"সত্যের ব্যাপারে অনুমান কোন কাজেই আসেনা৷ নিশ্চয় আল্লাহ সবিশেষ অবহিত তারা যা করে৷"
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ১২ মে, ২০১৫, ০৭:২৯:৩৪ সন্ধ্যা
ইউনুস রুকু;-৪ আয়াত;-৩১-৪০
মুশরীক কোরাইশদের দেবতারা আল্লাহর কাছে তাদের সুপারিশ কারী, একথা আমরা ১৮ নং আয়াতে জেনে এসেছি৷ সৃষ্টিকরতা হিসেবে তারা আল্লাহকেই জানে৷ একথা নিয়ে আসছে এরুকুর প্রথম আয়াতটি৷
৩১/قُلْ مَن يَرْزُقُكُم مِّنَ السَّمَاء وَالأَرْضِ أَمَّن يَمْلِكُ السَّمْعَ والأَبْصَارَ وَمَن يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيَّتَ مِنَ الْحَيِّ وَمَن يُدَبِّرُ الأَمْرَ فَسَيَقُولُونَ اللّهُ فَقُلْ أَفَلاَ تَتَّقُونَ
অর্থ;-আপনি বলুন, কে তোমাদের আসমান জমীন থেকে রিজিক দান করেন, অথবা কার মালিকানায় রয়েছে তোমাদের দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবনশক্তি, আর কে বার করেন জীবিত থেকে মৃতকে ও মৃত থেকে বার করেন জীবিতকে, এবং কে যাবতীয় বিষয় নিয়ন্ত্রন করেন? তখন তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ৷ বলুন, তবুওকি তোমরা সতর্ক হবেনা!
# অনেক মুশরীকই বিশ্বাস করে যে, আল্লাহই সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা৷ হায়াত মওত, রিজিকের মালিক৷ তিনিই এই বিশ্বটাকে নিয়্ত্রন করেন৷ সেই সঙ্গে তাদের বাড়তি বিশ্বাস তার সাথে নিশ্চয়ই কেউ অংশিদার আছে, বা তার প্রীয়জনও হয়ত কেউ আছে যাদের সাহায্য সহযোগিতায় বা সুপারিশে উপকার পাওয়া যাবে৷ এটাই শির্ক৷ মক্কার মুশরিকরাও ছিল তাই৷ লাত, মানাত, উজ্জাত কে তারা আল্লাহর আদুরে কন্যা বলেই বিশ্বাস করত৷ তবে তারাও পৃথিবীর নিয়ন্ত্রনকর্তা ও সৃষ্টিকর্তা হিসেবে আল্লাহকেই জানত৷ অজ্ঞতার কারণেই এটা মানুষের মাঝে ঢোঁকে আর শিকড় গাড়ে৷
৩২/فَذَلِكُمُ اللّهُ رَبُّكُمُ الْحَقُّ فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ إِلاَّ الضَّلاَلُ فَأَنَّى تُصْرَفُونَ
অর্থ;-অতএব, এ আল্লাহই তোমাদের প্রকৃত পালনকর্তা৷ আর সত্য প্রকাশের পর অজ্ঞতা ছাড়া আর কি থাকতে পারে, সুতরাং কোথায় ঘুরছ৷
৩৩/كَذَلِكَ حَقَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ عَلَى الَّذِينَ فَسَقُواْ أَنَّهُمْ لاَ يُؤْمِنُونَ
অর্থ;-আপনার রবের বাণী, এভাবে সত্য প্রমানিত হল ফাসেকদের সম্পর্কে যে তারা ইমান আনবেনা৷
৩৪/قُلْ هَلْ مِن شُرَكَآئِكُم مَّن يَبْدَأُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُ قُلِ اللّهُ يَبْدَأُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُ فَأَنَّى تُؤْفَكُونَ
অর্থ;-বলুন, তোমাদের শরিকদের মাঝে এমন কেউ আছে কি যে, সৃষ্টিকে প্রথমবার অস্তিত্বে আনতে পারে, ফের পুনরাবৃত্তি করতে পারে৷ বলুন, আল্লাহই সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনেন ও পুনরাবৃত্তি করেন৷ সুতরাং কেমন করে বিভ্রান্ত হচ্ছ?
# অসংগত ধারণগুলি তুলে ধরে প্রশ্ন করা হচ্ছে, প্রাথমিক ভাবে সৃষ্টি করা এবং ঠিক তেমনই আবার বানানো একমাত্র আল্লাহর দ্বারাই সম্ভব৷ তোমরা যখন জান এবং মানো আল্লাহই সেই সৃষ্টিকর্তা তখন বিভ্রান্ত হবার কোন কারণ নেই৷ এর পরও যখন তোমরা বিভ্রান্ত রয়েই গেলে, অতএব তোমরা ফাসেকই রইলে৷
৩৫/قُلْ هَلْ مِن شُرَكَآئِكُم مَّن يَهْدِي إِلَى الْحَقِّ قُلِ اللّهُ يَهْدِي لِلْحَقِّ أَفَمَن يَهْدِي إِلَى الْحَقِّ أَحَقُّ أَن يُتَّبَعَ أَمَّن لاَّ يَهِدِّيَ إِلاَّ أَن يُهْدَى فَمَا لَكُمْ كَيْفَ تَحْكُمُونَ
অর্থ;-বলুন, তোমাদের শরিকদের মধ্যে এমন কেউ আছেকি, যে হেদায়েত দান করতে পারে৷ বলুন, আল্লাহই সত্য পথের হেদায়েত দেন৷ যিনি সঠিক পথে হেদায়েত দেন তিনি অনুসরণ যোগ্য না যাকে হেদায়েত না দিলে হেদায়েত পান না তিনি৷ তোমাদের কি হল, কেমন সিদ্ধান্ত তোমরা করেছ?
# যিনি নিজেই হেদায়েতের প্রত্যাশী তিনি কেমন করে অন্যকে হেদায়েত দেবেন৷ এক মাত্র আল্লাহই অন্যকে হেদায়েত দিতে পারেন৷ তাই তাকে বাদ দিয়ে অন্যের কাছে হেদায়েত পাওয়ার প্রত্যাশা করাই শির্ক৷ দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ মানুষ, আল্লাহর রসুল সঃ নিজেও ‘ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকীম’ বলে আল্লাহর কাছে দোওয়া চাইতেন৷ অতএব, মুশরীকদের সিদ্ধান্ত অবশ্যই ভূল৷
৩৬/وَمَا يَتَّبِعُ أَكْثَرُهُمْ إِلاَّ ظَنًّا إَنَّ الظَّنَّ لاَ يُغْنِي مِنَ الْحَقِّ شَيْئًا إِنَّ اللّهَ عَلَيمٌ بِمَا يَفْعَلُونَ
অর্থ;-তাদের অধিকাংশই অনুমানের অনুসরণ করে চলে৷ সত্যের ব্যাপারে অনুমান কোন কাজেই আসেনা৷ নিশ্চয় আল্লাহ সবিশেষ অবহিত তারা যা করে৷
৩৭/وَمَا كَانَ هَـذَا الْقُرْآنُ أَن يُفْتَرَى مِن دُونِ اللّهِ وَلَـكِن تَصْدِيقَ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ الْكِتَابِ لاَ رَيْبَ فِيهِ مِن رَّبِّ الْعَالَمِينَ
অর্থ;-আর এ কোরআন এমন নয় যে, তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দ্বারা মনগড়া রচিত হয়ে থাকবে৷ বরং এটি পূর্বে যা নাজিল হয়েছে তার সত্যায়নকারী ও শরিয়তের বিশদ ব্যাখ্যা করে৷ এতে কোন সন্দহ নেই, এটা বিশ্ব প্রতিপালকের পক্ষ থেকে৷
# অবতীর্নের ধারায় পরে হলেও আমরা সুরা বাক্বারার শুরুতেই জেনে এসেছি এ কিতাব ত্রুটি মুক্ত৷ মুশরীকরা অনেকেই ধারণা করত রসুল সঃ নিজেই অন্যের সাহায্য নিয়ে জোড়াতালি দিয়ে এ কোরআন রচনা করে থাকেন৷ তারই উত্তরে এ ঘোষনা, কারও মনগড়া রচনা নয়৷ আগের আসমানী কিতাব গুলিকে সত্যায়ন করে, বলা যায় আগের কিতাব গুলিতেও এ কিতাবের ভবিষ্যৎবাণী রয়েছে৷ এতে রয়েছে ইসলামী শরিয়তের বা মানুষের চলার পথ নির্দেশনা৷
৩৮/أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ قُلْ فَأْتُواْ بِسُورَةٍ مِّثْلِهِ وَادْعُواْ مَنِ اسْتَطَعْتُم مِّن دُونِ اللّهِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
অর্থ;-তারাকি বলে; এটা তিনি (মোহাম্মদ সঃ) রচনা করেছেন৷ বলুন, তবে তোমরা এর অনুরূপ একটি সুরা নিয়ে এস, এবং আল্লাহ ছাড়া যাকে পার ডেকে নাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও৷
# মক্কী সুরায় এটিই শেষ চ্যালেঞ্জ৷ যদি তারা বা কেউ এটিকে মোহাম্মদ সঃ বা মানব রচিত বলে মনে করে তবে, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া অন্য যাকে খুশী তার সাহায্য নিয়ে কোরআনের মত মাত্র একটি সুরা রচনা করে নিয়ে এস৷ এর আগের চ্যালেঞ্জটি দশটি সুরার তা সুরা ‘হুদ’ এ পাওয়া যাবে৷ একটি সুরার চ্যালেঞ্জ মাদানী সুরা বাক্বারায়ও আমরা পড়ে এসেছি৷ সত্যবাদী বলতে তাদের অন্তরের বিশ্বাসটিকে প্রকাশ্যে আনার কৌশল, যেটি আল্লাহর অজানা নয়৷
৩৯/بَلْ كَذَّبُواْ بِمَا لَمْ يُحِيطُواْ بِعِلْمِهِ وَلَمَّا يَأْتِهِمْ تَأْوِيلُهُ كَذَلِكَ كَذَّبَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ فَانظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الظَّالِمِينَ
অর্থ;-বরং তারা অস্বীকার করে সে বিষয় যার জ্ঞান তারা আয়ত্ব করতে পারেনি এবং এখনও এর পরিনাম তাদের কাছে আসেনি৷ এ ভাবে তাদের পূর্ববর্তীরাও অস্বীকার করেছিল৷ অতএব লক্ষ্য কর কেমন হয়েছিল কাফেরদের পরিনাম৷
# ইতি মধ্যে বহু আয়াতে আজাব আসার ভবিষ্যত বাণী তাদের রসুল সঃ শুনিয়েছেন, আর তারা বার বার বলেছে, কোথায় আপনার আজাব, নিয়ে আসেন৷ জবাবে রসুল সঃ বলেছেন, ওটা আমার এখ্তেয়ারে নেই৷ তার মালিক আল্লাহ, সময় হলে দেখতে পাবে৷ বিভিন্ন অবাধ্য কওমের আজাবের কথাও তারা শুনেছে, কিন্তু নিজেদেরটা দেখেনি৷ আল্লাহ বলেন, এটা তাদের আমার কালাম অস্বীকারেরই শামিল৷ তাদের পূর্বর্তীরাও ঠিক এমন কথাই বলত৷ তাদের আজাবের নমুনা দেখে অনুমান করা উচিৎ তাদের এমন প্রশ্নের নমুনা কেমন হয়েছিল৷
৪০/وَمِنهُم مَّن يُؤْمِنُ بِهِ وَمِنْهُم مَّن لاَّ يُؤْمِنُ بِهِ وَرَبُّكَ أَعْلَمُ بِالْمُفْسِدِينَ
অর্থ;-এদের মধ্যে কিছু আছে যারা ইমান আনবে, আর কিছু আছে যারা ইমান আনবেনা৷ বস্তুতঃ আপনার রব দুরাচারদিগকে যথার্থই চেনেন৷
বিষয়: বিবিধ
১০৩০ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
ঐশী বানী অবিকৃত অবস্থায় আছে এক মাত্র মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ- আলকোরআন। তারপরেও আমরা আজ কতো গাফিল! কতো দূর শিক্ষা গ্রহন করা হতে! আল্লাহ আমাদের উনার কঠিন আযাব হতে মাফ করুন! আমিন।
শুকরিয়া ভাইয়া!
মন্তব্য করতে লগইন করুন