রসুল সঃ এর সীনাচাক বা বক্ষ্য বিদীর্ণ করণ৷

লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৯:৩৭:৪৩ সকাল

أَلَمْ نَشْرَحْ لَكَ صَدْرَكَ

আমি কি আপনার বক্ষ উম্মুক্ত করে দেইনি?

“দ্যাখ আমিনা মায়ের কোলে,

দোলে শিশু ইসলাম দোলে,

কচি মুখে শাহাদতের বাণী সে শোনায়৷

আয়রে সাগর আকাশ বাতাস দেখবি যদি আয়”

“সর্ব প্রথম আল্লাহ যা সৃষ্টি করলেন, তা আমার নূর”৷ এ নুর হল সর্ব কালের সর্ব শ্রেষ্ঠ মানব, হজরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহো আলইহে অ সাল্লামের নূর৷ উক্তিটিও তাঁরই৷ কবি বলেন, ‘তুমি না এলে দুনিয়ায় আঁধারে ডুবিত সবই’৷ এ আঁধার যেমন সূর্যের আলোর অভাবে আঁধার নয়, এ আঁধার শির্কের আঁধার, তেমনই এ আলো সূর্যের আলো নয়, এ আলো তাঁর পবিত্র রূহ তথা ওহী বা কোরআনের আলো, জ্ঞানের আলো৷ তিনি ছিলের চলন্ত কোরআন৷ তাইতো মা আমেনা বলেন, বারই রবিউল আউয়াল সুবেহ সাদেকের সময় তাঁর জন্মের সাথেই আমার ঘরটা আলোয় ভরে উঠল৷ নবী গনের শেষ নবী, বিশ্ব মানবের ত্রানকর্তা, ধরাধামে প্রেরীত হলেন৷

শহর মক্কার সভ্রান্ত লোকজনের নিয়ম ছিল, তাদের শিশুকে হৃষ্ট পুস্ট করে গড়ে তুলতে ও খাঁটি আরবী ভাষা আয়ত্ব করতে শহরের বাইরে বেদুইনদের কাছে পাঠানো৷ বেদুইন মহীলাগন আপন স্তন পান করিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত মজুরিতে তাদের লালন পালন করতেন৷ এ বিষয়ে পছন্দের গোত্র ছিল বণী সাদ ইনে বকর৷

সময় মত বেদুইন মহীলারা দল বেঁধে শহরে আসত ও যার যার পছন্দ মত শিশু নিয়ে ফিরে যেত৷ এমনই এক দলের সাথে হজরত হালিমা বিনতে জুবায়ের, স্বামী আব্দুল ওজ্জা ও একটি রুগ্ন উট, যার স্তনে দুধ ছিলনা, সাথে নিয়ে একটি রুগ্ন ও ধীর গতি গাধায় চড়ে মক্কা রওয়ানা হলেন৷ গাধাটির জন্য তিনি সকলের পিছনে পড়লেন৷ ফলে অন্যান্ন মহীলারা মক্কায় আগে পৌঁছে যার যার সুবিধা ও পছন্দ মত শিশু নিয়ে নিলেন৷ শিশু মোহাম্মদ সঃ পিতৃহীন হওয়ায় উপযুক্ত পারিশ্রমিক না পাওয়ার ভয়ে কেউই তাঁকে নিলেন না৷ হালিমা যখন শহরে পৌঁছিলেন তখন মাত্র একটি শিশুছাড়া আর কেউ অবশিষ্ট ছিলনা৷ খালি হাতে ফেরার চেয়ে শিশু মোহাম্মদ সঃ কে নেওয়ার পক্ষে স্বামীর মত নিলেন ও তাঁকে নিয়ে ডেরায় রওয়ানা হলেন৷ বিধাতার পরিহাস বোঝে সাধ্য আছে কার? ধীর গতি গাধা এখন দ্রুত গতি সম্পন্য হয়ে অন্য সকলকে পিছে ফেলে আস্তানায় পৌঁছল৷ হালিমা লক্ষ্য করলেন যে তাঁর স্তন, যা ছিল প্রায় শুকনা৷ নিজের বাচ্চারই পেট ভরত না৷ আজ তা দুধে ভরপুর৷ সকালে উঠে দেখেন উঠের স্তনও দুধে পরিপূর্ণ৷

হজরত হালিমা পূণ্যবতী মহীলা ছিলেন৷ ভাবলেন এ শিশু সাধারণ শিশু নয়৷ তারই কল্যানে আজ তাদের সুদিন এসেছে, তাই তাকে অতি যত্নের সাথে লালন পালন করতে লাগলেন৷ দু বৎসরে শিশু বেশ হৃষ্ট পুষ্ট হয়ে উঠলেন৷ আরও কিছু দিন রাখার ইচ্ছা থাকলেও চুক্তি মোতাবেক শিশুকে মা আমিনার কাছে ফিরিয়ে দিতে চললেন৷ মক্কায় তখন মহামারী রোগের প্রাদুর্ভাব চলছিল, সেই অযুহাতে তিনি আরও কিছুদিন রাখার অভিপ্রায়ে শিশু মোহাম্মদ সঃ কে ফেরত আনলেন৷

শিশু মোহাম্মদ সঃ তাঁর দুধ ভাইদের সাথে ছাগল চরাতেন ও খেলা করতেন৷ যখন তাঁর বয়স ৩/৪/৫ (মতভেদে) এমন একদিন মাঠে খেলা করা অবস্থায় সাদা পোষাকে দুই জন লোক এলেন, শিশু মোহাম্মদ সঃ কে চিৎ করে শুইয়ে তাঁর বুক চিরে দিলটি বার করে কিছু অংশ ফেলে দিলেন ও বাকীটি একটি প্লেটে রেখে জমজমের পানি দ্বারা ধুয়ে তা পুণঃস্থাপন করলেন৷ আর বললেন, শয়তানের অংশটি ফেলে দেওয়া হল৷ (সহীহ মুসীম) আগন্তুক দুজন ফেরেশতা ছিলেন৷ এটিই হল রসুল সঃ এর সীনা চাক৷ সীনা চাক নিয়ে মতভেদ আছে৷ কেউ বলেন, এ ছাড়াও আরও দুইবার সীনা চাক হয়েছে, একবার হেরা গুহায়, আর এক বার মেরাজের রাতে৷ কেউবা দশ বৎসর বয়সে আরও একবার হয়েছে বলে চার বার বলেছেন৷ আল্লাহই ভাল জানেন৷ এটি ছিল ওহী বা কোরআনের আধার টিকে পরিষ্কার করে, আমানতের গুরুভার বহণ ও বিশ্ব মানবের জীবন ধারায় বৈপ্লবীক পরিবর্তনের দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত করণ৷

এদিকে তাঁর দুধভাই হালিমাকে খবর দিল যে, মোহাম্মদকে মেরে ফেলা হয়েছে৷ তিনি অকুস্থলে এলেন ও শিশু মোহাম্মদকে ধূলো মাখা বিষণ্ণ অবস্থায় পেলেন৷ সিদ্ধান্ত নিলেন যে তাঁকে তাঁর মা আমিনার কাছে ফেরত দিয়ে আসবেন৷ শিশু মোহাম্মদ মায়ের কোলে ফিরে গেলেন৷

(জনাব ভিশু ভাইয়ের অনুরোধে লেখাটি পোষ্ট করার দুঃসাহস করলাম, গুস্তাখী মাফ হো)

বিষয়: বিবিধ

১২৭০ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

298232
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:০১
হতভাগা লিখেছেন : পবিত্র ক্বুরআনে আল্লাহ বেশ কয়েকবারই বলেছেন যে , মোহাম্মদ (সাঃ) তোমাদের মতই একজন মানুষ । সেও তোমাদের মত খাওয়া দাওয়া করে , বাজারে যায়।

অবিশ্বাসীরা বলতো , আমাদের মধ্যে একজন মানুষকেই নবী হিসেবে পাঠানো হল ? আল্লাহ কোন মানুষকে নবী হিসেবে পাঠান নি । নবী হিসেবে পাঠালে ফেরেশতাদেরকেই পাঠাতেন ।

আর মানুষকে আল্লাহ মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন ।

জ্বীনদের আগুন হতে এবং ফেরেশতাদের নূর হতে ।

৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:১০
241540
শেখের পোলা লিখেছেন : এতে অসুবিধাটা কোথায়? অবশ্যই আল্লাহর রসুল মানুষ ছিলেন, তবে তাঁর কাছে ওহী আসত৷ এখানেই আপনার আমার সাথে তাঁর তফাৎ৷
298249
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৩০
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম, জাজাকাল্লাহুল খাইরান, অনেক সুন্দর পোস্ট
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:১১
241541
শেখের পোলা লিখেছেন : অ আলায়কুমুস সালাম৷ আমিন৷ ধন্যবাদ৷
298254
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৫৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো
রাসুল (সাঃ) তাই সকল মানুষের জন্য একমাত্র আদর্শ্।
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:১৩
241543
শেখের পোলা লিখেছেন : আমাদের ভিতর শয়তান বাসা বাঁধে তাঁর ভিতর পারেনি৷ধন্যবাদ৷
298298
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:৫৮
আফরা লিখেছেন : তিনি ছিলের জীবন্ত কোরআন৷আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সঠিক ভাবে তাকে অনুসরন করার তৌফিক দান করুন । আমীন ।
লেখা অনেক ভাল হয়েছে চাচাজান, অনেক অনেক জাজাকাল্লাহ ।
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:১৪
241544
শেখের পোলা লিখেছেন : মনা মামনিকে মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ৷ আমিন৷ ভাল থাক৷
298374
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:১৯
মনসুর লিখেছেন : মাশাআল্লাহ, সুন্দর লিখেছেন। আলহামদুলিল্লাহ, জাজাকাল্লাহু খাইরান। শুভেচ্ছান্তে ধন্যবাদ।
মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১০:০১
241576
শেখের পোলা লিখেছেন : আমিন! আপনাকে অনেক ধন্যবাদ৷
298812
০২ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০৮:৫৫
ফাতিমা মারিয়াম লিখেছেন : সিরাতে ইবনে হিশাম না কি অন্য কোন বইতে পড়েছিলাম এখন তা মনে নেই।মহানবী(সাঃ)এর সীনা চাক দুই বার হয়েছিল। একবার শিশুবয়সে খেলার সময়। আর একবার মেরাজে গমণের আগে।
298827
০২ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ১০:১৭
শেখের পোলা লিখেছেন : বিষয়টিতে মতভেদ আছে৷ আমারও বিশ্বাস দুইবারে৷ আল্লাহ ভাল জানেন৷ আপনাকে ধন্যবাদ৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File