"যে পরকালের ফসল কামনা করে, আমি তার সেই ফসল বাড়িয়ে দেই"।
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ০৭ নভেম্বর, ২০১৪, ০৫:০৮:০৩ সকাল
সুরা আশ শুরা রুকু;-৩ আয়াত;-২০-২৯
২০/مَن كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الْآخِرَةِ نَزِدْ لَهُ فِي حَرْثِهِ وَمَن كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الدُّنْيَا نُؤتِهِ مِنْهَا وَمَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِن نَّصِيبٍ
অর্থ;-যে কেউ পরকালের ফসল কামনা করে, আমি তার জন্য সেই ফসল বাড়িয়ে দেই৷ আর যে ইহকালের ফসল কামনা করে, আমি তাকে তার কিছু দেই এবং পরকালে তার কোন অংশ থাকবে না৷
# সুরা বণী ইস্রাইলের ১৮ আয়াতেও ঠিক এমন কথা বলা হয়েছে৷ যারা শুধুমাত্র পার্থিব জীবনের চাহিদা মেটাতে চায়, আল্লাহ তদের চাহিদার কিছু পুরণ করেন, তবে আখেরাতের জীবনে তাদের কিছুই থাকবেনা৷ আর যারা আখেরাতের সামান চায় আল্লাহ তাদের চাহিদা অপেক্ষা বেশি বরাদ্দ দেন৷
২১/أَمْ لَهُمْ شُرَكَاء شَرَعُوا لَهُم مِّنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَن بِهِ اللَّهُ وَلَوْلَا كَلِمَةُ الْفَصْلِ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ وَإِنَّ الظَّالِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
অর্থ;-তাদের কি এমন কতক শরিক (দেবতা) আছে, যারা তাদের জন্য এমন এক ধর্মের বিধান দিয়েছে যার অনূমতি আল্লাহ দেননি? আর যদি চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত না থাকত, তবে তাদের ব্যাপারে ফায়সালা হয়ে যেত৷ নিশ্চয় জালেমদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনা দায়ক শাস্তি৷
# শরিক বা দেবদেবীর ব্যাপারে অনেক আয়াত আছে, তবে এ আয়াতটি ভিন্ন৷ শরিক দেবতারা মুশরিকদের কোন শরিয়ত বা বিধি বিধান দিয়েছে কিনা জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, এমন বিধান যার অনুমোদন আল্লাহ দেননি৷ মুশরিকরা তাদের শরিকদের আল্লাহর সহকারী মনে করত, তাই অনুমোদনের কথা জুড়ে দেওয়া হয়েছে৷
২২/تَرَى الظَّالِمِينَ مُشْفِقِينَ مِمَّا كَسَبُوا وَهُوَ وَاقِعٌ بِهِمْ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فِي رَوْضَاتِ الْجَنَّاتِ لَهُم مَّا يَشَاؤُونَ عِندَ رَبِّهِمْ ذَلِكَ هُوَ الْفَضْلُ الكَبِيرُ
অর্থ;-আপনি কাফেরদেরকে তাদের কৃতকর্মের জন্য ভীত সন্ত্রস্ত দেখবেন৷ তাদের কৃতকর্মের শাস্তি অবশ্যই তাদের উপর পতিত হবে৷ আর যারা মুমিন ও সৎকর্মী তারা জান্নাতের উদ্যানে থাকবে৷ তারা যা চাইবে তাই তাদের জন্য তাদের রবের কাছে রয়েছে৷ এটাইতো মহা অনুগ্রহ৷
# এখানে কেয়ামতের সামান্য চিত্র তুলে ধরা হয়েছে৷ অপরাধীরা কেয়ামতের দিন তাদের কৃত অপরাধের কথা স্মরণ করে ভীত সন্ত্রস্ত থাকবে আর জান্নাতীরা আল্লাহর মহা অনুগ্রহে থাকবে৷
২৩/ذَلِكَ الَّذِي يُبَشِّرُ اللَّهُ عِبَادَهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ قُل لَّا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى وَمَن يَقْتَرِفْ حَسَنَةً نَّزِدْ لَهُ فِيهَا حُسْنًا إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ شَكُورٌ
অর্থ;-এ সুসংবাদই আল্লাহ তাঁর সে সব বান্দাদের দেন, যারা ইমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে৷ আপনি বলুন, আমি আমার দাওয়াতের বিনিময়ে তোমাদের কাছে আত্মীয়তার সম্প্রীতি ছাড়া অন্য কোন প্রতিদান প্রত্যাশা করিনা৷ যে কেউ উত্তম কাজ করে, আমি তার জন্য তাতে পুন্য বাড়িয়ে দেই৷ নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, অতিশয় গুনগ্রাহী৷
# দ্বীনের কথা প্রচার বা আল্লাহর বাণী শুনিয়ে বিনিময় আশা না করার ব্যাপারে অনেক আয়াত আছে৷ এখানে বিনিময় হিসেবে আত্মীয়তা ও সম্প্রীতির বন্ধন আশা করা হচ্ছে৷ কারণ, যারাই ইমান আনছিল তারাই অত্যাচারিত হয়ে বা লাঞ্ছিত হয়ে পরিবারচ্যুত হয়ে পড়ছিল৷ অপর পক্ষে রসুলের সাথে, সাহাবীদের সাথে তাদের অন্তরের বন্ধন বা আত্মীয়তার সৃষ্টি হচ্ছিল৷ রসুল সঃ এই আত্মীয়তাই বিনিময়ে আশা করতেন৷
২৪/أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ كَذِبًا فَإِن يَشَأِ اللَّهُ يَخْتِمْ عَلَى قَلْبِكَ وَيَمْحُ اللَّهُ الْبَاطِلَ وَيُحِقُّ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ إِنَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ
অর্থ;-নাকি তারা বলে যে তিনি (রসুল) আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রটনা করছেন৷ আল্লাহ ইচ্ছা করলে আপনার অন্তরে মোহর এঁটে দিতেন৷ আল্লাহ মিথ্যাকে মিটিয়ে দেন এবং নিজ বাক্য দ্বারা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন৷ নিশ্চয় তিনি অন্তর্নিহিত বিষয় সম্পর্কে সবিশেষ অবগত৷
# ওহী আসা না আসা আল্লাহর ইচ্ছা৷ আবার সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা ও মিথ্যাকে মিটিয়ে দেওয়াও তাঁর আয়ত্বে৷ তাই রসুল সঃ যদি আল্লাহর ওহীর বিষয়ে মিথ্যা প্রচার করে থাকতেন, তবে অবশ্যই আল্লাহ তা বন্ধ করে দিতেন৷ এমনকি যা ইতিমধ্যে তাঁর অন্তরে জমে রয়েছে তাও মুছে দিতে পারতেন৷ সুরা ‘বণী ইস্রাইল’৮৬ আয়াতেও এ কথা এসেছে৷
২৫/وَهُوَ الَّذِي يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهِ وَيَعْفُو عَنِ السَّيِّئَاتِ وَيَعْلَمُ مَا تَفْعَلُونَ
অর্থ;-তিনি তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন, পাপ সমুহ মার্জনা করেন এবং তোমাদের কৃত বিষয় সম্পর্কে অবগত রয়েছেন৷
২৬/وَيَسْتَجِيبُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَيَزِيدُهُم مِّن فَضْلِهِ وَالْكَافِرُونَ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدٌ
অর্থ;-তিনি মুমিন ও সৎকর্মীদের দোওয়া শোনেন এবং তাদের প্রতি স্বীয় অনুগ্রহ বাড়িয়ে দেন, আর কাফেরদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি৷
২৭/وَلَوْ بَسَطَ اللَّهُ الرِّزْقَ لِعِبَادِهِ لَبَغَوْا فِي الْأَرْضِ وَلَكِن يُنَزِّلُ بِقَدَرٍ مَّا يَشَاء إِنَّهُ بِعِبَادِهِ خَبِيرٌ بَصِيرٌ
অর্থ;-যদি আল্লাহ তার সকল বান্দাকে প্রচুর রিজিক দিতেন, তবে তারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করত৷ কিন্তু তিনি যে পরিমান ইচ্ছা সে পরিমান নাজিল করেন৷ নিশ্চয় তিনি তার বা্দাদের খবর রাখেন ও সব কিছু দেখেন৷
# পৃথিবীতে যাদের অধিক সম্পদ দিয়েছেন, তারা পৃথিবীকে ষোশন, পেষণ ও অশান্তিতে ভরে দিয়েছে৷ যদি সকলকেই এমন সম্পদ দিতেন তবে অবশ্যই বিপর্যয় সর্বত্র বিরাজ করত৷ তাই যাকে যেমন খুশী সম্পদ দিয়েছেন৷ আর সবারই কার্যকলাপ খেয়াল রাখছেন৷
২৮/وَهُوَ الَّذِي يُنَزِّلُ الْغَيْثَ مِن بَعْدِ مَا قَنَطُوا وَيَنشُرُ رَحْمَتَهُ وَهُوَ الْوَلِيُّ الْحَمِيدُ
অর্থ;-আর তিনি যিনি মানুষ নিরাশ হবার পরে বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং স্বীয় রহমত ছড়িয়ে দেন, তিনিই প্রকৃত অিভাবক, অতিশয় প্রশংসার্হ৷
২৯/وَمِنْ آيَاتِهِ خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَثَّ فِيهِمَا مِن دَابَّةٍ وَهُوَ عَلَى جَمْعِهِمْ إِذَا يَشَاء قَدِيرٌ
অর্থ;-তাঁর এক নিদর্শণ নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃ্ষ্টি এবং এতদুভয়ের মধ্যে তিনি যেসব জীব জন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন, তিনি ইচ্ছা করলে এ গুলিকে একত্র করতে সক্ষম৷
বিষয়: বিবিধ
১৩৪২ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মহাগ্রন্থ আলকুরআন এর কিছু আলোচনা সুন্দর ভাবে উপস্হাপন করায় জাযাকাল্লাহু খাইরান আপনাকে।
আমরা এখন পরকালের চিন্তা করাই ভুরে গিয়েছি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন