"যাদের অন্তরে রোগ (মুনাফেকী) আছে, তারা কি মনে করে আল্লাহ তাদের অন্তরের বিদ্বেষ প্রকাশ করে দেবেন না?"
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ১১ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১১:৩৩:৩০ রাত
(মরহুম জনাব ইসরার আহমাদ সাহেবের উর্দু বয়ানুল কোরআনের সরল বাংলা অনুবাদ)
সুরা মোহাম্মদ রুকু;-৪ আয়াত;-২৯-৩৮ (শেষ)
২৯/ أَمْ حَسِبَ الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ أَن لَّن يُخْرِجَ اللَّهُ أَضْغَانَهُمْ
অর্থ;-যাদের অন্তরে রোগ (মোনাফেকী) আছে তারাকি মনে করে আল্লাহ তাদের অন্তরের বিদ্বেষ প্রকাশ করে দেবেন না?
৩০/ وَلَوْ نَشَاء لَأَرَيْنَاكَهُمْ فَلَعَرَفْتَهُم بِسِيمَاهُمْ وَلَتَعْرِفَنَّهُمْ فِي لَحْنِ الْقَوْلِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ أَعْمَالَكُمْ
অর্থ;-আমি ইচ্ছা করলে আপনাকে তাদের পরিচয় বলে দিতাম, ফলে আপনি তাদের চেহারা দেখে চিনতে পারতেন এবং আপনি অবশ্যই কথার ভঙ্গীতে তাদেরকে চিনতে পারবেন৷ আল্লাহ তোমাদের কর্ম সমুহের খবর রাখেন৷
৩১/ وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتَّى نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِينَ مِنكُمْ وَالصَّابِرِينَ وَنَبْلُوَ أَخْبَارَكُمْ
অর্থ;-আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব, যে পর্যন্ত না ফুটিয়ে তুলি তোমাদের জেহাদকারী দেরকে এবং সবরকারী দেরকে এবং যতক্ষন না আমি তোমাদের অবস্থান সমুহ যাচাই করি৷
# সুরা বাক্বারার ১৫৫ আয়াতেও বিভিন্ন জিনিষের মাধ্যমে ইমানের পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে৷ আর এখানে ইমানের সাথে জেহাদ ও সবরের পরীক্ষার মাধ্যমে আসল নকল আলাদা করবার কথা বলা হল৷
৩২/ إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوا عَن سَبِيلِ اللَّهِ وَشَاقُّوا الرَّسُولَ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الهُدَى لَن يَضُرُّوا اللَّهَ شَيْئًا وَسَيُحْبِطُ أَعْمَالَهُمْ
অর্থ;-নিশচয় যারা কাফের এবং আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখে এবং নিজেদের জন্য সৎ পথ প্রকাশিত হবার পরও রসুল সঃ এর বিরোধিতা করে, তারা আল্লাহর কোনই ক্ষতি করতে পারবে না এবং তিনি তাদের কর্ম সমুহকে ব্যর্থ করে দেবেন৷
# আয়াত ২৮ শেষে মোনাফেকদের কর্ম ব্যর্থ করার কথা বলা হয়েছে আর এখানে মুশরিক, কাফের, যারা সত্য প্রকাশ হবার পরও আল্লাহর রসুল ও মুমিনদের বিরোধিতা করেছে, তাদের আমল, অর্থাৎ তারা যে তওয়াফ কারীদের পানির ব্যবস্থা করত, ক্বাবার রক্ষণাবেক্ষনের দ্বারা ও মুমিনদের বিরূদ্ধে যুদ্ধের পিছনে খরচ করে পূণ্যের আশা করেছিল তা সবই বাজেয়াপ্ত হবে৷
৩৩/ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَلَا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ
অর্থ;-হে মুমিন গন, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রসুলের আনুগত্য এবং নিজেদের কর্ম বিনষ্ট করোনা৷
৩৪/ إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوا عَن سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ مَاتُوا وَهُمْ كُفَّارٌ فَلَن يَغْفِرَ اللَّهُ لَهُمْ
অর্থ;-নিশ্চয় যারা কাফের এবং আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখে, অতঃপর কাফের অবস্থায় মারা যায়, আল্লাহ তাদেরকে কখনই ক্ষমা করবেন না৷
৩৫/ فَلَا تَهِنُوا وَتَدْعُوا إِلَى السَّلْمِ وَأَنتُمُ الْأَعْلَوْنَ وَاللَّهُ مَعَكُمْ وَلَن يَتِرَكُمْ أَعْمَالَكُمْ
অর্থ;-অতএব, তোমরা হীনবল হয়োনা এবং সন্ধীর আহবান জানিও না, তোমরাই বিজয়ী হবে৷ আল্লাহ তোমাদের সাথেই আছেন৷ তিনি কখই তোমাদের কর্ম হ্রাস করবেন না৷
৩৬/ إِنَّمَا الحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَإِن تُؤْمِنُوا وَتَتَّقُوا يُؤْتِكُمْ أُجُورَكُمْ وَلَا يَسْأَلْكُمْ أَمْوَالَكُمْ
অর্থ;-পার্থিব জীবনতো কেবল খেলাধূলা, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও এবং সংযম অবলম্বন কর, আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের প্রতিদান দেবেন এবং তিনি তোমাদের ধন সম্পদ চান না৷
# কোরআনে বহুবার বলা হয়েছে আল্লাহর পথে খরচ কর, এমনকি আল্লাহ সদকাতও গ্রহণ করেন৷ কিন্তু আসলে তিনি গনি, তাঁর কোন অভাব নেই৷ তিনি মানুষকে সম্পদ দিয়ে পরীক্ষা করেন৷ এখানে যা বলা হয়েছে তা তিনি জবরদস্তি ও নিঃস্য করে কারও কিছু নিতে চান না৷
৩৭/ إِن يَسْأَلْكُمُوهَا فَيُحْفِكُمْ تَبْخَلُوا وَيُخْرِجْ أَضْغَانَكُمْ
অর্থ;-তিনি তোমাদের কাছে ধন সম্পদ চাইলে তোমরা কার্পন্য করবে এবং তিনি তোমাদের মনের সংকীর্ণতা প্রকাশ করে দেবেন৷
# রসুলও দ্বীনের জন্য যুদ্ধের প্রয়োজনে মালের আবেদন করেছেন কিন্তু জবরদস্তি বা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, এমন নজীর নেই৷ শুধু মাত্র তাবুকের অভিযান ছাড়া অভিযানে যোগদানও ঐচ্ছিক রেখেছিলেন৷ অথচ আহযাবের যুদ্ধের পর মোনাফেকরা আল্লাহ ও তাঁর রসুল তাদের ধোঁকা দিয়েছেন বলে অপবাদ দিয়েছিল৷
৩৮/ هَاأَنتُمْ هَؤُلَاء تُدْعَوْنَ لِتُنفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَمِنكُم مَّن يَبْخَلُ وَمَن يَبْخَلْ فَإِنَّمَا يَبْخَلُ عَن نَّفْسِهِ وَاللَّهُ الْغَنِيُّ وَأَنتُمُ الْفُقَرَاء وَإِن تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُونُوا أَمْثَالَكُمْ
অর্থ;-শোন, তোমরাইতো তারা যাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে আহবান জানানো হচ্ছে৷ অতঃপর তোমাদের কেউ কেউ কৃপনতা করছে৷ যারা কৃপনতা করছে তারা নিজেদের প্রতিই কৃপনতা করেছে৷ আল্লাহ অভাব মুক্ত এবং তোমরা অভাব গ্রস্থ৷ যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তবে তিনি তোমাদের পরিবর্তে অন্য জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করবেন, এর পর তারা তোমাদের মত হবে না৷
# তোমাদের পরিবর্তে অন্য জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করবেন বলতে এমন হতে পারে যে, যারা মোনাফেক ছিল, তাদের একে একে শেষ করে মুমিনদের সম্পূর্ণ আলাদা ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন৷ এ ছাড়া আরও একটি সম্ভাবনার কথা বলা যায়, সেটি সম্পূর্ণ আমার (ইসরার আহমাদ) ধারণা, রসুল সঃ মূলতঃ এসেছিলেন বনু ইসমাঈলে৷ তিনি তাদেরই আল্লাহর পথে আনার চেষ্টা করেছেন৷ আর মোনাফেকরাও ছিল সেই বনু ইসমাঈলেরই৷ ওহোদের যুদ্ধে মুসলীম বাহিনীর তিন ভাগের এক ভাগই নিজেদের মোনাফেক বলে পরিচয় দিয়েছে৷ আবার তাদেরই পরিবর্তে অন্য জাতিকে প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে যখন, তখন তের শতাব্দীতে তাতার জাতির মুসলীম নিধণের কথা আসতেই পারে৷ ১২৫৮ খ্রীঃ হালাকু খান খলিফা বনু আব্বাসকে ঘোড়ার সাথে বেঁধে নিহত করে৷ এর পর কাল ক্রমে তাদের মাঝেই ইসলামের উন্মেষ হয় ও বিশাল ওসমানিয়া সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে৷
বিষয়: বিবিধ
১২২১ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ভাল হয়েছে চাচাজান অনেক ভাল লাগল । জাজাকাল্লাহ খাইরান চাচাজান ।
আমিন৷
ইসলাম শুধু নিদৃষ্ট নৃগোষ্ঠির জন্য নয়। যারা ইসলামের সঠিক অনুসরন করবে শুধু তাদের জন্য আমার মনে হয় শেষ আয়াত এর অর্থ সেরকম হতে পারে। অন্যান্য তাফসির দেথার চেষ্টা করব।
জাযাকাল্লাহ খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন