" ঃ--আর আমার বদলাতো শুধু আল্লাহর কাছেই রয়েছে৷--ঃ"
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ৩১ জুলাই, ২০১৫, ০১:৫৭:৪৮ রাত
(উর্দূ বয়ানুল কোরআনের বাংলা ধারা বাহিক অনুবাদ)
সুরা হুদ রুকু;-৩ আয়াত;-২৫-৩৫
“আম্বাউ রুসুল” বিষয়ের বর্ণনায় যথারীতি হজরত নূহ আঃ এর বর্ণনা নিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে এ রুকুটি৷ অভিজ্ঞতায় বলে, পবিত্র কোরআনে অনেক নবী রসুল গনের কথা থাকলেও মাত্র ছয়জন রলুলের কথা বিভিন্ন সুরাতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে৷ মক্কা ও মদীনা বাসীদের অনেকেই মোটামুটি এদের ব্যাপারে কিছু ধারণা রখতেন, এবং এরা তাদেরই পরিচিত এলাকার ভিতরেই সীমাবদ্ধ ছিলেন৷
২৫/وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَى قَوْمِهِ إِنِّي لَكُمْ نَذِيرٌ مُّبِينٌ
অর্থ;-আর আমি অবশ্যই নূহ কে তার কওমের কাছে রসুল রূপে প্রেরণ করে ছিলাম৷ তিনি বললেন, নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য প্রকাশ্য সতর্ক কারী৷
২৬/أَن لاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ اللّهَ إِنِّيَ أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ أَلِيمٍ
অর্থ;-তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারও ইবাদত করবে না, আমি তোমাদের ব্যাপারে যন্ত্রনা দায়ক শাস্তির দিনের ভয় করছি৷
২৭/فَقَالَ الْمَلأُ الَّذِينَ كَفَرُواْ مِن قِوْمِهِ مَا نَرَاكَ إِلاَّ بَشَرًا مِّثْلَنَا وَمَا نَرَاكَ اتَّبَعَكَ إِلاَّ الَّذِينَ هُمْ أَرَاذِلُنَا بَادِيَ الرَّأْيِ وَمَا نَرَى لَكُمْ عَلَيْنَا مِن فَضْلٍ بَلْ نَظُنُّكُمْ كَاذِبِينَ
অর্থ;-অতঃপর তার কওমের অবিশ্বাসী প্রধানগন বলল, আমরাতো আপনাকে আমাদের মত মানুষ ছাড়া আর কিছু মনে করিনা৷ আর আমাদের মধ্যে যারা নিতান্ত নিম্ন স্তরের তাও আবার স্থুল বুদ্ধি সম্পন্ন তাদের ছাড়া কাউকে আপনার অনুস্মরণ করতে দেখিনা, এবং আমাদের উপর আপনাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব দেখিনা৷ বরং আমরা আপনাকে মিথ্যাবাদী মনে করি৷
# প্রত্যক নবী বা রসুলগনের কওমের লোকজনের ধারণা ছিল, নবী বা রসুল সাধারণের মত না হয়ে অসাধারণ কিছু হবেন৷ নূহ আঃ এর কওমও তার ব্যাতিক্রম নয়৷ তারাও কোন বিশেষত্ব না দেখেই তাঁকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করলো৷ আর তাঁর সাহাবীদের মধ্যে কোন বুদ্ধিমান বা বিচক্ষন লোক না দেখাটাই দলীল হিসেবে পেশ করল৷
২৮/قَالَ يَا قَوْمِ أَرَأَيْتُمْ إِن كُنتُ عَلَى بَيِّنَةٍ مِّن رَّبِّيَ وَآتَانِي رَحْمَةً مِّنْ عِندِهِ فَعُمِّيَتْ عَلَيْكُمْ أَنُلْزِمُكُمُوهَا وَأَنتُمْ لَهَا كَارِهُونَ
অর্থ;-নূহ বললেন, হে আমার কওম, তোমরাকি দেখনি আমি আমার রবের ‘বাইয়েনা’র উপর ছিলাম৷ তারপক্ষ থেকে তার রহমত আমার উপর এল, যা তোমাদের চোখের আড়াল করা হয়েছে৷ তোমরা যাকে অস্বীকার করছ, আমিকি তাকে জোর করে চাপিয়ে দিতে পারি?
