না বলা কথা-৩
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ০১ অক্টোবর, ২০১৪, ০১:৫১:৪৬ রাত
যথা সময়ে কলেজে ভর্তী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা যোগাড় করে খুলনা সিটি কলেজে ভর্তী হলাম৷ কিজন্যে মনেনাই পরের দিন থেকেই কলেজ বন্ধ ঘোষণা হল৷ ইতি মধ্যে দেশ স্বাধীন হয়েছে৷ মিত্র বাহিনী তাদের পছন্দের যাবতীয় জিনিষ গণিমতের মাল হিসেবে নিয়ে গেছে ও যাচ্ছে৷ মিলের স্পেয়ার পার্টস, যা অন্ততঃ তিন বছর মিলগুলোকে চালু রাখতে সক্ষম ছিল তাও গণীমতের মালে পরিনত হয়ে ও পারে চলে গেছে৷ গোডাউন ভরা কাঁচা মাল পাটও বসে থাকেনি৷ মিল গুলোকে জাতীয়করণ করা হয়েছে৷ খুলনার দুইটি খাদ্য গুদাম প্রায় শূণ্য৷ দৌলতপুর থানার ওসী, শেখ নাসির সাহেবের চাল ভর্তী ভারতগামী ট্রাক আটকে রাতারাতি বদলী হয়েছেন৷ আমরা যারা নিজের প্রয়োজনে ও লুটপাটের হাত থেকে প্রতিষ্ঠানগুলিকে ভবিষ্যতের জন্য সচল রেখেছিলাম, তাদের মিলে প্রবেশ নিষেধ হয়েছে৷ রাতারাতি রাজাকার উপাধী পেয়ে গেছি৷ অস্ত্র খোঁজার নামে আমাদের খানা তল্লাশী হয়ে গেছে৷৷ ২১ বছরের যুবক, অবশ্যই রাজাকার তাই পিছনে হাত বেঁধে ক্যাম্পে নেওয়ার পথে, প্রতিবেশী সিলেক্টেড মেম্বর চাচা ছাড়িয়ে নিয়েছেন৷ ইত্যকার বিভিন্ন কারণে শংকীত দিন কাটে৷ ইনকাম পুরাপুরি বন্ধ, কলেজের চিন্তা বাদ দিয়েছি৷ বড় ভাই স্থানীয় বাজারে সিগারেট ফেরী করে, আব্বা গ্রামের হাট থেকে তরকারী এনে স্থানীয় বাজারে বিক্রী করে৷
মাত্র ক মাস আগে পাকিস্তানী এক টাকার বদলে ভারতীয় দুই টাকা পাওয়া গেলেও কদিন তারা সমান সমান হল৷ যাতায়াত, কেনা কাটায় কোথাও কোন বাধা নেই৷ এরপর এল দিল্লীর বই ছাপা প্রেসে ছাপানো জলছাপ বিহীন বাংলা দেশের মুদ্রা৷ বাজারে তা সয়লাব হয়েগেল৷ তার পর তা মর্যাদা, পুরানো ঐতিহ্য হারাতে হারাতে হাটু সমান হয়ে গেল৷ আমাদের একশো টাকায় ভারতীয় পঁচিশ রুপী দিতেও তাদের কষ্ট হতে লাগলো৷ প্রথমে স্থানীয় চেয়ার ম্যানের সীল সই করা সাদা কাগজ, পরে পাশপোর্ট অফিসের নির্দিষ্ট ফরমে ফটো ও সীল ভীসা পাশপোর্টের দায়ীত্ব নিল৷ আর সোনার দেশ বাংলাদেশ নামের হুইল চেয়ারে উঠে বসলো৷
বড় বোনের প্রতিবেশী, খুলনা পানি সম্পদ বিভাগের বড়কর্তা৷ বোনের কথামত একদিন তার অফিসে কেরানীর চাকরীর জন্য হাজির হলাম৷ তিনি ৭২এ মেট্রিক পাশ শুনেই বল্লেন চাকরী হবেনা৷ একটা বড় ধাক্কা খেলাম৷ মনে পড়ল, ক্রিসেন্ট স্কুলের হেডস্যার পিপুলসের ভর্তীচ্ছুক আমাদের ব্যচের বিষয়ে খারাপ মন্তব্য করলে, আমার শ্রদ্ধেয় কাজী স্যার যার ব্যাপারে ফোনে বলেছিলেন যে ঐ ব্যাচে তার এমন ছাত্র আছে যে আপনার স্কুলে শিক্ষকতা করতে পারে, আজ সে সামান্য কেরানীও হতে পারল না৷ মনেমনে সিদ্ধান্ত নিলাম চাকরীর জন্য নিজে কারো কাছে আর যাবনা৷ যাইনি৷ জীবনে বহু চাকরী করেছি, হয় কারও সুপারিশে নয় চাকরী দাতার পছন্দে৷ সময় পেলে জানাতে চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ৷৷
খালিশ পুর ন্যাশনাল ফার্মেসীর মালিক, মামার বন্ধু, আবদুল মতলেব খাঁন, বিরাট ঔষধের দোকান৷ নিজেই প্রাকটিস করেন, হাতযশ আছে৷ মামার সাথে আলাপ করে তার ফার্মেসীতে বেচা কেনা আর কম্পাউণ্ডারী করার প্রস্তাব দিলেন৷ ৫০ টাকা বেতন আর রুগীর বাড়ি ইঞ্জেকশণ দিতে গেলে ৫০ পয়সা আমার৷ অভিজ্ঞতার ঝুলিতে কাঠের কাজ তারপর জুটমিল আর এখন যোগ হল ফার্মেসী৷ কয়েক মাস পরেই শ্রদ্ধেয় কাজী স্যার খবর দিলেন, পিপুলসে নাইট স্কুল চালু করেছি, তোমাকে ক্লাশ নিতে হবে৷ ডে টাইমে হাই স্কুল আগেই হয়েছিল, এখন নাইটেও হল৷৷ আমি আর আমার কবর কবিতা আবৃত্তির সঙ্গী নাতী আবু সাঈদ, অন্যান্ন স্যারের সাথে মাষ্টারী শুরু করলাম৷ কিনতু দুখের বিষয় অল্পদিনের মধ্যেই মিলের সাথে স্কুলও বন্ধ হয়ে গেল৷ আশা করি কারণ আন্দাজ করতে কষ্ট হচ্ছে না৷
স্বাধীনতা সংগ্রামের আগে যেখানে সেখানে একটা পোষ্টার দেখতাম, লেখা ছিল ‘সোনার বাংলা শ্মশান কেন?’ ভারত ছেড়ে এসে এখানে সবকিছুই সস্তা দেখতাম, ভাবতাম, হয়ত এখানে আগে এর চাইতেও সবকিছু সহজলোভ্য ছিল, এখন আর নেই৷ এখন ভাবতে শুরু করলাম, না হয়ত পোষ্টারটা ভুল ছাপা হয়েছে৷ ’হবে’র জায়গায় ‘কেন’ হয়ে গেছে৷ একে একে প্রায় সব মিলই বন্ধ হয়ে চলেছে৷ বাজারে নিত্য প্রয়োজীয় দ্রব্যমূল্যের লাফদিয়ে উপরে ওঠা, অমিল হওয়া শুরু হয়েছে৷ শহরে রেশণে নিম্নমানের চাল গম চিনি তেল সরবরাহ করা হচ্ছে, কোথাওবা শাড়ী লুঙ্গী ছিট কাপড় ন্যায্য মূল্যে দেওয়া হচ্ছে, আর তা সাদা বাজার অপেক্ষা কালো বাজারে বেশী চলে যাচ্ছে৷ হাহাকার বাড়ছে৷ মানুষ ভাতের আশায় শহররমূখী হয়েছে, ভাতের বদলে ফ্যান চাওয়া শুরু হয়েছে৷ জাগায় জাগায় লঙ্গরখানা খোলা হয়েছে৷ আমার ফার্মেসীর সামনে ফুটপাতে পীচের ড্রাম চ্যাপটা করে তাওয়া বানিয়ে সেচ্ছা শ্রমে রুটি বানিয়ে দৈনীক সন্ধায় বিতরণ করা হচ্ছে৷ আমিও সে সেচ্ছাশ্রমের শ্রমিক৷৷ কিন্তু যা দেওয়া হয় তা প্রয়োজনের তুলনায় যৎ সামান্য৷ অভুক্তের সংখ্যা ক্রমে বেড়েই চলেছে৷ স্কুল গুলোতে বিদেশী রিলিফের ছাতু দেওয়া হয়৷ আমার দুভাইবোনও কিছু পায় আর বড় ভাই কিছু রেশনে পায়, তা দিয়েই দিন চলে৷ এক সময় লবনের কেজি ৮০ টাকা হয়ে যায়. সে লবনে লবনাক্ততা থাকেনা৷ কারণ চিনি সস্তা তা লবনের সাথে সখ্যতা গড়ে৷ বাজারে যাকিছু অমিল, কেন প্রশ্ন করলে সহজ উত্তর আসে, পাকিস্তানীরা নিয়ে গেছে৷ বঙ্গ বন্ধুর ঘোষণা, ‘পাঁচ বছর কিছুই দিতে পারুমনা’, একদার জনপ্রীয় এ নেতার বাণী কাটা ঘায়ে লবনের ছিটাদেয়, সান্ত্বনা দেয়না৷ উপরন্তু তার লালঘোড়ার খুরের আঘাতে জনজীবন বিদ্ধস্ত হয়৷
মিল গুলো ভিতর বাহির খেলার মত চালু আর বন্ধ হয়ে সময় এগিয়ে চলে৷ বৈদেশীক সাহায্যের কমতি ছিলনা৷ কিন্তু তা উপযুক্ত স্থানে পৌঁছতে পারেনি৷ তবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিক্সনের দেওয়া ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ উপাধিটি পৌঁছেছিল৷ বঙ্গবন্ধুর বাণী, ‘সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর জন্য আটকোটি কম্বল এল, আমারটা পেলাম না৷’ হতাশাই বর্ধিত করেছিল৷
দুই বছরে ঔষধ ব্যবসার বেশ কিছু অভিজ্ঞতা, অসহায় মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ কাজে লাগানো, শিশু খাদ্য নিয়ে কারচুপি ও কিছু অসামাজিক কাজ আমাকে অস্থির করে তুলেছিল, তাই তা ছেড়ে দিলাম৷ ডাক্তার মামা বেশ কবার মায়ের কাছে গিয়েও আমাকে ফিরে পাইনি৷
১৯৭৫ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়া দেশে ‘আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ণ’ গঠন করেন৷ তাদের আটটি সেক্টরের মধ্যে খালিশপুরে একটি ছিল৷ তাদের খাদ্য সামগ্রী সরবরাহের কন্ট্রাকটর ছিলেন ঢাকার করিম সাহেব৷ খুলনায় তার ম্যনেজার ছিলেন রাজ্জাক সাহেব৷ প্রচণ্ড ধূমপায়ী৷ দুই আঙ্গুলের মাঝে ঘা হয়ে লেখায় অচল৷ অথচ মাসের শেষে বিল সাবমিট করে ঢাকায় চেক পাঠাতে হবে৷ কেরানী দরকার৷ আমার একদার প্রতিবেশী কালাম ভাই ওদের সাথে সাব কন্ট্রাকে কাজ করেন৷ উনি কাজটুকু করে দেবার জন্য আমাকে ডেকে নিলেন৷ বিল বানিয়ে চেক ঢাকায় পাঠানো হল, কিন্তু উনি আমাকে আর ফেরত পাঠালেন না৷ শুরু হল আর এক অভিজ্ঞতা৷ দুই বৎসর খালিশপুর ও এক বৎসর ঈশ্বরদী এই ব্যাটেলিয়নের সাথে ছিলাম৷ তা্র এক বৎসর পর পুনরায় খালিশপুরে এক বৎসর এই কাজে ছিলাম৷ পরের বৎসর মহাল ছড়ি যাবনা বলে কাজ ছেড়ে দিলাম৷
তিন বৎসর আগে বড় ভাইয়ের বিয়ে দিয়েছিলাম, ছোটভাইও তা সমাধা করেছে৷ ৮০’র ফেব্রুয়ারী আমাকেও বিয়ে করতে হল৷ ঐ সময় আইরীশ এন,জি,ও কনসার্নের প্রাইমারী স্কুলে কিছুদিন বদলী শিক্ষকতা ও পরে স্টার জুটমিলের ডিসপাচ পিওন হিসেবে বদলী কাজ করি৷ ঐ সময়ের একটা ঘটনা বলি; একদিন একটা চিঠি নিয়ে লেবার অফিস যা হেড অফিস থেকে একটু দুরেই ছিল, এক টেবিলের সামনে যেতেই টেবিলের অধিকারী উঠে দাঁড়ালেন৷ তাকিয়ে দেখি আমারই নাইন টেনের সহপাঠি৷ আমি তাকে বললাম বস, তুমি অফিসার আর আমি পিওন ভুলে যেওনা৷
মামার ছাত্র আর আমার সহপাঠী, বিহারী, নুরুল হুদা কনসার্নের হেল্থ সেকশনএ চাকরী করে, মামা তাকে, আমাকে কনসার্নে একটা চাকরী দেওয়ার চেষ্টা করতে বললেন৷ কনসার্ন, একটা ছোটখাটো আইরীশ এন, জি. ও৷ কয়েকটি সেকশনে ভাগ হওয়া৷ হেল্থ, শিক্ষা আর ইনকাম জেনারেটিং বা ওমেন ট্রেনিং সেন্টার (WTC)৷ WTCএর ম্যানেজার মবিন সাহেব, বয়সে আমার কয়েকবছরের বড়, অ বাঙ্গালী, কর্মঠ, অত্যন্ত বিশ্বস্থ সজ্জন ব্যক্তি৷ তার উপরের কর্তারা আইরীশ৷ তার পদমর্যাদার অন্য সেকশন গুলোতে আছেন আইরীশ মহীলারা৷ মবিন সাহেবের একজন লোক লাগবে৷ দরখাস্ত আহবান করা হয়েছে৷ ইন্টারভিউ হবে৷ ইতি মধ্যে আমার সুপারিশ ওনার কাছে পৌছে গেছে৷ ইন্টারভিউএ গেলাম৷ ১৫/১৬ জন হাজির হয়েছে৷ লিখিত নয় মৌখিক ইন্টারভিউ৷ যথা সময়ে ডাক পড়ল৷ মবিন সাহেবকে দেখলাম, সাথে আছেন আর একজন বিদেশিনী৷ বাংলা ইংরাজী উর্দূ মিলিয়ে উত্তর দিলাম৷ রেজাল্ট আগামী কাল৷ আমার সুপারিশ আর অন্যের বিদ্যা৷ কে জিতবে জানিনা৷
পরেরদিন গিয়ে দেখি দুইজন সিলেক্টেড হয়েছে৷ দুজনকেই অফিসে ডাকা হল৷ ঢাকা হেড অফিস থেকে আগত বিদেশিনী বললেন, আমাদের একজন দরকার, কিন্তু দুজনকেই পছন্দ হয়েছে৷ দুজনকে আমরা এক সপ্তাহ লক্ষ্য করব, যে কাজে ভাল হবে তাকেই বহাল করা হবে৷৷ পরে জেনেছিলাম দ্বিতীয় জন, সানোয়ার পারভেজও আমার মত সুপারিশের লোক, আর তাই এ ব্যবস্থা৷
পুরো সেন্টার ঘুরিয়ে দেখানো হল৷ ২৩৫ জন দুঃস্থ মহীলা, যার অনেকেই ভিক্ষা করে বেড়াত, তাদের এখানে জমা করে তাদের উপযুক্ত বিভিন্ন হাতের কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে, ১৫/২০ জনের এক একটি গ্রুপ করে, সুপার ভাইজারের হাতে মূলধনদিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে৷ সুপারভাইজার তাদের কাঁচা মাল তাদের সাথে নিয়ে এনে দেবেন ও তৈরী মাল বাজারজাত করবেন্৷ মাসের শেষে লাভ্যাংশ তাদের ভাগ করে দেওয়া হবে৷ এ ছাড়া প্রতি মাসে তাদের ৩১ কেজি গম দেওয়াহয়ে থাকে৷ দেখা গেল কোন গ্রুপ নারকেলের ছোবড়া দিয়ে কাতা দড়ি, কোন গ্রুপ পা পোষ, কোন গ্রুপ বাশ বেতের মোড়া, কোন গ্রুপ আগর বাতি, কোন গ্রুপ কাগজের ঠোঙ্গা বানাচ্ছে৷ কাজের সময় সকাল আটটা হতে দুইটা৷ কাজের সময় যাতে তাদের বাচ্চারা জ্বালাতন না করে তার জন্য চারজন কেয়ার টেকার শিক্ষক আছেন৷ বয়স অনুযায়ী বাচ্চাদের চারটি ক্লাশে খেলাধূলা ও পড়াশোনা করানো হয়৷ প্রতিদিন দুবার এই বাচ্চাদের, গমের ক্ষুদ বিভিন্ন শাকসব্জি তেল লবন দিয়ে জাউ রান্না করে স্বাস্থ্য সম্মত করে খেতে দেওয়া হয়ে থাকে৷
দিনটি ছিল বৃহষ্পতি বার৷ পরের দিন বন্ধ, শনিবার খোলা৷ আমাদের দুজনকে দুটি গ্রুপ, হিসাবের খাতা আর কিছু টাকা দিয়ে বলাহল, শনিবারে এদের হাতে কাজ চাই৷ যা অন্য গ্রুপে করছে তা দেওয়া যাবেনা৷ ইতি মধ্যে অনেক চাকরী করে এসেছি, কিন্তু এ কেমন চাকরী৷ যাই হোক নিজের চার পাশের কিছু দুঃস্থ মানুষকে স্বাবলম্বী করার প্রচেষ্টা৷ কিছুটা সমাজ সেবাতো বটে৷ চ্যালেঞ্জ গ্রহন করলাম৷ আমার গ্রুপের মহীলাদের সাথে পরিচিত হয়ে, তাদের কোন কাজের ট্রেনিং আছে জানতে চাইলাম৷ তারা জানালো তারা মিষ্টির বাক্স বানতে পারে, কিন্তু তাদের হাতে কোন অর্ডার নেই৷ উপাদান কোথায় পাওয়া তা জেনে নিলাম৷ শুক্রবার সারাদিন সাইকেল নিয়ে শহরের মিষ্টির দোকান গুলিথেকে বেশ কিছু অর্ডার যোগাড় করলাম৷ মনেমনে খুশী হয়ে আল্লাহর শুকরিয়া জানালাম৷ অপেক্ষায় থাকলাম পারভেজ সাহেব কি করেন, দেখার জন্য৷৷
শনিবার সকালে গিয়ে দেখি পারভেজ সাহেব ঠেলাগাড়িতে করে বেশ কয়েকটা ইয়াবড় বাঁশ নিয়ে হাজির৷ সে কি করাতে চায় বোঝা গেলনা৷ আমি প্রয়োজনীয় জিনিষ পত্র এনে দিলাম৷ আমার মহীলারা কাজ শুরু করলো৷ আর পারভেজ সাহেব বাঁশ গুলি করাত দিয়ে ছোট ছোট টুকরা বানাতে থাকলেন৷ তা দিয়ে কি হবে জানতে চাইলে, জানালো, আইসক্রিমের কাঠি বানাবেন৷ সবে মাত্র খুলনা শহরে, কোয়ালিটি ও রণী আইসক্রিমের ফ্যক্টরি চালু হয়েছে, কাঠের কাঠি তখনও তৈরী হয়নি, তাই বাঁশের কাঠির চাহিদা অনেক৷ অতএব, ‘কেহ কারে নাহি ছাড়ে, সমানে সমান’৷ এ ভাবে সপ্তাহ শেষ৷ দুজনকে নিয়ে মিটিং বসল৷ দুরু দুরু বুকে বসে আছি৷ ম্যাডাম ও মবিন সাহেব এলেন, বললেন, ইতি মধ্যে আমাদের একজন সুপারভাইজার স্কুলে বদলী হয়েছেন, তাই আমরা দুজনকেই রাখলাম৷
আমারই গ্রামের ছেলে, আসলাম, বয়সে ও স্কুলে ছিল জুনিয়র, অবাঙ্গালী, তাই তাদের বাড়িটা স্থানীয় এক জনের দখলে, ওরা খালিশপুরে ভাড়ায় থাকে৷ তিনমাস আগে এখানে চাকরীতে লেগেছে, তাই সে সিনিয়র৷ বেনেডিক্ট বিপুল, সদ্য সুইজার ল্যাণ্ড ফেরত, গলায় সাইড ব্যাগ ঝোলানো সমাজ সেবক, হুণ্ডায় যাতায়াত, সেও এক সপ্তার সিনিয়র৷ মোড়া সেকশনের সুপার ভাইজার৷ পাত্তা দিতে চায়না৷ কিন্ত অল্প দিনেই আমি, পারভেজ ও বিপুল বাবু অভিন্ন হৃদয় বন্ধু হয়ে গেলাম,যা আজও অভিন্নই আছে৷
চলবে----
বিষয়: বিবিধ
১৭৫৩ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সংগ্রামী জীবনের মজাই আলাদা,
যারা সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মায় আর
রূপার খাটে জীবন কাটায়
তারা এ মজা বুঝবেনা!!
জাযাকাল্লাহ.. দোয়া করি
জাযাকাল্লাহু খাইর
এখনও রাজনীতিবিদেরা ৫ বছরের জন্য আসে শুধুই চুষে নেয়ার জন্য, কিছুই দেয়ার জন্য না!
অনেক বাস্তব ঘটনা জানানোয় ধন্যবাদ আপনাকে আবারও।
সেক্টর কমান্ডার আবদুল জলীল ও সেভাবে গ্রেফতার হয়েছিলেন এবং জীবন সায়াহ্নে রাজাকার বনেছিলেন।
আপনার না বলা কথা, আসলেই বলতে হবে। জানাতে হবে সবাইকে। সুন্দর স্মৃতিচারণ এবং উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী ঘটনা। চলতে থাকুক....... অনেক ধন্যবাদ
খুলনার জুটমিল গুলি যেভাবে ধ্বংস হয়েছিল সেই ক্ষয়ক্ষতি থেকে এখনও আমরা কাটিয়ে উঠিনি। প্রত্যেকটি দেশ স্বাধিন হওয়ার পর তার আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করেছে। আমরা শুধু ব্যাতিক্রম। এমনকি রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্বেয় বর্তমান পাকিস্তান অর্থনৈতিকভাবে ও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে ভারতের চেয়েও উন্নত।কনসার্ন এর মত ক্ষুদ্র উৎপাদন মুলক কাজ দিয়ে সেই বিশাল জুটমিলের ক্ষতিপুরন হয়নি।
লিখে যান আর বই বের করুন... সত্যকে সবাই জানা উচিত।
মন্তব্য করতে লগইন করুন