" হে মানুষ, তোমাকে তোমার পালনকর্তা পর্যন্ত পৌঁছতে কষ্ট স্বীকার করতে হবে, অতঃপর তার সাক্ষাৎ ঘটবে৷"
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ২১ মার্চ, ২০১৫, ০৯:৩৪:৪৪ সকাল
(উর্দু বয়ানুল কোরআনের বাংলা অনুবাদ)
(৮৪) সুরা আল ইনশিক্বাক্ব (মক্কী) রুকু;-১টি ও আয়াত;-২৫টি
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
১/إِذَا السَّمَاء انشَقَّتْ
অর্থ;-যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে,
২/وَأَذِنَتْ لِرَبِّهَا وَحُقَّتْ
অর্থ;-এবং স্বীয় রবের আদেশ পালন করবে, আর সে এরই যোগ্য৷
৩/وَإِذَا الْأَرْضُ مُدَّتْ
অর্থ;-আর যখন পৃথিবীকে সম্প্রসারিত করা হবে,
৪/وَأَلْقَتْ مَا فِيهَا وَتَخَلَّتْ
অর্থ;-এবং সে নিজের অভ্যান্তরে যা কিছু আছে তা বাইরে নিক্ষেপ করবে ও খালি হয়ে যাবে,
৫/وَأَذِنَتْ لِرَبِّهَا وَحُقَّتْ
অর্থ;-এবং স্বীয় রবের আদেশ পালন করবে, আর সে এরই যোগ্য৷
# বিষয়টি সুরা ‘যিলযালে’ পুনরায় আসবে৷ প্রকৃতীর কাজ আল্লাহর আদেশ পালন করা৷ সেতার অন্যথা করার দুঃসাহস রাখেনা৷ যোগ্য বলে তাই বোঝানো হয়েছে৷ পৃথিবীকেও তার ভিতরে যা কিছু আছে তা বার করার আদেশ হবে আর তা সে যথাযত পালন করে তার পেট খালি করে ফেলবে৷ আর রাবারের মত টেনে পৃথিবীকে বড় ও প্রশস্থ করা হবে৷
৬/يَا أَيُّهَا الْإِنسَانُ إِنَّكَ كَادِحٌ إِلَى رَبِّكَ كَدْحًا فَمُلَاقِيهِ
অর্থ;-হে মানুষ, তোমাকে তোমার পালনকর্তা পর্যন্ত পৌঁছতে কষ্ট স্বীকার করতে হবে, অতঃপর তার সাক্ষাৎ ঘটবে৷
# আপন রব বা সৃষ্টিকর্তার সাক্ষাৎ বা জান্নাত প্রাপ্তির পথ কুসূমাস্তীর্ণ নয়, বরং কন্টকময়৷ পৃথিবী মানুষের জন্য পরীক্ষার স্থান৷ এখানে আছে রোগ ব্যাধি, জরা, অভাব অনটন, দুঃখ বেদনা, কঠোর পরিশ্রম৷ এক কথায় কষ্টের যায়গা৷ কেউবা জীবিকার জন্য উদয়অস্ত কঠোর পরিশ্রম করে, এটি তার শারিরীক পরিশ্রম, কেউবা করে মানষীক পরিশ্রম৷ কিছু তারতম্য থাকলেও দুটাই পরিশ্রম৷ এখানে পার্থক্য যা তা মানষীকতার৷ যেন হাঁটা লোক সাইকেল আরোহী, সাইকেল আরোহী মটর সাইকেল চালক, আবার মটর সাইকেল চালক কার চালকের বিষয়ে ভেবে থাকে৷
পার্থিব এ কষ্টই শেষ নয়, এরপর আল্লাহর আদালতে আছে জবাবদেহিতা৷ অপর দিকে পশুদেরও কষ্টের শেষ নেই, কিন্তু তাদের কোন জবাবদেহিতা নেই৷ এজন্যই হজরত আবুবকর রাঃ প্রায়ই এমন কথা বলতেন যে, হায়! আমি কেন পাখি হলম না!
রসুল সঃ বলেছেন যে, কেয়ামতের দিন পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর নাদিয়ে কোন আদম সন্তানের এক পা নড়ার উপায় নেই, তা হল; যে বয়সকাল পেয়েছ তা কোথায় কোন কাজে ব্যয় করেছ, বিশেষ করে যৌবন কাল৷ যে মাল পেয়েছিলে, তা কোথা থেকে, হালাল না হারাম উপায়ে পেয়ে ছিলে, আর তা কোথায় খরচ করেছ, আল্লাহর নির্দেশিত পথে না অন্যত্র! আর শিক্ষা বা ইলম যত টুকু দিয়ে ছিলাম তা দিয়ে কি করেছ, কতটুকু আমলে এনেছ৷ বিষয়টি সুরা ‘বালাদে’ আবার আসবে৷
৭/فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ
অর্থ;-অবশেষে যার আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে,
৮/فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَسِيرًا
অর্থ;-তার হিসাব নিকাশ সহজ হয়ে যাবে,
৯/وَيَنقَلِبُ إِلَى أَهْلِهِ مَسْرُورًا
অর্থ;-এবং সে তার পরিবার পরিজনের কাছে হৃষ্টচিত্তে ফিরে যাবে৷
১০/وَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ وَرَاء ظَهْرِهِ
অর্থ;-এবং যাকে তার আমলনামা পিঠের পিছন থেকে দেওয়া হবে,
১১/فَسَوْفَ يَدْعُو ثُبُورًا
অর্থ;-সে মৃত্যুকে অহবান করবে,
১২/وَيَصْلَى سَعِيرًا
অর্থ;-এবং জাহান্নামে প্রবেশ করবে৷
# হিসাব নিকাশের পর যাদের রেজাল্ট বা আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে, তারাই সফলকাম, তাদের চেহারায় আনন্দ ফুটে উঠবে৷ তারা আপনজনের কাছে হাসিমুখে ফিরে যাবে৷ আর যারা অকৃতকার্য হবে, তাদের আমলনামা বাম হাতে দেওয়া হবে, কিন্তু তারা তা নিতে অস্বীকার করে হাত পিছনে নেবে আর সেখানেই তা ধরিয়ে দেওয়া হবে৷ তখন তারা মৃত্যু কামনা করবে, কিন্তু তাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে৷
১৩/إِنَّهُ كَانَ فِي أَهْلِهِ مَسْرُورًا
অর্থ;-অবশ্যই সে তার পরিবার পরিজনের মধ্যে আনন্দিত ছিল৷৷
১৪/إِنَّهُ ظَنَّ أَن لَّن يَحُورَ
অর্থ;-সে মনে করত যে সে কখনও ফিরে যাবেনা৷
১৫/بَلَى إِنَّ رَبَّهُ كَانَ بِهِ بَصِيرًا
অর্থ;-কেন নয়, তার রবতো তাকে দেখতেন৷
# যাদের আমলনামা বাম হাতে পড়েছে, পার্থিব জীবনে তারা সুখ সাচ্ছন্দ, আমোদ ফুর্তিতে আপন পরিবারের মাঝে মগ্ন থাকত৷ তারা পার্থিব জীবনকেই সব মনে করত৷ আখেরাত, হিসাব নিকাশে তাদের বিশ্বাস ছিলনা৷ কোনদিন সৃষ্টি কর্তার সামনে দাঁড়াতে হবে, ফিরে যেতে হবে, তামমনে করতনা৷ তারা আল্লাহকে ফাঁকি দিতে পারেনি, কারণ আল্লাহ সর্বদাই তাদের দেখতেন৷ তারা নিজেদেরই ফাঁকি দিয়েছে৷
১৬/فَلَا أُقْسِمُ بِالشَّفَقِ
অর্থ;-আমি শপথ করি সান্ধ্যকালীন লাল আভার,
১৭/وَاللَّيْلِ وَمَا وَسَقَ
অর্থ;-এবং রাত্রির, আর তাতে যার সমবেশ ঘটে,
১৮/وَالْقَمَرِ إِذَا اتَّسَقَ
অর্থ;-এবং চন্দ্রের, যখন তা পূর্ণরূপ লাভ করে৷
১৯/لَتَرْكَبُنَّ طَبَقًا عَن طَبَقٍ
অর্থ;-নিশ্চয় তোমরা এক সিঁড়ি থেকে অন্য সিঁড়িতে আরোহণ করবে৷
২০/فَمَا لَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ
অর্থ;-অতএব, তাদের কি হল যে তারা ইমান আনেনা!
# হজরত মুসা আঃ ও হজরত ঈশা আঃ এর পর হেদায়েতের যেটুকু আলো অস্তমিত সূর্যের লাল আভার মত ছিল তাও ক্রমে ক্রমে ৬০০ বৎসরে কালো অন্ধকারে পরিনত হয়ে যায়৷ এর পর কোরআনের আলো নিয়ে এলেন হজরত মোহাম্মদ সঃ, যেন প্রথম িনের চাঁদ উঠল৷ এর পর ধীরে ধীরে ২৩ বৎসরে তা পুর্ণিমার পূর্ণ চন্দ্র হয়ে ওঠে৷ তৃতীয় খলিফা হজরত ওসমান রাঃ এর শাসনকাল পর্যন্ত তা স্থায়ী হয়৷ এর পর ক্ষমতা লিপ্সা ও দলীয় কোন্দলে কৃষ্ণ পক্ষের মত তা শেষ হয়ে আবার লাল আভায় ফিরে আসে৷
রসুল সঃ বলেছেন যে, কেয়ামতের আগে পৃথিবী ব্যাপি কোরআনের আলো আবারও ছড়িয়ে পড়বে, তা হঠাৎ করে নয়, ধীরে ধীরে, এক সিঁড়ির পর অন্যটি করে৷ প্রতি শতাব্দীতে আল্লাহর কোন না কোন বান্দা এ কাজ করে চলেছেন৷ আল্লামা ইকবাল ঘোষণা দিলেন যে ইসলাম কোন মজহাব নয়, এটি দ্বীন৷ মওলানা আবুল কালাম আজাদ তাঁর হেজবুল্লাহর মাধ্যমে এগিয়ে নিতে চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তা স্বাধীনতা আন্দোলনে মিশে যায়৷ মওলানা মওদূদীও সেই সিঁড়িরই রাহী ছিলেন৷ প্রচেষ্টা থেমে নাই৷ হয়ত আবার কোন হাদী একে উপরের দিকে এগিয়ে নেবেন৷ এভাবেই চাঁদ আবার পূর্ণীমায় ফিরে যাবে৷ তবে জিজ্ঞাসীত হতে হবে এ যাত্রায় আপনার আমার অবদান কতটুকু৷
২১/وَإِذَا قُرِئَ عَلَيْهِمُ الْقُرْآنُ لَا يَسْجُدُونَ
অর্থ;-আর যখন তাদের কাছে কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তারা সেজদাহ করেনা৷
(এটি সেজদার আয়াত, পাঠক ও শ্রোতাগণকে তেলাওয়াতের সেজদাহ করার অনুরোধ করা হল)
২২/بَلِ الَّذِينَ كَفَرُواْ يُكَذِّبُونَ
অর্থ;-বরং কাফেররা এর প্রতি মিথ্যারোপ করে৷
২৩/وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا يُوعُونَ
অর্থ;-আর তারা যা সংরক্ষন করে, আল্লাহ তা জানেন৷
২৪/فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ
অর্থ;-অতএব, তাদেরকে যন্ত্রনা দায়ক আজাবের সু সংবাদ দিন৷
# ‘কুফর’ ও ‘কিজব’, অস্বীকার ও মিথ্যাচার শব্দ দুটি প্রায় কাছাকাছি হলেও এর মাঝে পার্থক্যও আছে৷ আল্লাহ মানুষের অন্তরে ইনসাফ দিয়েছেন, দিয়েছেন জ্ঞান, যে জ্ঞান মানুষকে সত্য মিথ্যা বোঝার ক্ষমতা দিয়েছেন৷ এ অবস্থায় মানুষ যখন সত্যকে অস্বীকার করে তখন হয় কুফর৷ আবার অন্তর্নিহীত জ্ঞানের পরে যখন কোরআন দিল অতিরিক্ত জ্ঞান৷ এমতাবস্থায় সত্যকে অসবীকার করা মিথ্যচার, যা গর্হীত অপরাধ৷ আর তার জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি৷
২৫/إِلَّا الَّذِينَ آمَنُواْ وَعَمِلُواْ الصَّالِحَاتِ لَهُمْ أَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُونٍ
অর্থ;-কিন্তু যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত পুরষ্কার৷৷
বিষয়: বিবিধ
১৩১৩ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
৮/فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَسِيرًا
অর্থ;-তার হিসাব নিকাশ সহজ হয়ে যাবে,
৯/وَيَنقَلِبُ إِلَى أَهْلِهِ مَسْرُورًا
অর্থ;-এবং সে তার পরিবার পরিজনের কাছে হৃষ্টচিত্তে ফিরে যাবে৷
ইয়া আল্লাহ আমলনামা সম্মানের সাথে ডান হাতে চাই
ইসলাম থেকে থাকবে না ।আবার ও একসময় তা পূর্ণিমার চাঁদের আকার ধারন করবে । আমি জিজ্ঞাসীত হব এখানে আমার অবদান কতটুকু । আল্লাহ আমাকে আমার অক্ষমতার জন্য মাফ করুন ।
হে আল্লাহ কিয়ামতের এই কঠিন দিনে আমাদের হিসাব সহজ করে আমাদের আমল নামা ডান হাতে পাওয়ার তৌফিক দিন ।আমীন ।
চাচাজান আপনি থেমে যাবেন না সবাই না পড়ুক কেউ না কেউ পড়বেই আমি তো আছি ই । আর একজন ও যদি আপনার এ লেখা থেকে শিক্ষা নেয় তাহলেই আপনি সফল ।
জাজাকাল্লাহ খাইরান চাচাজান ।
হে আল্লাহ কিয়ামতের এই কঠিন দিনে আমাদের হিসাব সহজ করে আমাদের আমল নামা ডান হাতে পাওয়ার তৌফিক দিন ।আমীন ।
আপন রব বা সৃষ্টিকর্তার সাক্ষাৎ বা জান্নাত প্রাপ্তির পথ কুসূমাস্তীর্ণ নয়, বরং কন্টকময়৷ পৃথিবী মানুষের জন্য পরীক্ষার স্থান৷ এখানে আছে রোগ ব্যাধি, জরা, অভাব অনটন, দুঃখ বেদনা, কঠোর পরিশ্রম৷ এক কথায় কষ্টের যায়গা৷ কেউবা জীবিকার জন্য উদয়অস্ত কঠোর পরিশ্রম করে, এটি তার শারিরীক পরিশ্রম, কেউবা করে মানষীক পরিশ্রম৷ কিছু তারতম্য থাকলেও দুটাই পরিশ্রম৷ এখানে পার্থক্য যা তা মানষীকতার৷ যেন হাঁটা লোক সাইকেল আরোহী, সাইকেল আরোহী মটর সাইকেল চালক, আবার মটর সাইকেল চালক কার চালকের বিষয়ে ভেবে থাকে৷
আপনার চমৎকার বর্ণনা ও হৃদয়স্পর্শী উপস্থাপনা মুগ্ধ করার মতো।
আপনার মূল্যবান লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে আপনার জন্য প্রাণভরা দোয়া ও শুভকামনা রইলো।
ভালো থাকবেন খুব ভালো সবসময়।
ব্লগে একটা জিনিস দেখে আমার খুব দুঃখ হয়, এইখানে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যান বয়ে আনতে পারে এমন লিখা পাঠক সাড়া পায় না, অথচ ব্লগে কোরআন হাদীসের চর্চা হওয়াটা অত্যাধিক জরুরী। তাহলে অনলাইনে বেশি সময় থাকা অনেক ফলদায়ক হবে।
প্রভূর সামনে কঠিন জবাদিহির কথা যদি কারো মনে জাগরূক থাকে তাহলে তার পক্ষে কখনো পাপ করা সম্ভব নয়। আর জবাদিহির কথা মনে রাখার জন্য উক্ত উক্ত আয়াতগুলো বেশি বেশি অধ্যয়ন অতীব জরুরি।
জাযাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন