" নবী উম্মতের কাছে তাদের নিজের জীবন অপেক্ষা অধিক প্রীয়"
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ২৪ আগস্ট, ২০১৪, ০১:৫৮:৫৭ রাত
(উর্দূ বয়ানুল কোরআনের সংক্ষিপ্ত ও সরল বাংলা অনুবাদ)
(৩৩) সুরা আল আহযাব (মাদানী) রুকু ৯টি ও আয়াত ৭৩টি
চতুর্থ গ্রুপের দুইটি শাখা গ্রুপের ২য় টির মোট আটটি মক্কী সুরার পর নবম ও একমাত্র মাদানী সুরা, সুরা ‘আল আহযাব’৷ এতে রয়েছে নয়টি রুকু ও তিয়াত্তরটি আয়াত৷ অবস্থান ভেদে সুরাটি একক হলেও এ গ্রুপের প্রথম শাখা গ্রুপের একাধারে চোদ্দটি মক্কী সুরার পর একমাত্র মাদানী সুরা ‘আন নূরে’র সাথে এর বেশ মিল রয়েছে৷
‘সুরা আহযাব’ নাজিল হয় ৫ম হিজরীতে৷ যাতে রয়েছে পর্দার প্রাথমিক হুকুম, যা মূলতঃ নারীদের বাইরে যাওয়া সংক্রান্ত৷ অপর পক্ষে সুরা ‘আন নূর’ নাজিল হয় ৬ষ্ট হিজরীতে, যাতে রয়েছে পর্দার চুড়ান্ত হুকুম, যা মূলতঃ নারীদের অন্তঃপুর সম্পর্কীত৷
সুরা’আন নূরে’ যুদ্ধের আলোচনা থাকলেও বিশেষ কোন যুদ্ধের আলোচনা নেই৷ আর ‘সুরা আহযাবে’ রয়েছে, ‘আহযাব’ বা পরিখার যুদ্ধের কথা৷ যার পরই শুরু হয় প্রকৃত ইসলামী খেলাফত৷ রয়েছে প্রকৃত মুমিনদের সংযমের কঠোর পরীক্ষা ও মুনাফিকদের মুখোশ উন্মোচন৷
‘সুরা নুর’ এর ৩৫ নং আয়াতটি ইমানের একটি বিশেষ আয়াত আর ‘সুরা আহযাব’বএর ৩৫ নং আয়াতটিতে আছে উক্ত মুমিনদের অবস্থার বিবরণ৷
২য় ও তয় রুকুতে রয়েছে আহযাবের বর্ণনা৷ প্রথম রুকুটির মিল রয়েছে ৪র্থ রুকুর সাথে৷ কোরআনের নিয়মানুযায়ী সুরাটির মূল বিষয়বস্তুর অবতারণা করা হয়েছে প্রথম রুকুটিতে৷ ঠিক যেমনটি আমরা সুরা তওবায় দেখেছি৷
শুরু হয়েছে দত্তক বা পাতানো পুত্রের বিষয়ে আরবের প্রচলিত বদ্ধমূল ধারণাকে নস্যাৎ করে তা শুধুই মৌখীক ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী তার কোন দখল নেই বলে৷ আর তাই পালক পুত্রের বিধবা বা তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীকে বিবাহের বৈধতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে৷
হজরত যায়েদ ইবনে হারেস আঃ ছিলেন রসুল সঃ এর গোলাম৷ রসুল সঃ তাকে আজাদ করে পাল পুত্রের মর্যাদা দিয়ে বনু হাশেম বংশের কুমারী হজরত জয়নাব রাঃ কে সুপারিশ করে তার সাথে বিয়ে দেন৷ জায়েদ আঃ এর নাম হয় জায়েদ ইবনে মোহাম্মদ সঃ৷ যেহেতু জায়েদের চরিত্রে গোলামীর ছাপ আর জয়না রাঃ সম্ভ্রান্ত বংশীয়া, তাই তাদের মাঝে একটি ফাঁক থেকেই যায়৷ রসুল সঃ কাছে নালীশ আসে আর যেহেতু তিনিই এর হোতা, তাই উভয়কে বুঝিয়ে নিরস্ত করেন৷ কিন্ত এক পর্যায়ে তাদের তালাক হয়েই যায়৷ জয়নাব রাঃ এর এ ক্ষতি পূরণের জন্য তিনি নিজেই তাকে বিয়ে করতে মনস্থ করেন৷ বাধ সাধে সম্পর্ক ও সমাজ৷ তাই ইসলামী শরিয়তের বিধান ও রসুল সঃ এর সিদ্ধান্তকে স্বীকৃত দিতেই এ সুরার অবতারণা৷
এতে রয়েছে নয়টি রুকু ও তিয়াত্তরটি আয়াত৷
সুরা আল আহযাব রুকু;-১ আয়াত;-১-৮
الرَّحِيمِ الرَّحْمـَنِ اللّهِ بِسْمِ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
১/
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ اتَّقِ اللَّهَ وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِينَ وَالْمُنَافِقِينَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا
অর্থ;-হে নবী, আল্লাহকে ভয় করুন এবং কাফের ও মুনাফেকদের কথা আমলে আনবেন না৷ নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়৷
# ‘আমর’ শব্দ যেন শুধুই হুকুম করাকে বোঝায় না পরামর্শ করাকেও বোঝায়, তেমনই ‘ইত্তেবা’ শব্দও শুধু আনুগত্য,অনুসরণ করাকেই বোঝায় না বরং মান্য করা, মনযোগ দেওয়া, আমলে আনাকেও বোঝায়৷
রসুল সঃ হজরত জনাব রাঃ কে যখন বিয়ে করার মনস্থ করলেন, তখন নাস্তিক, কাফেরদের মাঝে বিরূপ সমালোচনা মুখর হয়ে উঠল৷ যা আজও ইসলামকে নিন্দার একটি মাধ্যম হিসাবে তারা ব্যবহার করে থাকে৷
রসুল সঃ এর সিদ্ধান্তকে সঠিক ও নাস্তিক কাফেরদের জবাবে এ আয়াত গুলি নাজিল হয়৷ এ আয়াতে তাদের কথায় আমল বা কান না দেবার সাথে আল্লাহর প্রতি ভয় করতে বলা হয়েছে৷
২/
وَاتَّبِعْ مَا يُوحَى إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا
অর্থ;-আপনার রবের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয় আপনি তার অনুসরণ করুন৷ নিশ্চয় তোমরা যা কর আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন৷
৩/
وَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ وَكَفَى بِاللَّهِ وَكِيلًا
অর্থ;-আপনি আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন৷ কার্য নির্বাহী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট৷
৪/
مَّا جَعَلَ اللَّهُ لِرَجُلٍ مِّن قَلْبَيْنِ فِي جَوْفِهِ وَمَا جَعَلَ أَزْوَاجَكُمُ اللَّائِي تُظَاهِرُونَ مِنْهُنَّ أُمَّهَاتِكُمْ وَمَا جَعَلَ أَدْعِيَاءكُمْ أَبْنَاءكُمْ ذَلِكُمْ قَوْلُكُم بِأَفْوَاهِكُمْ وَاللَّهُ يَقُولُ الْحَقَّ وَهُوَ يَهْدِي السَّبِيلَ
অর্থ;-আল্লাহ মানুষের মধ্যে দুটি হৃদয় স্থাপন করেননি৷ তোমাদের স্ত্রী গন যাদের সাথে তোমরা ‘জিহার’ কর, তাদেরকে তোমাদের জননী করেননি এবং তোমাদের পোষ্যপুত্রদেরকে তোমাদের পুত্র করেন নি৷ এ গুলো তোমাদের মুখের কথা মাত্র৷ আল্লাহ ন্যায় কথা বলেন এবং পথ প্রদর্শণ করেন৷৷
# যদিও মানুষ বলে অন্তরে অন্তর মিশে গেছে বা আমার হৃদয় তোমারে দিলাম, এ গুলি শুধুই কথার কথা৷ আল্লাহ কাউকেই দুটি হৃদয় দেননি৷ তেনই ‘জিহার’ করা বা আপন স্ত্রীকে মা বলা বা ময়ের সমতু্ল্য বলা বা তার কোন অঙ্গকে মায়ের অঙ্গের সাথে তুলনা করাও কথার কথা৷ কেননা মা তিনিই যনি উদরে ধারণ করেছেন৷ বিষয়টি সুরা ‘মুজাদেলায়’ পাওয়া যাবে৷ এ প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে এতেও স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে কোন বিঘ্ন ঘটেনা৷ ঠিক তেমনই পোষ্যপুত্রও পুত্র নয়, ঔরষজাত পুত্রই আসল পুত্র৷ জায়েদ ইবনে হারেশ রাঃ রসুলের পালকপুত্র ছিলেন আপন পুত্র নন৷
আর তাই হজরত জায়েদের রাঃ তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে বিয়ে করতে রুল সঃ এর আর কোন বাধা রইল না৷ দীর্ঘ দিনের প্রচলিত ধারণাকে ভেঙ্গে বিষয়টিকে আল্লাহ তাঁর রসুলের মাধ্যমে বৈধ করে দিলেন৷
৫/
ادْعُوهُمْ لِآبَائِهِمْ هُوَ أَقْسَطُ عِندَ اللَّهِ فَإِن لَّمْ تَعْلَمُوا آبَاءهُمْ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ وَمَوَالِيكُمْ وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُم بِهِ وَلَكِن مَّا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
অর্থ;-তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃ পরিচয়ে ডাক, এটাই আল্লাহর কাছে অধিক ন্যায় সঙ্গত৷ যদি তোমরা তাদের পিতৃ পরিচয় না জান তবে তারা তোমাদের ধর্ময় ভাই বা বন্ধুরূপে গন্য হবে৷ এ বিষয়ে তোমাদের কোন ত্রুটি হয়েগিয়ে থাকলে তাতে তোমাদের কোন গোনাহ নেই, তবে ইচ্ছাকৃত হলে ভিন্ন কথা৷ আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু৷
# যার যার পরিচয় তার পিতার নামেই হবে,যা আজও আরবদেশ গুলিতে প্রচলিত আছে৷৷৷ হজরত জায়েদ ইবনে হারেশা কে রসুল সঃ পালকপুত্র বানাবার পর লোকে তাকে ইবনে হারেশা না বলে ইবনে মোহাম্মদ সঃ বলত, এ আয়াত নাজিলের পর আবার তাঁকে জায়েদ ইবনে হারেশা রাঃ বলা হত৷
এ আয়াত নাজিলের আগে যারা এ ভুল করে ফেলেছে তাদের কোন গোনাহ হবেনা, তবে জানার পরেও যদি কেউ এ ভুল করে তার কথা ভিন্ন৷
৬/
النَّبِيُّ أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنفُسِهِمْ وَأَزْوَاجُهُ أُمَّهَاتُهُمْ وَأُوْلُو الْأَرْحَامِ بَعْضُهُمْ أَوْلَى بِبَعْضٍ فِي كِتَابِ اللَّهِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُهَاجِرِينَ إِلَّا أَن تَفْعَلُوا إِلَى أَوْلِيَائِكُم مَّعْرُوفًا كَانَ ذَلِكَ فِي الْكِتَابِ مَسْطُورًا
অর্থ;-নবী মুমিনদের কাছে তাদের নিজেদের চাইতে অধিক আপন৷ তাঁর স্ত্রীগন তাদের মাতা৷ আল্লাহর বিধান অনুযায়ী মুমিন ও মুহাজির গনের মধ্যে যারা আত্মিয় তারা পরষ্পর অধিক আপন৷ তবে তোমরা যদি তোমাদের বন্ধুদের প্রতি দয়া দাক্ষিণ্য করতে চাও করতে পার৷ এটা কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে৷
# নবীগন মুমিনগনের কাছে নিজেদের অপেক্ষা প্রাধান্য পাবার উপযুক্ত৷ আর তাঁদের স্ত্রী গন মুমিনদের মায়ের সমান৷ এজন্যই তাঁদের নামের সাথে ‘উম্মুল মুমিনীন’ শব্দটি যোগ করা হয়৷ এই হিসাবে নবীগনও মুমিনদের পিতার সমান৷ হাদিশেও এমন উক্তি পাওয়া যায়৷৷
আনসার ও মুহাজির দের ভাই ভাই সম্পর্কটিও মৌখিক পাতানো৷ সাহায্য, সহযোগিতা, দয়া দাক্ষিন্যে একে অপরের কাছে অধিক মর্যাদার হতে পারে৷ আনসারগন মহাজিরদের স্থাবর অস্থাবর সম্পদ ভাগ করে দিলেও মিরাশে তাদের কোন অংশ নেই৷ সুরা আনফালেও এ কথা বলা হয়েছে৷
৭/
وَإِذْ أَخَذْنَا مِنَ النَّبِيِّينَ مِيثَاقَهُمْ وَمِنكَ وَمِن نُّوحٍ وَإِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ وَأَخَذْنَا مِنْهُم مِّيثَاقًا غَلِيظًا
অর্থ;-যখন আমি পয়গম্বরদের কাছ থেকে, আপনার কাছ থেকে এবং নূহ, ইব্রাহীম, মুসা, মরিয়ম তনয় ঈশা (আঃ) এর কাছ থেকে অঙ্গিকার নিলাম৷ তাদের কাছথেকে নিলাম অতি মজবুত অঙ্গীকার৷
৮/
لِيَسْأَلَ الصَّادِقِينَ عَن صِدْقِهِمْ وَأَعَدَّ لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا أَلِيمًا
অর্থ;-যেন তিনি সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যবাদিতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন; আর তিনি কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি৷
# স্মরণ করা যেতে পারে ‘আলে ইমরাণের’ ৮১ ও ৮২ নং আয়াতের কথা যেখাানেসেই আল্লাহ তায়ালা অন্যন্ন নবীদের রূহের কাছে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, তাদের কাছে যা দেওয়া হেয়েছে তা সত্যায়ণকারীরূপে একজন রসুল আসবেন, সকলে অবশ্যই তাঁর প্রতি ইমান আনবে অন্যথায় নাফরমান হবে৷এ ছাড়া পৃথিবীর আদী অন্তের যাবতীয় মানব রূহের কাছ থেকে ‘আলাসতু বে রাব্বিকুম?’ বলে যখন শপথ করিয়েছিলেন (সুরা আরাফ/১৭২ তখন সেই অনুষ্ঠানে সকল নবীগনের রূহও উপস্থিত ছিল৷
বিষয়: বিবিধ
১৪৬১ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
"# স্মরণ করা যেতে পারে ‘আলে ইমরাণের’ ? ? সেই কথা আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর আদী অন্তের যাবতীয় মানব রূহের কাছ থেকে ‘আলাসতু বে রাব্বিকুম?’"
‘আলাসতু বে রাব্বিকুম?’ এটা কি ‘আলে ইমরাণ’এ-ও আছে? কত নং আয়াত ? ?
‘আলাসতু বে রাব্বিকুম?’সুরা আ'রাফ, আয়াত ১৭২
আলে ইমরাণে পাইনি
আমার ধারণা ওটা "মুদ্রণপ্রমাদ"
মন্তব্য করতে লগইন করুন