"তারাকি অতীত কালে যা ঘটে গেছে তার মত ঘটনারই অপেক্ষায় আছে?"
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ১২ জুন, ২০১৫, ০৬:৩৬:১২ সন্ধ্যা
(উর্দু বয়ানুল কোরআনের বাংলা অনুবাদ৷)৷
সুরা ইউনুস রুকু;-১০ আয়াত;-৯৩-১০৩
৯৩/وَلَقَدْ بَوَّأْنَا بَنِي إِسْرَائِيلَ مُبَوَّأَ صِدْقٍ وَرَزَقْنَاهُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ فَمَا اخْتَلَفُواْ حَتَّى جَاءهُمُ الْعِلْمُ إِنَّ رَبَّكَ يَقْضِي بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيمَا كَانُواْ فِيهِ يَخْتَلِفُونَ
অর্থ;-আর আমি বনী ইস্রাঈলকে থাকার জন্য উৎকৃষ্ট বাসস্থান দান করলাম এবং আমি তাদেরকে উত্তম বস্তু রিজিক দিলাম৷ বস্তুতঃ তারা মতভেদ করেনি যতক্ষন না তাদের কাছে জ্ঞান এসে পৌঁছল৷ নিশ্চয় আপনার রব কেয়ামতের দিন তাদের মতভেদের ব্যাপারে মিমাংসা করে দেবেন৷
# ফেরাউনের কবল থেকে উদ্ধার করার পর আল্লাহ তায়ালা বণী ইস্রাঈলকে সীনায়ে পেনিন সুলায় অল্প আয়াসে উপাদেয় আহার সঙ্গে পানীয় পানিরও ব্যাবস্থা সাথে মেঘের ছায়া দান করে ছিলেন৷ তার যখন তাদের কাছে দ্বীনের দাওয়াত যা সত্য ও জ্ঞান সমৃদ্ধ তার প্রস্তাব দেবার পরই তারা বিকল্প পথে পা বাড়াল৷ সামেরী নামের কপট লোকটি অনেক মানুষকে বিভ্রান্ত করে গো বৎস পুঁজায় আকৃষ্ট করে ফেলে ছিল৷ আল্লাহ বলেন, কেয়ামতের দিন তাদের এ হঠকারিতার বা রসুলের বিরোধিতার ফায়সালা করবেন৷
৯৪/فَإِن كُنتَ فِي شَكٍّ مِّمَّا أَنزَلْنَا إِلَيْكَ فَاسْأَلِ الَّذِينَ يَقْرَؤُونَ الْكِتَابَ مِن قَبْلِكَ لَقَدْ جَاءكَ الْحَقُّ مِن رَّبِّكَ فَلاَ تَكُونَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِينَ
অর্থ;-আর আপনি যদি সন্দেহে থাকেন, যা আমি আপনার প্রতি নাজিল করেছি সে সন্বন্ধে তবে আপনি তাদের কে জিজ্ঞেস করুন যারা আপনার পূর্বের কিতাব পাঠ করে৷ অবশ্যই আপনার কাছে আপনার রবের পক্ষ হতে সত্য এসেছে৷ সুতরাং আপনি কখনও সন্দেহ কারীদের দলে হবেন না৷
# পারত পক্ষে কথা গুলো রসুল সঃ কে খেতাব করে বলা হলেও আসলে তা মুশরীকদেকেই বলা হচ্ছে৷ কারণ একজন নবীর মনে কখনই এমন সন্দেহ থাকতে পারেনা৷ যখন কেউ কারও উপর এমনই অসন্তুষ্ট হয় যে তার সাথে সরাসরি কথা না বলে অন্যের মাধ্যমে বলে৷ এটিও তাই৷ পরের আয়াতে তার কিছু প্রমান মেলে;
৯৫/وَلاَ تَكُونَنَّ مِنَ الَّذِينَ كَذَّبُواْ بِآيَاتِ اللّهِ فَتَكُونَ مِنَ الْخَاسِرِينَ
