নিজ নিজ অবস্থানে তোমরা তোমাদের কাজ করে যাও, আমরাও আমাদের কাজ করছি৷
# যখন ইমান আনবেই না, আমার বিরোধিতাই করবে৷ তবে তাই করতে থাক, আর আমরাও আমাদের কাজ করতে থাকি৷
১২২/وَانتَظِرُوا إِنَّا مُنتَظِرُونَ
অর্থ;-এবং তোমরাও প্রতিক্ষায় থাক আমরাও প্রতিক্ষায় থাকলাম৷
# এটি সেই চ্যালেঞ্জ যা আল্লাহ অন্যান্ন রসুলদের দিয়ে নিজ নিজ অবাধ্য কওমকে বলিয়েছেন৷ ঠিক তেমনই রসুল সঃ কেও তা মুশরীকদের বলতে বললেন৷
১২৩/وَلِلّهِ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَإِلَيْهِ يُرْجَعُ الأَمْرُ كُلُّهُ فَاعْبُدْهُ وَتَوَكَّلْ عَلَيْهِ وَمَا رَبُّكَ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ
অর্থ;-আর আল্লাহর কাছেই রয়েছে আসমান ও জমীনের সব গোপন তথ্য৷ আর সকল কাজের প্রত্যাবর্তন তারই দিকে৷ অতএব, তারই বন্দেগী কর এবং তারই উপর ভরসা রাখ আর তোমরা যা কর সে বিষয়ে তোমার রব গাফেল নন৷
বিষয়: বিবিধ
১৩৫৮ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাজাকাল্লাহ খাইরান চাচাজান ।
সত্য বলেছেন। জাজাকাল্লাহ চাচাভাই.....আর ধৈর্যের মত বিশাল কিছু আর নেই। আল্লাহ ক্ষমা করুক এবং সবকিছু সহজ করে দিক
মুমিন কখনই ধৈর্যহারা হবেনা।
আল্লাহ মুমিনদের সর্বদা সবরের পথে পরিচালিত করুণ, অটল ও দৃঢ় রাখুন। আমিন।
জাযাকাল্লাহু খাইর
মন্তব্য করতে লগইন করুন