“বাইয়েনা’শব্দটি এ সুরায় বার বার আসবে, যার কথা আগেই বলা হয়েছে৷ নূহ আঃ তাঁর কওমের লোকদের বললেন, আমিতো তোমাদের মাঝে দীর্ঘদিন আছি৷ আমার চরিত্র ব্যবহার যা ছিল তা তোমরা দেখেছ৷ আমিতে বাইয়েনার উপরই ছিলাম (পূন্যাত্মার মানুষ) আল্লাহ আমার কাছ ফেরেশ্তা মারফত ওহী পাঠান, যাকে তোমাদের চোখের আড়ালে রাখা হয়েছে৷ আর আমিতো তোমাদের সতর্কই করছি, তোমরা যা অস্বীকার করছ, আমি তো তা জোর করে তোমাদের উপর চাপাচ্ছি না৷
২৯/وَيَا قَوْمِ لا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مَالاً إِنْ أَجْرِيَ إِلاَّ عَلَى اللّهِ وَمَآ أَنَاْ بِطَارِدِ الَّذِينَ آمَنُواْ إِنَّهُم مُّلاَقُو رَبِّهِمْ وَلَـكِنِّيَ أَرَاكُمْ قَوْمًا تَجْهَلُونَ
অর্থ;-আর হে আমার কওম, আমিকি তোমাদের কাছে কোন মাল দাবী করি? আর আমার বদলাতো শুধু আল্লাহর কাছেই রয়েছে৷ আর যারা ইমান এনেছে তাদেরতো আমি তাড়িয়ে দিতে পারিনা৷ অবশ্যই তারা তাদের পালনকর্তার সাক্ষাত লাভ করবে৷ বরং আমি তোমাদের এক অজ্ঞ সম্প্রদায় রূপেই দেখছি৷
# কোন নবীই তার উম্মতের কাছে বিনিময় বা পারিশ্রমিক দাবী করেননি৷ আর যারাই তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছেন, তাঁরাই তাঁর আপনজন হয়েছেন৷ সাধারণতঃ এরা অত্যন্ত সাধারণ শ্রেনী থেকেই এসে থাকেন৷ নবী তাদের ত্যাগ করতে পারেন না৷ আমরা দেখেছি আমদের রসুলকে আল্লাহ তাঁর সাহাবীদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকতে বলে ছেন৷
৩০/وَيَا قَوْمِ مَن يَنصُرُنِي مِنَ اللّهِ إِن طَرَدتُّهُمْ أَفَلاَ تَذَكَّرُونَ
অর্থ;-আর হে আমার কওম, আল্লাহর কাছ থেকে কে আমায় রক্ষা করবে যদি আমি তাদের তাড়িয়ে দিই৷ তোমরাকি চিন্তা করনা?
# যারা সত্য গ্রহন করেছে, তাদের তাড়ানোতো যায়না৷ আর এর পরিনামে আল্লাহ যখন কেয়ামতে পাকড়াও করবেন তখন আল্লাহর হাত থেকে কে রক্ষা করবে, আমি এ বিষয়টা চিন্তা করি৷ তোমরাও যদি চিন্তা করতে তবে বুঝতে৷
৩১/وَلاَ أَقُولُ لَكُمْ عِندِي خَزَآئِنُ اللّهِ وَلاَ أَعْلَمُ الْغَيْبَ وَلاَ أَقُولُ إِنِّي مَلَكٌ وَلاَ أَقُولُ لِلَّذِينَ تَزْدَرِي أَعْيُنُكُمْ لَن يُؤْتِيَهُمُ اللّهُ خَيْرًا اللّهُ أَعْلَمُ بِمَا فِي أَنفُسِهِمْ إِنِّي إِذًا لَّمِنَ الظَّالِمِينَ
অর্থ;-আর আমি এও বলিনা যে, আমার কাছে আল্লাহর ধন-ভাণ্ডার আছে৷ আর আমি অদৃশ্যের খবরও জানিনা, আর না আমি নিজেকে ফেরেশ্তা বলি৷ আর তোমাদের দৃষ্টিতে যারা হেয়, তাদের আল্লাহ কল্যান দেবেন না তাও বলিনা৷ তাদের অন্তরে যা আছে তা আল্লাহ জানেন৷ (সুতরাং এমন কথা বললে) অবশ্যই আমি জালীমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ব৷
৩২/قَالُواْ يَا نُوحُ قَدْ جَادَلْتَنَا فَأَكْثَرْتَ جِدَالَنَا فَأْتَنِا بِمَا تَعِدُنَا إِن كُنتَ مِنَ الصَّادِقِينَ
অর্থ;-তারা বলল, হে নূহ, আপনি আমাদের সাথে বাদানুবাদ করে ফেলেছেন, তা অনেক বেশিই করেছেন৷ এখন যার ভয় দেখাচ্ছেন তা নিয়ে আসেন, যদি আপনি সত্যবাদী হন৷
# সাড়ে নয় শত বৎসর ধরে দ্বীনের দাওয়াত দিতে নূহ আঃ অনেক কথাই বলেছেন, অনেক তর্কও করেছেন, অনেক আজাবের ভয়ও দেখিয়েছেন, কিন্তু আজাব আসেনি৷ তাই এখন তাদের দাবী যদি নবী আঃ এর কথা সত্য হয় তবে আজাব এনে দেখাক৷ শুধু এখানেই নয়, সব নবীর বেলায় এমনই হয়েছে৷
৩৩/قَالَ إِنَّمَا يَأْتِيكُم بِهِ اللّهُ إِن شَاء وَمَا أَنتُم بِمُعْجِزِينَ
অর্থ;-তিনি বললেন, ওটা তোমাদের কাছে আল্লাহই নিয়ে আসবেন, যখন চাইবেন৷ আর তোমরা তাকে পরাস্ত করতে পারবেনা
৩৪/وَلاَ يَنفَعُكُمْ نُصْحِي إِنْ أَرَدتُّ أَنْ أَنصَحَ لَكُمْ إِن كَانَ اللّهُ يُرِيدُ أَن يُغْوِيَكُمْ هُوَ رَبُّكُمْ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
অর্থ;-আর আমি তোমাদের হীতোপদেশ করতে চাইলেও তা ফলপ্রসু হবেনা যদি আল্লাহ তোমাদের গোমরাহ করতে চান৷ তিনিই তোমাদের রব৷ তার কাছেই তোমাদের ফিরে যেতে হবে৷
# হেদায়েত করা না করা আল্লাহর হাতে৷ আবার কেউ হেদায়েত না চাইলে আল্লাহ তাকে হেদায়েত করেন না৷ তই নূহ আঃ বললেন যে তিনি চচইলেই কাউকে হেদায়েত দিয়ে দেবেন না৷ আল্লাহই সবার রব৷ তার কাছেই ফিরে যেতে হবে৷ তার মর্জির উপরই কারও হেদায়েত নির্ভর করে৷
৩৫/أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ قُلْ إِنِ افْتَرَيْتُهُ فَعَلَيَّ إِجْرَامِي وَأَنَاْ بَرِيءٌ مِّمَّا تُجْرَمُونَ
অর্থ;-তবেকি তারা বলে, (আপনি) নিজেই এটা রচনা করে নিয়েছেন৷ আপনি বলুন, আমি যদি রচনা করে এনে থাকি, তবে সে অপরাধ আমার, আর আমি নির্দোষ সে অপরাধ হতে যা তোমরা কর৷
# নূহ আঃ এর বর্ণন চলছে৷ যে ঘটনা বলা হল তা মক্কাবাসী মুশরীকরা যেমন জানত না, তেমনই রসুল সঃ ও জানতেন না৷ অতএব এ অজানা কাহিনী ওহীর মাধ্যমেই এসেছে৷ এর পরও যদি কেউ বলে, রসুল সঃ নিজেই এ কিতাব রচনা করেছেন, তবে রসুল অন্যায় করেছেন, তাই তিনি বললেন যে তাঁর নিজের অন্যায়ের জন্য অবশ্যই তিনি দায়ী, কিন্তু এ কিতাব অমান্য করে তোমরা যা অন্যায় করছ, তার জন্য আমি দায়ী নই৷ দায়ী তোমরাই থাকবে৷
বিষয়: বিবিধ
১৪১০ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ আমাদের যে কোন আযাব হতে রক্ষা করুন। আমিন।
আর আপনার যাত্রা শুভ করুন। আমিন।
জাজাকাল্লাহ খায়ির চাচাজান ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন