তারা আলল্লাহর অনুগ্রহ অন্বেষণ করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসুলের সাহায্য করে৷ তাঁরাই সত্যবাদী৷
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ২৭ জানুয়ারি, ২০১৫, ০২:৩৭:৫০ রাত
( উর্দু বয়ানুল কোরআনের বাংলা অনুবাদ) অনু বাদক আঃ সামাদ৷
(৫৯) সুরা আল হাশর (মাদানী) রুকু ৩টি আয়াত ২৪টি
রুকু;-১ আয়াত;-১-১০
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
১/سَبَّحَ لِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
অর্থ;-নভোমণ্ডলে যা কিছু আছে ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে, সসবই আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করে৷ তিনি পরাক্রমশালী, মহা জ্ঞানী৷
# একই আয়াত সুরা হাদীদেও এসেছে তবে, এখানে ‘আল আরদে’র সাথে অতিরিক্ত ‘মা ফি’ যোগ হয়েছে৷
২/هُوَ الَّذِي أَخْرَجَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ مِن دِيَارِهِمْ لِأَوَّلِ الْحَشْرِ مَا ظَنَنتُمْ أَن يَخْرُجُوا وَظَنُّوا أَنَّهُم مَّانِعَتُهُمْ حُصُونُهُم مِّنَ اللَّهِ فَأَتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ حَيْثُ لَمْ يَحْتَسِبُوا وَقَذَفَ فِي قُلُوبِهِمُ الرُّعْبَ يُخْرِبُونَ بُيُوتَهُم بِأَيْدِيهِمْ وَأَيْدِي الْمُؤْمِنِينَ فَاعْتَبِرُوا يَا أُولِي الْأَبْصَارِ
অর্থ;-তিনিই সেই সত্তা, যিনি আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা কাফের, তাদেরকে প্রথমবার একত্রিত করে, তাদেরকে তাদের বাড়িঘর থেকে বহিষ্কার করেছেন৷ তোমরা ধারণাও করতে পারনি যে, তারা বের হবে এবং তারা মনেকরেছিল যে, তাদের দূর্গগুলো তাদেরকে আল্লাহর কবল থেকে রক্ষা করবে৷ অতঃপর আল্লাহর শাস্তি তাদের এমন দিক থেকে এল, যার কল্পনাও তারা করেনি৷ আল্লাহ তাদের অন্তরে ত্রাস সৃষ্টি করে দিলেন৷ তারা তাদের বাড়িঘর নিজের হাতে ও মুসলমানদের হাতে ধ্বংস করছিল৷ অতএব, হে চক্ষুস্মান ব্যক্তিগন, তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করো৷
# রসুল সঃ যখন মদীনায় হিজরত করে আসলেন তখন, মদীনার বড় বড় তিনটি ইহদী গোত্রের সাথে জোটভুক্তির চুক্তি করলেন৷ তারা ছিল; বনু কায়েনকা গোত্র, বনু কোরায়জা গোত্র ও বনু ওজায়ের গোত্র৷ বদর যুদ্ধের পরই বনু কায়েনকা গোত্র চুক্তি ভঙ্গ করলে মদীনা হতে বহিষ্কৃত হয়৷ এ আয়াতে বনু ওজায়েরের গোত্রের বহিষ্কারের কথা বলা হয়েছে৷ যারা বদর যুদ্ধের পর মুসলীমদের বড় অহংকারের সাথে বলত ‘মুমিনরা, কোরাইশদের হারাতে পেরেছো, যদি আমাদের সাথে লড়তে তবে বুঝতে৷’
ওহোদ যুদ্ধের পর হিজরী ৪ সনে তাদের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি, কাব ইবনে আশরাফ মক্কার কোরাইশদের সাথে মুসলীমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্তে লিপ্ত হয়৷ বলে যে, মোহাম্মদ তোমাদেরই লোক, কিন্তু সে তোমাদের শত্রু৷ আমাদের মাঝে এসে ত্রাসের সৃষ্টি করেছে, সে আমাদেরও শত্রু৷ তোমরা তাদের উপর আক্রমন করো, আমরা ভিতর থেকে তোমাদের সাহায্য করব৷
আলোচণার নামে রসুল সঃ কে ডেকে হত্যার চেষ্টা চালায়, তিনি বসেছিলেন একটি দেয়ালের পাশে৷ তারা উপর হতে যাঁতার একাংশ তাঁর মাথার উপর ফেলে হত্যা করার চেষ্টায় বিফল হয়৷
অতঃপর রসুল সঃ একই সনের রবিউল আউয়াল মাসে তাদের অবরোধ করেন৷৷ তারা মোকাবেলার সাহস করেনি, কয়েকদিন অবরুদ্ধ থাকার পর তারা আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়৷ তখন তারা যা কিছু সাথে নিতে পারে নিয়ে যাবার অনুমতি দেওয়া হয়৷ ফলে তারা বাড়িঘর ভেঙ্গে যথা সম্ভব জিনিষ সাথে নিয়ে মদীনা ত্যাগ করে৷
তৃতীয় গোত্র বনু কোরায়জা, আহযাবের যুদ্ধের পর বহিষ্কার হয় যা আমরা আগেই সুরা ‘আহযাবে’ জেনে এসেছি৷ এ ভাবে তিন গোত্রই চুক্তি ভঙ্গের কারণে মদীনা ছাড়তে বাধ্য হয়৷
মুসলমানরা আশা করেনি যে ইহুদীগন এত সহজে পরাজিত হবে৷ আর ইহুদীরা কল্পণা করেছিল যে, তাদের দূর্গগুলো তাদের রক্ষা করবে, তারা কল্পণাও করেনি যে এ ভাবে তাদের পরাজয় আসবে৷ আল্লাহ তায়ালা তাদের অন্তরে ভয়ের সঞ্চার করলেন, আর তারা ভীত হয়েই আত্মসমর্পণ করল৷ তখনও বনু কোরায়জা বহিষ্কার হয়নি, তাই এ থেকে আল্লাহ তাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে বললেন৷
৩/وَلَوْلَا أَن كَتَبَ اللَّهُ عَلَيْهِمُ الْجَلَاء لَعَذَّبَهُمْ فِي الدُّنْيَا وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ عَذَابُ النَّارِ
অর্থ;-আল্লাহ যদি তাদের জন্য নির্বাসন অবধারিত না করতেন, তবে তাদেরকে দুনিয়ায় শাস্তি দিতেন৷ আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আজাব৷
৪/ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ شَاقُّوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَمَن يُشَاقِّ اللَّهَ فَإِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
অর্থ;-এটা এ জন্য যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের বিরুদ্ধাচারণ করেছে৷ যে আল্লাহর বিরুদ্ধাচারণ করে তার জানা উচিৎ যে, আল্লাহ কঠোর শাস্তি দাতা৷
৫/مَا قَطَعْتُم مِّن لِّينَةٍ أَوْ تَرَكْتُمُوهَا قَائِمَةً عَلَى أُصُولِهَا فَبِإِذْنِ اللَّهِ وَلِيُخْزِيَ الْفَاسِقِينَ
অর্থ;-তোমরা যা কিছু লীন (খেজুর গাছ) কেটে দিয়েছ এবং কতক না কেটে রেখে দিয়েছ তাতো আল্লাহরই আদেশে৷ যাতে তিনি অবাধ্যদেরকে লাঞ্ছিত করেন৷
# ঐ কাবিলার চারদিকে লীন নামক খেজুর গাছের সারি যা বেড়ার কাজ করত৷ মোকাবেলার প্রয়োজনে মুসলীমরা কিছু গাছ কেটে জায়গা বানায়, তাতে তারা তারা গুজব ছড়ায় যে যারা নিজেদের মুমিন বলে দাবী করে, তারা কিভাবে গাছ নষ্ট করেছে৷ আল্লাহ বলেন এটি তাঁরই পরামর্শে৷ হতে পারে রসুলের আদেশ বা সম্মতিকেই আল্লাহ অনুমোদন দিলেন৷
৬/وَمَا أَفَاء اللَّهُ عَلَى رَسُولِهِ مِنْهُمْ فَمَا أَوْجَفْتُمْ عَلَيْهِ مِنْ خَيْلٍ وَلَا رِكَابٍ وَلَكِنَّ اللَّهَ يُسَلِّطُ رُسُلَهُ عَلَى مَن يَشَاء وَاللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
অর্থ;-আল্লাহ তাদের কাছথেকে রসুলকে যে ‘ফায়’ এর মাল দিয়েছেন, তা তোমরা উট বা ঘোড়ায় যুদ্ধ করে লব্ধ করোনি৷ কিন্তু আল্লাহ যার উপর ইচ্ছা তাঁর রসুলগণকে প্রাধান্য দান করেন৷ আল্লাহ সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান৷
# যুদ্ধলব্ধ মালকে গনিমতের মাল বলা হয়৷ কিন্তু যুদ্ধ না করে, কোন উট ঘোড়া ব্যবহার না করে, শত্রু পক্ষের পরিত্যাক্ত মালকে ‘ফায়’ বলা হয়৷ বনু ওজায়েরের পরিত্যাক্ত সকল মালের অধিকার আল্লাহ তাঁর রসুলকে দিলেন, তাই বলে তিনি একাই তা ভোগ করবেন, এমন ভাবার অবকাশ নেই৷ পরের আয়াতে তার বন্টন ব্যবস্থার নিয়ম বলা হয়েছে৷
৭/مَّا أَفَاء اللَّهُ عَلَى رَسُولِهِ مِنْ أَهْلِ الْقُرَى فَلِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ وَلِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَابْنِ السَّبِيلِ كَيْ لَا يَكُونَ دُولَةً بَيْنَ الْأَغْنِيَاء مِنكُمْ وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
অর্থ;-জনপদ বাসীদের কাছ থেকে আল্লাহ রসুলকে যাদিয়েছেন, তা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের, তাঁর নিকট আত্মীয়ের, ইয়াতীমদের, অভাবগ্রস্থদের এবং মুসাফিরদের জন্য৷ যাতে ধনৈশ্বর্য কেবল তোমাদের বিত্তশালীদের মধ্যেই আবদ্ধ না থাকে৷ রসুল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক৷ আর আল্লাহকে ভয় কর৷ নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা৷
# গনিমতের মালের বন্টন ব্যবস্থা আমরা সুরা আনফালে জেনে এসেছি৷ যেখানে এক পঞ্চমাংশ ছিল বাইতুল মালের বা সরকারী কোষাগারের৷ যাতে অংশ ছিল রসুলের পরিবার, অভাবী ও মিসকীনদের৷ রসুলের পরিবারে কোন বাহুল্য ছিলনা তা আমরা আগেই জেনে এসেছি৷ আর চতুর্থাংশ ছিল যোদ্ধাদের৷ যারা উট বা ঘোড়া ব্যবহার করত তারা পেত দ্বিগুন, বলা বাহুল্য তারা ছিল সচ্ছল৷ মূলতঃ ফায় এর মালে এদের মত মালদারকেই বঞ্চিত করা হয়েছে মাত্র৷ তার পরও বলা হয়েছে, রসুল যা দেন তাতে খুশী থাক৷
আল্লাহর উদ্দেশ্য, সম্পদ যেন শুধুই সম্পদশালীদের মাঝেই না ঘুরতে থাকে৷ সে সবার মাঝেই বিচরণ করুক৷ কোটিপতি তার মেয়ের বিয়েতে লক্ষ টাকার গহনা দিলে বা হাজার লোককে উন্নত খাবার খাওয়ালে, সম্পদশালীরাই তার সুফল পেয়ে থাকে৷ বরং এতে সমাজে হিংসা ও শত্রুতার জন্ম দেয়৷ হয়ত ঐ কোটিপতির কোন ড্রাইভার, দারোয়ান, মালী, চাকর বা চাকরানীর টাকার অভাবে মেয়ের বিয়ে আটকে রয়েছে, হয়ত তারা দাওয়াতও পায়নি, তাদের মনে হিংসা ও ঘৃণাই জন্মাবে৷ তাই বলে ইসলাম সমাজ তন্ত্র চায়না৷ যা পৃথিবীতে অচল প্রমানিত হয়েছে৷ কেননা সিপাহী আর সেনাপতি এক নয়৷
শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলবী রঃ বলেছেন যে, সম্পদের আধিক্য বিত্তবানদের মাঝে সেচ্ছাচারিতা, অপচয়, বেহায়াপনা, মদ, জেনার সঞ্চার করে, যা সংক্রমিত হয় সমগ্র সমাজে৷ অপর দিকে নিম্নবিত্তরা উদয় অস্ত পরিশ্রম করেও চাহিদাতো দূরের কথা আহার যোগাতেও হিমসীম খায়৷ ফলে সমাজে চুরি, ছিনতাই ডাকাতী, খুন-খারাবী সহ অসামাজিক কার্যকলাপ শুরু হয়৷
৮/لِلْفُقَرَاء الْمُهَاجِرِينَ الَّذِينَ أُخْرِجُوا مِن دِيارِهِمْ وَأَمْوَالِهِمْ يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِّنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا وَيَنصُرُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُوْلَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ
অর্থ;-ঐ সমস্ত দরিদ্র মোহাজিরদের জন্য, যারা নিজেদের বাস্তুভিটা ও ধন সম্পদ থেকে বঞ্চিত হয়েছে৷ তারা আল্লাহর অনুগ্রহ অন্বেষণ করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসুলের সাহায্য করে৷ তারাই সত্যবাদী৷
# ফায় এর মালে রসুল সঃ এর জন্য যা বরাদ্দ হয়েছে, তা শুধুই তাঁর পরিবারের জন্য নয়,বরং অন্যান্ন সবার মত সচ্ছলতা আশা করার অপরাধে নিজ স্ত্রীগণের সাথে ইলা করে তাদের দারিদ্র জীবন যাপনের ওয়াদা নিয়েছিলেন, ফলে প্রায় দিনই তাঁর ঘরে একবেলার আহার থাকত না৷যা সুরা আহযাবে জানা হয়েছে৷
ঐ মালে অধিকার রয়েছে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ও আল্লাহ ও তাঁর রসুল সঃ এর একামতে দ্বীনে সাহায্য করতে, আপন ঘর বাড়ি, সহায় সম্পদ, আত্মিয় বান্ধব, জন্মভূমী থেকে বহিষ্কৃত হয়ে মদীনায় হিজরত করে এসে অন্যের আশ্রয়ে ও অনুগ্রহে বাস করছেন, তাদেরও৷ আর তারাই হল সত্যবাদী, সিদ্দিকীন৷
৯/وَالَّذِينَ تَبَوَّؤُوا الدَّارَ وَالْإِيمَانَ مِن قَبْلِهِمْ يُحِبُّونَ مَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمْ حَاجَةً مِّمَّا أُوتُوا وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
অর্থ;-আর যারা মোহাজিরদের আগমন পূর্বে মদীনায় বাস করত এবং ইমান এনেছিল, তারা মোহাজিরদের ভালবাসে, তাদের যা দেওয়া হয়েছে তাতে ইর্ষা পোষণ করেনা এবং নিজেরা অভাব গ্রস্থ হলেও নিজেদের উপর তাদেরকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, যারা মনের কার্পন্য থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পেরেছে, তারাই হল সফলকাম৷
# এ আয়াতটি মদীনার ঐ সব আনসারদের শান্ত্বনার জন্য যারা, মক্কার মুহাজিরগণ আসার আগেই ইমান এনেছিল, মোহাজিরগণ আসার পর তারা তাদের আপন ভাইয়ের মর্যাদা দিয়ে, ঘরবাড়ি ব্যবসা, সম্পদে তাদের অংশীদারিত্ব দিয়েছিল৷ এমনকি যারা নিজেরাই অভাবী ছিল, এ কাজে তারাও পিছিয়ে ছিলনা৷ তারা এক বারও ভাবেনি যে এই সহায় সম্পদহীন মানুষগুলো তাদের বোঝা, তাদের সমাজের বোঝা, উপরন্তু তারা তাদের ভালবেসে অন্তরেও জায়গা দিয়েছিল৷ তাদেরই আশ্রিত মোহাজীরদের ফায় এর ধন প্রাপ্তিতে তারা হিংসা করেনি, মনের কৃপনতাকে তারা জয় করেছে, তারাই সফলকাম হয়েছে, তাদেরও এ মালে হক রয়েছে৷
১০/وَالَّذِينَ جَاؤُوا مِن بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ
অর্থ;-আর যারা তাদের পরে আগমন করেছে, তারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে এবং ইমানে বলবত আমাদের সাবেকা ভ্রাতাগণকে ক্ষমা কর৷ আর যারা ইমান এনেছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রেখোনা৷ হে আমাদের রব, আপনি দয়ালু পরম করুনাময়৷
# এ আয়াতটি ইসলামের ইতিহাসে একটি বিশেষ মর্যাদার স্থান দখল করে আছে৷ এ আয়াতের বরাত দিয়ে, খলিফা হজরত ওমর রাঃ ভূমী সত্বাধিকার আইন প্রনয়ন করেন, যা আজও সমাদরে গৃহীত হয়ে চলেছে৷
হজরত ওমর রাঃ এর খেলাফত কালে, ইরাক, ইরান, শাম, মিশর বিজিত হয়, বিশাল ভূখণ্ড, যাতে অনেক উর্বর জমি ও প্রচুর মালামাল ইসলামের আয়ত্বে আসে৷ এ সমস্ত মালামাল গণিমত না ফায় এ নিয়ে সাহাবীদের মাছে মতানৈক্য হয়৷ যদি গণিমত হয় তবে সরকারী কোষাগার পায় পাঁচ ভাগের একভাগ৷ বাকী চার ভাগ যোদ্ধাদের৷ আর যদি তা ফায় হয় তবে সব টুকুই যায় কোষাগারে৷ যেখানে গরিব মিসকীন, দুঃস্থ, অভাবীদের হক নিশ্চিত৷
হজরত ওমর রাঃ বলেন যে, এ আয়াতে অনাগত মুসলীমদের ফায় এর মালে অধিকারের কথা বলা হয়ছে৷ (‘জা উ মিম বা’দেহীম’) আর এটি তখনই সম্ভব যখন তা কোষাগারে সঞ্চিত হবে৷ তা শুধু জনগনের সুরক্ষাই করবেনা বরং বিশাল সাম্যজ্যের নিরাপত্তা রক্ষায় সেনা বাহিনীও পালন করবে৷ এক বিশিষ্ট সাহাবী এতে অমত করেন৷ তখন আওস ও খাজরাজ গোত্রের কয়েক জন বিশিষ্ট আনসারের সমন্বয়ে একটি কমিশন গঠন হয়৷ বিচার বিশ্লেষণ ও গবেষণা করে তাঁরা একটি রিপোর্ট পেশ করেন৷
রিপোর্টে বলা হয় যে, যেহেতু লড়াই সারা দেশ জুড়ে হয়নি, হয়েছে বিশেষ জায়গায়, তাই সরে জমীনে লব্ধ মাল সামগ্রী হবে গনিমতের আর বাকী মালামাল ফায় এর৷ (যেমন, যুদ্ধ হল পানিপথে, ইব্রাহীম লোদী হেরে গেলে পুরো দেশ বাবরের হয়ে গেল) বিজিত ভূখণ্ডের কোন জমিই ব্যক্তি মালিকানায় থাকবে না, সব মুসলমানদের ইজ্তেমায়ী মালিকানায় থাকবে৷ তা হবে মুসলীম উম্মার সম্পদ৷ সব জমি আরজী হবে৷ তবে যারা যুদ্ধ ছাড়া সেচ্ছায় ইমান এনেছে তাদের জমি হবে উশরী (জমি তাদেরই থাকবে, ফষল ফলাবে, সরকারকে নির্ধারিত অংশ দেবে৷ সে যে জাতি বা যে ধর্মেরই হোক)৷ আর যারা তলোয়ার দেখে ইমান এনেছে তাদের জমি খারাজী, তারা খারাজ দেবে৷ বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত ভারতে এ আইন কার্যকর ছিল৷ এ অনুযায়ী অখণ্ড ভারতের কোন জমিই কোন ব্যক্তির নয়৷ উশর বা খেরাজ সরাসরি সরকারে যাবে, মাঝে কোন জমিদার, মধ্য স্বত্তভোগী জায়গীরদারের ঠাঁই নেই৷ বৃটিশ তার সুবিদার্থে এদের সৃষ্টি করে৷
বিশিষ্ট ফেকাহবীদ, মোফাস্সীর, সূফী, মুহাদ্দীশ মৌঃ সানাউল্লাহ পানিপথি রঃ তাঁর ফেকার কিতাব, ‘মা লা বুদ্দা মিনহু’ যা মাদ্রাসা সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত, তাতে লিখেছেন, যেহেতু (অখণ্ড)ভারতের কোন জমিই উশরী নয়, তাই তাঁর কিতাবে উশরের কোন মশায়ালা লেখেননি৷ প্রয়োজন মনে করেননি৷
ভবিষ্যতে আগত মুসলীমগন, যারা এর সুফল ভোগ করবে, তারা তাদের পূর্ববর্তী মুমিন, যারা দুনিয়া ছেড়ে গেছেন তাদের মাগফেরাতের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে৷
বিষয়: বিবিধ
১৩৩২ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মহান রাব্বুল আলামীন আপনাকে সর্বাবস্থায় ভালো রাখুন, সুস্থ রাখুন এবং দুনো জাহানের কামিয়াবী হাসিলের তৌফিক দিন এই প্রার্থনা রইলো।
জাজাকাল্লাহ খাইরান চাচাজান ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন