"আর আমি (আল্লাহ) তার ঘাড়ের রগের চাইতেও অধিক নিকটবর্ত্তী"৷
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ১৫ এপ্রিল, ২০১৫, ০২:৩৯:৩৫ রাত
(উর্দু বয়ানুল কোরআনের বাংলা অনবাদ)
সুরা ক্বাফ রুকু;-২ আয়াত;-১৬-২৯
১৬/وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ وَنَعْلَمُ مَا تُوَسْوِسُ بِهِ نَفْسُهُ وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيدِ
অর্থ;-আর আমিই মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং আমি জানি, তার প্রবৃত্তি তাকে যে কুমন্ত্রনা দেয় তা৷ আর আমি তার ঘাড়ের রগের চাইতেও অধিক নিকটবর্ত্তী৷
# ‘সুরা ইউসুফের ৫৩ আয়াতে বলা হয়েছে যে, মানুষের মন তো মন্দ কাজের অনুপ্রেরণা দেয়’৷ আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, অতএব মানুষের স্বভাব কেমন তা তিনি অবশ্যই জানেন৷ অধিকন্তু তিনি মানুষের অত্যন্ত কাছেই রয়েছেন৷ কোথায় আছেন, কেমন করে আছেন, আমরা জানিনা৷ তিনি বলেছেন, আমরা বিশ্বাস করি৷
১৭/إِذْ يَتَلَقَّى الْمُتَلَقِّيَانِ عَنِ الْيَمِينِ وَعَنِ الشِّمَالِ قَعِيدٌ
অর্থ;-যখন দুই ফেরেশ্তা তার ডানে ও বামে তার আমলনামা গ্রহণ করে,
১৮/مَا يَلْفِظُ مِن قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ
অর্থ;-সে কোন কথাই উচ্চারণ করতে পারেনা৷কিন্তু একজন অপেক্ষমান সদা প্রস্তুত প্রহরী তার কাছে বিদ্যমান থাকে৷
# মানুষের প্রতিটি কথা ও কাজ, কেরামন কাতেবীন নামের দুই ফেরেশ্তা ভি ডি ও রেকর্ড করে চলেছেন৷ আগে বলা হত লিখে চলেছেন৷ কারণ তখন রেকর্ড করার এ নিয়ম মানুষের জানা ছিলনা৷ মাত্র বিশ বছর আগেও এমনটি কল্পনা বাইরেই ছিল৷ হয়ত আল্লাহর কাছে আরও অনেক অনেক উন্নত যন্ত্র রয়েছে, যা ফেরশ্তাদ্বয় ব্যবহার করেন৷
১৯/وَجَاءتْ سَكْرَةُ الْمَوْتِ بِالْحَقِّ ذَلِكَ مَا كُنتَ مِنْهُ تَحِيدُ
অর্থ;-মৃত্যু যন্ত্রনা নিশ্চিতই আসবে৷ এ থেকেই তুমি টাল বাহানা করতে৷
# বস্তুত মানুষ অবধারিত সত্য মৃত্যু, যাকে অস্বীকার কারী একজনও নেই, যেখানে আল্লাহকে অস্বীকারকারী ভূরী ভূরী রয়েছে, সেই মৃত্যুকে মানুষ মন থেকে দূরে সরিয়ে রাখে, মরার বিষয় নিয়ে টাল বাহানা করে৷ যদিও কারও মৃত্যু, দাফন, কাফনে সাময়ীক ভাবে ক্ষনিকের জন্য তা দোলা দেয়৷
২০/وَنُفِخَ فِي الصُّورِ ذَلِكَ يَوْمُ الْوَعِيدِ
অর্থ;-এবং শিংগায় ফুৎকার দেওয়া হবে৷ এটা হবে ভয় প্রদর্শণের দিন৷
# যার যার মৃত্যু তার কাছে কেয়ামত স্বরূপ৷ আর শিংগার ফুৎকার হবে সার্বিক কেয়ামতের লক্ষন বা ভয় প্রদর্শণ৷
২১/وَجَاءتْ كُلُّ نَفْسٍ مَّعَهَا سَائِقٌ وَشَهِيدٌ
অর্থ;-প্রত্যেক মানুষ আগমন করবে, তার সাথে থাকবে, ধাক্কাদানকারী ও সাক্ষী৷
# প্রত্যেকের সাথে দুইজন ফেরেশ্তা থাকবেন, যার একজনের কাছে থাকবে আমল নামা,যা তার আমলের সাক্ষী৷ আর অন্য জন তাকে ধাক্কা দিয়ে নিয়ে আসবেন৷
২২/لَقَدْ كُنتَ فِي غَفْلَةٍ مِّنْ هَذَا فَكَشَفْنَا عَنكَ غِطَاءكَ فَبَصَرُكَ الْيَوْمَ حَدِيدٌ
অর্থ;-তুমিতো এই দিন সম্পর্কে উদাসীন ছিলে৷ আমি তোমার কাছ থেকে পর্দা সরিয়ে নিয়েছি, ফলে আজ তোমার দৃষ্টি অতিশয় তীক্ষ্ণ৷৷
# দুনিয়া ও আখেরাত বা জীবন ও মৃতের মাঝে আল্লাহ একটা আড়াল দিয়ে রেখেছেন৷ মৃত্যুর সাথে সে আড়ল সরে যায়, তাই সে আখেরাতের অনেক কিছুই দেখতে পায়, যার বিষয়ে মানুষ উদাসীন থাকে৷ তাকেই দৃষ্টির তীক্ষ্ণতা বলা হয়েছে৷
২৩/وَقَالَ قَرِينُهُ هَذَا مَا لَدَيَّ عَتِيدٌ
অর্থ;-তার সঙ্গী (শয়তান) বলবে, আমার আয়ত্বে যে ছিল সে এই৷
# সুরা যুখরূফের ৩৬ আয়াতে বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আল্লাহ তার সাথে একজন শয়তান নিয়োগ দেন৷ তাকেই ‘ক্বারীন’ বা সঙ্গী বলা হয়েছে৷ মানুষের সাথে যেমন শেরেশ্তার নিয়োগ আছে, অবাধ্য মাানুষের সাথে তেমনই একজন শয়তানেরও নিয়োগ আছে৷ এক ফেরেশ্তা ধাক্কা দিয়ে নিয়ে আসবেন, অনন্যজন ফাইল নিয়ে আসবেন আর শয়তান এসে বলবে যে, তার আয়ত্বে যে ছিল, সে এই৷ এই বলে শয়তান আল্লাহর কাজ করে দেবার জন্য পুরষ্কারের আশা করবে৷ আর আল্লাহ বলবেন,
২৪/أَلْقِيَا فِي جَهَنَّمَ كُلَّ كَفَّارٍ عَنِيدٍ
অর্থ;-অকৃতজ্ঞ, বিরুদ্ধবাদী দু জনকেই জাহান্নামে নিক্ষেপ কর,
২৫/مَّنَّاعٍ لِّلْخَيْرِ مُعْتَدٍ مُّرِيبٍ
অর্থ;-যে মঙ্গলজনক কাজে বাধা দান কারী, সীমা লঙ্ঘণকারী ও সন্দেহ পোষণকারী৷
২৬/الَّذِي جَعَلَ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ فَأَلْقِيَاهُ فِي الْعَذَابِ الشَّدِيدِ
অর্থ;-যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্য গ্রহণ করত, তাকে তোমরা কঠিন শাস্তিতে নিক্ষেপ কর৷
# কয়েকটি আয়াতে শয়তান ও ঐ মানুষটির কার্যকলাপের বিবরণ দেওয়া হল৷
২৭/قَالَ قَرِينُهُ رَبَّنَا مَا أَطْغَيْتُهُ وَلَكِن كَانَ فِي ضَلَالٍ بَعِيدٍ
অর্থ;-তার সঙ্গী শয়তান বলবে, হে আমার রব, আমি তাকে অবাধ্যতায় লিপ্ত করিনি, সে নিজেই ছিল সুদূর পথভ্রান্তিতে লিপ্ত৷
২৮/قَالَ لَا تَخْتَصِمُوا لَدَيَّ وَقَدْ قَدَّمْتُ إِلَيْكُم بِالْوَعِيدِ
অর্থ;-আল্লাহ বলবেন, আমার সামনে বাকবিতণ্ডা করোনা, আমিতো পূর্বেই তোমাদেরকে আজাব দ্বারা ভয় প্রদর্শণ করেছিলাম৷
# এ ভয় প্রদর্শণ শুধু মানুষের জন্য নয়, জ্বীনের জন্যও বটে৷ সুরা আহক্বাফে আমরা দেখেছি, একদল জ্বীন কোরআন শুনেই ইমান এনেছিল ও তাদের কওমের জন্য দাওয়াতী কাজে নিয়জিত হয়েছিল৷
২৯/مَا يُبَدَّلُ الْقَوْلُ لَدَيَّ وَمَا أَنَا بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيدِ
অর্থ;-আমার কাছে কথার রদবদল হয়না৷ এবং আমি বান্দাদের প্রতি জুলুমকারীও নই৷
বিষয়: বিবিধ
১১৬৬ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কথাও কাজে আমাদের আর অনেক বেশী সংযমী হতে হবে সব ভিডিও রেকর্ড হচ্ছে ।
আল্লাহ আমাদের উপর কোন জুলুম করবেন না আমার কর্মের ফল আমি পাব ।
জাজাকাল্লাহ খাইরান চাচাজান ।
কোরআনুল কারীমের আয়াতগুলোর চমৎকার সন্নিবেশন পড়ে, হিদায়াতী জাগরন পেলাম আলাহমাদুলিল্লাহ!
আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে সঠিকভাবে এটা মনে থাকলে- কিরামান কাতিবীন আমাদের সাথে আছেন প্রতিটি কর্ম অডিও এবং ভিডিও লিপিবদ্ধ করার জন্য আমরা অনেক ফাহেসা কথা কাজ থেকে দূরে থাকতে পারতাম!
হিদায়াতী পোস্টের জন্য আন্তরিক শুকরিয়া!
মন্তব্য করতে লগইন করুন