অর্থ;-আপনি কখনও তাদের দলভুক্ত হবেন না যারা, আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করেছে৷
৯৬/إِنَّ الَّذِينَ حَقَّتْ عَلَيْهِمْ كَلِمَتُ رَبِّكَ لاَ يُؤْمِنُونَ
অর্থ;-নিশ্চয় যাদের ব্যাপারে আপনার রবের সিদ্ধান্ত নির্ধারিত হয়ে গেছে তারা ইমান আনবে না৷
# সত্য অন্তরে প্রকাশ পাবার পরও যারা তা গ্রহন করেনা, অহংকার ও হঠকারীতার দ্বারা তাকে প্রত্যাখ্যান করে, তাদের অন্তরে আল্লাহ শীলগালা করে দেন৷ এটাই তার নির্ধারিত সিদ্ধান্ত৷ এর পর আর তাদের ইমান আনার পথ খোলা থাকেনা৷
৯৭/وَلَوْ جَاءتْهُمْ كُلُّ آيَةٍ حَتَّى يَرَوُاْ الْعَذَابَ الأَلِيمَ
অর্থ;-যদি তাদের সামনে প্রতিটি নিদর্নও এসে যায় তবুও তারা কঠোর আজাব প্রত্যক্ষ না করে ইমান আনবে না৷
# আবার এরা যখন কঠিন আজাবের মুখোমুখী হয় তখনই ইমান আনার কথা বলে৷ কিন্তু তার পরিনতী আমরা ফেরাউনের বেলায় দেখেছি৷ যা বিফলে গেছে৷
৯৮/فَلَوْلاَ كَانَتْ قَرْيَةٌ آمَنَتْ فَنَفَعَهَا إِيمَانُهَا إِلاَّ قَوْمَ يُونُسَ لَمَّآ آمَنُواْ كَشَفْنَا عَنْهُمْ عَذَابَ الخِزْيِ فِي الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَمَتَّعْنَاهُمْ إِلَى حِينٍ
অর্থ;-কোন জনপদ বাসী এমন কেন হলনা যে তারা ইমান আনতো আর তাদের ইমান আনা কল্যানকর হত, অবশ্য ইউনুসের কওম ছাড়া৷ যখন তারা ইমান আনলো আমি তখন তাদের উপর থেকে পার্থিব ঘৃন্য আজাব তুলে নিলাম ও তাদেরকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত উপভোগ করতে দিলাম৷
# সময় মত জীবন আনাই জীবনে কল্যান বয়ে আনে৷ আজাব আপতিত হবার পর ইমান আনা কোন কাজে আসেনা৷ সে ইমান কবুল হয়না৷ কিন্তু কওমে ইউনুস আঃ এর জন্য কিছুটা ব্যাতিক্রম হয়েছিল৷
কোন নবীকে যখন রসুল মনোনীত করে কোন কওমের কাছে পাঠানো হয়, তখন ঐ রসুল আল্লাহর হুকুম বা অনুমতি ছাড়া ঐ কওম ছাড়তে পারেন না৷ এটাই আল্লাহর নিয়ম৷ কওম যত কষ্টই দিক বা যত লাঞ্ছনাই দিক৷ যেমন আমরা সীরাতুন নবীর মাধ্যমে জানতে পারি রসুল সঃ অন্য সাহাবীদের হিজরত করার অনুমতি দিলেও নিজে বিপদের কথা জেনেও আল্লাহর অনুমতির অপেক্ষায় ছিলেন৷ হজরত আবুবকর রাঃ রসুলের অগোচরে দ্রুত হিজরতের সব ব্যবস্থা করে, প্রায়ই রসুল সঃ কে জিজ্ঞেস করতেন অনুমতি হয়েছে কিনা৷
হজরত ইউনুস আঃ নিজ কওমের প্রতি এতই অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েছিলে যে, আল্লাহর অনুমতির অপেক্ষা না করে, তিন দিনের মধ্যে আজাব আসার অগ্রিম ঘোষনা দিয়ে স্থান ত্যাগ করে ছিলেন৷ এদিকে ঠিকই যখন আল্লাহর আজাব শুরু হল তখন কওম সত্য উপলব্ধি করে, সকলে মিলিত ভাবে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে তওবা করল৷ রসুলের সামান্য ভুল তদের জমার খাতায় জমা হল৷ তারই বিনিময়ে আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করে সাময়ীক ভাবে পার্থিব আজাব তুলে নিয়ে দুনিয়া উপভোগের সুযোগ দিলেন৷
আয়াতে পার্থিব আজাব বলা হয়েছে যাতে করে বলা যায় তাদের হঠকারিতা ও রসুলের কথায় ইমান না আনার পরকালীন আজাব রয়েই গেছে৷ কেননা ইমান আনার পর পিছনের গোনাহ মাফ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যার জন্য মুসা আঃ শেষ মুহূর্তে ফেরাউন ও তার অনুসারীদের হৃদয় কঠিন করে যাতে, আজাব আসার আগে ইমান না আনতে পারে তার জন্য দোওয়া করেছিলেন৷
৯৯/وَلَوْ شَاء رَبُّكَ لآمَنَ مَن فِي الأَرْضِ كُلُّهُمْ جَمِيعًا أَفَأَنتَ تُكْرِهُ النَّاسَ حَتَّى يَكُونُواْ مُؤْمِنِينَ
অর্থ;-আর আপনার রব যদি চাইতেন তবে পৃথিবীতে যারাই আছে তারা সকলে সমবেত ভাবে ইমান আনত৷ আপনি কি মানুষকে মুমিন হতে জবরদস্তি করবেন?
# আল্লাহ ইচ্ছা করলে পৃথিবীর সকল মানুষ এক মুহূর্তে একই সাথে ইমান আনত৷ কিন্তু দুনিয়া মানুষের পরীক্ষার ক্ষেত্র হওয়াতে, আল্লাহ দেখতে চান কে সেচ্ছায় ইমান আনে আর ভাল কাজ করে বিনিময়ে অনন্ত কালের জন্য বেহেশ্ত অর্জন করতে পারে৷ আর সে জন্যই দ্বীনে কোন জবর দস্তি নেই৷ তিনি রসুল কেও সাবধান করে দিলেন৷ সুরা ‘আনআম’ এও এ কথা বলা হয়েছে৷
১০০/وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَن تُؤْمِنَ إِلاَّ بِإِذْنِ اللّهِ وَيَجْعَلُ الرِّجْسَ عَلَى الَّذِينَ لاَ يَعْقِلُونَ
অর্থ;-আল্লাহর হুকুম ছাড়া কারো পক্ষে ইমান আনা সম্ভব নয়৷ যারা বুদ্ধি প্রয়োগ করেনা তাদের উপর অপবিত্রতা আরোপ করেন৷
# যারা বুদ্ধি বিবেচনা করে, সৃষ্টিকে দেখে স্রষ্টার প্রতি আকৃষ্ট হয় ও বিশ্বাস স্থাপন করে, হেদায়েত চাইলে তারাই কেবল হেদায়েত পায়৷ আর তখনই আল্লাহ তাদের অনুমতি দেন৷ এ আয়াত টিতে এমন কথাই বলা হয়েছে৷ অন্যথায় স্বাধীনতা থাকেনা৷ আর যারা বুদ্ধি খাটায়না, ইমানও আনেনা তাদের অন্তরে আল্লাহ ময়লার প্রলেপ দিয়ে দেন, ফলে তা অচল হয়ে যায়৷ এটাই মোহর মারা৷
১০১/قُلِ انظُرُواْ مَاذَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَا تُغْنِي الآيَاتُ وَالنُّذُرُ عَن قَوْمٍ لاَّ يُؤْمِنُونَ
অর্থ;-আপনি বলুন, তোমরা লক্ষ্য কর আসমান ও জমিনে কি রয়েছে৷ কোন নিদর্শন আর কোন ভীতি প্রদর্শনই কাজে আসেনা যারা ইমান আনেনা৷
# বুদ্ধি বিবেচনা প্রসূত বিশ্বাস বা ইমানই মূল বিষয়৷ বিশ্ব প্রকৃতি কার নিয়ন্ত্রনে এমন সুষ্ঠ ভাবে চলছে৷ কার হুকুমে প্রকৃতি আপন আপন দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে, কার হকুমে বিশ্ব প্রকৃতি মানুষে অনুকূলে আসছে, কে দিয়েছে সে কৌশল, বুদ্ধি জ্ঞ্যান৷ এর পিছনের নিয়ন্ত্রককেই যে বিশ্বাস করেনা, তাকে যত নিদর্শন আর যা আজাবের ভয় দেখানো হোক তাতে কাজ হবেনা৷ যেমন জেগে থাকা মানুষকে জাগানো যায়না৷
১০২/فَهَلْ يَنتَظِرُونَ إِلاَّ مِثْلَ أَيَّامِ الَّذِينَ خَلَوْاْ مِن قَبْلِهِمْ قُلْ فَانتَظِرُواْ إِنِّي مَعَكُم مِّنَ الْمُنتَظِرِينَ
অর্থ;-তারাকি অতীত কালে যা ঘটে গেছে তার মত ঘটনারই অপেক্ষায় আছে? আপনি বলে দিন, তবে তোমরা অপেক্ষায় থাক৷ আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষায় থাকলাম৷
# পূর্বে যা ঘটে গেছে, যাকে ‘আইয়ামুল্লাহ’ বলা হয়৷ পূর্বের রসুলদের কওমরা অস্বীকার করার ফলে আজাবও ধ্বংস প্রাপ্ত হয়৷ মুশরীকরাও কি তেমন ধ্বংসেরই যদি অপেক্ষা করে তবে নবী কেও তাদের সাথে অপেক্ষা করতেই বলা হল৷
১০৩/ثُمَّ نُنَجِّي رُسُلَنَا وَالَّذِينَ آمَنُواْ كَذَلِكَ حَقًّا عَلَيْنَا نُنجِ الْمُؤْمِنِينَ
অর্থ;-অতঃপর আমি বাঁচিয়ে নিই আমার রসুলদেরকে আর তাদেরকে যারা ইমান এনেছে৷ এমনই ভাবে মুমিনদের সরিয়ে নেওয়া আমার দায়িত্ব৷
# প্রত্যেক রসুল এর বেলায়ই আমরা দেখেছি যামান রসুল ও তাঁর সাহাবী বা অনুসারীদের আল্লাহ ঠিকই কৌশলে সরিয়ে নিয়েই অবিশ্বাসীদের ধ্বংস করেছেন৷ প্রায় প্রতি কওমেই কিছুনা কিছু ইমানদার ছিলেন তারাও নবীর সাথে নিরাপদে সরে এসেছিলেন শুধু সদুম আর আমুরা বস্তির এক জনও ছিলনা, হজরত লূত আঃ ও তাঁর দুই মেয়ে রক্ষা পায়৷ নবীর স্ত্রীও ধ্বংস হয়৷ মুমিনদের নিরাপত্তা দেওয়াকে আল্লাহ তার দায়িত্ব মনে করেন৷ আর রসুলদের বেলায় বলেছেন, তিনি ও তার রসুল অবশ্যই বিজিত হবেন৷
বিষয়: বিবিধ
১২০২ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আইয়ামুল্লাহ এর ঘটনাগুলো কোরানে এতো বিস্তারিত বিবরন আছে তা জানা ও পড়ার পরেও আমাদের ঈমান শক্ত হচ্ছে না! এখনো মতভেদের কঠিন দেয়ালে আটকে আছি আমরা!
জাযাকাল্লাহু খাইর!
মন্তব্য করতে লগইন করুন