" আর সুখ সম্পদে নিমগ্ন সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের আমার হাতে ছেড়ে দিন, আর তাদের কিছুকাল অবকাশ দিন৷"
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ০১ এপ্রিল, ২০১৫, ০৭:৫৪:৪৮ সকাল
(উর্দু বয়ানুল কোরআনের বাংলা অনুবাদ)
৭৩) সুরা আল (মুযাম্মিল (মক্কী) রুকু ২টি ও আয়াত ২০টি
সপ্তম গ্রুপের বা কোরআনের বাকী সুরা গুলি এখান থেকে জোড়ায় জোড়ায় পাওয়া যাবে৷ সেই সূত্রে সুরা আল মুযাম্মিলের জোড়া পরের সুরা মুদ্দাস্সীর৷ সুরা মুযাম্মিলে দুইটি রুকু আছে ও কুড়িটি আয়াত আছে৷ সুরাটি মক্কী৷
সুরা আল মুযাম্মিল রুকু;-১ আয়াত;-১-১৯
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
১/يَا أَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ
অর্থ;-হে বস্ত্রাবৃত (রসুল)৷
২/قُمِ اللَّيْلَ إِلَّا قَلِيلًا
অর্থ;-রাতে কিছুঅংশ বাদে দণ্ডায়মান থাকুন৷
৩/نِصْفَهُ أَوِ انقُصْ مِنْهُ قَلِيلًا
অর্থ;-অর্ধ রাত অথবা তার চাইতে কিছু কম৷
৪/أَوْ زِدْ عَلَيْهِ وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا
অর্থ;-অথবা তদপেক্ষা বেশী৷ এবং কোরআন আবৃত্তি করুন স্পষ্ট ভাবে ধীরে ধীরে৷
# নামাজের হুকুম তখনও আসেনি৷ আদেশ হল ‘কিয়ামুল লাইল’ রাতের অর্ধেক সময়, কিংবা তার চেয়ে কিছু কম সময় কিংবা অর্ধেকের চাইতে বেশী সময়, যখন থাকবেনা দিনের কোলাহল, রইবেনা কোন কর্মব্যস্ততা, নিরব নিঝুম রাত, বান্দা দাঁড়াবে তার মনিবের সামনে, স্পষ্ট ভাবে থেমেথেমে কোরআন পড়বে, যাতে কি পড়ছে তা বুঝতে কষ্ট না হয়৷ আর এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সামনে আসা গুরুভার বোঝা বহণ করার উপযুক্ত মন মানসীকতা তৈরী হবে৷ আর এজন্য চাই কোরআন মুখস্ত থাকা৷ এগারো বৎসর পরে যখন পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ ফরজ হল, তখন কিয়ামুল লাইলের স্থান হল তাহাজ্জুদে, কিন্তু তা আর ফরজ রইল না৷
৫/إِنَّا سَنُلْقِي عَلَيْكَ قَوْلًا ثَقِيلًا
অর্থ;-অবশ্যই আমি অচিরে আপনার উপর এক গুরুভার বাণী অবতীর্ণ করব৷
# সে গুরুভার বাণী ‘তবলীগ’ যা চতুর্থ ওহী রূপে সুরা ‘মুদ্দাস্সীরে’ এসেছে৷
৬/إِنَّ نَاشِئَةَ اللَّيْلِ هِيَ أَشَدُّ وَطْءًا وَأَقْوَمُ قِيلًا
অর্থ;-নিশচয় রাত্রী জাগরণ প্রবৃত্তি দলনে প্রবলতর এবং বক্তব্যের ব্যাপারে বিশেষ ক্রীয়াশীল৷
৭/إِنَّ لَكَ فِي اَلنَّهَارِ سَبْحًا طَوِيلًا
অর্থ;-নিশ্চয় দিনের বেলায় রয়েছে আপনার বহু কর্মব্যস্ততা৷
# রাতের বেলা নেই কোন কর্মব্যস্ততা, দৌঁড়ঝাঁপ, নীরব পরিবেশে গোলাম তার প্রভুর সামনে দাঁড়াবে৷ স্তুতি করবে, ফরিয়াদ জানাবে৷
৮/وَاذْكُرِ اسْمَ رَبِّكَ وَتَبَتَّلْ إِلَيْهِ تَبْتِيلًا
অর্থ;-আপনি আপনার রবের কথা স্মরণ করুন এবং একাগ্রচিত্তে তাঁরই প্রতি মগ্ণ থাকুন৷
৯/رَبُّ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ فَاتَّخِذْهُ وَكِيلًا
অর্থ;-তিনিই মালিক উদয়াচল ও অস্তাচলের৷ তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই৷ অতএব, তাকেই কর্ম বিধায়ক রূপে গ্রহণ করুন৷
# এ যেন সবার মাঝে থেকেও কারও সাথে নয়৷ আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর নাম স্মরণ করুন৷ তিনিই উদয়াচল ও অস্তাচলের একমাত্র মলিক, অতএব, সকল কাজের দায় দায়িত্ব তারই উপর অর্পণ করুন৷ তিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই৷ এ সুরার প্রথম নয়টি আয়াতকে তৃতীয় ওহী বলেই ধারণা করা হয়৷
১০/وَاصْبِرْ عَلَى مَا يَقُولُونَ وَاهْجُرْهُمْ هَجْرًا جَمِيلًا
অর্থ;-তারা যা বলে তাতে আপনি ধৈর্য ধরুন এবং সৌজন্য সহকারে তাদের পরিহার করুন৷
# ইতি মধ্যেই মুশরিকরা তাঁকে বিকারগ্রস্থ, কবি, যাদুকর প্রভৃতি বলে উপহাস করা শুরু করে দিয়েছে৷ তাদের উপর রাগ না করে, অসন্তুষ্ট না হয়ে, বরং সৌজন্যতা দেখিয়েই সরে যেতে বলা হয়েছে, যাতে তাদের সাথে আলোচনার পথটা বন্ধ না হয়৷ আজ না হয় কাল তারা পথে আসতেও পারে৷
১১/وَذَرْنِي وَالْمُكَذِّبِينَ أُولِي النَّعْمَةِ وَمَهِّلْهُمْ قَلِيلًا
অর্থ;-আর সুখ-সম্পদে নিমগ্ন সত্য প্রত্যাখ্যান কারীদের আমার হাতে ছেড়ে দিন৷ আর তাদেরকে কিছুকাল অবকাশ দিন৷
# সুখ সম্পদ ভোগ করে যারা দুনিয়া প্রীতিতে মণ্ন হয়ে সত্যকে অস্বীকার করছে, তাদেরকে আল্লাহ কিছুদিনের অবকাশ দেবন৷ অতএব, তাদের দায় দায়িত্ব আল্লাহর কাছেই থাক৷
১২/إِنَّ لَدَيْنَا أَنكَالًا وَجَحِيمًا
অর্থ;-নিশ্চয় আমার কাছে শিকল ও দোজখ আছে৷
১৩/وَطَعَامًا ذَا غُصَّةٍ وَعَذَابًا أَلِيمًا
অর্থ;-আরও আছে গলায় আঁটকে পড়ার মত খাবার এবং যন্ত্রনা দায়ক আজাব৷
১৪/يَوْمَ تَرْجُفُ الْأَرْضُ وَالْجِبَالُ وَكَانَتِ الْجِبَالُ كَثِيبًا مَّهِيلًا
অর্থ;-যেদিন পৃথিবী আর পর্বত মালা প্রকম্পিত হতে থাকবে এবং পর্বত সমুহ হয়ে যাবে উড়ন্ত ধূলারাশীর মত৷
১৫/إِنَّا أَرْسَلْنَا إِلَيْكُمْ رَسُولًا شَاهِدًا عَلَيْكُمْ كَمَا أَرْسَلْنَا إِلَى فِرْعَوْنَ رَسُولًا
অর্থ;-আমিতো তোমাদের কাছে একজন রসুল পাঠিয়েছিলাম, তোমাদের জন্য সাক্ষী স্বরূপ, যেমন আমি ফেরাউনের কাছে একজন রসুল পাঠিয়েছিলাম৷
১৬/فَعَصَى فِرْعَوْنُ الرَّسُولَ فَأَخَذْنَاهُ أَخْذًا وَبِيلًا
অর্থ;-অতঃপর ফোউন সেই রসুলকে অমান্য করল৷ ফলে আমি তাকে কঠিন শাস্তি দিলাম৷
# হে কোরাইশ, তোমাদের কাছে একজন রসুল পাঠানো হয়েছে, যিনি তোমাদের ইমান ও আমলের সাক্ষী হবেন৷ আবার তিনিই কেয়ামতের দিন তোমাদের বিপক্ষেও সাক্ষী হবেন৷ তাকে অমান্য করোনা৷ তাহলে তোমাদের অবস্থাও ফেরাউনের মত হবে, তাদের কাছেও একজন রসুল পাঠিয়ে ছিলাম৷ তারা তাদের রসুলকে অমান্য করেই দণ্ড ভোগ করেছিল৷
১৭/فَكَيْفَ تَتَّقُونَ إِن كَفَرْتُمْ يَوْمًا يَجْعَلُ الْوِلْدَانَ شِيبًا
অর্থ;-অতএব, যদি তোমরা কুফরী কর তবে, সেদিনের বিপদ থেকে কেমন করে রেহাই পাবে, যে দিন তা বালকদের বৃদ্ধ করে দেবে!
১৮/السَّمَاء مُنفَطِرٌ بِهِ كَانَ وَعْدُهُ مَفْعُولًا
অর্থ;-সেদিন আকাশ বিদীর্ন হবে৷ তার প্রতিশ্রুতি অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে৷
১৯/إِنَّ هَذِهِ تَذْكِرَةٌ فَمَن شَاء اتَّخَذَ إِلَى رَبِّهِ سَبِيلًا
অর্থ;-অবশ্যই এটা উপদেশ৷ অতএব, যার ইচ্ছা সে তার পালনকর্তার পথ অবলম্বন করুক৷
বিষয়: বিবিধ
৯৭৭ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কাউকে বধ্য করা হয়নি তবে যে পালনকর্তার পথ অবলম্বন করবে সে দুইজাহানেই পাবে শান্তি । আর যে করবে না তার জন্য অপেক্ষা করছে কঠিন শাস্তি ।
জাজাকাল্লাহ খাইরান চাচাজান ।
ঈমান শানিত করা হিদায়াতী পোস্ট টির জন্য শুকরিয়া আপনাকে! কোরআনের এই আয়াতগুলি পড়ে সত্যি অন্তরে ভয়ের সৃষ্টি হয়!
জাযাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন