"প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের পূর্ণ বিনিময় দেওয়া হবে"৷
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ১৮ অক্টোবর, ২০১৪, ০৭:৩৬:৩৪ সকাল
সুরা আল যুমার রুকু;-৭ আয়াত;-৬৪-৭০
সুরা যুমারের শেষের রুকু দুটি তৌহীদ বিল ইবাদতে বিশেষ স্থান দখল করে আছে৷ এক পর্যায়ে মক্কার মুশরিকরা রসুল সঃ এর উপর প্রচণ্ড চাপের সৃষ্টি করে, তাদের প্রধান দাবী ছিল, যা চাও তাই দেওয়া হবে, শুধু তোমার মতবাদ প্রচার বন্ধ কর৷ পরের দাবী সমঝোতা, তোমার কিছু আমরা মানবো আর তুমি আমাদের কিছু মেনে নেবে৷ তাদের কিছু মেনে নেওয়া মানে শির্কে অংশ গ্রহণ৷ রুকুর প্রথম আয়াতটিই তার ফায়সালা করে দিয়েছে৷ এমন আয়াত আর নেই৷
৬৪/قُلْ أَفَغَيْرَ اللَّهِ تَأْمُرُونِّي أَعْبُدُ أَيُّهَا الْجَاهِلُونَ
অর্থ;-বলুন, হে মূর্খরা তোমরা কি আমাকে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদত করতে আদেশ করছ!
৬৫/وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
অর্থ;-আর আপনার প্রতি ও আপনার পূর্ববরতীদের প্রতি প্রত্যাদেশ দেওয়াই হয়েছে যে, যদি আল্লাহর শরিক স্থির করেন, তবে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্থদের একজন হবেন৷
# আল্লাহর নিয়মে কোন পরিবর্তন নাই৷ সবার জন্যই তা সমান৷ যদি কোন সাধারণ বান্দা শির্কে লিপ্ত হন বা কোন পয়গম্বর শির্কে কোনও ক্রমে জড়িত হন তবে তাঁর সৎ আমল বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে, এ ব্যাপারে প্রত্যাদেশ আগেই দেওয়া হয়ে গেছে৷
৬৬/بَلِ اللَّهَ فَاعْبُدْ وَكُن مِّنْ الشَّاكِرِينَ
অ্থ;-বরং আল্লাহরই ইবাদত করুন ও কৃজ্ঞদের অন্তরর্ভূক্ত থাকুন৷
# এ হেন হুমকী রসুল সঃ কে দেওয়া হলেও পারতপক্ষে তা মুশরিকদেরই দেওয়া হচ্ছে৷
৬৭/وَمَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ وَالْأَرْضُ جَمِيعًا قَبْضَتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَالسَّماوَاتُ مَطْوِيَّاتٌ بِيَمِينِهِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ
অর্থ;-তারা যথার্থরূপে আল্লাহকে বোঝেনি৷ কেয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী থাকবে তাঁর হাতের মুঠোয় এবং আসমান সমুহ ভাঁজ করা অবস্থায় থাকবে তাঁর ডান হাতে৷ তিনি পবিত্র৷ আর এরা যাকে শরিক করে তিনি তার অনেক উর্দ্ধে৷
# আ্লাহর গুনাগুন ও তাঁর সামর্থ মানুষের কল্পনারও উর্দ্ধে৷ এক থায় বলা যায় তিনি সর্বশক্তিমান৷
৬৮/وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَصَعِقَ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَمَن فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَن شَاء اللَّهُ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخْرَى فَإِذَا هُم قِيَامٌ يَنظُرُونَ
অর্থ;-শিংগায় ফুঁক দেওয়া হবে, ফলে আসমান ও জমীনে যারা আছে সবাই বেহুশ হয়ে যাবে, তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন৷ অতঃপর আবার শিংগায় ফুঁক দেওয়া হবে, তৎক্ষনাত তারা দণ্ডায়মান হয়ে দেখতে থাকবে৷৷
# মূলতঃ শিংগায় ফুঁক এটি দ্বিতীয় বার৷ এ অবস্থায় আল্লাহ যাকে চাইবেন, তারা ছাড়ে জমীন ও আসমানে সকলে বেহুশ হয়ে যাবে৷ প্রথম ফুঁকে জমীন ও আসমান আন্দোলিত হয়ে সংঘর্স ও বির্যয় আগেই হয়ে থাকবে, যাকে ‘সায়া’ বলা হয়েছে৷ তৃতীয় বার শিংগায় ফুঁক দেওয়া হলে সকলে তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়াবে, যাকে ‘কেয়ামাহ’ বলা হয়েছে৷
৬৯/وَأَشْرَقَتِ الْأَرْضُ بِنُورِ رَبِّهَا وَوُضِعَ الْكِتَابُ وَجِيءَ بِالنَّبِيِّينَ وَالشُّهَدَاء وَقُضِيَ بَيْنَهُم بِالْحَقِّ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ
অর্থ;-পৃথিবী তার নূরে উদ্ভাসিত হবে৷ আমল নামা পেশ করা হবে৷ পয়গম্বর ও সাক্ষীগনকে আনা হবে এবং সকলের মধ্যে ন্যায় বিচার করা হবে৷ তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না৷
# সুরা ‘কাহফ’ এর ৪৯ আয়াতে বলা হয়েছে যে, আমলনামা হাজির করা হবে, তা দেখে অপরাধীরা আফসোস করে বলবে যে, এ কেমন আমলনামা যাতে ছোটবড় কোন আমলই বাদ যায়নি৷ এ আয়াতের বিষয়গুলি তারই পরের বিষয়, সকলেই দাঁড়িয়ে যাবে৷ পয়গম্বরদের ও সকল সাক্ষীদের হাজির করা হবে, সাক্ষী তারাই যারা পয়গম্বরদের আল্লাহ প্রদত্ব বাণীর যথাযথ প্রাপ্তি স্বীকার করবেন ও যথাযত ভাবে তা পরবর্তীদের অর্পণ করার দাবী করবেন, আবার পরবর্তীরাও একই ভাবে প্রাপ্তির সাক্ষী ও অর্পণের দাবী করবেন৷ ‘ফাল ইয়ুবাল্লেগুশ শাহেদুল গায়েবা’ ও ‘বা্লেগু আন্নি অ লাও আয়াতান’ বলে রসুল সঃ এ পরম্পরা শুরু করে দিয়ে গেছেন৷ সুরা ‘বাক্বারার’ ১৪৩ আয়াতেও এর ইঙ্গীত রয়েছে৷
৭০/وَوُفِّيَتْ كُلُّ نَفْسٍ مَّا عَمِلَتْ وَهُوَ أَعْلَمُ بِمَا يَفْعَلُونَ
অর্থ;-প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের পূর্ণ বিনিময় দেওয়া হবে৷ তারা যাকিছু করেছে আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবগত৷
বিষয়: বিবিধ
১১৯৭ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শুধু এই আয়াতটি মনে থাকলে আমাদের পক্ষে সম্ভব না একটি খারাপ কাজ করা।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সহমত
আল্লাহ ব্যতিত আর কারো ইবাদত করা কোন ভাবেই বৈধ নয়। মানুষের মধ্যে যদি এই বিশ্বাস দৃঢ় হতো যে তার প্রতিটি কর্মই লিপিবদ্ধ তখন মানুষ কোভাবেই অপরাধে লিপ্ত হতোনা।
|আল্লাহ আমাদের ছোট বড় সমস্ত গুনাহ থেকে হেফাজত করুন ।আমীন ।
অনেক ধন্যবাদ চাচাজান আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন দুনিয়া ও আখিরাতে ।
আমার এক প্রতিবেশী মুরুব্বী ফজর বা ইশার সলাতে এ সুরাটি এত্ত সুন্দর ক্বিরায়াত করেন-
মনে হয় যদি শেষ না হতো!!
দুঃসাহসীর জন্যও চ্যালেঞ্জ এবং চরম অপরাধীর জন্যও সান্ত্বনা ও সুসংবাদ- অসাধারণ সমন্বয়!!
আল্লাহতায়ালা আমাদের মনের চোখ-কাণ তাঁর জন্য খোলা রাখুন - আমীন
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন