"না বলা কথা"
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৭:০৫:৪৯ সকাল
“ঘর পোড়া গরু সীঁদূরে মেঘ দেখলে ভয় পায়”৷ কথাটার গভীরতা শৈযবেই তেমন করে না বুঝলেও বড় হয়ে বুঝে ছিলাম৷ এ রায়ট যে আবারও ফিরে আসবেনা তার নিশ্চয়তা ছিলনা৷
১৯৬২ সালে চীনের সাথে ভারতের যুদ্ধ বাধে৷ ভারত প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়৷ অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়ে৷ খাদ্য সহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অভাব দেখা দেয়৷ সরকার শহর এলাকায় রেশন কার্ডের মাধ্যমে বেশ কিছু জিনিষ সরবরাহ করে৷ শহর এলাকায় খোলা বাজারে চাল, আটা প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়৷ রেশনে যা দেওয়া হবে তাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে৷ সেই সাথে গ্রামে ঘোষণা করা হল, লাঙ্গল যার জমি তার৷ অর্থাৎ জমি তাকেই দেওয়া হবে যার লাঙ্গল গরু আছে, নিজে চাষ করে৷ আমাদের গ্রাম ও আশপাশের গ্রাম গুলি কৃষী নির্ভর ছিল, তবে সবাই লোকজন দিয়ে আর বেশীর ভাগ জমী বর্গা দিয়ে চালাত৷ জমীর মালিকেরা মালিকানা হারাবার ভয়ে যার যার জমি ফেরত নিয়ে নিল৷ আর উন্নত চাষ পদ্ধতি, সা্র বীজ, শ্যালো মেশীন দিয়ে, দ্বিগুন ত্রীগুন ফষল ফলাবার সব ব্যবস্থা সরকারী ভাবে করা হতে লাগলো৷ আমার আব্বা ছিলেন বর্গা চাষী৷ এখন বেকার হয়ে গেলেন৷ ওদিকে বড়ভাই মুসলমান হওয়ার অপরাধে নাট-বল্টুর কারখানার চাকরীটা হারালো৷ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় মাদ্রাসা পোড়ার পর আমিও ফিরে এসেছি৷
এমতাবস্থায় আব্বার সিদ্ধান্ত হল, মুসলমানদের জন্য যখন আলাদা দেশ হয়েছে তখন সেখানেই চলে যাব৷ অবশেষে, পনের বছরের, শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতি বিজড়ীত ঘর বাড়ি, গ্রাম,বন্ধু-বান্ধব, সব কিছু পিছনে ফলে এক অজানা অচেনা ভূখণ্ডের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম ও ফাল্গুন মাসের হাল্কা বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আবছা জ্যোসনা রাতে সীমানা বেরিয়ে কুষ্টিয়ার মেহের পুরের এক গ্রামে উঠলাম৷ সেখানে কয়েকদিন থাকার পর এক ভোর বেলায় গরুর গাড়িতে মাল ও ছোটদের বসিয়ে নিজেরা দীর্ঘ পথ হেঁটে উথলী শ্টেশনে এসে ট্রেনে করে খুলনা জেলার দৌলতপুর শ্টেশনে রাত বারোটার সময় নামলাম৷
আগে থেকেই আমাদের জন্য একটা বেড়ার দেওয়াল গোলপাতার ছাউনির ঘর ঠিক করা ছিল৷ আমার মায়ের খালাতো ভাইদের একটা গ্রুপকে আমার আব্বা নদিয়া জেলার বর্ডারের কাছের একটা গ্রামে দিয়েগিয়েছিলেন, যারা ছিল আমার নতুন দাদার আত্মীয়৷ একই পথে পার হয়ে তারা কিছুদিন আগে এ বাড়িতে এসে উঠেছিলেন৷
দালান ঘর, টিনের ঘর, টালীর ঘর, তালপাতার ঘর, খড়ের ঘর, এমনকি কলা পাতার ঘরও দেখেছি, কিন্তু জীবনে গোলপাতার ঘর দেখিনি৷ তা কেমন রাতে বোঝা গেলনা৷ তবে আন্দাজ করা গেল যে তা আদৌ গোল নয়৷ দিনে ভাল করে দেখার আগ্রহ নিয়ে, ছোট ঐ ঘরে গাদগাদী করে, ক্লান্ত শরীর নিয়ে রাত পার করলাম৷ সকালে উঠে ভাড়া ঘরে বাস করার সবক প্রতিবেশী ফাতেমা আপার কাছে শিখলাম৷ শুরু হল জীবনের নতুন অধ্যায়৷
বাড়ি ওয়ালা জনাব রফিক মুন্সী সাহেব, বাড়ি ঢাকায়৷ দৌলত পুরের এক জুট প্রেসের এ্যাকাউন্টেন্ট, নামাজী মুসুল্লী বেশ সজ্জন মানুষ৷ আমার আব্বাকে তার প্রতিষ্ঠানে মাঝে সাজে কাজের জন্য নিয়ে যেতেন, তার ভাড়াটে বাড়ির যে কোন মেরামতের কাজও তাকে দিয়ে করাতেন৷ দৌলতপুর তখন, সোনালী আঁশ, পাটের বিখ্যাত বানিজ্য কেন্দ্র৷ লোকে লোকারণ্য৷ দিনরাত গম গম করত, যা আজ মৃত্যু পুরী৷
আমার বড় ভাই খালিশপুর, পিপুসলস জুটমিলে বদলী কাজ পেলেন৷ ফিনিশিং বিভাগে স্থায়ী শ্রমিক ছুটি নিলে তার জায়গায়৷ সপ্তায় দু দিন, তিন দিন বা চারদিন৷ তাতেই আমাদের সংসার চলে যেত৷ আর আমি বেরোলাম আমার পড়াশোনা চালাবার সন্ধানে৷ নওয়া পাড়া ম্যদ্রাসায় বিনা খরচে পড়ার ব্যবস্থা হলনা, গেলাম যশোর রেল শ্টেশন মাদ্রাসায়৷ সেখানেও হলনা৷ তবে সেখানে কলকাতার দুজন বন্ধুর দেখা পেলাম৷ একজন হাফেজ সুলতান, হেফজ শেষ করে আমার সাথে পড়ত আর প্রতি রমজানে আমাদের গ্রামের মসজিদে তারাবী পড়াত৷ অন্য জন, আব্দুস সামাদ, কলকতায় হেফজ করতো, এখানে তা শেষ করতে এসেছে৷
একদিন মুন্সী সাহেবের গোডাউনের টিনের চাল সারতে গিয়ে আব্বার হাত কেটে বেশ রক্তপাত হয়, তাতে আব্বা বেহুশ হয়ে যায়৷ যাকে কোনদিন বিমর্ষ হতে, উদ্দম হারাতে বা কোনকাজে হার মানতে দেখিনি, আজ এ অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নিলাম, পড়ার চিন্তা বাদ৷ কাজ করতে হবে, আব্বাকে অবসর দিতে হবে৷ এমনিতে তার বয়সও চল্লিশ পেরিয়ে গেছে৷
আমিও মিলে বদলী শ্রমিক হিসেবে নাম লেখালাম৷ প্রতিদিন রেলীগেট থেকে দুই মাইল পথ হেঁটে যাতায়াত করি কিন্তু কাজ পাইনা৷ এক ছুতার/কাঠ মিস্ত্রীর সঙ্গে কাজে লাগলাম, কাঠের কাজ সম্পর্কে বেশ ধারণা হল৷ এর পর ক্রীসেন্ট জুটমিলে স্পিনিং বা পাটের সূতা তৈরীর মেশিনের হেলপার হিসেবে বদলী কাজ পেলাম৷ আল্লাহর ইচ্ছায় আমার রেগুলার কাজ হত আর শিঘ্রই মেশিনে কাজ করার জন্য নিজেকে তৈরী করলাম৷ ইতি মধ্যে আমরা ভাড়া ঘর ছেড়ে মিলের কাছা কাছি ভৈরব নদের অপর পারে সেনহাটী গ্রামে চলে এসেছি৷ প্রথমে অন্যের আশ্রয়ে ও পরে কিছু টাকা নগদ ও বাকী টাকা পরে দেবার ওয়াদায় জমি কিনে নিজেদের পরিশ্রমে বাড়ী করে আজও স্থায়ী ঠিকানা করে রেখেছি৷
যেহেতু অনেকেই আমার শৈশব লেখনীতে কিছু ইতিহাসের সন্ধান পেয়েছেন, তাই এই সেনহাটী গ্রামটির ঐতিহ্য সম্পর্ককে কিছু জানাতে চাই, যার কিছুটা নিজের দেখা, বাকীটা ভূক্তভূগীদের কাছে পাওয়া৷৷
খুলনা শহর থেকে ৪/৫ মাইল ও উপশহর খালিশপুর থেকে উত্তরে ভৈরব নদের ব্যবধানে, সেনহাটি অবস্থিত৷ নদীর ওপার পৌরসভা (বর্তমানে সিটি কর্পোরেশণ)হলেও সেনহাটী আজও গ্রাম৷ কারণ ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে এটা মূলতঃ একটা দ্বীপ৷ শহরের সাথে ইঞ্জীনচালিত কোন গাড়ির যযোগাযোগ ছিলনা৷ (পেসিডেন্ট এরশাদ সাহেবের কল্যানে এই দ্বীপে থানা ও উপজেলা হওয়ায় অনিয়মিত ফেরীর সাহায্যে দু একটা গাড়ি আসা যাওয়া করে, আগে একটাই ইট বিছানো এবড়ো থেবড়ো রাস্তা থাকলেও এখন প্রায় সব রাস্তাই পাকা হয়েছে)৷ পালকী, সাইকেল আর গরুরগাড়ি ছাড়া কোন বাহন ছিলনা৷ কিন্ত সারা গ্রাম ময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল বড় বড় ইমারত, যার আজও কিছু অবশিষ্ট আছে, দেশ ভাগের আগে এ গুলোতে বাস করতেন, সম্ভ্রান্ত, শিক্ষিত, অবস্থাসম্পন্ন হিন্দুরা৷ তাদের পদ ও পদবী অনুযায়ী প্রায় ইমারত গুলির নাম করণ আজও আছে৷ যেমন, বখশী বাড়ি, জজ বাড়ি, মুন্সী বাড়ি৷ যাদের অনেকেই কলকাতায় থাকতেন৷ পূঁজা পার্বন বা ছুটিতে বাড়ী আসতেন৷ ৪৭ এর আগে এ গ্রামের চৌহদ্দীর ভিতর কোন মুসলমানের বাস ছিলনা তবে অনেকেই বাবুদের বাড়ি ক্ষেতে খামারে শ্রম দিতেন৷ পশ্চিম বঙ্গের একদার মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লসেন মহাশয়েরর বাড়ির ধ্বংসাবশেষ আমার পাড়ায় আজও আছে৷ কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের বাড়িও এ গ্রামে ছিল৷ তার নামে একটি ক্লাব আজও আছে৷ এ গ্রামে মুসলমানের বাস না থাকলেও এর পিছনের গ্রামগুলি মুসলীম প্রধান৷ কোট কাছারী, কলেজ, হাসপাতাল সবই ছিল জিলা শহর খুলনায়, মুসলমানদের সেনহাটীর একমাত্র পাকা রাস্তাটিই ব্যবহার করে যাতায়াত করতে হত৷ ঝড় বৃষ্টি খরা যাই হোক, সেনহাটী অতিক্রম করতে মিয়াদের ছাতা বন্ধ করে, জুতা হাতে নিয়ে চলতে হত৷ দেশ ভাগের পর অবস্থাপন্ন প্রায় সকলেই ওপারে পাড়ি জমায় আর তাদের শূণ্য ভিটায় ভারত থেকে আসা রিফিউজিও পাশের গ্রামের স্থানীয় মুসলমানরা এসে জবরদখল করে৷ যদিও কিছু সাবেক হিন্দু পরিবার আজও আছে তবুও সেনহাটী এখন মুসলীম প্রধান৷
পাড়ারই হীতাকাঙ্খী এক চাচার সুপারিশে মেশিনে কাজও পেয়েছি৷ ইতি মধ্যেই হয়েগেছে পাক ভারত যুদ্ধ৷ তাতে পূর্ব পাকিস্তানের কোন ক্ষতি হয়নি বরং যুদ্ধে দক্ষতার জন্য পূর্ব পাকিস্তান বাসীরা অনেক খ্যাতি ও খেতাব অর্জন করেছিল৷
দুই বৎসর কাজ করায় অভিজ্ঞতার সাথে সামান্য পদন্নতিও পেয়েছিলাম৷ অনুভব করলাম আর একটু পড়াশোনার প্রয়োজন আছে৷ বহু কষ্টে ও কারিগরি করে লাইনকে সোজা রেখে নিজেই লেবার অফিসারের বরাবরে, আমাকে এমন একটা কাজ দেওয়া হোক যাতে আমি কাজের পাশাপাশি পড়াশোনা চালাতে পারি মর্মে একটা দরখাস্ত লিখে তার অফিসে দেখা করলাম৷ আমার বয়স অল্প আর জুটমিলে কাজকরে তা সম্ভব নয় বলে তিনি একটা ছাড়ার পরামর্শ দিলেন৷ ইতি মধ্যে বড় ভাই স্থায়ী শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে, প্রতি সপ্তায় পনের টাকা উন আশি পয়সা বেতন পায়, তাতে ছোট দুই ভাইবোনের খাতা পেন্সীল ও আমাদের সংসারের যাবতীয় প্রয়োজন মেটে৷
এ অঞ্চলে ভৈরব নদের উভয় পাড় মিলিয়ে পাঁচটি জুটমিল, একটি বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র, এশিয়ার একমাত্র নিউজ প্রিন্ট মিল ও একটি হার্ডবোর্ড মিল ছিল৷ জুটমিল গুলো দেশ বিভগের পরে প্রীন্স করিম আগাখান গোষ্ঠী নির্মান করে৷ যা ভারত থেকে আসা কয়েক হাজার রিফিউজী পরিবারের অন্নের যোগান দেয়৷৷ যার বেশীর ভাগই ছিল বিহার থেকে পশ্চিম বঙ্গ হয়ে আসা মুসলীম৷ যেহেতু এরা পশ্চিম বঙ্গে ভাড়া ঘরে বা জুটমিলের কলোনী ছেড়ে দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে এসেছিল তাই নব প্রতিষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তানের মিল ফ্যাক্টরী গুলোর উচ্চপদ গুলো এদের হাতে চলে যায়৷
স্থানীয়রা চাষবাষ করত, তাতেই তাদের চাহিদা মিটত৷ তাই তারা জুটমিলের চাকরীকে ঘৃণা করত, কিন্তু চাহিদা বাড়ার সাথে একে একে তারাও এ অঞ্চলে এসে জুটমিল সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরীতে যোগদিতে লাগল৷ সুযোগ বুঝে মিল মালিকেরা তাদের মিলের কলেবর বাড়িয়ে চলল৷ দক্ষতার লড়াইয়ে বাঙ্গালীরা বিহারীদের পিছনে পড়ে গেল৷ ২৩শে মার্চ ১৯৭১ এর রাতে খালিশপুরের বিহারী নিধনে অনেক কারণের মধ্যে এ আক্রোশটিও ছিল৷
প্রতিটা জুট মিলের সাথে একটা করে স্কুল ছিল৷ যা মালিক পক্ষের খরচে চলত৷ শ্রমিক, কর্মচারীদের ছেলে মেয়েরা বিনা বেতনে পড়াশোনা করত৷ পিপুলসের স্কুলটি ছিল অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত৷ আমাদের আসার আগে আমার মায়ের খালাত ভাইরা এসেছিলেন, যাদের একজন বি এ পাশ করেও ভারতে একটা চাকরী জোটাতে না পেরে এ দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন ও পিপুলস স্কুলে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন৷ উনার সাথে স্কুলে ভর্তী হওয়ার বিষয়ে আলাপ করতে উনি প্রধান শিক্ষকের সাথে মামার অভিভাবকত্বে ভর্তী হতে পারব কিনা আলাপ করে জিজ্ঞেস করলেন, কোন ক্লাশে ভর্তী হব৷ বললাম সেভেনে৷ বললেন, ক্লাশ সক্সের ইংরাজী, বাংলা আর অংক বই কিনে পরীক্ষারর জন্য তৈরী হতে হবে৷ রমজানের ছুটি চলছে৷ ঈদের পর ভর্তী পরীক্ষা, তারপর নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু৷ পাশ করলে ভর্তী হতে পারব৷
চাকরী বজায় রেখেই পরীক্ষার জন্য তৈরী হলাম৷ অংকের জন্য মাঝে মাঝে মামার বাসায়ও যেতাম৷ রমজানের পর ভয়ে ভয়ে ভর্তী পরীক্ষা দিলাম৷৷ যথা সময়ে ফলাফলের তালিকার এক নম্বরে নামটা দেখে কাজে ইস্তফা দিয়ে অর্ধেক দামে পুরাতন বই কিনে স্কুলে যাওয়া শুরু হল৷
স্কুলটিতে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে দুটি ভাষা, উর্দূ ও বাংলা চলত৷ কিছু সাবজেক্ট মিলিত ভাবে আর কিছু আলাদা ভাবে হত৷ তাতে কোন সমস্যা ছিলনা৷ ইংরাজী পড়াতেন প্রধান শিক্ষক জনাব আাউদ্দীন স্যার৷ উনি পশ্চিম পাকিস্তানী, উর্দূ ভাষী ছিলেন৷ মোটেও বাংলা জানতেননা, তাই আমাকে দিয়ে দোভাষীর কাজ করাতেন৷ উনি অবশ্য বেশী দিন ছিলেন না৷ পরে যশোরের জনাব কাজী এমদাদুল হক সাহেব এলেন৷৷
কোন স্যার বা সাবজেক্টে আমার অসুবিধা ছিলনা, হয়ত এ জন্য যে, জ্ঞানের মাধ্যম শিক্ষা যা ভাষায় সীমাবদ্ধ নয়৷ কিন্তু গোল বাধালো এ্যলজেবরা৷ সংখ্যা লিখে অংকের বিষয়ে জানি কিন্তু a b c d y z দিয়ে কি ভাবে অংক হয় তাতো জানা ছিলনা৷ আর ছিলাম নবাগত, শেষ বেঞ্চের সাতাশতম ছাত্র৷ অংক স্যার ছিলেন নিজে অনেক বোঝেন কিন্তু অন্যকে বোঝাতে দূর্বল৷ যাই হোক আয়ত্বে আনতে বেশী সময় লাগেনি৷ স্কুল শুরু হত সকলে লাইনে দাঁড়িয়ে প্রথমে সুরা ফাতেহা ও পরে জাতীয় সঙ্গীত পড়ে ও পড়িয়ে৷ বলা বাহুল্য কদিন পরই বরাবরের মত এটা আমার দায়ীত্বে চলে আসে৷ ফলে স্কুলের সবার কাছেই পরিচিত হয়ে যাই৷
চলবে------
বিষয়: বিবিধ
১৪২৩ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো লাগলো আপনার সুন্দর ও সরল লেখাটি। সেই সময়ের ইতিহাস জানা খুবই জরুরী। ধন্যবাদ।
৪৭ এর দেশ বিভাগ নিয়ে অনেক উপন্যাস রচিত হয়েছে পশ্চিম বঙ্গে। তপন রায় চেীধুরি বা ময়মনসংহের ধৃতিকান্ত লাহিড়ি চেীধুরির জিবন কথায়ও পড়েছি। কিন্তু একজন সাধারন মানুষের এই জিবন কথা একটি নতুন জ্ঞানের দরজা খুলে দিল। কত মুসলিম জিবনের ভয়ে ভিটেমাটি ছেড়ে সেই দিন পাকিস্তানে এসেছিল এখন কার তথাকথিত দ্বিজাতিতত্ব ভুল আর ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের উচ্চ প্রসংশায় লিপ্তদের জন্য শিক্ষনিয় হতে পারে। অন্নদা শংকর রায় তার আত্মজিবনি"জিবন যেীবন" এ লিখেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য মন্ত্রি বিধান চন্দ্র রায় নিজে তাকে মুর্শিদাবাদের মুসলিমদের উচ্ছেদ করার আদেশ দিয়েছিলেন।
ভারত চিন যুদ্ধ নিয়ে সেই দেশেরই এক কবি লিখেছিলেন
জনগন যখনি চায় বস্ত্র ও খাদ্য
সিমান্তে বেজে উঠে যুদ্ধের বাদ্য।
লিখে যান
আপনার মত গোলাপাতাকে আমিও পদ্মপাতার মত গোল ভাবতাম। অনেক কষ্টের জীবনকে উপভোগ্য করার চেষ্টা করেছেন। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
দক্ষতার লড়াইয়ে বাঙ্গালীরা বিহারীদের পিছনে পড়ে গেল৷ ২৩শে মার্চ ১৯৭১ এর রাতে খালিশপুরের বিহারী নিধনে অনেক কারণের মধ্যে এ আক্রোশটিও ছিল৷ - নিজের যোগ্যতার অভাব অন্যের প্রতি অবিচারের মাধ্যমে সমাধান করা, এমনকি অন্যের জীবনের অধিকার কেড়ে নেয়া! এই সংস্কৃতির প্রেক্ষিতে পাওয়া স্বাধীনতার ফলই মনে হয় আমরা পাচ্ছি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন