&&&&&"উপস্থিত সকল লোকদের মধ্যে কিছু হবে ভাগ্যবান আর কিছু হবে হতভাগা"&&&&&

লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ১১ অক্টোবর, ২০১৫, ১১:২২:৫৩ রাত

(উর্দু বয়ানুল কোরআনের ধারাবাহিক অনুবাদ)

সুরা হুদ রুকু;-৯ আয়াত;-৯৬-১০৯

‘আম্বাউ রুসুল’ বিষয়ের বর্ণনায়, এ সুরায় মূসা আঃ এর সেই সামান্য বর্ণনা নিয়ে আসছে এ রুকুটি;

৯৬/وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مُوسَى بِآيَاتِنَا وَسُلْطَانٍ مُّبِينٍ

অর্থ;-আর আমিতো মূসা আঃ কে আমার নিদর্শনাবলী ও সু স্পষ্ট প্রমান সহ প্রেরণ করে ছিলাম৷

৯৭/إِلَى فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِ فَاتَّبَعُواْ أَمْرَ فِرْعَوْنَ وَمَا أَمْرُ فِرْعَوْنَ بِرَشِيدٍ

অর্থ;-ফেরাউন ও তার পরিষদবর্গদের কাছে৷ কিন্তু তারা ফেরাউনের নির্দেশ অনুযায়ী চলতে থাকল, অথচ ফেরাউনের মতামত মোটেও ন্যায় সঙ্গত ছিলনা৷

৯৮/يَقْدُمُ قَوْمَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَأَوْرَدَهُمُ النَّارَ وَبِئْسَ الْوِرْدُ الْمَوْرُودُ

অর্থ;-সে (ফেরাউন) কেয়ামতের দিন নিজ জাতির লোকদের আগে আগে থাকবে এবং সে তাদের কে জাহান্নামে পৌঁছে দেবে৷ আর যেখানে তারা পৌঁছবে তা কতইনা নিকৃষ্ট স্থান৷

৯৯/وَأُتْبِعُواْ فِي هَـذِهِ لَعْنَةً وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ بِئْسَ الرِّفْدُ الْمَرْفُودُ

অর্থ;-এ দুনিয়াতে তাদের সাথে লা’নত ছিল এবং কেয়ামের দিনেও থাকবে৷ কত নিকৃষ্ট প্রতিফল না তাদেরকে দেওয়া হবে৷

# মূসা আঃ সুস্পষ্ট মোজেজা নিয়েই ফেরাউনের দরবারে আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে গিয়েছিলেন৷ ফেরাউন ও তার সভাসদগন মূসা আঃ কে যাদুকর বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল, আর সভাসদরা ফেরাউনের কথা মতই চলত৷ কেয়ামতের দিন সেই ফেরাউন তার লোকজনের সামনে দলপতি হয়ে তাদের সকলকে জাহান্নামে পৌঁছে দেবে৷ যেমন করে কোন রাখাল তার ছাগল ভেড়ার পাল নিয়ে যায়৷ আর সেই জাহান্নাম হবে অত্যন্ত কষ্টদায়ক জায়গা৷ অতএব এর দুনিয়াতেও লাঞ্ছনা দায়ক মৃত্যু পেল আর আখেরাতেও সেই লাঞ্ছনা৷

১০০/ذَلِكَ مِنْ أَنبَاء الْقُرَى نَقُصُّهُ عَلَيْكَ مِنْهَا قَآئِمٌ وَحَصِيدٌ

অর্থ;-এ হল সেসব জনপদের কিছু ইতিকথা যা আমি আপনার কাছে বর্ণনা করছি৷ যার মধ্যে কোন কোনটি এখনও বহাল আছে এবং কোন কোনটি বিলুপ্ত হয়েছে৷

# আদী কালের ধ্বংস প্রাপ্ত আল্লাহর অবাধ্য যে জাতিগুলির ঘটনা আল্লাহ তায়ালা রসুল সঃ এর মাধ্যমে মক্কার মুশরীকদের কাছে বর্ণনা করেছেন, তার কিছু কিছু ধ্বংসাবশেষ তখনও অবশিষ্ট ছিল, যার কিছু আজও সে ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে আর কিছু কিছু বিলুপ্ত হয়ে গেছে৷

