"তোমরা তাঁর অনুগ্রহ তালাশ করো ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হও"

লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ২২ নভেম্বর, ২০১৪, ০৬:৫৬:৩০ সকাল

(উর্দু বয়ানুল কোরআনের বাংলা অনুবাদ)

সুরা আল জাশিয়া রুকু;-২ আয়াত;-১২-২১

১২/اللَّهُ الَّذِي سخَّرَ لَكُمُ الْبَحْرَ لِتَجْرِيَ الْفُلْكُ فِيهِ بِأَمْرِهِ وَلِتَبْتَغُوا مِن فَضْلِهِ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

অর্থ;-তিনি আল্লাহ যিনি সমুদ্রকে তোমাদের উপকারার্থে আয়ত্বাধীন করে দিয়েছেন, যাতে তাঁর আদেশ ক্রমে তাতে জাহাজ চলাচল করে এবং যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ তালাশ কর ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হও৷

# আল্লাহরই অনুগ্রহে সমুদ্রে জাহাজ চলাচল করে, সমুদ্র পথে মানুষ তার মালামাল দেশ হতে দেশান্তরে নিয়ে যায়৷ সী ফুড যা মানুষের খাদ্যের অনেকখানি চাহিদা মেটায়, এবং মানুষের জন্য উপকারিও বটে৷ মণি মুক্তাও সমুদ্র হতে আহরিত হয়৷ এ অনুগ্রহে বিনিময়ে মানুষের আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়াই বাঞ্ছনীয়৷

১৩/وَسَخَّرَ لَكُم مَّا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا مِّنْهُ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لَّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ

অর্থ;-এবং আয়ত্বাধীন করে দিয়েছেন তোমাদের যা আছে নভোমণ্ডলে ও যা আছে ভূ মণ্ডলে তাঁর পক্ষ থেকে৷ নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে

# ভূমণ্ডলের যাবতীয় মানুষের আয়ত্বাধীন করে দিয়েছেন৷ মানুষ পর্বত শৃঙ্গে আরোহন করে, গভীর সমুদ্রে অভিযান চালায়৷ বিরাটাকায় হাতি, ঘোড়া, গরু মহিশ মানুষের অধীনে কাজ করে৷ শূন্যে মেঘের বুক চিরে উড়োজাহাজ চলে, গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে মানুষ অভিযান চালায়৷ চন্দ্র সূর্য নক্ষত্রও মানুষেরই উপকারার্থে, একসময় মানুষ তারকার নির্দশণায় পথ নির্ণয় করত। এ সবই আল্লাহরই অনুগ্রহ৷

১৪/قُل لِّلَّذِينَ آمَنُوا يَغْفِرُوا لِلَّذِينَ لا يَرْجُون أَيَّامَ اللَّهِ لِيَجْزِيَ قَوْمًا بِما كَانُوا يَكْسِبُونَ

অর্থ;-মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদেরকে ক্ষমা করে, যারা (আইয়ামুল্লাহ) আল্লাহর দিনগুলি সম্পর্কে বিশ্বাস রাখেনা, যাতে তিনি কোন সম্প্রদায়কে কৃতকর্মের প্রতিফল দেন৷

# বহু অবাধ্য কওমকে আল্লাহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে ধ্বংস করে দিয়েছেন, এই বিশেষ বিশেষ সময় ও ঘটনাগুলিকে ‘আইয়ামুল্লাহ’ বলা হয়৷ মক্কার মুশরিকরাও অবাধ্য ছিল ও মুমিনদের নানাভাবে অত্যাচার করত৷ মুমিনরা অথিষ্ঠ হয়ে আল্লাহর কাছে তাদের ধ্বংসের কামনা করত৷ আল্লাহর ওয়াদাকৃত শাস্তির আশু বাস্তবায়ন আশা করত৷ আল্লাহ তাঁর রসুলের মাধ্যমে তাদের ধৈর্য্য ধরে থাকতে ও মুশরিকদের ক্ষমা করতে বললেন৷ নির্দিষ্ট সময়ে তাদের কর্মফল নিশ্চয়ই তারা পাবে৷

১৫/مَنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِنَفْسِهِ وَمَنْ أَسَاء فَعَلَيْهَا ثُمَّ إِلَى رَبِّكُمْ تُرْجَعُونَ

অর্থ;-যে সৎকাজ করেছে সে নিজের কল্যণার্থেই করেছে, আর যে অসৎ কাজ করেছে তা তার উপরই বর্তাবে৷ অতঃপর তোমরা তোমাদের রবের দিকে প্রত্যাবর্তীত হবে৷

১৬/وَلَقَدْ آتَيْنَا بَنِي إِسْرَائِيلَ الْكِتَابَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ وَرَزَقْنَاهُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَى الْعَالَمِينَ

অর্থ;-আমি বণী ইস্রাঈলকে কিতাব, রাজত্ব ও নবুয়ত দান করেছিলাম এবং তাদেরকে পরিচ্ছন্ন রিজিক দিয়েছিলাম এবং বিশ্ববাসীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম৷

# বণী ইস্রাঈলের সে শ্রষ্ঠত্ব আজও অক্ষুন্ন আছে৷ কিতাব, রাজত্ব ছাড়াও ইয়াকুব আঃ এর বংশধরদের মাঝে একত্রে মুসা আঃ ও হারুণ আঃ দিয়ে নবুয়তের শুরুহয় ও একত্রে ঈশা আঃ ও ইয়াহিয়া আঃ দিয়ে শেষ হয়৷ মাঝে ১৪০০ বৎসর যাবৎ এমনদিন ছিলনা যখন তাদের মাঝে কোন নবী ছিলেন না৷

১৭/وَآتَيْنَاهُم بَيِّنَاتٍ مِّنَ الْأَمْرِ فَمَا اخْتَلَفُوا إِلَّا مِن بَعْدِ مَا جَاءهُمْ الْعِلْمُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ إِنَّ رَبَّكَ يَقْضِي بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ

অর্থ;-আরও দিয়েছিলাম তাদেরকে ধর্মের সুস্পষ্ট প্রমানাদী৷ অতঃপর তারা জ্ঞানলাভ করার পর শুধু পারষ্পরিক জেদের বশবর্তী হয়ে মতভেদ সৃষ্টি করেছে৷ তারা যে বিষয়ে মতভেদ করত, আপনার রব কেয়ামতের দিন তার ফায়সালা করে দেবেন৷

১৮/ثُمَّ جَعَلْنَاكَ عَلَى شَرِيعَةٍ مِّنَ الْأَمْرِ فَاتَّبِعْهَا وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاء الَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ

অর্থ;-এরপর আমি আপনাকে রেখেছি ধর্মের এক বিশেষ শরিয়তের উপর, অতএব, আপনি এর অনুসরণ করুন এবং অজ্ঞানদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করবেন না৷

# বণী ইস্রাঈলের ১৪০০ বৎসর নবুয়তের শেষে হজরত মোহাম্মাদুর রসুল্লাহ সঃ পেলেন সমাপ্তি নবুয়ত, ‘আল ইয়াওমা আকমালতো লাকুম দ্বীনাকুম অয়া আকমামতো নেয়মাতি অয়া রাজিতো লাকুমুল ইসলামা দ্বীনা’, বলে আল্লাহ শরিয়তের শেষ সংষ্কার করে তার দ্বীন ইসলামকে পুর্নাঙ্গ করলেন৷ মানুষ সৃষ্টির আদী থেকে অন্ত পর্যন্ত মানুষের ধর্ম ছিল একটাই, ইসলাম৷ শরিয়ত ছিল যুগ উপযোগী প্রত্যেক নবীর আলাদা৷ শুধুমাত্র হজরত ঈশা আঃ কোন নতুন শরিয়ত পাননি, বরং মুসা আঃএর শরিয়তকেই পুণর্বহাল করতে এসেছিলেন৷

১৯/إِنَّهُمْ لَن يُغْنُوا عَنكَ مِنَ اللَّهِ شَيئًا وإِنَّ الظَّالِمِينَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاء بَعْضٍ وَاللَّهُ وَلِيُّ الْمُتَّقِينَ

অর্থ;-আল্লাহর সামনে তারা আপনার কোন উপকারে আসবেনা৷ জালেমরা একে অপরের বন্ধু৷ আর আল্লাহ পরহেজগারদের বন্ধু৷

# তারা বলতে এখানে ইহুদীদের বলা হয়েছে৷ ইহুদীরা আপোষের শর্ত দিয়েছিল, কিছু আমাদের মানো আর কিছু মানাও৷ এ বিষয়ে আল্লাহ সুরা বণী ইস্রাঈলের ৭৩, ৭৪, ও ৭৫ আয়াতে রসুলকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, তিনিযদি তাদের সাথে আপোষ করতেন তবে তাঁকে দুনিয়া ও আখেরাতে দ্বিগুন শাস্তি পেতে হত৷ আল্লাহ তাঁকে দৃঢ়পদ রেখেছিলেন তাই তা ঘটার সম্ভাবনাও ছিলনা৷ এখানে বলা হচ্ছে যে, তারা কোন বিষয়ে আপনার কোন উপকারে আসবে না৷ কারণ জালেমরা জালেমদের বন্ধু আর মুমিনদের বন্ধু হলেন আল্লাহ স্বয়ং৷

২০/هَذَا بَصَائِرُ لِلنَّاسِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّقَوْمِ يُوقِنُونَ

অর্থ;-এটি (কোরআন) মানুষের জন্য জ্ঞানের কথা এবং বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য হেদায়েত ও রহমত৷

২১/أًمْ حَسِبَ الَّذِينَ اجْتَرَحُوا السَّيِّئَاتِ أّن نَّجْعَلَهُمْ كَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَوَاء مَّحْيَاهُم وَمَمَاتُهُمْ سَاء مَا يَحْكُمُونَ

অর্থ;-যারা দুষ্কর্ম করেছে তারাকি মনে করে আমি তাদেরকে সে লোকদের মত করে দেব, যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং তাদের জীবন ও মৃত্যু কি সমান হবে? তাদের দাবী কত মন্দ৷

# সৎকর্ম ও অসৎকর্ম যেমন সমান নয়৷ যারা সৎকর্মী ও অসৎর্মীও সমান নয়৷ যারা অসৎকর্ম করে আরাম আয়েশে জীবন কাটালো, আর যারা দুঃখে কষ্টে অনাহারে জীবন কাটালো উভয়ে কোনদিন এক হতে পারেনা৷ যদি মৃত্যুর সাথেই সব শেষ হয়ে যেত তাহলে বড়ই বে ইনসাফী হত৷ আল্লাহ বেইনসাফী করেননা, তাই ইনসাফ দিতেই প্রয়োজন হিসাব নিকাশ, বদলা৷ এ জন্যই আছে আখেরাত৷

বিষয়: বিবিধ

১০৬৯ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

286754
২২ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ০৯:৪৬
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : আল্লাহ্‌ আমাদের তাঁর প্রতিটি নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা স্বীকারকারী বান্দা হিসেবে কবুল করে নিন। আমিন
২২ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:২৫
230421
শেখের পোলা লিখেছেন : সুম্মা আমিন৷ ধন্যবাদ৷
286782
২২ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:১২
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : আল্লাহ আমাদের তার নির্দেশিত পথে চলার তৌফিক দান করুন আমিন। লেখা সুন্দর হয়েছে ভালো লাগলো
২২ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:২৬
230422
শেখের পোলা লিখেছেন : আমি অনুবাদক মাত্র৷ আমিন৷ ধন্যবাদ৷ আবার আসবেন৷
286841
২২ নভেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৪৪
আফরা লিখেছেন : সৎকর্ম ও অসৎকর্ম যেমন সমান নয়৷ যারা সৎকর্মী ও অসৎর্মীও সমান নয়৷ যারা অসৎকর্ম করে আরাম আয়েশে জীবন কাটালো, আর যারা দুঃখে কষ্টে অনাহারে জীবন কাটালো উভয়ে কোনদিন এক হতে পারেনা৷ যদি মৃত্যুর সাথেই সব শেষ হয়ে যেত তাহলে বড়ই বে ইনসাফী হত৷ আল্লাহ বেইনসাফী করেননা, তাই ইনসাফ দিতেই প্রয়োজন হিসাব নিকাশ, বদলা৷ এ জন্যই আছে আখেরাত ।

হে সেই কঠিন দিনে যেন আমরা সৎকর্মশীলদের সাথে সামিল হতে পারি আমাদের সেই তৌফিক দিন । আমীন ।

জাজাকাল্লাহ খাইরান চাচাজান ।

২২ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:২৯
230425
শেখের পোলা লিখেছেন : মামনির আশা আল্লাহ অবশ্যই পুরণ করবেন৷ আমিন৷ দোওয়া রইল৷
287151
২৩ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:৪৪
ফাতিমা মারিয়াম লিখেছেন : ধন্যবাদ Praying
২৩ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৩৭
231047
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ৷
287368
২৪ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১২:০৫
ক্ষনিকের যাত্রী লিখেছেন : জাযাকাল্লাহু খাইরান কাসীরা। Good Luck Good Luck
২৪ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০১:৪৮
231098
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনাকে ধন্যবাদ৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File