'আমাদের জন্য তোমরা একটু অপেক্ষা কর, যাতে আমরা তোমাদের থেকে কিছু আলো নিতে পারি'৷ {{{{{{{{{{{ মুসলীম দাবীদারদের অবশ্যই পড়া উচিৎ}}}}}}}}}}}}
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ১৯ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৮:৫৫:২০ সকাল
(মরহুুম জনাব ইসরার আহমদ সাহেের 'বয়ানুল কোরআনে'র বাংলা অনুবাদ)
সুরা আল হাদীদ রুকু;-২ আয়াত;-১১-১৯
১১/مَن ذَا الَّذِي يُقْرِضُ اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضَاعِفَهُ لَهُ وَلَهُ أَجْرٌ كَرِيمٌ
অর্থ;-কে সেই ব্যক্তি যে আল্লাহকে কর্জে হাসানা দেবে? এর পর তিনি তার জন্য তা বহুগুনে বৃদ্ধি করবেন এবং তার জন্য রয়েছে উত্তম পুরষ্কার৷
# আল্লাহ অভাবী নন৷ দুনিয়ার সমস্ত সম্পদের ওয়ারিশ এক মাত্র তিনিই৷ তাঁর ধার কর্জ করারও কোন প্রয়োজন নেই৷ তিনি তাঁর বান্দাদের সম্পদ দিয়েছেন তাদের পরীক্ষার জন্য, আর এগুলো তারই হিন্টস৷ সে সম্পদ কি ভাবে খরচ করলে আখেরাতের অনন্ত জীবনের জন্য সাফল্য বয়ে আনবে৷ অভাবীকে সাহায্য সহযোগীতার জন্য যা খরচ করা হয়, তা সদকা৷ আর আল্লাহ জন্য বা তার দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য যা খরচ করা হয়, তা কর্জে হাসানা৷ এর বদলা তিনি আখেরাতে বহুগুনে বাড়িয়ে দিয়ে থাকেন৷ যার কিছু নমুনা পরের আয়াতে আসছে৷
১২/يَوْمَ تَرَى الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ يَسْعَى نُورُهُم بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَانِهِم بُشْرَاكُمُ الْيَوْمَ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
অর্থ;-সে দিন আপনি দেখবেন, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে যে তাদের সামনে ও ডানে নূর (আলো)ছুটা ছুটি করছে৷ তাদেরকে বলা হবে, আজ তোমাদের জন্য এমন জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে, যার তলদেশে নহর সমুহ প্রবাহিত হয়৷ সেখানে তোমরা অনন্তকাল থাকবে৷ এটাই মহা সাফল্য৷
# এ আয়াতে এক দূর্ভেদ্য অন্ধকার রাতে এক অবস্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে, থাকবে এক বিরাট জনস্রোত৷ সেই জনস্রোতে দুনিয়ায় যার ছিলেন প্রকৃত মুমিন ও মুমিনা তাদের সামনে ও ডানপাশে কিছু টর্চ লাইটের মত আলো ছোটাছুটি করছে, আর সে আলোয় তাঁরা সামনে এগিয়ে চলেছেন৷ সামনের আলোটি তাদের প্রকৃত ইমানের আর ডান পাশের আলোটি উত্তম আমলের৷ তাদের সামনে অনন্তকাল বসবাসের জন্য মনোরম জান্নাতের সুসংবাদ শোনানো হবে৷ এ অবস্থানকে আমরা পুল সিরাত বলেই জানি৷ এ চিত্রটি পুনরায় এ গুচ্ছের শেষ সুরা ‘তাহরীমে’ পাওয়া যাবে৷
১৩/يَوْمَ يَقُولُ الْمُنَافِقُونَ وَالْمُنَافِقَاتُ لِلَّذِينَ آمَنُوا انظُرُونَا نَقْتَبِسْ مِن نُّورِكُمْ قِيلَ ارْجِعُوا وَرَاءكُمْ فَالْتَمِسُوا نُورًا فَضُرِبَ بَيْنَهُم بِسُورٍ لَّهُ بَابٌ بَاطِنُهُ فِيهِ الرَّحْمَةُ وَظَاهِرُهُ مِن قِبَلِهِ الْعَذَابُ
অর্থ;-সেদিন মুনাফেক পুরুষ ও মুনাফেক নারীরা মুমিনদের বলবে, ‘আমাদের জন্য তোমরা একটু অপেক্ষা কর, যাতে আমরা তোমাদের থেকে কিছু আলো নিতে পারি’৷ তাদেরকে বলা হবে, তোমরা তোমাদের পিছনে ফিরে যাও, অতঃপর আলো তালাশ করো’৷ অতঃপর তাদের উভয় দলের মাঝখানে একটি প্রাচীর খাড়া করা হবে, যাতে একটি দরজা থাকবে৷ তার ভিতরের দিকে থাকবে রহমত আর বাইরের দিকে থাকবে আজাব৷
# এ জনস্রোতে কাফেররা থাকবেনা, কেননা প্রথম চালুনী দিয়ে আগেই তাদের আলাদা করে নেওয়া হয়েছে৷ আর এ পুলসিরাত হল শেষ চালুনী, যার মাধ্যমে মুমিনরা ভিতরে যাবে আর মুনাফেকরা বাইরে থাকবে৷ এ জনতায় থাকবে প্রকৃত মুমিন ও মুনাফেকগণ৷ মুনাফেকরাও দুনিয়ায় মুমিনদেরই শামিল ছিল৷৷ ইমান ও নেক কাজের অধিকারী বান্দাদের আলোর সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া দেখে মুনাফেক নারী ও পুরুষেরা বলতে থাকবে, তোমরা আমাদের জন্য একটু অপেক্ষা কর, যাতে আমরাও তোমাদের কিছু আলো ব্যবহার করতে পারি৷ তখন উত্তরে তাদের বলা হবে যে, তোমরা পিছনের দুনিয়ায় ফিরে যাও আর আলো কামাই করে আন৷ তখনই তাদের সামনে সেই প্রাচীর বা চালুনী আসবে, মুমিনরা তার ভিতর রহমতে প্রবেশ করবে আর মুনাফেকরা আজাবে পতিত হবে৷ তবে তার আগে,
১৪/يُنَادُونَهُمْ أَلَمْ نَكُن مَّعَكُمْ قَالُوا بَلَى وَلَكِنَّكُمْ فَتَنتُمْ أَنفُسَكُمْ وَتَرَبَّصْتُمْ وَارْتَبْتُمْ وَغَرَّتْكُمُ الْأَمَانِيُّ حَتَّى جَاء أَمْرُ اللَّهِ وَغَرَّكُم بِاللَّهِ الْغَرُورُ
অর্থ;-মুমিনদেরকে ডেকে বলবে, আমরাকি তোমাদের সাথে ছিলাম না? তারা বলবে, হাঁ, কিন্তু তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে বিপদগ্রস্থ (ফেৎনাময়) করেছ, প্রতিক্ষা করেছ, সন্দেহ পোষণ করেছ এবং অলীক আশার পিছনে বিভ্রান্ত হয়েছ, অবশেষে আল্লাহর আদেশ পৌঁছেছে৷ এসবই তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত করেছে৷
# মুনাফেকরা তখন মুমিনদেরকে মনে করিয়ে দেবে এইবলে যে, তারাতো একত্রে একই মসজীদে, ঈদগায় নামাজ পড়ত, একই সঙ্গে রোজা পালন করত৷ তখন মুমিনরা তাদের বলবে যে, আল্লাহ বলেছিলেন, ‘ইন্নামা আমওয়ালাকুম ওয়া আউলাদুকুম ফেৎনাতুন’, তোমাদের সন্তান ও তোমাদের সম্পদ ফেৎনায় ফেলেদেবে৷ কিন্তু তোমরা সম্পদের পিছে আর সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়তে গিয়ে ধোঁকায় পড়েছিলে৷ সুরা ‘লোকমানে’র ৩৩ আয়াতে এই বলে সাবধান করা হয়ে ছিল যে পার্থিব জীবনে শয়তান যেন তোমাদের ধোঁকায় না ফেলে৷ অপেক্ষায় ছিলে, এই বলে যে, ক্যারিয়ারটা গড়ে নিই, বাড়ির কাজটা শেষ করে নিই বা নতুন ব্যবসাটা দাঁড় করিয়ে নিয়েই পুরা দস্তুর মুমিন হয়েযাব৷৷ সুরা ‘তওবা’র ২৪ আয়াতে আল্লাহ এই বলে হুশিয়ারী দিয়েছেন যে, যদি কারও কাছে তার পিতা, তার সন্তান, তার ভাই, তার স্ত্রী, তার বংশীয় লোক, তার অর্জিত সম্পদ, তার ব্যবসা যা মন্দা পড়ার ভয়, এবং তার অট্টালিকা, এই আটটির কোন একটি যদি আল্লাহ, তাঁর রসুল ও আল্লাহর পথে জেহাদ, এই তিনটির কোন একটির অপেক্ষা বেশী প্রীয় হয়, তবে সে ওয়েটিং লিষ্টে চলে যাবে৷ পরক্ষনেই বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ ফাসেকদের পছন্দ করেন না৷’
মনে সন্দেহ ছিল, এই বলে যে, সত্যই আখেরাত বলে কিছু আছে কিনা৷ দুনিয়ার সবকিছু নগদ আর আখেরাত বাকীর খাত৷ এ ছাড়াও মনে আশা ছিল, অনেকের থেকেতো ভাল কাজ করি, ঈদ জুমা, রোজা বাদ পড়েনা৷ আল্লাহ মেহেরবান, বকী টুকু নিশ্চয় ক্ষমা করে দেবেন৷ তোমরা এমন বিভ্রান্তিতে পড়ে ছিলে৷ তাই আমাদের আলোয় ভাগ বসাবার উপায় নেই৷ উপরন্তু,
১৫/فَالْيَوْمَ لَا يُؤْخَذُ مِنكُمْ فِدْيَةٌ وَلَا مِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا مَأْوَاكُمُ النَّارُ هِيَ مَوْلَاكُمْ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ
অর্থ;-অতএব, আজ তোমাদের কাছ থেকে কোন মুক্তিপণ গ্রহণ করা হবে না এবং কাফেরদের কাছ থেকেও নয়৷ তোমাদের সবার আবাস স্থল জাহান্নাম৷ সেই তোমাদের অভিভাবক৷ কতই না নিকৃষ্ট এই প্রত্যাবর্নস্থল৷
মুমিন ও মুমানাফেকদের আখেরাতের পরিনতি বয়ান করার পর ইমানের দাবীদারদের কাছে প্রশ্ন রাখছেন,
১৬/أَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِينَ آمَنُوا أَن تَخْشَعَ قُلُوبُهُمْ لِذِكْرِ اللَّهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ الْحَقِّ وَلَا يَكُونُوا كَالَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلُ فَطَالَ عَلَيْهِمُ الْأَمَدُ فَقَسَتْ قُلُوبُهُمْ وَكَثِيرٌ مِّنْهُمْ فَاسِقُونَ
অর্থ;-মুমিনদের জন্য কি সে সময় এখনও আসেনি? যাতে আল্লাহর স্মরণে ও যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে, তার কারণে তাদের হৃদয় বিগলিত হয়৷ তারা যেন ওদের মত না হয়, যাদেরকে পূর্বে কিতাব দেওয়া হয়েছিল, তাদের উপর সুদীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হয়েছে৷ অতঃপর তাদের অন্তঃকরণ কঠীন হয়ে গেছে৷ আর তাদের অধিকাংশই ফাসেক৷
# যে সমস্ত মুমিনের অন্তরে মুনাফেকী রয়েছে, তাদের জন্য সময় আজও শেষ হয়ে যায়নি৷ যে কিতাব সত্য সহ নাজিল হয়েছে, সেই কোরআনে রয়েছে অন্তরের রোগ নিরাময়ের ঔষধ৷ ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ায় সুখে থাকার আশায় জীবনের অর্ধেক ব্যয় হয়ে যায় ক্যারিয়ার গড়তে, কোরআন বোঝার পিছনে ব্যয় করার মত সময় হয়না৷
১৭/اعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يُحْيِي الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
অর্থ;-তোমরা জেনে রাখ, আল্লাহই ভূভাগকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন৷ আমি পরিষ্কার ভাবে তোমাদের জন্য নিদর্শণ গুলি ব্যক্ত করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার৷
# ফসল কাটার পর বা অনাবৃষ্টিতে জমী মরে যায়৷ সেই মৃত জমিতে আল্লাহ বর্ষণ দেন, আর চাষী তাতে হাল বা কলের লাঙ্গল চালায়, বীজ ছড়ায় কিংবা সুপ্ত বীজে জমি ফুল ফসলে ভরে ওঠে৷ চাসী খুশী হয়৷ জমীনে নুতন জীবন ফিরে আসে৷ মানুষের অন্তরও মরে যায়৷ কিন্তু ইমান সেখানে লুকিয়ে থাকে৷ সেখানেও চাই লাঙ্গল, পানি৷ আর তা হল কোরআন৷ এছাড়াও রয়েছে আরও উপায়, যা পরের আয়াতে আসছে৷
১৮/إِنَّ الْمُصَّدِّقِينَ وَالْمُصَّدِّقَاتِ وَأَقْرَضُوا اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا يُضَاعَفُ لَهُمْ وَلَهُمْ أَجْرٌ كَرِيمٌ
অর্থ;-নিশ্চয় দানশীল পুরুষ ও দানশীলা নারী, আর যারা আল্লাহকে কর্জে হাসনা দেয়, তাদেরকে দেওয়া হবে বহু গুন ও তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক পুরষ্কার৷
# সাদকা হল যা অভাবী মানুষকে দেওয়া হয়৷ জাকাতও সদকার মধ্যে গণ্য৷ সদকার মাধ্যমে মানুষের অন্তরের দরজা খুলে যায়৷ দুনিয়ার শান শওকত, আরাম আয়েশের জন্য ও সন্তানের জন্য মানুষ সম্পদ জমা করে৷ সাথে সাথে তার মনের ইঞ্জীনে ব্রেক লেগে যায়৷ তাকওয়ার এক্সেলেটরে কাজ করেনা৷ সদকা ও আল্লাহর পথে মাল খরচে সে ব্রেক খুলে যায়৷ আল্লাহর পথে, তাঁর দ্বীনের প্রতিষ্ঠার জন্য খরচ করাকে আল্লাহ তার জিম্মায় কর্জ বলে গণ্য করেন ও বহুগুনে পুরষ্কৃত করেন৷
১৯/وَالَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ أُوْلَئِكَ هُمُ الصِّدِّيقُونَ وَالشُّهَدَاء عِندَ رَبِّهِمْ لَهُمْ أَجْرُهُمْ وَنُورُهُمْ وَالَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا أُوْلَئِكَ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ
অর্থ;-আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলদের প্রতি ইমান রাখে, তারাই তাদের রবের কাছে সিদ্দীক ও শহীদ বলে গণ্য হবে৷ তাদের জন্য রয়েছে পুরষ্কার ও জ্যোতি (আলো)এবং যারা কাফের ও আমার নিদর্শণ অস্বীকার কারী, তারাই জাহান্নামের অধিকারী হবে৷
# সদকা বলতে শুধু মাল খরচ নয়, জান খরচও৷ সব চাইতে বড় সম্পদ হল নিজের জীবন৷ আবার আল্লাহর পথে সময় ব্যয় করলে তাও মালের মধ্যে গন্য হবে৷ অতএব, প্রকৃত ইমানের জন্য অন্তরে কোরআনের আলো আর সেই সাথে জান ও মাল ব্যয় এক জন মুমিনকে সিদ্দীকীন, শুহাদার আসনেও বসাতে পারে৷ আর থাকলো সেই আলো যা দূর্ভেদ্য পুল সিরাতে পথ দেখাবে ও পুরষ্কারে জান্নাত৷
বিষয়: বিবিধ
১০৯৩ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমরা অনেককেই দেখি সন্তান এর শিক্ষা বা ভবিষ্যত এর কথা বলে তাকে দ্বিন থেকে দুরে সরিয়ে দেন অনেক অভিভাবক। এটাও একধরনের মুনাফেকি।
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
জাযাকল্লাহু খাইরান!!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!!!
মহান রাব্বুল আলামীন আপনাকে সর্বাবস্থায় ভালো রাখুন, সুস্থ রাখুন এই প্রার্থনা রইলো।
It is a very inspiring post.
মন্তব্য করতে লগইন করুন