" নিশ্চয় যারা আল্লাহ সন্মন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করে তারা সফলকাম হয়না"
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ২৯ মে, ২০১৫, ০৭:১১:০৫ সন্ধ্যা
(বয়ানুল কোরআনের ধারা বাহিক অনুবাদ)
ইউনুস রুকু;-৭ আয়াত;-৬১-৭০
বিশ্বে যা কিছু ঘটে, তা সে যত গোপনেই হোক, প্রত্যেকটি ঘটনারই প্রত্যক্ষ সাক্ষী আল্লাহ তায়ালা৷ কোন কিছুই তার অজান্তে ঘটে না৷ এ কথা নিয়েই আসছে এরুকুর প্রথম আয়াত টি;-
৬১/وَمَا تَكُونُ فِي شَأْنٍ وَمَا تَتْلُو مِنْهُ مِن قُرْآنٍ وَلاَ تَعْمَلُونَ مِنْ عَمَلٍ إِلاَّ كُنَّا عَلَيْكُمْ شُهُودًا إِذْ تُفِيضُونَ فِيهِ وَمَا يَعْزُبُ عَن رَّبِّكَ مِن مِّثْقَالِ ذَرَّةٍ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاء وَلاَ أَصْغَرَ مِن ذَلِكَ وَلا أَكْبَرَ إِلاَّ فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ
অর্থ;-আর তুমি যে অবস্থাই থাক, আর আপনি যা কিছু তা থেকে (কোরআন) তেলাওয়াত করেন, আর তোমরা যে আমলই কর, অবশ্যই আমি সাক্ষী হয়ে থাকি, যখন তোমরা তাতে আত্মনিয়োগ কর৷ আসমান ও জমীনের অনু পরিমানও তোমার রবের থেকে গোপন থাকে না৷ এবং এর চাইতে ছোট বা বড় কিছু নেই যা স্পষ্ঠ কিতাবে নেই৷
# যা কিছু ঘটে, যে কাজই বান্দা করে, রসুল সঃ কোরআনের আয়াত যাই মানুষকে পড়ে শোনান, এ সবের নীরব সাক্ষী আল্লাহ তায়ালা৷ কোন কিছুই তার অজান্তে ঘটার সম্ভাবনা নেই৷ আর অতি তুচ্ছাতি তুচ্ছ হতে অতি বৃহত সকল জিনিষের বর্ণনা বা খবর এ কোরআনে আছে৷ মুশরীকরা সাহাবীদের বলত, কোরআন একটি তুচ্ছ কিতাব, কারণ এতে পিপড়া মাকড়সার মত তুচ্ছ জিনিষের বর্ণনা আছে৷ শুনে রসুল সঃ সাহাবীদের বলতে শিখিয়ে দিতেন, নবী এস্তেঞ্জা করার শিক্ষাও এ থেকে দিয়ে থাকেন৷
৬২/أَلا إِنَّ أَوْلِيَاء اللّهِ لاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ
অর্থ;-মনে রেখো, যারা আল্লাহর ওলী, তাদের জন্য কোন ভয় ভীতি নেই, তারা দুঃখীতও হবেনা৷
# ওলী শব্দের অর্থ বন্ধু বা অভিভাবক করা হয়ে থাকে৷ এখানে বন্ধু বা আল্লাহর প্রীয় পাত্রকেই বোঝানো হয়েছে৷ এঁরা কোন বিশেষ সৃষ্টি নন৷ এঁরাও সাধারণ মুসলীম৷ প্রকৃত মুমিন হিসেবে তাকওয়া অবলম্বনের মাধ্যমেই এঁরা ক্রমশঃ উচ্চস্থানের মর্যাদায় ভুষীত হয়েছেন৷ সুখ দুঃখ জীবনে যাই আসুক এঁরা তাকে আল্লাহর অনুগ্রহ হিসেবেই গ্রহন করেন৷ সুরা মাঈদায় আমরা পড়ে এসেছি তারা ইমান আনে আর তাকওয়া করে সালাহীন স্তরে পৌঁছে৷ আরও তাকওয়া করে মহসীন স্তরে পৌঁছে যায়৷ তারা নামাজে এতই মনযোগী হয় যে, মনেকরে আল্লাহর সামনা সামনি দাঁড়িয়েছে, উভয়ে উভয়কে দেখতে পাচ্ছে৷ বিচারের দিন তাঁরা ভীত হবেননা বা কোন দুঃখ হতাশাও তাদের কাছে আসবে না৷ এঁরাই প্রকৃত সফল কাম৷ পরের আয়াতে এদের সংক্ষেপ সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে৷
৬৩/الَّذِينَ آمَنُواْ وَكَانُواْ يَتَّقُونَ
অর্থ;-যারা ইমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে৷
৬৪/لَهُمُ الْبُشْرَى فِي الْحَياةِ الدُّنْيَا وَفِي الآخِرَةِ لاَ تَبْدِيلَ لِكَلِمَاتِ اللّهِ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
অর্থ;-তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ দুনিয়ার জীবনে এবং আখেরাতেও৷ আল্লাহর বাণীর কোন হেরফের হয়না৷ এটাই মহা সাফল্য৷
# প্রকৃত মুমিনদের কথাই বা হয়েছে৷ আর প্রকৃত মুমিন কারা তা আমরা আগেই জেনে এসেছি৷ তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাত উভয় স্থানেই রয়েছে সাফল্য৷ আর আল্লাহর বাণীর কোনই হেরফের হয়না৷
৬৫/وَلاَ يَحْزُنكَ قَوْلُهُمْ إِنَّ الْعِزَّةَ لِلّهِ جَمِيعًا هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
অর্থ;-আর আপনাকে যেন তাদের কথা দুঃখ না দেয়৷ নিশ্চয়ই সমস্ত শক্তি আল্লাহর৷ তিনি সব শোনেন সব জানেন৷
৬৬/أَلا إِنَّ لِلّهِ مَن فِي السَّمَاوَات وَمَن فِي الأَرْضِ وَمَا يَتَّبِعُ الَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِ اللّهِ شُرَكَاء إِن يَتَّبِعُونَ إِلاَّ الظَّنَّ وَإِنْ هُمْ إِلاَّ يَخْرُصُونَ
অর্থ;-জেনে রেখো, যা কিছু পৃথিবীতে আছে আর যা কিছু আকাশে আছে সবই আল্লাহর৷ আর যারা আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কিছুর উপাসনা করে, তারা কল্পনার পিছনে পড়ে রয়েছে৷ তারা আজগুবী কথা ছাড়া কিছুই বলে না৷
৬৭/هُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ لِتَسْكُنُواْ فِيهِ وَالنَّهَارَ مُبْصِرًا إِنَّ فِي ذَلِكَ لآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَسْمَعُونَ
অর্থ;-তিনি সেই সত্তা যিনি তোমাদের জন্য রাত সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাতে বিশ্রাম কর৷ এবং দিন সৃষ্টি করেছেন দেখার জন্য৷৷ নিশ্চয়ই এতে নিদর্শন রয়েছে তাদের জন্য যারা শ্রবন করে৷
# আল্লাহ তায়ালা মানুষের বিশ্রামের জন্য সৃষ্টি করেছেন৷ আর সেই সঙ্গে দিনকে আলোকময় করেছেন, যাতে সব কিছু দৃশ্যমান হয়, মানুষ সহজে বিচরণ করে তার জীবিকা অর্জন সহ সকল কাজ সহজে সমাধা করতে পারে৷ জ্ঞান পিপাসুদের জন্য এ সবের মধ্যে যথেষ্ট চিন্তার খোরাক রয়েছে৷
৬৮/قَالُواْ اتَّخَذَ اللّهُ وَلَدًا سُبْحَانَهُ هُوَ الْغَنِيُّ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَات وَمَا فِي الأَرْضِ إِنْ عِندَكُم مِّن سُلْطَانٍ بِهَـذَا أَتقُولُونَ عَلَى اللّهِ مَا لاَ تَعْلَمُونَ
অর্থ;-তারা বলে, আল্লাহ সন্তান গ্রহন করেছেন৷ তিনি মহানপবিত্র, তিনি অমুখাপেক্ষী৷ যা কিছু রয়েছে আসমানে ও জমীনে সবই তার৷ এ দাবীর পক্ষে তোমাদের কোন সনদ নেই৷ তোমরা কি আল্লাহ সন্বন্ধে এমন কথা বলছ যা তোমরা জান না?
# দুনিয়ায় বংশ বজায়, অসময়ের সাহায্য কারী, বা জনবল বৃদ্ধির জন্যই সন্তানের প্রয়োজন হয়। আল্লাহ তালার কোন অবস্থাতেই এর কোনটিরই প্রয়োজন নেই৷ অতএব, আল্লাহর সন্তানের কোনই প্রয়োজন নেই৷ যারা এগুলো জানেনা বা মানেনা তারাই এমন কথা বলে থাকে৷ আমরা জানি, ইহুদীরা উজাইর আঃ কে আর খ্রীষ্টানরা ইশা আঃ কে আল্লাহর পুত্র বলে থাকে৷
৬৯/قُلْ إِنَّ الَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللّهِ الْكَذِبَ لاَ يُفْلِحُونَ
অর্থ;-বলুন, নিশ্চয় যারা আল্লাহ সন্মন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করে, তারা সফলকাম হয়না৷
৭০/مَتَاعٌ فِي الدُّنْيَا ثُمَّ إِلَيْنَا مَرْجِعُهُمْ ثُمَّ نُذِيقُهُمُ الْعَذَابَ الشَّدِيدَ بِمَا كَانُواْ يَكْفُرُونَ
অর্থ;-দুনিয়ার আরাম আয়েশ ক্ষনিকের মাত্র৷ অতঃপর তাদের আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে৷ তখন আমি তাদের কুফরীর কারণে কঠোর আজাব আস্বাদন করাবো৷
# যে যাই করুক, তাকে তার মেয়াদ শেষে মৃত্যুবরণ করতেই হবে আর হিসাব নিকাশ বুঝিয়ে দিতে ও নিতে আল্লাহর সামনে হাজির হতেই হবে৷ ভাল কাজের পুরষ্কার যেমন আছে, তেমনই আছে মন্দ কাজের শাস্তি৷
বিষয়: বিবিধ
১০৭৮ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ইহুদীরা উজাইর আঃ কে আল্লাহর পুত্র বলে থাকে (নাউঃ)।
এ বিষয়ে আমার কোন জ্ঞান নেই। যদি একটু খুলে বলতেন তাহলে ভাল হতো।
অনেক অনেক ধন্যবাদ চাচাজান ।
আল্লাহ আমাদের ঈমান এবং তাকওয়ার গুনে গুনান্বিত করুন! যেদিন রবের দরবারে ফিরে যাব সেদিন আমাদের কৃতকার্যদের তালিকায় রাখুন!
জাযাকাল্লাহ!
মন্তব্য করতে লগইন করুন