"প্রত্যেক ব্যক্তির উচিৎ, আগামী কালের জন্য সে কি প্রেরণ করে তা চিন্তা করা"।
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১০:০৮:৫২ রাত
(উর্দু বয়ানুল কোরআনের বাংলা অনুবাদ)
সুরা আল হাশর রুকু;-৩ আয়াত;-১৮-২৪
পবিত্র কোরআনের কোন কোন আয়াত বা রুকুকে মর্যাদা পূর্ণ বা বিশেষ বৈশিষ্ট মণ্ডিত বলা হয়ে থাকে৷ যদিও কোরআনের একটি শব্দও এর বাইরে নয়, তবুও বিশেষ বিশেষ বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে আয়াত বা রুকু গুলি মর্যাদার শীর্ষে বলা যায়৷ যেমন, কোনটি ইমান, কোনটি তৌহীদ, কোনটি’ রূহে দ্বীন’, কোনটি হেকমত, কোনটি ধ্যান বা দর্শণ প্রভৃতি৷ সুরা ‘হাদীদের’ প্রথম ছয়টি আয়াত আল্লাহর ‘সিফাতের’ বর্ণনা করে, সুরা ‘হাশর’ এর শেষ রুকুর সাতটি আয়াত আধ্যাতিকতা, দর্শণ ও আল্লাহ তায়ালার একত্রে অনেক গুলি নামের সমাহেরের জন্য বিশেষ মর্যাদা পূর্ণ৷
১৮/يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَلْتَنظُرْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ
অর্থ;-মুমিনগন তোমরা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় কর৷ প্রত্যেক ব্যক্তির উচিৎ, আগামী কালের জন্য সে কি প্রেরণ করে তা চিন্তা করা৷ আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করতে থাক৷ তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে খবর রাখেন৷
# মানুষ ভবিষ্যতের জন্য সম্পদ সঞ্চয় করে৷ টাকা ব্যাঙ্কে পাঠায়, অধিক সচেতনেরা অধিক বিশ্বস্থ ব্যাঙ্ক, সুইস ব্যাঙ্কে পাঠায়৷ তা তার ইহকালের জন্য৷ কিন্তু ইহকাল পরকালের তুলনায় সামান্যক্ষণ মাত্র৷ পরকালে রয়েছে আল্লাহ পরিচালিত সর্বাধিক বিশ্বস্থ ব্যাঙ্ক৷ তাই পরকালের সুখের জন্য প্রত্যেকের উচিত কিছু নেকি সেখানে সঞ্চয় করা৷
এ আয়াতে আল্লাহকে ভয় করার কথা দুইবার বলা হয়েছে৷ এ ভয়, হিংস্র বাঘ, ভল্লুক, সাপের ভয় নয়৷ এ ভয় পিতা মাতা বা গুরুজনের মত স্নেহ ভালোবাসা, শ্রদ্ধা মেশানো ভয়, পাছে না তিনি রুষ্ঠ হন, দুঃখ পান, অপরাধ হয়ে যায় এমন ভয়৷ আল্লাহর ভয়টিও এমন৷
১৯/وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ نَسُوا اللَّهَ فَأَنسَاهُمْ أَنفُسَهُمْ أُوْلَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ
অর্থ;-তোমরা তাদের মত হয়োনা, যারা আল্লাহ তায়ালাকে ভুলে গেছে৷ ফলে, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে আত্মবিস্মৃত করে দিয়েছন৷ তারাই অবাধ্য৷
# সুরা ‘মুজাদালারর’ ১৯ আয়াতে আমরা জেনেছি যে, শয়তান মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে ভুলিয়ে রাখে৷ এখানে তা আরও খোলাসা হয়েছে৷ যারা আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে সরে গেছে, আল্লাহ তাদেরকে আত্ম বিস্মৃত করে দিয়েছেন৷ তবে কি তারা ক্ষুধা তৃষ্ণা, শোক আনন্দ, দুঃখ কষ্টের অনুভূতি ভুলে গেছে৷ অবশ্যই না, তারা তাদের আমিত্বকে ভুলে গেছে৷ আমার হাত, আমার পা, আমার সন্তান, আমার সম্পদ, এই আমিটা কে? এই আমিই হল সেই রূহের জগতের রূহ যা মানুষের মাঝে স্থাপন করে মানুষকে পশু থেকে আলাদা করা হয়েছে৷ শয়তানের অনুসারী মানুষকে আল্লাহ এই রূহের মর্যাদা ও চাহিদার কথাকেই ভুলিয়ে দিয়েছেন৷
গাধা ও ঘোড়ায় আকার আচরণ ও স্বভাবগত সামান্য পার্থক্য ছাড়া তেমন কোন পার্থক্য নজরে পড়েনা৷ আবার সিম্পাঞ্জী, গরিলা ও মানুষের মাঝেও তেমন পার্থক্য দেখা যায়না৷ পার্থক্য যা আছে তা সেই রূহের৷ এই রূহের স্মরণ থেকে যারা বঞ্চিত তারাই মানুষকে বানর, গরিলা, সিম্পাঞ্জীর নুতন সংষ্করণ মনে করে৷ ডারউইনের মতবাদ তাদের আরও উস্কে দিয়েছে৷ মানুষকে পশুর স্তরে নামিয়ে সভ্যতার নামে পশুর ন্যায় আচরণ ও উলঙ্গ হওয়ার পথে এগিয়ে নিয়ে চলেছে৷ শেখ সাদী বলেছেন, মানুষ ফেরেশ্তা বা রূহ আর পশুর যৌগীক৷ রুহ বিদায় নিলে পশুই থেকে যায়৷
আল্লামা ইকবালকে তাঁর দর্শণের মূল উৎসের কথা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান যে, তাঁর ‘দর্শণে খূদীর’ মূল উৎস কোরআনের এই আয়াতটি৷
২০/لَا يَسْتَوِي أَصْحَابُ النَّارِ وَأَصْحَابُ الْجَنَّةِ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ هُمُ الْفَائِزُونَ
অর্থ;-জাহান্নামের অধিবাসী ও জান্নাতের অধিবাসী সমান হতে পারেনা৷ যারা জান্নাতের অধিবাসী তারাই সফলকাম৷
২১/لَوْ أَنزَلْنَا هَذَا الْقُرْآنَ عَلَى جَبَلٍ لَّرَأَيْتَهُ خَاشِعًا مُّتَصَدِّعًا مِّنْ خَشْيَةِ اللَّهِ وَتِلْكَ الْأَمْثَالُ نَضْرِبُهَا لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ
অর্থ;-আমি যদি এ কোরআনকে পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ করতাম, তবে তুমি দেখতে যে, পাহাড় ডেবে গেছে, আল্লাহর ভয়ে বিদীর্ণ হয়ে গেছে৷ আমি এ সব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্য বর্ণনা করি, যাতে তারা চিন্তা ভাবনা করে৷
# কোরআনের মহাত্ম, মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের এটি একটি বিশেষ আয়াত৷ সুরা ‘ইউনুসে’ কোরআনকে অন্তরের ব্যাধী নিরাময়ের ঔষধ বলা হয়েছে৷ সুরা ‘ওয়াকেয়াতে’ বলা হয়েছে যে, আত্মশুদ্ধি ছাড়া একে আয়ত্ব করা যায়না৷ পঠন, তাফসীর, অনুবাদ যাই হোকনা কেন তা হয় অন্তসার শূণ্য৷ সুরা ‘আ’রাফে’ বলা হয়েছে, মুসা আঃ আল্লাহর সাথে কথপোকথনের মাঝে আল্লাহকে দর্শনের ইচ্ছা জানালে আল্লাহ তার স্থিরতার পরীক্ষা নিলেন৷ আপন জ্যোতি দূরের পাহাড়ে ফেললেন৷ পাহাড় বিদীর্ন হল আর মুসা আঃ বেহুস হলেন৷ ওখানে আল্লাহর জ্যোতির কথা বলা য়েছে আর এখানে তাঁর কালামের কথা বলা হয়েছে৷ উভয়ের উৎস একই৷
২২/هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ
অর্থ;-তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই৷ তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যকে জানেন৷ তিনি পরম দয়ালু, অসীম দাতা৷
২৩/هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ
অর্থ;-তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই৷ তিনিই একমাত্র মালিক, পবিত্র, শান্তিদাতা, নিরাপত্তা দাতা, পরাক্রান্ত, প্রতাপান্বিত, মহিমান্বিত৷ তারা যা শরিক করে তা থেকে আল্লাহ পবিত্র মহান৷
২৪/هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاء الْحُسْنَى يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
অর্থ;-তিনিই আল্লাহ, সৃষ্টি কর্তা, উদ্ভাবক, রূপদাতা৷ উত্তম নাম সমুহ তাঁরই৷ নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে যাকিছু আছে, সবই তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করে৷ তিনি পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়৷
# এ রুকুর শেষের তিনটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালার ষোলটি নামের সমাহার হয়েছে৷ আসমায়ে হুসনার এ গুচ্ছের জন্যই এ রুকুটি বৈশিষ্টপূর্ণ৷ নাম গুলির মাঝে কোন ‘ওয়াও’ হরফ দিয়ে আলাদা করা হয়নি, কেননা প্রতি মুহূর্তে এ সমস্ত গুনাবলী তাঁর মাঝে একত্রে বিদ্যমান৷ তিনিই সৃষ্টির পরিকল্পনা করেন, তিনিই নকশা করেন, আবার তিনিই তা রূপদান করে দৃশ্যমান করে থাকেন৷ এ সুরার আরও একটি বৈশিষ্ট হল, সুরাটি শুরু হয়েছে তাসবীহের মাধ্যমে, শেষও হয়েছে তাসবীহের মাধ্যমে৷
বিষয়: বিবিধ
১২০৯ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চাচাজান অনেক অনেক ধন্যবাদ কিছুক্ষনের জন্য হলেও মনের মাঝে ব্যাপক নাড়া লাগল ।
জাজাকাল্লাহ খাইরান ।
ইয়া রব্ব গাফলিয়াত কমিয়ে দিন।
আমিন।
দ্বীনি খেদমত এর জন্য আল্লাহ হাযরাতকে কবুল করুন আমিন।
আল্লাহ যেন আমাদের ভাল কাজকে কবুল করে,ভুল ক্ষমা করে জান্নাত দান করেন
মন্তব্য করতে লগইন করুন