"যখন জেহাদের সিদ্ধান্ত হয়, আর যদি তারা আল্লাহর প্রতি দেয় ওয়াদা পূর্ণ করে তবে তাদের জন্য তা মঙ্গলজনক হবে"

লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৮:৩৬:১৫ সকাল

( উর্দু বয়ানুল কোরআনের বাংলা অনুবাদ)

সুরা মোহাম্মদ রুকু;-৩ আয়াত;-২০-২৮

২০/وَيَقُولُ الَّذِينَ آمَنُوا لَوْلَا نُزِّلَتْ سُورَةٌ فَإِذَا أُنزِلَتْ سُورَةٌ مُّحْكَمَةٌ وَذُكِرَ فِيهَا الْقِتَالُ رَأَيْتَ الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ يَنظُرُونَ إِلَيْكَ نَظَرَ الْمَغْشِيِّ عَلَيْهِ مِنَ الْمَوْتِ فَأَوْلَى لَهُمْ

অর্থ;-যারা মুমিন, তারা বলে, একটি সুরা নাজিল হয়না কেন? অতঃপর যখন কোন দ্ব্যর্থহীন সুরা নাজিল হয় এবং তাতে কেতালের উল্লেখ করাহয় তখন যাদের অন্তরে রোগ আছে, আপনি তােরকে মৃত্যুভয়ে মূর্ছাপ্রাপ্ত মানুষের মতই আপনার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখবেন৷ অতএব, দূর্ভোগ তাদের জন্য৷

# নও মুসলীমরা মক্কায় অবস্থান কালে মুশরিকরা সীমাহীন অত্যাচার করে৷ মুসলীমদের নীরবে সহ্য করা ছাড়া আত্মরক্ষা মূলক কোন কিছুরই অনুমতি ছিলনা৷ কিন্তু মদীনায় হিজরতের পর যখন বদলা নিতে হাত মুক্ত করাহল, তখন রসুল সঃ মক্কার কোরাইশদের জনবল, অর্থবল ও সামাজিক ভাবে সংকীর্ন করে আনার চেষ্টা করতে লাগলেন৷ যার কারণে তাদের বানিজ্য কাফেলায় আক্রমন সহ ছোট খাট দাঙ্গাও করেছেন৷ সাধারণ ভাবে বদরের যুদ্ধকে প্রথম যুদ্ধ বলা হলেও তার আগে মুসলীমদের আরও আটটি অভিযান হয়েছিল, যার চারটিতে রসুল নিজে অংশ নেন, এগুলোকে গজবা বলে৷ তিনি যেখানেই অভিযানে গেছেন, আশপাশের গোত্রগুলির সাথে চুক্তি করে মুসলীমদের দল ভারী ও কোরাইশদের হাল্কা করেছেন৷ আর যারা চুক্তিতে আসেনি, তাদের নিরপেক্ষ করেছেন, না তারা কোরাইশদের পক্ষ নেবে না মুসলীমদের৷ এতেও কোরাইশদের ক্ষমতা খর্ব হয়েছে৷ বাকি চারটি অভিযান সাহাবীগন পরিচালনা করেন৷ বস্তুত কোরাইশদের পক্ষ থেকে কোন আক্রমন হয়নি৷ মদীনার আনসার মুমিন, যাদের অন্তরে মুনাফেকী ছিল, রসুলের প্রতি আনুগত্যে ঘাটতি ছিল, তারা এ হেন অভিযানের বিরূপ সমালোচনা করতে লাগল৷ এটি রসুলের বাড়াবাড়ি মনে করতে লাগল৷ তারা এও বলল, যদি যুদ্ধ করতেই হয় তবে কেন সে বিষয়ে কোন সুরা নাজিল হয়না৷ যদিও সুরা হজ্জে যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে৷ তবে সুরা হজ্জ, মক্কী না মাদানী নিয়ে মতভেদ আছে৷ যদি মাদানিই হয় তবে তা পরে নাজিল হয়ে থাকবে৷ এ সুরার এ আয়াতটি ‘কেতাল’ শব্দ সহযোগেই নাজিল হয়েছে৷ এ জন্যই এ সুরার দ্বিতীয় নাম সুরা কেতাল৷ কেতালের খবরে মুনাফেকদের চেহারা মৃত্যুভয়ে ফেকাসে হয়েযায়৷

২১/طَاعَةٌ وَقَوْلٌ مَّعْرُوفٌ فَإِذَا عَزَمَ الْأَمْرُ فَلَوْ صَدَقُوا اللَّهَ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُمْ

অর্থ;-আনুগত্য ও ন্যায় সঙ্গত কথা তাদের জন্য উত্তম ছিল৷ অতএব, যখন জেহাদের সিদ্ধান্ত হয়, আর যদি তারা আল্লাহর প্রতি দেয় ওয়াদা পূর্ণ করে তবে তাদের জন্য তা মঙ্গলজনক হবে৷

# বিরূপ সমালোচনা কারীরা রসুলের হাতে হাত রেখেই বাইত নিয়েছিল৷ তাদের উচিৎ রসুলের আনুগত্য করে আল্লাহকে দেয়া ওয়াদা বা বাইতের মর্যাদা রক্ষা করা৷ তাই যখন পরামর্শ সভা হয় সেখানে তাদের সৎ প্রস্তাব দেবার অধিকার আছে৷ বতে, তাদের পরামর্শ সভায় গ্রহণযোগ্য না হলেও যে সিদ্ধান্তই হোক তার অণুসরণ করাই তাদের জন্য মঙ্গল৷

২২/فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِن تَوَلَّيْتُمْ أَن تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ

ষ্টি করবে এবংঅর্থ;-ক্ষমতা লাভ করলে, সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে অনর্থ সৃ আত্মিয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে৷

# নেতার নেতৃত্বে ও পরামর্শ সভার সিদ্ধাতের প্রতি যদি মতপার্থক্য থেকেই যায় তবে ক্ষমতার অপব্যবহার অশ্যম্ভাবী৷ ফলে অনর্থের সৃষ্টি হবে ও ক্ষমতার লোভে আত্মীয়তা নষ্ট হবে৷ অতএব, একনিষ্ঠ আনুগত্য প্রথমেই প্রয়োজন৷

২৩/أُوْلَئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فَأَصَمَّهُمْ وَأَعْمَى أَبْصَارَهُمْ

অর্থ;-এদের প্রতিই আল্লাহ অভিশম্পাত করেন৷ অতঃপর তাদেরকে বধির ও দৃষটিশক্তিহীন করেন৷

২৪/أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ أَمْ عَلَى قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا

অর্থ;-তারাকি কোরআন সম্পর্কে গভীর চিন্তা করেনা? না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ৷

# সুরা আনকাবুতে বলা হয়েছে, ইমান এনেছি বলাই যথেষট নয়৷ প্রত্যেক কে পরীক্ষা করা হবে৷

২৫/إِنَّ الَّذِينَ ارْتَدُّوا عَلَى أَدْبَارِهِم مِّن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدَى الشَّيْطَانُ سَوَّلَ لَهُمْ وَأَمْلَى لَهُمْ

অর্থ;-নিশ্চয় যারা নিজেদের কাছে সৎপথ পরিষ্কার ভাবে ব্যাক্ত হবার পর পৃষ্ঠ প্রদর্শণ করে সরে পড়ে, শয়তান তাদের জন্য এ কাজকে শোভন করে দেখায় ও তাদেরকে মিথ্যা আশ্বাস দেয়৷

২৬/ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا لِلَّذِينَ كَرِهُوا مَا نَزَّلَ اللَّهُ سَنُطِيعُكُمْ فِي بَعْضِ الْأَمْرِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ إِسْرَارَهُمْ

অর্থ;-এটা এ জন্য যে, তারা তাদেরকে বলে, যারা আল্লাহ যা নাজিল করেছেন তা অস্বীকার করে, আমরা কোন কোন বিষয়ে তোমাদের অনুসরণ করব৷ আর আল্লাহ তাদের গোপন পরামর্শ সমুহ খুব অবগত আছেন৷

# কিছু মুমিন ছিল যারা ইমানের দাবী করত অথচ, যে ইহুদীরা আল্লাহর নাজিল কৃত কোরআনকে স্বীকার করেনা, তাদের সাথে গোপন পরামর্শ করত৷ এমনকি এও বলত যে আমরা তোমাদের কোন কোন বিধান মানি৷ এরাই দুই দলের মাঝে ঝোলা মোনাফেক, যারা এ দলেরও না ও দলেরও না৷ সুরা বাক্বারায় বলা হয়েছে যে, এরা জাহান্নামের নিম্ন স্তরে থাকবে৷

২৭/فَكَيْفَ إِذَا تَوَفَّتْهُمْ الْمَلَائِكَةُ يَضْرِبُونَ وُجُوهَهُمْ وَأَدْبَارَهُمْ

অর্থ;-ফেরেশ্তা যখন এদের মুখ মণ্ডল ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করতে করতে প্রাণ হরণ করবে, তখন তাদের অবস্থা কেমন হবে৷

২৮/ذَلِكَ بِأَنَّهُمُ اتَّبَعُوا مَا أَسْخَطَ اللَّهَ وَكَرِهُوا رِضْوَانَهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ

অর্থ;-তা এ জন্য যে তারা এমন বিষয়ের অনুসরণ করে, যা আল্লাহর অসন্তোষ সৃষ্টি করে এবং তারা তার সন্তুষ্টিকে অপছন্দ করে৷ ফলে তিনি তাদের সকল আমল ব্যর্থ করে দেবেন৷

# মোনাফেকরা মুমিনদেরই অন্তর্গত৷ তাই ইমান আনার পর তারা রসুলের ইমামতিতে বহু ওয়াক্তের নামাজ পড়েছে, কোরআন শুনেছে, পড়েছে৷ দান খয়রাতও করেছে৷ যুদ্ধে যোগদানও করেছে৷ ফলে তাদের জমার খাতায় কিছু পুণ্য থেকে থাকবে৷ আল্লাহ তেদের সেই সমুদয় আমল বাজেয়াপ্ত করে দেবেন৷

বিষয়: বিবিধ

১০৮৩ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

291939
০৭ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:২৫
মারুফ_রুসাফি লিখেছেন : পড়ার মত কেউ নেই। সবাই আছে দুনিয়াবি কাজে।
০৭ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১০:১৫
235727
শেখের পোলা লিখেছেন : এই দুঃখেইতো পোষ্টাই কম কম৷ আপনাকে প্রথমিক ধন্যবাদ৷
291945
০৭ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:৫৯
মঈন লিখেছেন : ভালো লাগলো
০৭ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১০:১৬
235728
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনাে অনেক শুভেচ্ছা৷ আবার আসবেন৷
291947
০৭ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:০১
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : বর্তমানের নব্য সালাফীরা জিহাদের গুরুত্ব অস্বীকার করছে বিভিন্ন অপযুক্তি দিয়ে। অথচ পবিত্র কুরআনে এ বিষয়টির উপর বারংবার গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
০৭ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১০:১৮
235729
শেখের পোলা লিখেছেন : সন্দেহের কোন অবকাশ নেই৷ প্রকৃত মুমিনের চরিত্রে জিহাদ অপরিহার্য৷ ধন্যবাদ আপনাকে৷
291963
০৭ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৪৮
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ Rose Rose Rose Good Luck Good Luck Good Luck
০৭ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১০:১৯
235730
শেখের পোলা লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকেও৷ আবার আসবেন৷
291979
০৭ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:১৪
ফাতিমা মারিয়াম লিখেছেন : মুনাফিকদের নিয়ে যে আয়াতগুলো আছে সেগুলো পড়লে আসলেই বেশ ভয় লাগে। আল্লাহ আমাদের হিফাজত করুন। আমীন Praying
০৭ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১০:২১
235732
শেখের পোলা লিখেছেন : অথচ মোনাফেকদের কোন ভয় নেই৷ আল্লাহ আমাদের প্রকৃত মুমিন হবার তৌফিক দিন। আমিন৷
292191
০৭ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১১:৩৮
আফরা লিখেছেন : আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন । আমীন ।

জাজাকাল্লাহ খায়ের ।
০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৬:৫৭
235797
শেখের পোলা লিখেছেন : আমিন৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File