:"হে মুমিনগন, যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা দৃঢ় প্রতিষ্ঠ করবেন৷"
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ৩০ নভেম্বর, ২০১৪, ১০:৩১:৩০ রাত
(উর্দু বয়ানুল কোরআনের বাংলা অনুবাদ)
(৪৭) সুরা মোহাম্মদ (মাদানী) রুকু ৪টি ও আয়াত ৩৮টি
পঞ্চম গ্রুপের তেরটি মক্কী সুরা শেষ হয়েছে৷ এখান থেকে শুরু হতে যাচ্ছে তিনটি মাদানী সুরা৷ যার প্রথমটি সুরা মোহাম্মদ ও দ্বতীয়টি সুরা ফাতাহ৷ এ দুটি সুরার মাঝে বেশ কিছু মিল রয়েছে৷ প্রমতঃ দুটি আয়তনে প্রায় সমান৷ সুরা মোহাম্মদের অপর নাম, সুরা কেতাল৷ এতে চারটি রুকু ও আটত্রিশটি আয়াত রয়েছে৷ এটি সুরা বাক্বারার সমসাময়িক ও বদর যুদ্ধের অল্প আগে নাজিল হয়৷ তাই একে সুরা বাক্বারার জমীমা বলা হয়৷
মক্কার নও মুসলীমদের অত্যাচারিত তহওয়ার কথা আমরা জানি৷ সাথে এও জানি উক্ত বারোটি বছর বিনা বাক্যব্যায়ে মুমিনরা শত অন্যায় সহ্যকরেছে৷ আত্মরক্ষা তো দূরের কথা বাধা দেবারও অনুমতি ছিলনা৷ খাব্বাব রাঃ কে বলা হল, জামা খুলে জ্বলন্ত অঙ্গারে শুয়ে পড় তাই সই৷ ইয়াসীর সুমাইয়া রাঃ দের খুনকরা হচ্ছে, তাদের সাহায্যে এগিয়ে যাবার অনুমতি ছিলন না৷ মুমিনদের হাত বন্ধ করে রাখা হয়েছিল৷
মদীনায় দৃশ্যপট বদলেছে৷ সুরা হজ্জের ৩৯ আয়াতে ও সুরা বাক্বারার ১৯০ আয়াতে তাদের হাত খুলে দিয়ে বদলা নেবার অনুমতি দেওয়া হল৷ রসুল সঃ তাঁর একদাম বা অগ্রযাত্রা শুরু করলেন৷ কোরাইশ কাফেলায় ঝটিকা আক্রমন ও তাদের অর্থনৈতীক ভাবে পঙ্গু করার চেষ্টা করতে লাগলেন৷ এর পর এল পালা সন্মুখ সমরের৷ সুরা বাক্বারার দ্বিতীয় রুকুতে কিছু লোকের কথা বলা হয়েছে, যাদের অন্তরে রোগ আছে বলে বলা হয়েছে, মৃত্যুভয়ে সেই মোনাফেকরা ভীত হল, তাদের যুক্তি ছিল, মুমিনদের উচিৎ নয় কোরাইশদের পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া টেনে আনা৷ আমরাতো ধর্ম কর্ম করছি, তাবলীগও করছি৷ যুদ্ধে জড়ানো ঠিক নয়৷ কিন্তু মুমিনদের লক্ষ বিজয় আর তা বদলার মাধ্যমে৷ ঠিক এমনই অবস্থায় এল সুরা মোহাম্মদ৷ অপর পক্ষে দীর্ঘ সংগ্রামের পরে বিজয় আসন্ন হল৷ চুড়ান্ত বিজয়, মক্কা বিজয়ের আগে হুদায়বিয়ার সন্ধীর মাধ্যমে এল সূচনা বিজয়৷ আর তখনই এল সুরা আল ফাতাহ৷ দুইটি অবস্থার সূচনালগ্নে এল এ দুইটি সুরা৷ এখানেই মিল দুটি সুরায়৷
সুরা মোহাম্মদ একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির সুরা৷ আয়াত গুলির শুরু ও শেষ কোরআনের অন্যান্ন সুরাগুলির মত নয়৷ যেন হঠাতই শুরু হয়েছে আর আয়াতের শেষে সাধারণতঃ ‘গফুরুর রাহিম’, ‘আজিজুল হাকীম’ জাতীয় আল্লাহর কোন সীফত দিয়ে শেষ হয়নি৷
ইসলামী শরিয়তে বিধি বিধান গুলি কয়েকটি সুরায় বর্ণনা হয়েছে৷ সব কয়টির সার সংক্ষেপ আঠারোটি আয়াতে পুরে সুরা হুজরাত নামে এসেছে তৃতীয় মাদানী ও এ গ্রুপের শেষ সুরাটি৷
সুরা মোহাম্মদ রুকু;-১ আয়াত;-১-১১
الرَّحِيمِ الرَّحْمـَنِ اللّهِ بِسْمِ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
১/الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوا عَن سَبِيلِ اللَّهِ أَضَلَّ أَعْمَالَهُمْ
অর্থ;-যারা কুফরী করে ও আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে আল্লাহ তাদের সকল কর্ম ব্যর্থ করে দেন৷
২/وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَآمَنُوا بِمَا نُزِّلَ عَلَى مُحَمَّدٍ وَهُوَ الْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْ كَفَّرَ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَأَصْلَحَ بَالَهُمْ
অর্থ;-আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তাদের রবের পক্ষ থেকে মোহাম্মদের উপর অবতীর্ণ সত্যে বিশ্বাস করে, আল্লাহ তাদের মন্দকর্ম সমুহ মার্জনা করেন৷
৩/ذَلِكَ بِأَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا اتَّبَعُوا الْبَاطِلَ وَأَنَّ الَّذِينَ آمَنُوا اتَّبَعُوا الْحَقَّ مِن رَّبِّهِمْ كَذَلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ لِلنَّاسِ أَمْثَالَهُمْ
অর্থ;-এটা এ কারণে যে, যারা কাফের তারা বাতিলের অনুসরণ করে এবং যারা বিশ্বাসী তারা, তাদের পালনকর্তার নিকট থেকে আগত সত্যের অনুসরণ করে৷ এমনই ভাবে আল্লাহ মানুষের জন্য তাদের দৃষ্টান্ত সমুহ বর্ণনা করেন৷
৪/فَإِذا لَقِيتُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا فَضَرْبَ الرِّقَابِ حَتَّى إِذَا أَثْخَنتُمُوهُمْ فَشُدُّوا الْوَثَاقَ فَإِمَّا مَنًّا بَعْدُ وَإِمَّا فِدَاء حَتَّى تَضَعَ الْحَرْبُ أَوْزَارَهَا ذَلِكَ وَلَوْ يَشَاء اللَّهُ لَانتَصَرَ مِنْهُمْ وَلَكِن لِّيَبْلُوَ بَعْضَكُم بِبَعْضٍ وَالَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَلَن يُضِلَّ أَعْمَالَهُمْ
অর্থ;-অতঃপর যখন তোমরা কাফেরদের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হও, তখন তাদের গলা কাটতে থাক৷ অবশেষে যখন পূর্ণরূপে তাদেরকে পরাভূত কর, তখন তাদেরকে শক্তকরে বেঁধে ফেল৷ অতঃপর হয় তাদের প্রতি অনুগ্রহ কর, না হয় তাদের নিকট হতে মুক্তি পণ লও, যে পর্যন্ত না শত্রুপক্ষ অস্ত্র সমর্পন করে৷ এ জন্য যে যদি আল্লাহ চাইতেন, তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতে পারতেন৷ কিন্তু আল্লাহ তোমাদের কতককে দিয়ে কতকের পরীক্ষা নিতে চান৷ আর যারা আল্লাহর পথে জীবন বিসর্জন দেয়, আল্লাহ তাদের কর্ম কখনও বিনষ্ট করেন না৷
# কোরআনের এ আয়াতটি জটীল আয়াতের অন্তর্গত৷ মুশরিকদের বিরুদ্ধে মুমিনদের অভিযান এখন আসন্ন যুদ্ধের মুখোমুখী হয়ে আসছে, করণীয় সম্পর্কে আল্লাহ ঘোষণা দিলেন যে, যখন সামনা সামনী হবে তখন দয়া মায়া নয়, হত্যা করতেই থাক, যতক্ষন না তারা সম্পূর্ণ পর্যুদস্থ হয় ও অস্ত্র সমর্পন করে৷ এমতাবস্থায় তাদের বন্দী কর৷ তার পর দয়াপরবশ হয়ে তাদের মুক্তি দাও বা মুক্তিপণ নিয়ে মুক্তি দাও৷ তোমাদের ইচ্ছা৷
বদরের ময়দানে কাফেরদের এক হাজার সাজোয়া বাহিনীর সামনে মাত্র তিনশো তের জন মুমিন, যাদের যথেষ্ট অস্ত্রশস্ত্রও ছিলনা৷ অসম যুদ্ধ৷ কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় মুমিনদেরই জয় হয়৷ কাফেরদের সত্তর জন মারা যায় আর সত্তর জন বন্দী হয়ে মদীনা আনিত হয়, আর বাকীরা পলায়ণ করে৷ পরে মুক্তিপণ নিয়ে বন্দীদের ছেড়ে দেওয়া হয়৷
সাধারণ বিচারে বিষয়গুলি এ আয়াতেরই বাস্তবায়ন মনে হলেও আল্লাহ তায়ালা, বদর যুদ্ধের পরে নাজিল কৃত সুরা ‘আনফাল’ এর ৬৭, ৬৮, ৬৯, আয়াতে কৈফিয়তের সুরে বললেন, যে, কোন নবীর পক্ষে সমিচীন নয় নিজের কাছে বন্দীদের রাখা, শত্রুদের সম্পূর্ণ পরাভূত করার আগে৷ যদি সুরা মোহাম্মদের এ আয়াতটি আগে নাজিল না হত তবে সকলকে শাস্তি পেতে হত৷ আল্লা ক্ষমা করলেন ও মুক্তিপণকেও বৈধ করলেন৷
পারত পক্ষে বদরের যুদ্ধ ছিল খণ্ডযুদ্ধ৷ আসল যুদ্ধ স্থায়ী ছিল ছয় বৎসর৷ বদরের পলাতক ও মুক্তিপ্রাপ্ত মুশরিকরা পরের বৎসর পুনরায় ওহোদে হাজির হয়৷ সুতরাং বদরের বিজয়ই চুড়ান্ত বিজয় ছিলনা আর বদরে সত্তর জনের আত্ম সমর্পণ, অস্ত্র সমর্পণ, সমস্ত শত্রুকূলের অস্ত্র বা আত্ম সমর্পণ ছিলনা৷
আল্লাহ ইচ্ছা করলে হাজার কাফেরকে মহুর্তে শেষ করতে পারতেন, কিন্তু তিনি এতে মুমিনদের মনোবল ও বিশ্বাস পরীক্ষা করলেন৷ অলৌকিক ভাবে সাহায্য করে তাদের মনোবল ও ইমান বর্ধিত করলেন৷
৫/سَيَهْدِيهِمْ وَيُصْلِحُ بَالَهُمْ
অর্থ;-তিনি তাদেরকে সৎপথ প্রদর্শণ করবেন এবং তাদের অবস্থা ভাল করবেন৷
৬/وَيُدْخِلُهُمُ الْجَنَّةَ عَرَّفَهَا لَهُمْ
অর্থ;-অতঃপর তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার কথা তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন৷
৭/يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تَنصُرُوا اللَّهَ يَنصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ
অর্থ;-হে বিশ্বাসী গন, যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা দৃঢ় প্রতিষ্ঠ করবেন৷
# এটি আল্লাহর নীতি৷ যে আল্লাহকে সাহায্য করবে, তার দ্বীন প্রতিষ্ঠায় মন ও প্রান দান করবে, আল্লাহ তাকেও সাহায্য করবেন৷ আর আল্লহকে বাদদিয়ে যারা কাফেরদের গুরু বলে মানবে, তাদের কাছে সাহায্যের আশা করবে, আল্লাহ কোনদিন তাকে সাহায্য করবেন না৷
৮/وَالَّذِينَ كَفَرُوا فَتَعْسًا لَّهُمْ وَأَضَلَّ أَعْمَالَهُمْ
অর্থ;-আর যারা কুফরী করেছে তাদের জন্যে ছে দুর্গতি এবং তিনি তাদের কর্ম বিনষ্ট করে দেবেন
৯/ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ كَرِهُوا مَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ
অর্থ;-এটা এ জন্য যে, আল্লাহ যা নাজিল করেছেন, তারা তা পছন্দ করেনা৷ অতএব, আল্লাহ তাদের কর্ম ব্যর্থ করে দেবেন৷
# ক্বাবার তওয়াফ আগেও ছিল৷ দূর দূরান্ত থেকে পূণ্যর্থীরা আসত তাওয়াফ করতে৷ তাদের থাকার বন্দবস্ত, পানির ব্যবস্থা, ক্বাবার সেবক হিসেবে মুশরিক কোরাইশরা করত, সাথে পূণ্য কামইয়ের হিসাবও করত৷ উপরের দুটি আয়াতে আল্লাহ তাদের এ সৎকর্ম নষ্ট করে দেবেন বলেছেন৷ কেননা তারা কুফরী করেছে আর কোরআনে বিশ্বাস করেনি৷
##এটি তাদেরও দলীল হতে পারে যারা আল্লাহ এবং কোরআনে বিশ্বাস না রেখে, জন কল্যানে পার্থিব অনেক ভাল কাজ করেন৷
১০/أَفَلَمْ يَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَيَنظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ دَمَّرَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَلِلْكَافِرِينَ أَمْثَالُهَا
অর্থ;-তারাকি পৃথিবীতে ভ্রমন করেনি, অতঃপর দেখেনি যে, তাদের পূর্ববর্তীদের পরিনাম কি হয়েছে৷ আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন এবং কাফেরদের অবস্থা এ রূপই হবে৷
১১/ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ مَوْلَى الَّذِينَ آمَنُوا وَأَنَّ الْكَافِرِينَ لَا مَوْلَى لَهُمْ
অর্থ;-এটা এ জন্য যে, আল্লাহ মুমিনদের হিতৈসী বন্ধু এবং কাফেরদের কোন হিতৈসী বন্ধু নেই৷
ওহোদের যুদ্ধে আচমকা আক্রমনে মুসলীমরা যখন ছত্রভঙ্গ হয়ে রসুল সঃ কয়েক সাহাবী পাহাড়ের উপর উঠলেন, তখন নীচে খালেদ বিন ওলিদ ও আবুসুফিয়ান নারা দিতে থাকে,’লানা উজ্জা, লা উজ্জা লাকুম’, আমাদের উজ্জা আছে, তোমাদের উজ্জা নাই৷ রসুল সঃ তখন এ আয়াত থেকে নারা পছন্দ করেন৷ সাহাবীদের নারা দিতে বলেন. ‘আল্লাহু মওলানা, লা মওলা লাকুম’, আল্লাহ আমাদের মওলা (প্রভু) তোমাদের মওলা নেই৷
বিষয়: বিবিধ
১৮০২ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাযাকাল্লাহ খাইরান কাসীরা...[-o
যারা ইসলাম ছাড়াই সৎকর্ম করাকে যথেষ্ট মনে করে এই আয়াতগুলি তাদের জন্য শিক্ষা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন