"হে মুমিন গন তোমরা কোন বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের সঃ অগ্রনী হয়োনা৷"

লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ০৩ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৮:৩৯:৫৩ সকাল

(উর্দু বয়ানুল কোরআনের বাংলা অনুবাদ)

সুরা আল হুজরাত রুকু;-১ আয়াত;-১-১০

بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

১/يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

অর্থ;-হে মুমিন গন, তোমরা কোন বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের অগ্রনী হয়োনা এবং আল্লাহকে ভয় কর৷ নিশ্চয় আল্লাহ সব শোনেন সব জানেন৷

# ইসলামী শরিয়তের প্রথম বিধান এটি৷ আল্লাহ ও তাঁর রসুলের কোন বিষয়কে অতিক্রম করা যাবে না৷ এক কথায় কোরআন ও সুন্নার বাইরে কোন বিধান গ্রহণযোগ্য নয়৷ যদিও মুসলীম প্রধান রাষ্ট্রের সংবিানের প্রথমেই লেখা থাকে যে, কোরআন ও সুন্নাহ বহির্ভূত কোন আইন প্রনয়ন হবে না৷ তা শুধুই কথার কথা, যা কিতাবে আছে বাস্তবে নাই৷ এ বিষয়ে রসুল সঃ একটি উদাহরণ দিয়েছেন যে, মুসলীম হল খোঁটায় বাঁধা একটা ঘোঁড়ার মত, যার বিচরণ তার রশি যতদূর সুযোগ দেয়, তার বাইরে নয়৷

২/يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلَا تَجْهَرُوا لَهُ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَن تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنتُمْ لَا تَشْعُرُونَ

অর্থ;-হে মুমিন গন, নবীর কণ্ঠস্বরের উপরে তোমাদের কণ্ঠস্বরকে উঁচু করোনা এবং তোমরা একে অন্যের সাথে যেমন উচ্চস্বরে কথা বল, তাঁর সাথে তেমন বলো না৷ এতে তোমাদের কর্ম নিষ্ফল হতে পারে৷ আর তোমরা টেরও পাবেনা৷

# সুরা ফাতহের ৯ আয়াতের ব্যাখ্যা এখানে দেওয়া হল৷ নবীর সাথে নিম্ন স্বরে নম্র ও বিনয়ের সাথে আলাপ করতে হবে, চড়া আওহাজে তাঁর সাথে কথা বলা চলবে না৷ এ আদবের ব্যতিক্রম হলে নিজের আমল বাজোপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে৷ পর পর পাঁচটি আয়াতে রসুল সঃ এর সঙ্গে আচরণের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে৷

৩/إِنَّ الَّذِينَ يَغُضُّونَ أَصْوَاتَهُمْ عِندَ رَسُولِ اللَّهِ أُوْلَئِكَ الَّذِينَ امْتَحَنَ اللَّهُ قُلُوبَهُمْ لِلتَّقْوَى لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ عَظِيمٌ

অর্থ;-যারা আল্লাহর রসুলের সামনে নিজেদের কণ্ঠস্বর নীচু করে, আল্লাহ তাদের অন্তরকে তাকওয়ার জন্য বিশুদ্ধ করে দেন৷ তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহা পুরষ্কার৷

৪/إِنَّ الَّذِينَ يُنَادُونَكَ مِن وَرَاء الْحُجُرَاتِ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ

অর্থ;-যারা প্রাচিরের আড়াল থেকে আপনাকে উচ্চস্বরে ডাকে, তাদের অধিাংশই অবুঝ৷

# অনেক সময় বেদুইনরা দূর থেকে আসত আর বাড়ির বাইরে থেকে জোরে জোরে ডাকত৷ তাদের জন্য বলা হয়েছে যে তারা ছিল অবুঝ৷ বেদুইনরা কিছুটা রুক্ষ মেজাজের হত৷ নবীর মর্যাদা দূরে থাক তারা সাধারণ আদব কায়দার ধারও ধারত না৷ তাই তাদের অবুঝ বলা হয়েছে৷ পরের আয়াতে তাদের ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে৷

৫/وَلَوْ أَنَّهُمْ صَبَرُوا حَتَّى تَخْرُجَ إِلَيْهِمْ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

অর্থ;-যদি তারা আপনার তাদের কাছে বের হয়ে আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করত, তবে তাদের জন্যই মঙ্গলজনক হত৷ আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু৷

# এরা ছিল সভ্য ভব্য বহির্ভূত আরব বেদুইন৷ এদেরকে অবুঝ বলা হয়েছে ও তাদের মাফ করে দেওয়া হয়েছে৷

৬/يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن جَاءكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَأٍ فَتَبَيَّنُوا أَن تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ

অ্থ;-হে মুমিন গন, যদি কোন পাপাচারি ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা পরীক্ষা করো যাতে অজ্ঞতা বশতঃ কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতি সাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও৷

# এ সুরায় আটটি বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে৷ যার ছয়টি ছোটখাট বিষয় ও দুটি বড় বিষয়ে, যাতে সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয় ও সমাজের ভীত মজবুত হয়৷ বড় দুটি বিষয়ের একটি এ আয়াতে এসেছে৷ গোত্রে গোত্রে দাঙ্গা, লুট পাট গোত্রীয় জীবনে লেগেই থাকত৷ সতর্ক হওয়ার খবরও আসত৷ যদি মুসলীম সমাজে কোন পাপাচারী লোক এমন সংবাদ দেয় যে আজ রাতে অমুক কবিলা তোমাদের আক্রমন করবে, তবে তার সত্যতা যাচাই করতে হবে, এমন যেন না হয় যে, তারা আক্রমন করার আগেই মুসলীমরা তাদের আক্রমন করে অপদস্ত, অনুতপ্ত হয়৷ তবে বিশ্বস্থ লোকের সংবাদে বিশ্বাস করা যেতে পারে৷

৭/وَاعْلَمُوا أَنَّ فِيكُمْ رَسُولَ اللَّهِ لَوْ يُطِيعُكُمْ فِي كَثِيرٍ مِّنَ الْأَمْرِ لَعَنِتُّمْ وَلَكِنَّ اللَّهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمُ الْإِيمَانَ وَزَيَّنَهُ فِي قُلُوبِكُمْ وَكَرَّهَ إِلَيْكُمُ الْكُفْرَ وَالْفُسُوقَ وَالْعِصْيَانَ أُوْلَئِكَ هُمُ الرَّاشِدُونَ

অর্থ;-তোমরা জেনে রাখো, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রসুল রয়েছেন৷ যদি তিনি অনেক বিষয়ে তোমাদের আবদার মেনে নেন, তবে তোমরাই কষ্ট পাবে৷কিন্তু আল্লাহ তোোমাদের অন্তরে ইমানের মোহব্বত সৃষ্টি করেছেন এবং তা তোমাদের হৃদয়গ্রাহী করেছেন৷ আর তিনি তোমাদের অন্তরে ঘৃণা সৃষ্টি করে দিয়েছেন, কুফর, পাপাচার ও না ফরমানির বিরুদ্ধে৷ আর এ রূপ লোকেরাই সৎ পথে রয়েছে৷

# এ আয়াতটি সাহাবীদের জন্য সুংবাদ বহণকারী আয়াত৷ মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ সঃ অবশ্যই কারও স্বামী, কারও জামাই, কারও শ্বশুর, কারও বাপ, কারও ভাতিজা, কিন্তু সর্বোপরি তিনি আল্লাহর রসুল৷ এবং এ জন্যই তাঁর আলাদা সম্মান, আলাদা মর্যাদা৷ যা আত্মিয়তার বন্ধনের অনেক উর্দ্ধে৷ শুধু আত্মিয়তার দাবী নিয়েই কেউ যেন তাঁর সাথে আচরণ না করেন, কোন দাবী পেশ না করেন৷ তাতে তিনি মনক্ষুন্ন হতে পারেন৷ আর সাহাবীদের অন্তরে আ্লাহ যেমন ইমানের মোহব্বত গেঁথে দিয়েছেন, তেমনই অন্যায়, কুফরী ও নাফরমানীর বিরদ্ধে দিয়েছেন ঘৃণা৷ আর এঁরাই হলেন সৎ পথের রাহী৷

৮/فَضْلًا مِّنَ اللَّهِ وَنِعْمَةً وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ

অর্থ;-এটা আল্লাহর কৃপা ও নেয়ামত; আল্লাহ সর্বজ্ঞ,প্রজ্ঞাময়৷

৯/وَإِن طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا فَإِن بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّى تَفِيءَ إِلَى أَمْرِ اللَّهِ فَإِن فَاءتْ فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَأَقْسِطُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ

অর্থ;-যদি মুমিনদের দুইটি দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে তবে তোমরা তাদের মধ্যে মিমাংসা করে দেবে৷ অতঃপর যদি একদল অপর দলের উপর চড়াও হয়, তবে তোমরা আক্রমনকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যতক্ষন না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে ন্যায়ানুগ পন্থায় মিমাসা করে দেবে৷৷ এবং ইনসা করবে৷ নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফ কারীদেরকে পছন্দ করেন৷

# আয়াত ৬এ একটি বড় বিধানের কথা বলা হয়েছে, আর এ আয়াতে দ্বিতীয়টি বলা হচ্ছে৷ যদি মুসলীমরা দুইদলে দাঙ্গা বাধায় তবে বাকীরা তাদের মাঝে ইনসাফের সাথে মিমাংসা করে দেবে৷ উক্ত দুই দলের কোন পক্ষ যদি অপর পক্ষের উপর পুনরায় চড়াও হয় তবে সকলে আক্রান্ত দলেয় হয়ে লড়বে যতক্ষন না আক্রমনকারী দল আল্লাহর আদেশ ও অবস্থানে ফিরে আসে৷ যখন ফিরে আসবে তখন আবার তাদের মাঝে ইনসাফের সাথে মিমাৎসা করে দেবে৷

১০/إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ

অর্থ;-মুমিনরাতো পরষ্পর ভাই৷ সুতরাং তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে মিমাংসা করে দেবে৷ এবং আল্লাহকে ভয় করবে, যেন তোমাদেরর প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়৷

বিষয়: বিবিধ

১২৬৪ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

298909
০৩ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৯:২১
কাহাফ লিখেছেন :
মহা গ্রন্থ পবিত্র কোরআন কারীমের বর্ণিত- 'ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের প্রয়োজনীয় কিছু বিষয়' তুলে ধরায় অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লাহু খাইরান!
কোরআন মাজীদের তাফসির সমাজে বিস্তৃতি লাভ করুক- রবের কাছে এই কামনা!!
০৩ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ১১:২৮
242119
শেখের পোলা লিখেছেন : সে দায়িত্বটাই সাধ্যমত পালন করে যাচ্ছি৷ সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ৷
০৩ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ১১:২৮
242120
শেখের পোলা লিখেছেন : সে দায়িত্বটাই সাধ্যমত পালন করে যাচ্ছি৷ সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ৷
298965
০৩ জানুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০৩:৪৬
আফরা লিখেছেন : সোবাহানআল্লাহ ! খুব ভাল লাগল । জাজাকাল্লাহ খাইরান চাচাজান ।
০৩ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ১১:২৮
242121
শেখের পোলা লিখেছেন : মনা মা মনি, ভাল থাক৷ শুেচ্ছা রইল৷
299031
০৩ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ১১:০৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
আমরা এখন বিদেশি মিডিয়াকে এতই বিশ্বাস করি যে তাদের মিথ্যা কে অন্ধভাবে গ্রহন করছি।
০৩ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ১১:৩০
242123
শেখের পোলা লিখেছেন : অন্ধ ভাবে কোরআন ও রসুলকে গ্রহণ করতে হবে, আসুন, তাই করি৷ ধন্যবা৷
299255
০৪ জানুয়ারি ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:২৯
রাজ্পুত্র লিখেছেন : ইসলাম একমাত্র সত্য ধর্ম। আর কোরআন একমাত্র সত্য সংবিধান। কিন্তু বড়ই আফসোস আমরা মুসলমানরা ইসলাম থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছি। নষ্ট মিডিয়াগুলো আমাদের ব্রেইন ওয়াশ করছে। আমরা টেরও পাচ্ছিনা। আমরা ইসলামকে মানার চেষ্টাও করিনা আর জানার চেষ্টাও করিনা। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে পবিত্র কোরআন সম্পর্কে জানার তৌফিক দান করুন।-আমিন
০৫ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০৪:২০
242305
শেখের পোলা লিখেছেন : আসুন জানার চেষ্টা করি৷ ধন্যবাদ৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File