"বস্তুতঃ তা ছিল এক মাহানাদ! অতঃপর সঙ্গে সঙ্গে সবাই স্তব্ধ হয়ে গেল৷"

লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৮:৪৮:৩২ রাত

( উর্দু বয়ানুল কোরআনের বাংলা অনুবাদ)

সুরা ইয়াসীন রুকু;-২ আয়াত;-১৩-৩২

১৩/وَاضْرِبْ لَهُم مَّثَلاً أَصْحَابَ الْقَرْيَةِ إِذْ جَاءهَا الْمُرْسَلُونَ

অর্থ;-আপনি তাদের কাছে সে জনপদের কথা বর্ণনা করুন, যখন তাদের কাছে রসুল আগমন করেছিলেন৷

১৪/إِذْ أَرْسَلْنَا إِلَيْهِمُ اثْنَيْنِ فَكَذَّبُوهُمَا فَعَزَّزْنَا بِثَالِثٍ فَقَالُوا إِنَّا إِلَيْكُم مُّرْسَلُونَ

অর্থ;-আমি তাদের কাছে দুজন রসুল প্রেরণ করেছিলাম, অতঃপর ওরা (জনপদবাসী) তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল, তখন আমি তাদেরকে শক্তিশালী করলাম তূতীয় একজনের মাধ্যমে৷ তারা সবাই বলল, আমরাতো তোমাদের প্রতি প্রেরীত হয়েছি৷

# জনপদটি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞগন ধরণা করেন যে এটি ইন্তাকিয়া অঞ্চলের, যা শাম ও তর্কীর মাঝে অবস্থিত ছিল৷ আর দুইজন রসুল সম্পর্কেও মতভেদ রয়েছে, কেউ বলেন, এঁরা রসুলই ছিলেন, সমসাময়িক, হজরত মুসা ও হারুন আঃ এর মত৷ অন্যেরা বলেন এঁরা কোন রসুলেরই প্রেরিত প্রতিনিধি ছিলেন৷ হাদীশে রসুলের প্রেরিত পুরুষকেও রসুল বা হয়েছে৷ যেমন সাঈদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস কে ইরাণে পাঠানো হলে তিনি সেখানে নিজেকে রসুলের রসুল বলে পরিচয় দেন৷ আল্লাহই ভাল জানেন৷ পরে আল্লাহ তাদের সাথে আরও একজনকে যুক্ত করেছিলেন৷

১৫/قَالُوا مَا أَنتُمْ إِلاَّ بَشَرٌ مِّثْلُنَا وَمَا أَنزَلَ الرَّحْمن مِن شَيْءٍ إِنْ أَنتُمْ إِلاَّ تَكْذِبُونَ

অর্থ;-তারা (জনপদবাসী) বলল, তোমরাতো আমাদের মতই মানুষ, দয়াময় আল্লাহ কিছুই নাজিল করেননি৷ তোমরা কেবল মিথ্যাই বলে যাচ্ছ৷

১৬/قَالُوا رَبُّنَا يَعْلَمُ إِنَّا إِلَيْكُمْ لَمُرْسَلُونَ

অর্থ;-তারা (রসুলগন) বললেন, আমাদের রব জানেন, আমরা অবশ্যই তোমাদের প্রতি প্রেরিত হয়েছি৷

১৭/وَمَا عَلَيْنَا إِلاَّ الْبَلاَغُ الْمُبِينُ

অর্থ;-পরিষ্কার ভাবে (আল্লাহর বাণী) পৌঁছে দেওয়াই আমাদের দায়ীত্ব৷

১৮/قَالُوا إِنَّا تَطَيَّرْنَا بِكُمْ لَئِن لَّمْ تَنتَهُوا لَنَرْجُمَنَّكُمْ وَلَيَمَسَّنَّكُم مِّنَّا عَذَابٌ أَلِيمٌ

অর্থ;-তারা বলল, আমরা তোমাদেরকে অবশ্যই অশুভ, অকল্যানকর মনে করি৷ যদি তোমরা বিরত না হও তবে অবশ্যই তোমাদেরকে পাথর মেরে হত্যা করব এবং আমাদের পক্ষথেকে তোমাদের পরে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি আপতিত হবেই৷

১৯/قَالُوا طَائِرُكُمْ مَعَكُمْ أَئِن ذُكِّرْتُم بَلْ أَنتُمْ قَوْمٌ مُّسْرِفُونَ

অর্থ;-তারা (রসুলগন) বললেন, তোমাদের অকল্যান তোমাদের সাথেই৷ এটাকি এজন্য যে, আমরা তোমাদেরকে সদুপদেশ দিয়েছি! বস্তুতঃ তোমরা সীমা লঙ্ঘনকারী সমপ্রদায় বৈ নও৷

২০/وَجَاء مِنْ أَقْصَى الْمَدِينَةِ رَجُلٌ يَسْعَى قَالَ يَا قَوْمِ اتَّبِعُوا الْمُرْسَلِينَ

অর্থ;-অতঃপর শহরের প্রান্তভাগ থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে এল৷ সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা রসুল গনের অনুসরণ কর;

২১/اتَّبِعُوا مَن لاَّ يَسْأَلُكُمْ أَجْرًا وَهُم مُّهْتَدُونَ

অর্থ;-অনুসরণ কর তাদের যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় কামনা করেনা, অথচ তারা সুপথ প্রাপ্ত৷

২২/وَمَا لِي لاَ أَعْبُدُ الَّذِي فَطَرَنِي وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ

অর্থ;-আমার কি হল যে, যিনি আ্মাকে সৃষ্টি করেছেন এবং যার কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তীত হবে, আমিতার ইবাদত করব না!

২৩/أَأَتَّخِذُ مِن دُونِهِ آلِهَةً إِن يُرِدْنِ الرَّحْمَن بِضُرٍّ لاَّ تُغْنِ عَنِّي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا وَلاَ يُنقِذُونِ

অর্থ;-আমি কি তার পরিবর্তে অন্যদেরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করব? করুনাময় যদি আমাকে কষ্টে নিপতিত করতে চান তবে তাদের সুপারিশ আমার কোনও কাজে আসবে না এবং তারা আমাকে রক্ষাও করতে পারবে না৷

২৪/إِنِّي إِذًا لَّفِي ضَلاَلٍ مُّبِينٍ

অর্থ;-এ রূপ করলে আমি প্রকাশ্য ভ্রষ্টতায় পতিত হব৷

২৫/إِنِّي آمَنتُ بِرَبِّكُمْ فَاسْمَعُونِ

অর্থ;-আমি নিশ্চিত ভাবে তোমাদের রবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম, অতএব, তোমরাও আমার কথা শোন!

২৬/قِيلَ ادْخُلِ الْجَنَّةَ قَالَ يَا لَيْتَ قَوْمِي يَعْلَمُونَ

অর্থ;-(তাকে) বলা হল, জান্নাতে প্রবেশ কর! সে বলল, হায়! আমার সম্প্রায় যদি কোন ক্রমে জানতে পারত-

২৭/بِمَا غَفَرَ لِي رَبِّي وَجَعَلَنِي مِنَ الْمُكْرَمِينَ

অর্থ;-আমার রব আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং আমাকে সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন৷

# রসুলগন ঐ কওমের কাছে আল্লাহর বাণী প্রচার করার সময়, তাদের মূল দায়ীত্ব জনগনের কাছে পরিষ্কার ভাবে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দওয়ার কথাই বললেন৷ কিন্ত কওমের লোকজন তাদেরকে মিথ্যবাদীই সাব্যস্ত করল৷ এমনকি তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিতেও কসুর করলনা৷

এমন সময় শহরের প্রান্ত থেকে একজন লোক দৌড়ে এসে আপন সম্প্রদায়কে, যে রসুলগন বিনা পারিশ্রমিকে হেদায়েত দান করছেন, তাদের কথা মেনে নিতে অনুরোধ করলেন৷ সাক্ষ্য দিলেন যে, রসুলগণই সঠিক পথে আছেন৷ তিনি যদি তাদের অনুসরণ না করেন তবে, তিনি ভ্রান্ত পথে রয়েই যাবেন৷ তিনি এও বললেন যে তিনি নিজে মেনে নিয়েছেন, এর পর যদি আল্লাহ তাকে কোন বিপদে ফেলেন তবে, অপদেবতাগন তাকে কোনই সাহায্য করতে পারবেনা৷

এ কথা শুনে কওমের লোকজন ক্ষীপ্ত হয়ে উঠল ও তৎক্ষনাৎ তাকে খুন করে ফেলল৷ অদৃশ্যের পর্দা তার সামনে থেকে উঠিয়ে নিয়ে আল্লাহ তাকে শহীদের মর্যাদা দিলেন৷ তখন তিনি বলে উঠলেন, আফসোস! আল্লাহ আমায় ক্ষমা করে সম্মানিতদের সাথে শামিল করে যে মর্যাদা দিয়েছেন তা যদি আমার সম্প্রদায় দেখতে পেত৷

২৮/وَمَا أَنزَلْنَا عَلَى قَوْمِهِ مِن بَعْدِهِ مِنْ جُندٍ مِّنَ السَّمَاء وَمَا كُنَّا مُنزِلِينَ

অর্থ;-তার মৃত্যুর পর আমি আসমান থেকে কোন বাহিনী প্রেরণ করিনি এবং প্রেরণ করার প্রয়োজনও আমার ছিলনা৷

২৯/إِن كَانَتْ إِلاَّ صَيْحَةً وَاحِدَةً فَإِذَا هُمْ خَامِدُونَ

অর্থ;-বস্তুতঃ তা ছিল এক মহানাদ৷ অতঃপর সঙ্গে সঙ্গে সবাই স্তব্ধ হয়ে গেল৷

৩০/يَا حَسْرَةً عَلَى الْعِبَادِ مَا يَأْتِيهِم مِّن رَّسُولٍ إِلاَّ كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِؤُون

অর্থ;-বান্দাদের প্রতি আক্ষেপ যে, তাদের কাছে এমন কোনও রসুলই আগমন করেনি যাদের প্রতি তারা বিদ্রুপ করেনি৷

# রসুলকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করার পরই কাফের কওমের পরিনতি ধ্বংসই হয়ে থাকে৷ এখানে একজন নিরাপরাধ দাঈীর হত্যাও যোগ হয়েছে৷ এদের জন্য কোন আসমানী বাহিনী পাঠাবার প্রয়োজন হয়নি, একটা বিকট শব্দ, তার পর সব স্তব্ধ৷

৩১/أَلَمْ يَرَوْا كَمْ أَهْلَكْنَا قَبْلَهُم مِّنْ الْقُرُونِ أَنَّهُمْ إِلَيْهِمْ لاَ يَرْجِعُونَ

অর্থ;-তারা কি প্রত্যক্ষ করেনা, তাদের পূর্বে আমি কত সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছি যারা, তাদের মধ্যে আর ফিরে আসবে না৷

৩২/وَإِن كُلٌّ لَّمَّا جَمِيعٌ لَّدَيْنَا مُحْضَرُونَ

অর্থ;-ওদের সবাইকে সমবেত অবস্থায় আমার দরবারে উপস্থিত হতে হবে৷

# ঘঠনার উপসংহারে কোরেশদের, পূর্বের ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলা হচ্ছে যে, ঐ সমস্ত জাতির সাথেই সকলকে একত্রেই আল্লাহর সামনে হাজির করা হবে৷

[/i][/i]

বিষয়: বিবিধ

১২৩৫ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

266397
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:১৭
ভিশু লিখেছেন : Praying Praying Praying
খুব ভালো হচ্ছে!
এগিয়ে চলুন... Happy Good Luck Rose
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৩৩
210127
শেখের পোলা লিখেছেন : লিখেছেন : আপনাদের দোওয়ায় এখান পর্যন্ত পৌঁছেছি৷ পাঠক কম তাই পোষ্ট করতে উৎসাহ পাইনা৷ ১/৩ খণ্ড মাই নেম ইজ খান ভাইয়ের প্রকাশণীতে প্রুফ রিডিংএ রয়েছে৷ সাথে থাকবেন৷
266405
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৩২
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনাদের দোওয়ায় এখান পর্যন্ত পৌঁছেছি৷ পাঠক কম তাই পোষ্ট করতে উৎসাহ পাইনা৷ ১/৩ খণ্ড মাই নেম ইজ খান ভাইয়ের প্রকাশণীতে প্রুফ রিডিংএ রয়েছে৷ সাথে থাকবেন৷
266461
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৫৩
ফাতিমা মারিয়াম লিখেছেন : তারা কি প্রত্যক্ষ করেনা, তাদের পূর্বে আমি কত সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছি যারা, তাদের মধ্যে আর ফিরে আসবে না৷



আমরা কি এরপরও শিক্ষাগ্রহণ করব না? আল্লাহ আমাদের হিফাজত করূন....আমীন।
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:০৯
210287
শেখের পোলা লিখেছেন : সুম্মা আমিন৷
266503
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৩১
আফরা লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়ের ।

পাঠক কম তাতে কি একজন ও আপনার লেখা থেকে শিক্ষা নেয় তাতেই আপনার সার্থকতা ।

আপনি পোষ্ট কেউ না তো পড়বেই অন্তত আমি আপনাকে কথা দিলাম ।
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:১০
210288
শেখের পোলা লিখেছেন : আলহামদু লিল্লাহ! জাজাকাল্লাহু খাইরান৷
266705
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৯:২৮
egypt12 লিখেছেন : তবুও আমাদের হোশ নেই আমরা চলছি আল্লাহ্‌র আদেশের বিপরীতে তাই তো সমাজে এত বিশৃঙ্খলা :(
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৩
212044
শেখের পোলা লিখেছেন : সময় করে আসা পড়া ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ৷
266897
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:০০
শেখের পোলা লিখেছেন : সময় করে আসা পড়া ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ৷
268071
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৮:৪৪
দ্য স্লেভ লিখেছেন : শানে নুযুলগুলো যেভাবে তুলে ধরলেন তাতে বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বোঝা গেল। আমি অনেকবার এই সুরার তরজমা পড়লেও এভাবে বুঝিনি। জাজাকাল্লাহ।
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৬
212047
শেখের পোলা লিখেছেন : পড়া ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ৷ আশাকরি সাথে থাকবেন৷ ধন্যবাদ৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File