১০১/وَمَا ظَلَمْنَاهُمْ وَلَـكِن ظَلَمُواْ أَنفُسَهُمْ فَمَا أَغْنَتْ عَنْهُمْ آلِهَتُهُمُ الَّتِي يَدْعُونَ مِن دُونِ اللّهِ مِن شَيْءٍ لِّمَّا جَاء أَمْرُ رَبِّكَ وَمَا زَادُوهُمْ غَيْرَ تَتْبِيبٍ

অর্থ;-আর আমি তাদের উপর জুলুম করিনি, বরং তারাই নিজেদের উপর জুলুম করেছে৷ ফে যখন আমার রবের নির্দেশ এসে গেল তখন, আল্লাহকে ছেড়ে তারা যে সব উপাস্য দেবতাদের উপাসনা করত তারা তাদের কোন কাজে আসেনি, আর তারাতো শুধু তাদের বিপদই বৃদ্ধি করল৷

১০২/وَكَذَلِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَا أَخَذَ الْقُرَى وَهِيَ ظَالِمَةٌ إِنَّ أَخْذَهُ أَلِيمٌ شَدِيدٌ

অর্থ;-আর এরূপই বটে আপনার রবের পাকড়াও৷ যখন তিনি কোন জনপদবাসীকে পাকড়াও করেন তাদের জুলুমের দরুন৷ নিঃসন্দেহে তার পাকড়াও খুবই মারাত্মক, বড়ই কঠোর৷

১০৩/إِنَّ فِي ذَلِكَ لآيَةً لِّمَنْ خَافَ عَذَابَ الآخِرَةِ ذَلِكَ يَوْمٌ مَّجْمُوعٌ لَّهُ النَّاسُ وَذَلِكَ يَوْمٌ مَّشْهُودٌ

অর্থ;-নিশ্চয় এতে রয়েছে তাদের জন্য উপদেশ যারা আখেরাতের আজাবকে ভয় করে৷ আখেরাত এমন দিন যেদিন সকল মানুষকে সমেত করা হবে৷ আর সেদিনটি উপস্থিতিরই দিন৷

১০৪/وَمَا نُؤَخِّرُهُ إِلاَّ لِأَجَلٍ مَّعْدُودٍ

অর্থ;-আর আমি তা স্থগিত রেখেছি কেবল নির্দিষ্ট কালের জন্য

# এই নির্দিষ্ট দিন বা কাল যে কত কাল তা এক মাত্র আল্লাহ তায়ালাই জানেন৷ সেদিন পৃথিবীর আদী অন্ত সকল মানুষকে একত্রীত করা হবে৷ সে দিনটি হাজিরা দেবারই দিন৷

১০৫/يَوْمَ يَأْتِ لاَ تَكَلَّمُ نَفْسٌ إِلاَّ بِإِذْنِهِ فَمِنْهُمْ شَقِيٌّ وَسَعِيدٌ

অর্থ;-যখন সেদিন আসবে তখন কেউ আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন কথা বলতে পারবেনা৷ উপস্থিত সকল লোকদের মধ্যে কিছু হবে ভাগ্যবান আর কিছু হবে হতভাগা৷

# সে দিনটি হবে বিচারের দিন বা ফলাফল বার হবার দিন৷ দুনিয়া হল পরীক্ষার হল৷ এখানে যেমন কাজ করেছে তার আমল নামায় তেমনই লেখা হবে৷ যারা আল্লাহর নিয়ম নীতি মেনে তারই নির্দেশীত পথে চলেছে তারা ভাগ্যবান দের দলভূক্ত হবে৷ আর যাদের আমল নামায় এ গুলি থাকবেনা, তারাই হবে দুর্ভাগা৷৷

১০৬/فَأَمَّا الَّذِينَ شَقُواْ فَفِي النَّارِ لَهُمْ فِيهَا زَفِيرٌ وَشَهِيقٌ

অর্থ;-অতএব যারা দূর্ভাগা তারা জাহান্নামে যাবে৷ সেখানে তাদের চিৎকার ও আর্তনাদ চলতে থাকবে৷

১০৭/خَالِدِينَ فِيهَا مَا دَامَتِ السَّمَاوَاتُ وَالأَرْضُ إِلاَّ مَا شَاء رَبُّكَ إِنَّ رَبَّكَ فَعَّالٌ لِّمَا يُرِيدُ

অর্থ;-সেখানে তারা অনন্ত কাল থাকবে৷ যতদিন আসমান ও জমীন বহাল থাকবে; অবশ্য যদি আপনার রব অন্য কিছু ইচ্ছে করেন তবে ভিন্ন কথা৷ কেননা আপনার রব যা ইচ্ছা করেন তাই করেন৷

# অপরাধীদের জন্য জাহান্নাম৷ সেখানে তাদের চিৎকার শোনা যাবে৷ আর তারা সেখানে অনন্তকাল থাকবে৷ তবে যদি আল্লাহ অন্যকিছু করতে চান তবে তা ভিন্ন কথা৷ এখানে আল্লাহ অপরাধীদের জন্য একটু আশার আলো দেখাচ্ছেন বলেই মনে হয়৷ হয়ত নিজ গুনে এক সময় অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় কাউকে মুক্তিও দিতে পারেন৷

১০৮/وَأَمَّا الَّذِينَ سُعِدُواْ فَفِي الْجَنَّةِ خَالِدِينَ فِيهَا مَا دَامَتِ السَّمَاوَاتُ وَالأَرْضُ إِلاَّ مَا شَاء رَبُّكَ عَطَاء غَيْرَ مَجْذُوذٍ

অর্থ;-আর যারা ভাগ্যবান তারা থাকবে জান্নাতে৷ সেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে৷ যতদিন আসমান ও জমীন বহাল থাকবে৷ অবশ্য যদি আপনার রব অন্য কিছু ইচ্ছে করেন তবে ভিন্ন কথা৷ এ দান অফুরন্ত, নিরবিচ্ছিন্ন৷

# হতভাগ্যরা জাহান্নামে অনন্ত কাল থাকবে আর ভাগ্যবানেরা জান্নাতে অনন্ত কাল থাকবে৷ জান্নাতীদের জন্যও বলা হয়েছে আল্লাহ অন্যকিছু করতে চাইলে করবেন৷ লক্ষনীয় জান্নাতীদের জন্য বলা হয়েছে, এ দান অফুরন্ত আর নিরবিচ্ছিন্ন৷ যা জাহান্নামীদের জন্য বলা হয়নি, তাই আশাকরা যায় তাদের শাস্তিতে বিচ্ছিন্নতা আসতে পারে৷ দুইটা আয়াতেই আসমান ও জমীনের স্থায়িত্বের কথা বলা হয়েছে৷ এটি ‘মুতাশাবেহাতের’ মধ্যে পড়ে, কেননা আমরা জানি কেয়ামতের সময় এগুলিও ধ্বংস হবে৷ এ আয়াতে তাফসীরকারদের মধ্য মত পার্থক্য আছে৷ তবে আশাকরা যায়, আল্লাহ পুনরায় কোন আসমান জমীন বানাবেন যার কথা বলা হয়েছে অথবা এমন কোন জায়গায় এ গুলোর অবস্থান হবে যেখানে আসমান জমীন থাকবে৷(আল্লাহই ভার জানেন)৷

১০৯/فَلاَ تَكُ فِي مِرْيَةٍ مِّمَّا يَعْبُدُ هَـؤُلاء مَا يَعْبُدُونَ إِلاَّ كَمَا يَعْبُدُ آبَاؤُهُم مِّن قَبْلُ وَإِنَّا لَمُوَفُّوهُمْ نَصِيبَهُمْ غَيْرَ مَنقُوصٍ

অর্থ;-অতএব তারা যাদের উপাসনা করে, আপনি সে ব্যাপারে সন্দিহান হবেন না৷ পূর্বে তাদের বাপ দাদারা যাদের উপাসনা করত এরাও সেরূপ উপাসনা করছে৷ আর আমি অবশ্যই তাদেরকে তাদের প্রাপ্য কিছুমাত্র কম না করে পুরোপুরি দেব৷

# রুকুর উপসংহারে মুশরীকদের উদ্দেশ্য করে আল্লাহ তায়ালা রসুলুল্লাহর মাধ্যমে বলে দিলেন, এত সতর্ক করার পরেও তারা যদি তাদের পূর্ব পুরুষদের মতই তাদের উপাস্য দেবতাদেরই উপাসনা করে, তবে তাদের বলেদিন, আমিও তাদের যা পাওনা তা পুরোই তাদের দেব৷ কোনই কম করা হবেনা৷

বিষয়: বিবিধ

১১৯৭ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

345368
১১ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১১:৩৪
আফরা লিখেছেন : আল্লাহ আমাদের উপর রহম করুন সেদিন যেন আমরা হতভাগাদের কাতারে না পড়ি ।

জাজাকাল্লাহ খাইরান চাচাজান ।
১২ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০১:০৬
286531
শেখের পোলা লিখেছেন : আমিন৷ শুভেচ্ছা নিও৷
345369
১১ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১১:৪৪
আবু জান্নাত লিখেছেন :
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
সকল ঈমানদার মুসলিম যেন সেদিন সৌভাগ্যবানদের কাতারে থাকে, আল্লাহ তায়ালা সবাইকে নেক বান্দা হিসেবে কবুল করুক।
জাযাকাল্লাহ খাইর
১২ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০১:০৭
286532
শেখের পোলা লিখেছেন : আমিন৷ আল্লাহ আপনার দোওয়া কবুল করুক৷ ধন্যবাদ৷
345376
১২ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ০৬:০৩
রক্তলাল লিখেছেন : +
১২ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ০৭:৩৩
286534
শেখের পোলা লিখেছেন : Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck
345386
১২ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ১১:১৬
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আল্লাহ আমাদের উপর রহম করুন সেদিন যেন আমরা হতভাগাদের কাতারে না পড়ি ।...আমিন, আল্লাহ ক্ষমা করুন...
১২ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:১৫
286578
শেখের পোলা লিখেছেন : আল্লাহ আপনার দোওয়া কবুল করুন৷ আমিন৷
345391
১২ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ১২:২২
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : এই সমস্ত আয়াতগুলি আসলেই মনে ভয় ধরিয়ে দেয়। আল্লাহ সেদিন যেন অপমানিত না করেন।
১২ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:১৬
286579
শেখের পোলা লিখেছেন : আল্লাহ আমাদের মাফ করুন৷ ধন্যবাদ৷
345686
১৪ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৮:৪২
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : আল্লাহপাক আমাদের ক্ষমা করুন। আমাদের সৌভাগ্যবানদের কাতারে অন্তর্ভুক্ত করুন। আমিন।
১৪ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৯:২৮
286836
শেখের পোলা লিখেছেন : আমিন৷ অনেকদিন পর দেখা মিলল৷ ভাল থাকেন৷ধন্যবাদ৷
345687
১৪ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৮:৪৮
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : আল্লাহ আমাদের সীরাতুল মুস্তাকিম এর পথে চলার তাওফিক দিন ও সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমিন।
১৪ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৯:২৯
286837
শেখের পোলা লিখেছেন : আমিন৷ ভাল থাকুন৷ ধন্যবাদ৷
345729
১৫ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৩:৪৩
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম।

আল্লাহ আমাদের অনন্তকালের চির নিয়ামতের অধিকারী জান্নাতবাসীদের কাতারে রাখুন! আমীন। জাযাকাল্লাহু খাইর!
১৫ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৩:৫৮
286878
শেখের পোলা লিখেছেন : অআলায়কুমুস সালাম অ রহমাতুল্লাহ৷ আমিন৷ ধন্যবাদ আপা৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File