়়়়়"হে আমার কওম, আমি এ জন্য তোমাদের কাছে কোন বিনিময় চাইনা৷ আমার বদলাতো তাঁর কাছে যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন৷ তোমরা কি বুদ্ধি খাটাবে না!"়়়়়

লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৫:৪১:৪৬ সকাল

(উর্দূ বয়ানুল কোরআনের বাং ধারাবাহিক অনুবাদ)

সুরা হুদ রুকু;-৫ আয়াত;-৫০-৬০

“আম্বাউ রুসুল” বিষয়ের ধারায় হজরত হুদ আঃ এর কথা নিয়ে আসছে এ রুকুটি৷

৫০/وَإِلَى عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُواْ اللّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـهٍ غَيْرُهُ إِنْ أَنتُمْ إِلاَّ مُفْتَرُونَ

অর্থ;-আর আমি কওমে আদের কাছে তাদের ভাই হুদ কে পাঠিয়েছিলাম৷ তিনি বললেন, হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো৷ তিনি ছাড়া তোমাদের কোন মাবুদ নেই৷ তোমরা নিছক মিথ্যা উদ্ভাবন কারী৷

# ধারণা করা হয় (আল্লাহই ভাল জানেন) নূহ আঃ পুত্র শাম এর বংশধরগণ আরব ভূখণ্ডের পূর্বপ্রান্ত দিয়ে ক্রমশঃ দক্ষীন দিকে প্রসারিত হতে থাকে৷ তাদেরই মধ্যে আদ নামের প্রভাবশালী এক জনের বংশ আদ নামে খ্যাত হয়৷ এরা খুবই বলিষ্ঠ প্রকৃতীর ছিল৷

হুদ আঃ কে তাদেরই মধ্যহতে রসুল মনোনীত করেন৷ তিনি তাদের মনগড়া উপাস্যের ইবাদত বা উপাসনা না করে এক আল্লাহর উপাসনা করতে বললেন৷ আরও বললেন;-

৫১/يَا قَوْمِ لا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِنْ أَجْرِيَ إِلاَّ عَلَى الَّذِي فَطَرَنِي أَفَلاَ تَعْقِلُونَ

অর্থ;-হে আমার কওম, আমি এ জন্য তোমাদের কাছে কোন বিনিময় চাইনা৷ আমার বদলা তো তার কাছে যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন৷ তোমরা কি বুদ্ধি খাটাবেনা?

৫২/وَيَا قَوْمِ اسْتَغْفِرُواْ رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُواْ إِلَيْهِ يُرْسِلِ السَّمَاء عَلَيْكُم مِّدْرَارًا وَيَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلَى قُوَّتِكُمْ وَلاَ تَتَوَلَّوْاْ مُجْرِمِينَ

অর্থ;-হে আমার কওম, তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমাদের রবের কাছে, তারপর তারই দিকে ফিরে এস৷ তিনি তোমাদের উপর আসমান থেকে পানি বর্যন করে তোমাদের শক্তির উপর আরও শক্তি বৃদ্ধি করবেন৷ তোমরা অপরাধীদের মত বিমুখ হয়োনা৷

৫৩/قَالُواْ يَا هُودُ مَا جِئْتَنَا بِبَيِّنَةٍ وَمَا نَحْنُ بِتَارِكِي آلِهَتِنَا عَن قَوْلِكَ وَمَا نَحْنُ لَكَ بِمُؤْمِنِينَ

অর্থ;-তারা বলল, হে হুদ, আপনিতো আমাদের কাছে কোন স্পষ্ট প্রমান নিয়ে আসেননি৷ আমরা আপনার কথায় আমাদের মাবুদদেরকে ত্যাগ করতে পারিনা৷ আর আমরাতো আপনার প্রতি বিশ্বাসী নই৷

# কওমে আদও যথারীতি অন্যের মত তাদের রসুলকে রসুল হওয়া ও অন্য নিদর্শন দাবী করে বসল৷ আর তাদের প্রচলিত দেবদেবীর আরাধনা বা বিশ্বাস ত্যাগ করতে অপারগতা জানাল৷ এমনকি হুদ আঃ কে রসুল বলেই বিশ্বাস করলনা৷

আমরা জানি ‘ইমান’ শব্দটি যখন ‘লাম’ সহযোগে ব্যবহার হয় তখন সাধারণ বিশ্বাস অর্থে ব্যবহার হয়৷ এখানে তাই হয়েছে৷ প্রকৃত ইমান নয়৷

৫৪/إِن نَّقُولُ إِلاَّ اعْتَرَاكَ بَعْضُ آلِهَتِنَا بِسُوَءٍ قَالَ إِنِّي أُشْهِدُ اللّهِ وَاشْهَدُواْ أَنِّي بَرِيءٌ مِّمَّا تُشْرِكُونَ

অর্থ;-বরং আমরা বলি, আমাদের কোন দেবতা আপনাকে দুরবস্থায় ফেলে দিয়েছে৷ তিনি (হুদ) বললেন, আমি এ বিষয়ে আল্লাহকে সাক্ষী করছি, আর তোমরাও সাক্ষী থেকো যে, নিশ্চয়ই আমি তা থেকে মুক্ত যাকে তোমরা শরিক সাব্যস্ত করেছ৷

# আদ কওমের লোকেরা হুদ আঃ কে তাদের দেবতারা তাঁর প্রতি কূ দৃষ্টি দিয়েছে ও রুষ্ঠ হয়ে তাঁর উপর ভর করে তাকে দিয়ে আবোল তাবোল কথা বলাচ্ছে বলে অভিমত প্রকাশ করল৷ জবাবে হুদ আঃ বললেন, আমার সাক্ষী আল্লাহ আর আমিযে তোমাদের সাথে মিলে সেই আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করিনা তার সাক্ষী তোমরা থাকলে৷

৫৫/مِن دُونِهِ فَكِيدُونِي جَمِيعًا ثُمَّ لاَ تُنظِرُونِ

অর্থ;-তাকে (আল্লাহকে) ছেড়ে তোমরা সবাই মিলে আমার বিরুদ্ধে অনিষ্ঠ করার প্রয়াস কর, তার পর আমাকে মোটেও ছাড় দিওনা৷

# সুরা ‘ইউনুস’ এর ৭১ আয়াতে নূহ আঃ তাঁর কওমকে ঠিক এমন কথা ববলেছেন তা আমরা পড়েছি৷

৫৬/إِنِّي تَوَكَّلْتُ عَلَى اللّهِ رَبِّي وَرَبِّكُم مَّا مِن دَآبَّةٍ إِلاَّ هُوَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا إِنَّ رَبِّي عَلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ

অর্থ;-অবশ্যই আমি ভরসা করছি, আমার ও তোমাদের রব, সেই আল্লাহর উপর৷ এমন কোন বিচরণকারী প্রাণী নেই যার নসীব তার কাছে নয়৷ নিশ্চয় আমার রব সেই সরল পথেই রয়েছেন৷

# প্রত্যেক প্রাণীর ভাগ্য আল্লাহর হাতে৷ নীব বা ভাগ্য বলতে এখানে তার জাগতী সব বিষয়ের কথা বলা হয়েছে৷ অতএব তার উপর পূর্ণ আস্থা রাখাই শ্রেয়ঃ এবং তাই সরল পথ৷ আর এ পথে চললেই আল্লাহকে পাওয়া যাবে৷

৫৭/فَإِن تَوَلَّوْاْ فَقَدْ أَبْلَغْتُكُم مَّا أُرْسِلْتُ بِهِ إِلَيْكُمْ وَيَسْتَخْلِفُ رَبِّي قَوْمًا غَيْرَكُمْ وَلاَ تَضُرُّونَهُ شَيْئًا إِنَّ رَبِّي عَلَىَ كُلِّ شَيْءٍ حَفِيظٌ

অর্থ;-অতঃপর যদি তোমরা বিমুখ হও তা থেকে যা আমি তোমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি, তবে তোমাদের রব অন্য কোন জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন৷ তোমরা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না৷ নিশ্চয় আমার রব প্রত্যেক জিনিষ সংরক্ষনকারী৷

# ঘটনা চুড়ান্ত ফায়সালার পথে৷ আজাবের পূর্বাভাস দেওয়া হল৷

৫৮/وَلَمَّا جَاء أَمْرُنَا نَجَّيْنَا هُودًا وَالَّذِينَ آمَنُواْ مَعَهُ بِرَحْمَةٍ مِّنَّا وَنَجَّيْنَاهُم مِّنْ عَذَابٍ غَلِيظٍ

অর্থ;-আর যখন আমার আদেশ এল, আমি নিজ রহমতে হুদ ও যারা তাঁর সাথে ইমান এনেছিল তাদের উদ্ধার করলাম এবং তাদেরকে কঠিন আজাব থেকে রক্ষা করলাম

৫৯/وَتِلْكَ عَادٌ جَحَدُواْ بِآيَاتِ رَبِّهِمْ وَعَصَوْاْ رُسُلَهُ وَاتَّبَعُواْ أَمْرَ كُلِّ جَبَّارٍ عَنِيدٍ

অর্থ;-আর এই আদ জতি, যারা তাদের পালনকর্তার নিদর্শন সমুহ অস্বীকার করেছিল এবং তাদের রসুলদের অমান্য করেছিল, তারা অনুসরণ করত প্রত্যেক উদ্ধত সৈরাচারীর আদেশ৷

# লক্ষ্যনীয় এ আয়াতে ‘রুসুল’ যা ‘রসুল’ শব্দের বহু বচন তা ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ রসুল গন৷ আমরা জানি কোন কওমে কোন রসুলই হচ্ছেন প্রথম রসুল ও তিনিই শেষ৷ কেননা রসুল অমান্য করার পর কওমের স্থায়ীত্ব আর অবশিষ্ট থাকে না তাই পুনরায় রসুল আসার পথ থাকেনা৷ আমরা জানি এ শব্দটি অনেক সময় নবী শব্দের বদলেও ব্যবহার হয়৷ এখানেও তাই হয়েছে৷ রসুল আসার আগে অনেক নবী এসেছিলেন যাদের সহ রসুল হুদ আঃ কে তারা অস্বীকার করেই ধ্বংস হয়েছে৷

৬০/وَأُتْبِعُواْ فِي هَـذِهِ الدُّنْيَا لَعْنَةً وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ أَلا إِنَّ عَادًا كَفَرُواْ رَبَّهُمْ أَلاَ بُعْدًا لِّعَادٍ قَوْمِ هُودٍ

অর্থ;-এ দুনিয়ায় তাদের লাঞ্ছিত করা হয়েছিল এবং কেয়ামতেও করা হবে৷ মনে রেখো আদজাতি তাদের রবকে অস্বীকার করেছে, জেনে রেখো হুদের কওম, আদের জন্য রয়েছে অভিসম্পাত৷

# রুকুর উপসংহারে মুরশীক কোরাইশদের মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে, হুদ আঃ এর কওম, আদ জাতি আল্লাহকে ও তাদের রসুলকে অস্বীকার করার ফলেই ধ্বংস হয়েছে এবং তাদের জন্য রয়েছে কেয়ামতের শাস্তি৷ জনে রেখো, তারা অভিশপ্ত জাতি৷

বিষয়: বিবিধ

১৫৭৫ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

340812
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ০৮:১৮
জ্ঞানের কথা লিখেছেন : জাজাকাল্লাহু খায়র। অনেক সুন্দর ব্যাখ্যা।
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ০৮:৩৫
282206
শেখের পোলা লিখেছেন : জাজাকাল্লাহু৷ এটি আমার ব্যাখ্যা নয়। মরহু ডাঃ ইসরার আহমাদ সাহেবের উর্দূ বয়ানুল কোরআনের৷ আমি তা বাংলায় অনুবাদ করেছি মাত্র৷ধন্যবাদ৷
340813
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ০৮:২৬
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ বেশ ভালো লাগলো।
অনেক শুকরিয়া।
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ০৮:৩৬
282207
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনার জন্যও শুভেচ্ছা থাকল৷ ধন্যবাদ৷
340828
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ১০:৫০
আফরা লিখেছেন : আল্লাহ আপনাকে পরিশ্রমের উত্তম প্রতিদান দান করুন আর এর থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহন করার তৌফিক দিন । আমীন

অনেক ধন্যবাদ চাচাজান ।
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০৩:০৪
282280
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

আমীন
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪৭
282354
শেখের পোলা লিখেছেন : তোমার উপস্থিতি তোমার সুস্থতার প্রমান দেয়৷ শুভেচ্ছা নিও৷
340878
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৩১
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : খুব সুন্দর চাচাজান। জাঝাক আল্লাহ।
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪৯
282355
শেখের পোলা লিখেছেন : ধন্যবাদ৷ সম্বোধন স্থির হয়েছে তাহলে৷ ভাতিজার জন্য শুভেচ্ছা রইল৷
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:১১
282366
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : ভাতিজিও তো হতে পারি।
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০২:০০
282439
শেখের পোলা লিখেছেন : তাহলে অধিক খুশী হব, কারণ এ ব্লগে লেখায় চৌকশ মেয়ে ব্লগার খুবই কম৷একজন যুক্ত হবে৷
340941
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০৯:৫৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০২:০১
282440
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনার প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক৷ ধন্যবাদ৷
340992
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০১:৫৬
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ।

পোস্ট পড়ার পাশাপাশি কোরান অধ্যয়ন হয়ে গেলো !

জাযাকাল্লাহু খাইর!
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০২:০৬
282441
শেখের পোলা লিখেছেন : অআলাইকুমুস সালাম অরহমাতু্ল্লাহ৷ এ জনই লেখাটি এ ভাবে সাজিয়েছি৷ অন্যান্ন তাফসীরে অর্থ সাে থাকলেও তাফসীর সাথে নয় পাশে বা পে থাকে৷ এখানে প্রতি আয়াতের সাথেই আছে৷ ধন্যবাদ৷ ই মেইল দিলে পুরা কিতাব পাবেন ইন শা আ্ল্লাহ৷
341280
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:০৩
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : শুকরান।
341309
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০৯:১৩
শেখের পোলা লিখেছেন : শুকরান৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File