-"এটি একটি কিতাব, যার আয়াত গুলি বিশদ ভাবে বিবৃত আরবী ভাষায়, জ্ঞাণী লোকদের জন্য,"
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ১৩ নভেম্বর, ২০১৪, ০১:৩৪:৩৭ রাত
(মরহুম জনাব ইসরার আহমাদ সাহেবের ডিভিডি, উর্দু বয়ানুল কোরআনের বাংলা অনুবাদ)
(৪১) সুরা হা মিম আস সাজদাহ (মক্কী) রুকু ৬টি, আয়াত ৫৪টি
পঞ্চম গ্রুপের অষ্টম সুরা এটি৷ এ গ্রুপে হরফে মুকাত্তায়াত বিশিষ্ট সাতটি সুরার এটি দ্বিতীয়৷ এ সুরার অন্যনাম সুরা ফুস্সেলাত৷ এটি মক্কী সুরা, এতে ছয়টি রুকু ও চুয়ান্নটি আয়াত রয়েছে৷ চলমান তৌহীদের বক্তব্যে এটি তৃতীয়৷ প্রথম দুটি সুরা ছিল ব্যাক্তি কেন্দ্রীক আর এটি দলীয় বা সামষ্টিক৷ যার মাধ্যম হল দাওয়াত৷
তৌহীদ শব্দটি বাবে ‘তাফঈল’ এর রূপ৷ তা’লীম যেমন ধীরে ধীরে আয়ত্বে আসে তৌহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদের সামগ্রীক উপলব্ধিও ক্রমান্বয়ে মানুষের আয়ত্বে আসে৷ প্রচলিত সামাজিক ব্যবস্থা যদি ইসলামের পক্ষে হয় তবে, তৌহীদের আলোকে আলোকিত মুমিন যাবতীর অন্যায় হতে নিজেকে দূরে রাখবে ও সর্বান্তঃকরণে দ্বীনের পথেই নিজেকে মশগুল রাখবে ও অন্যের মাঝেও তা অবলীলায় বিলিয়ে দেবে৷ যেমন খোলাফায়ে রাশেদীনের ছায়ার মুমিন গন৷ আর যদি প্রচলিত ব্যবস্থা তাগুতী হয়, তবে তার পথ মোটেও মসৃন নয়,কন্টকাকীর্ণ৷ তখন তৌহীদপ্রাপ্ত ব্যক্তির উপর কিছু দায়িত্ব বর্তায়৷ আর তা হল দাওয়াত৷ ব্যক্তি বা পারিবারিক জীবনকে অল্পে সন্তুষ্ট রেখে সর্বসত্তা নিয়োগ করে অন্যের মাঝে তৌহীদের সংক্রমন ঘটিয়ে জনমত গঠন করে, তাগুতি ব্যবস্থাকে নির্বাসনে পাঠাতে সচেষ্ট হতে হবে৷ এ সুরায় সেই দাওয়াতের কথাই বলা হয়েছে৷
৩২ তম সুরাটিও এটার মত হরফে মুকাত্তায়াত বিশিষ্ট, তার নাম ‘আস সাজদাহ’৷ তাই এটির নাম হয়েছে ‘হা মিম আস সাজদাহ’৷
সুরা হা মীম আস সাজদাহ রুকু;-১ আয়াত;-১-৮
الرَّحِيمِ الرَّحِيمِ اللّهِ بِسْمِ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
১/حم
অর্থ;-হা মিম, হরফে মুকাত্তায়াত৷
২/تَنزِيلٌ مِّنَ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
অর্থ;-এ (কোরআন) অবতীর্ণ পরম করুনাময়, দয়ালুর পক্ষ থেকে৷
৩/كِتَابٌ فُصِّلَتْ آيَاتُهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لِّقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
অর্থ;-এটি একটি কিতাব, যার আয়াত গুলি বিশদ ভাবে বিবৃত আরবী ভাষায়, জ্ঞাণী লোকদের জন্য,
# যারা জ্ঞাণী বা জ্ঞাণ আহরণ করতে চায়, তাদের জন্য এ আরবী কিতাব খানা সম্প্রসারিত সরল আয়াতে বিন্যস্ত করা হয়েছে৷
৪/بَشِيرًا وَنَذِيرًا فَأَعْرَضَ أَكْثَرُهُمْ فَهُمْ لَا يَسْمَعُونَ
অর্থ;-সু সংবাদ দাতা ও সতর্ককারী রূপে৷ অতঃপর তাদের অধিকাংশই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে আর তারা শোনেনা৷
# জ্ঞাণ আহরণকারী দের সুবিদার্থে এ কোরআনের বিষয়গুলিকে খুলাখুলি বর্ণনা করা হয়েছে, আর এ কোরআনই রসুলের সতর্ক করা ও সু সংবাদ দেবার মাধ্যম৷ এ সুরায় ছয় জায়গায় কোরআনের উল্লেখ পাওয়া যাবে৷ বণী ইস্রাইলে ছিল ষোল জায়গায়, সুরা ফুরক্বানেও ছিল একাধিক বার৷ সুরা মারইমামের শেষেও বিশেষ ভাবে বলা হয়েছে৷ কিন্ত অধিকাংশরাই তা গ্রাহ্য করেনা
৫/وَقَالُوا قُلُوبُنَا فِي أَكِنَّةٍ مِّمَّا تَدْعُونَا إِلَيْهِ وَفِي آذَانِنَا وَقْرٌ وَمِن بَيْنِنَا وَبَيْنِكَ حِجَابٌ فَاعْمَلْ إِنَّنَا عَامِلُونَ
অর্থ;-তারা বলে, আপনি যে বিষয়ের উপর আমাদের দাওয়াত দেন, সে বিষয়ে আমাদের অন্তর অবরণে আবৃত, আমাদের কানে আছে বধিরতা, আমাদের ও আপনার মাঝে রয়েছে পর্দা৷ অতএব, আপনি আপনার কাজ করুন এবং আমরা আমাদের কাজ করি৷
# রসুল সঃ যাদের ইমানের দাওয়াত দেন, তারা তা গ্রাহ্য করেনা বরং চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলে যে আপনি আপনার প্রচেষ্টা চালিয়ে জান আর আমরা সাধ্য মত তা প্রতিহত করতে আমাদের প্রচেষ্টা করে যাই৷ জবাবে বিনয়ের সাথে রসুল সঃ বলেন,
৬/قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَاسْتَقِيمُوا إِلَيْهِ وَاسْتَغْفِرُوهُ وَوَيْلٌ لِّلْمُشْرِكِينَ
অর্থ;-বলুন, আমিও তোমাদের মতই মানুষ, আমার প্রতি ওহী আসে যে, তোমাদের মাবুদই একমাত্র মাবুদ৷ অতএব, তারই পথ দৃঢ় ভাবে ধারণ কর এবং তারই কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর৷ আর মুশরিকদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ৷
# রসুল সঃ বলেন, আমি অতি মানব নই, আমিও তোমাদের মতই মানুষ৷ আমার কাছে যে ওহী আসে সেই অনুযায়ী আমি তোমাদের দাওয়াত দিই, বলি তোমাদের আর আমার মাবুদ একই৷ মুশরিকদের জন্য দূর্ভোগ আছে, তাই সেই একই মাবুদের পথে অবিচল থাক৷ ক্ষমা প্রার্থনা কর৷
৭/الَّذِينَ لَا يُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُم بِالْآخِرَةِ هُمْ كَافِرُونَ
অর্থ;-যারা নিজেকে পবিত্র করেনা এবং তারাই পরকালকে অস্বীকার করে৷
# জাকাতের বিধান চালু হয় মদীনায় ইসলামী শাসন ব্যবস্থা চালুর পর৷ তাই এখানে জাকাত পবিত্রতা অর্থে ব্যবহার হয়েছে, যা এর অভিধানিক অর্থে৷
৮/إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ أَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُونٍ
অর্থ;-নিশ্চয় যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত পুরষ্কার৷
বিষয়: বিবিধ
১১৯৭ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
হে আল্লাহ আপনি আমাদের প্রকৃত ঈমানদার ও সৎকর্ম শীলদের সাথে শামিল হওয়ার তৌফিক দান করুন । আমীন ।
আল্লাহপাক আমাদের সকলকে কবুল করুন-আমীন।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে কবুল করে নিন।
এই আয়াত টির প্রতি বিশ্বাস থাকলে আমাদের দেশে প্রচলিত ওহাবি-সুন্নি বিতর্কের কোন অস্তিত্ব থাকতনা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন