"মনে রেখো, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য, তবে অনেকেই তা জানেনা"৷

লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ২২ মে, ২০১৫, ০২:১২:৩৬ রাত

(উর্দু বয়ানুল কোরআনের ধারাবাহিক বাংলা অনুবাদ)

ইউনুস রুকু;-৬ আয়াত;-৫৪-৬০

আজাব প্রত্যক্ষ করার পর মানুষের মানষীক অবস্থার কিছু বর্ণনা নিয়ে আসছে আলোচ্য রুকুর প্রথম আয়াত টি;

৫৪/وَلَوْ أَنَّ لِكُلِّ نَفْسٍ ظَلَمَتْ مَا فِي الأَرْضِ لاَفْتَدَتْ بِهِ وَأَسَرُّواْ النَّدَامَةَ لَمَّا رَأَوُاْ الْعَذَابَ وَقُضِيَ بَيْنَهُم بِالْقِسْطِ وَهُمْ لاَ يُظْلَمُونَ

অর্থ;-যদি পৃথিবীর সমুদয় বস্তু জালীমদের থাকত, তা সে নিজের মুক্তির বিনিময়ে দিয়ে দিত৷ এবং যখন তারা আজাব দেখবে তখন অনুতাপ গোপন করবে৷ বস্তুতঃ তাদের মিমাংসা ন্যায়ের সাথে হবে আর তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না৷

# আজাব প্রত্যক্ষ করে অপরাধীরা নিজেদের অপরাধ গোপন করার চেষ্টা করবে, আর মনে মনে কল্পনা করবে যদি সমস্ত দুনিয়ার সব জিনিষের মালিক আমি হতাম তবে আজ সমস্ত কিছুর বিনিময়ে হলেও রেহাই পাবার চেষ্টা করতাম৷ কিন্তু তেমন সুযোগ কারও জন্যই থাকবে না৷ তবে কারও প্রতি অন্যায় বিচার করা হবেনা৷ আল্লাহর এ ভবিষ্যত বাণী এজন্যই যে, বিনিময়ের পথ বন্ধ হওয়ার আগে দুনিয়ায় থাকতেই সাবধান হও৷

৫৫/أَلا إِنَّ لِلّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ أَلاَ إِنَّ وَعْدَ اللّهِ حَقٌّ وَلَـكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لاَ يَعْلَمُونَ

অর্থ;-মনে রেখো, আসমান ও জমীনে যাকিছু আছে সবই আল্লাহর৷ মনে রেখো, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য, তবে অনেকেই তা জানেনা৷

# কেয়ামতের দিন মালের বিনিময়ে মুক্তির কথা ভাববার কথা আগের আয়াতে বলা হয়েছে, এ আয়াতে আল্লাহ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, কার মাল কারে দিতে চাচ্ছে৷ সব মালইতো আল্লাহর৷ পার্থিব জীবনেই শুধু ব্যবহারের জন্য তোমাদের তা থেকে কিছু দেওয়া হয়েছিল৷

৫৬/هُوَ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ

অর্থ;-তিনিই জীবিত রাখেন, তিনিই মৃত্যু দেন৷ এবং তাঁরই কাছে ফিরে যেতে হবে৷

৫৭/يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءتْكُم مَّوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَشِفَاء لِّمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ

অর্থ;-হে মানুষ, তোমাদের রবের কাছ থেকে তোমাদের কাছে উপদেশ বাণী এসে গেছে; এবং অন্তরে যা আছে তার নিরাময়, আর হেদায়েত ও মুমিনদের জন্য রহমত৷

# পবিত্র কোরআনের গুরুত্ব ও মহাত্ম বর্ণনায় এ আয়াত টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে৷ এখানে ধারাবাহিক ভাবে চারটি বিষয়ের কথা বলা হয়েছে৷ যথা-নসিহত, নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত৷ আচট বা শক্ত মাটিতে, যে মাটি পানি শোষন করেনা, নরম হয়না, তাতে যেমন ফষল হয়না, তেমনই যে অন্তরে মলিনতা বা পার্থিব প্রলেপ পড়ে শক্ত হয়ে গেছে সেখানে ভাল কথাও ঠাঁই পায়না৷ কোরআনের নসিহত সে অন্তরকে নরম করে, মলিনতা দূর করে হেদায়েতের প্রবেশ পথ বানিয়ে দেয়৷ আর সেই হেদায়েতের পথেই আসে মুমিনের জন্য আল্লাহর রহমত৷হজরত ওমর এর ইসলাম গ্রহনের পটভূমীকা আমরা অনেকেই জানি৷ এ আয়াতেরই প্রমান৷

আমরা সুরা আলে ইমরাণের ১৪ নং আয়াতে পড়ে এসেছি, সুন্দরী নারী, সন্তানাদী, অর্থ সম্পদকে মনোরম, আকর্ষনীয় করে রাখা হয়েছে, যা মানুষের অন্তরে প্রলেপ দিয়ে অন্তর কে কঠীন করে দেয়৷ কোরআন সে কাঠিন্য দূর করেই অন্তর কে নরম করে দেয়৷ কোরআনই হোক আমাদের একমাত্র পাথেয়৷ আমিন৷

৫৮/قُلْ بِفَضْلِ اللّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُواْ هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ

অর্থ;-বলুন, এ কোরআন আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত হিসেবে, সুতরাং এ নিয়ে উল্লাস করো৷ আর যা কিছু মজুদ কর, তার চেয়ে এটি উত্তম৷

# সেই কোরআনই আমাদের দেওয়া হয়েছে৷ অবশ্যই এটা আল্লাহর অনুগ্রহ৷ আনন্দ উল্লাস যদি করতে হয় তবে এ সম্পদ নিয়েই তা করা উচিৎ৷ আবার যাকিছু মজুদ করা হয় তার চাইতে এর মজুদও উত্তম৷ এ কথায় কেউ না মনে করে ঘরে কোরআন মজুদের কথা বলা হয়েছে, বরং অন্তরে কোরআনের জ্ঞানের মজুদ গড়ে তুলতে বলা হয়েছে৷ হাদীশে আছে, ‘তোমাদের মধ্যে সেই সর্বশ্রেশ্ঠ যিনি কোরআন শিক্ষা করেন ও অন্যকে শেখান৷’

৫৯/قُلْ أَرَأَيْتُم مَّا أَنزَلَ اللّهُ لَكُم مِّن رِّزْقٍ فَجَعَلْتُم مِّنْهُ حَرَامًا وَحَلاَلاً قُلْ آللّهُ أَذِنَ لَكُمْ أَمْ عَلَى اللّهِ تَفْتَرُونَ

অর্থ;-তোমরা কি ভেবে দেখেছ, তোমাদের জন্য আল্লাহ যে রিজিক দান করেছেন, তোমরা তার কিছু হালাল করেছ আর কিছু হারাম করেছ! আপনি বলুন, আল্লাহ কি তোমাদের অনুমতি দিয়েছেন, না তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ কর৷

৬০/وَمَا ظَنُّ الَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللّهِ الْكَذِبَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّ اللّهَ لَذُو فَضْلٍ عَلَى النَّاسِ وَلَـكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لاَ يَشْكُرُونَ

অর্থ;-কেয়ামত সম্পর্কে যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে, তাদের কি ধারণা? আল্লাহ তো মানুষের প্রতি অনুগ্রহই করেন৷ কিন্তু অনেকেই কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেনা৷

# আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য অফুরন্ত রিজিক দান করেছেন৷ দিনে দিনে মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলেছে তাই বলে পৃথিবীতে খাদ্যের ঘাটতি পড়েনি৷ সাময়িক আমরা যা ভোগ করি তা মনুষ্য বানানো বন্টন রীতি ও সীমানা নির্ধারণের কারণে৷ সেই রিজিকের হালাল হারামও আল্লাহই বলে দিয়েছেন৷ কিন্তু মানুষ বা জাতি নিজ ইচ্ছা মত তার ব্যাতিক্রম করে আল্লাহর উপর দায় চাপায়৷

কেয়ামতের ব্যাপারেও মানুষ মনগড়া কথা বলে, কেউ তাকে উপহাস করে৷ আবার কেউ বলে, আমাদের সব ñআমাদের নবী নিয়ে গেছেন৷ এ গুলোও মনগড়া৷ আল্লাহ যা ঘোষনা দিয়েছেন, তার বরখেলাপ হবেনা৷ আর কারও উপর অবিচার করাও হবেনা৷ সর্বাবস্থায় বান্দার কৃতজ্ঞ হওয়া উচিৎ৷

বিষয়: বিবিধ

১৩৪৫ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

321737
২২ মে ২০১৫ রাত ০২:৩০
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ!

কোরআনের এই আয়তটি পড়লে অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করে! কেমন এক জাদু আছে !
হে মানুষ, তোমাদের রবের কাছ থেকে তোমাদের কাছে উপদেশ বাণী এসে গেছে; এবং অন্তরে যা আছে তার নিরাময়, আর হেদায়েত ও মুমিনদের জন্য রহমত৷

আসলেই আমরা যদি কোরানের উপদেশ অনুযায়ী জীবন পরিচালিত করতে পারি, তবেই অন্তরকে ব্যাধিমুক্ত রাখতে সক্ষম হব। সুস্থ অন্তরে কুর-আনের উপদেশ বা আল্লাহ্‌র হেদায়েত বা "সত্য" খুব সহজেই অনুপ্রবেশ করে, ফলে আল্লাহ্‌র করুণা, দয়া ও ক্ষমার যোগ্য হতে পারা যাবে। "মুমীনদের জন্য হেদায়েত ও রহমত" আল্লাহ্‌র হেদেয়াত, রহমত, ক্ষমা এর থেকে বড় পাওয়া মানব জীবনে আর কি থাকতে পারে? এই হেদেয়াত, রহমত, ক্ষমা লাভের উযোগ আমাদের প্রত্যেককে দান করুন! আমিন!

জাযাকাল্লাহু খাইর!

ভাইয়া প্রিয় কনটেস্ট এ আপনার প্রিয় বই সম্পর্কে লিখুন! আপনার প্রিয় সম্পর্কে জানার অপেক্ষায় আছি!
২২ মে ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:০৩
262922
শেখের পোলা লিখেছেন : অ আলায়কুমুস্সুসালাম সুন্দর মন্তব্যের জন্য আাপনাকে অশেষ ধন্যবাদ৷ পবিত্র কোরআন মানুষের কঠিন হৃদয় কোমল করতে পারে৷ হজরত উমর রাঃ তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ৷ আমিতো আপা লেখক নই,তাই প্রীয়বই থাকলেও তা লেখায় ফুটিয়ে তোলার যোগ্যতা আার নেই৷ আমার প্রীয় বই মহাগ্রন্থ কোরআন৷ তা লিখলেও কেউ পড়বে না৷আমিন৷
321754
২২ মে ২০১৫ সকাল ০৯:১৪
শেখের পোলা লিখেছেন : অ আলায়কুমুস্সুসালাম সুন্দর মন্তব্যের জন্য আাপনাকে অশেষ ধন্যবাদ৷ পবিত্র কোরআন মানুষের কঠিন হৃদয় কোমল করতে পারে৷ হজরত উমর রাঃ তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ৷ আমিতো আপা লেখক নই,তাই প্রীয়বই থাকলেও তা লেখায় ফুটিয়ে তোলার যোগ্যতা আার নেই৷ আমার প্রীয় বই মহাগ্রন্থ কোরআন৷ তা লিখলেও কেউ পড়বে না৷আমিন৷
321783
২২ মে ২০১৫ দুপুর ১২:০৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : কিয়ামতের সময় এর কথা পরে এখনই কতজন মনে করে মসজিদ মাদ্রাসা আর পির সাহেব কে টাকা দিলেই তার সব অপরাধ মাফ হয়ে যাবে। আর মানুষ আল্রাহর উপর রিযক এর জন্য ভরসা করাও যেন ছেড়ে দিয়েছে।
অনেক ধন্যবাদ
২২ মে ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:০৪
262923
শেখের পোলা লিখেছেন : ঠিকই বলেছেন৷ আপনাকে সুন্দর অনুভুতির জন্য ধন্যবাদ৷
321785
২২ মে ২০১৫ দুপুর ১২:১৯
এ,এস,ওসমান লিখেছেন : ৫৬/هُوَ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ

অর্থ;-তিনিই জীবিত রাখেন, তিনিই মৃত্যু দেন৷ এবং তাঁরই কাছে ফিরে যেতে হবে৷

কুরআনের এই আয়াতটা মনে রেখে আমাদের জীবন পরিচালনা করা উচিত।
২২ মে ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:০৬
262924
শেখের পোলা লিখেছেন : সুন্দর অুভুতির জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ৷ কোরআনের আগমনই মানুষের গাইড হিসাবে৷
321819
২২ মে ২০১৫ দুপুর ০২:৪৪
আফরা লিখেছেন : চাচাজান ব্লগ উপেন করে প্রথমেই আমি দেখি আপনার কোরআনের অনুবাদ পোষ্ট আছে কিনা ।যেদিন থাকে খুব ভাল লাগে মনের মাঝে একধরনের তৃপ্তি পাই যে ব্লগিংটাও কোরআন পাঠ দিয়ে শুরু করলাম ।

চাচা জান অনেক অনেক জাজাকাল্লাহ খাইরান ।
২২ মে ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:১০
262925
শেখের পোলা লিখেছেন : তোমার মত শ্রোতা বা পাঠক পেলে আমি প্রতি দিনই একটা করে পোষ্ট দিতে পারি ইনশাআল্লাহ৷ পাঠাবার পথ পেলে তোমাকে পুরাটাই পাঠিয়ে দেব৷ ভাল থাক৷
322627
২৬ মে ২০১৫ দুপুর ০২:২৮
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : খুব ভালো লাগলো। কুরআন বুঝা সহজ করার নিমিত্তে আপনার এ প্রয়াস আল্লাহ কবুল করন। আমীন।
২৬ মে ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:২৬
263832
শেখের পোলা লিখেছেন : উৎসাহ মূলক মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File