" এমন কোন বিচরণকারী প্রাণী নেই যার নসীব আল্লাহর কাছে নয়"

লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ০৯ এপ্রিল, ২০১৪, ০৫:১৮:১২ সকাল

("উর্দূ বয়ানুল কোরআনের ধারাবাহিক বাংলা অনুবাদ")

সুরা হুদ রুকু;-৫ আয়াত;-৫০-৬০

“আম্বাউ রুসুল” বিষয়ের ধারায় হজরত হুদ আঃ এর কথা নিয়ে আসছে এ রুকুটি৷

৫০/وَإِلَى عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُواْ اللّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـهٍ غَيْرُهُ إِنْ أَنتُمْ إِلاَّ مُفْتَرُونَ

অর্থ;-আর আমি কওমে আদের কাছে তাদের ভাই হুদ কে পাঠিয়েছিলাম৷ তিনি বললেনন, হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো৷ তিনি ছাড়া তোমাদের কোন মাবুদ নেই৷ তোমরা নিছক মিথ্যা উদ্ভাবন কারী৷

# ধারণা করা হয় (আল্লাহই ভাল জানেন) নূহ আঃ পুত্র শাম এর বংশধরগণ আরব ভূখণ্ডের পূর্বপ্রান্ত দিয়ে ক্রমশঃ দক্ষীন দিকে প্রসারিত হতে থাকে৷ তাদেরই মধ্যে আদ নামের প্রভাবশালী এক জনের বংশ আদ নামে খ্যাত হয়৷ এরা খুবই বলিষ্ঠ প্রকৃতীর ছিল৷

হুদ আঃ কে তাদেরই মধ্যহতে রসুল মনোনীত করেন৷ তিনি তাদের মনগড়া উপাস্যের ইবাদত বা উপাসনা না করে এক আল্লাহর উপাসনা করতে বললেন৷ আরও বললেন;-

৫১/يَا قَوْمِ لا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِنْ أَجْرِيَ إِلاَّ عَلَى الَّذِي فَطَرَنِي أَفَلاَ تَعْقِلُونَ

অর্থ;-হে আমার কওম, আমি এ জন্য তোমাদের কাছে কোন বিনিময় চাইনা৷ আমার বদলা তো তার কাছে যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন৷ তোমরা কি বুদ্ধি খাটাবেনা?



৫২/وَيَا قَوْمِ اسْتَغْفِرُواْ رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُواْ إِلَيْهِ يُرْسِلِ السَّمَاء عَلَيْكُم مِّدْرَارًا وَيَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلَى قُوَّتِكُمْ وَلاَ تَتَوَلَّوْاْ مُجْرِمِينَ

অর্থ;-হে আমার কওম, তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমাদের রবের কাছে, তারপর তারই দিকে ফিরে এস৷ তিনি তোমাদের উপর আসমান থেকে পানি বর্যন করে তোমাদের শক্তির উপর আরও শক্তি বৃদ্ধি করবেন৷ তোমরা অপরাধীদের মত বিমুখ হয়োনা৷

৫৩/قَالُواْ يَا هُودُ مَا جِئْتَنَا بِبَيِّنَةٍ وَمَا نَحْنُ بِتَارِكِي آلِهَتِنَا عَن قَوْلِكَ وَمَا نَحْنُ لَكَ بِمُؤْمِنِينَ

অর্থ;-তারা বলল, হে হুদ, আপনিতো আমাদের কাছে কোন স্পষ্ট প্রমান নিয়ে আসেননি৷ আমরা আপনার কথায় আমাদের মাবুদদেরকে ত্যাগ করতে পারিনা৷ আর আমরাতো আপনার প্রতি বিশ্বাসী নই৷

# কওমে আদও যথারীতি অন্যের মত তাদের রসুলকে রসুল হওয়া ও অন্য নিদর্শন দাবী করে বসল৷ আর তাদের প্রচলিত দেবদেবীর আরাধনা বা বিশ্বাস ত্যাগ করতে অপারগতা জানাল৷ এমনকি হুদ আঃ কে রসুল বলেই বিশ্বাস করলনা৷

আমরা জানি ‘ইমান’ শব্দটি যখন ‘লাম’ সহযোগে ব্যবহার হয় তখন সাধারণ বিশ্বাস অর্থে ব্যবহার হয়৷ এখানে তাই হয়েছে৷ প্রকৃত ইমান নয়৷

৫৪/إِن نَّقُولُ إِلاَّ اعْتَرَاكَ بَعْضُ آلِهَتِنَا بِسُوَءٍ قَالَ إِنِّي أُشْهِدُ اللّهِ وَاشْهَدُواْ أَنِّي بَرِيءٌ مِّمَّا تُشْرِكُونَ

অর্থ;-বরং আমরা বলি, আমাদের কোন দেবতা আপনাকে দুরবস্থায় ফেলে দিয়েছে৷ তিনি (হুদ) বললেন, আমি এ বিষয়ে আল্লাহকে সাক্ষী করছি, আর তোমরাও সাক্ষী থেকো যে, নিশ্চয়ই আমি তা থেকে মুক্ত যাকে তোমরা শরিক সাব্যস্ত করেছ৷

# আদ কওমের লোকেরা হুদ আঃ কে তাদের দেবতারা তাঁর প্রতি কূ দৃষ্টি দিয়েছে ও রুষ্ঠ হয়ে তাঁর উপর ভর করে তাকে দিয়ে আবোল তাবোল কথা বলাচ্ছে বলে অভিমত প্রকাশ করল৷ জবাবে হুদ আঃ বললেন, আমার সাক্ষী আল্লাহ আর আমিযে তোমাদের সাথে মিলে সেই আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করিনা তার সাক্ষী তোমরা থাকলে৷

৫৫/مِن دُونِهِ فَكِيدُونِي جَمِيعًا ثُمَّ لاَ تُنظِرُونِ

অর্থ;-তাকে (আল্লাহকে) ছেড়ে তোমরা সবাই মিলে আমার বিরুদ্ধে অনিষ্ঠ করার প্রয়াস কর, তার পর আমাকে মোটেও ছাড় দিওনা৷

# সুরা ‘ইউনুস’ এর ৭১ আয়াতে নূহ আঃ তাঁর কওমকে ঠিক এমন কথা ববলেছেন তা আমরা পড়েছি৷

৫৬/إِنِّي تَوَكَّلْتُ عَلَى اللّهِ رَبِّي وَرَبِّكُم مَّا مِن دَآبَّةٍ إِلاَّ هُوَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا إِنَّ رَبِّي عَلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ

অর্থ;-অবশ্যই আমি ভরসা করছি, আমার ও তোমাদের রব, সেই আল্লাহর উপর৷ এমন কোন বিচরণকারী প্রাণী নেই যার নসীব তার কাছে নয়৷ নিশ্চয় আমার রব সেই সরল পথেই রয়েছেন৷

# প্রত্যেক প্রাণীর ভাগ্য আল্লাহর হাতে৷ নীব বা ভাগ্য বলতে এখানে তার জাগতী সব বিষয়ের কথা বলা হয়েছে৷ অতএব তার উপর পূর্ণ আস্থা রাখাই শ্রেয়ঃ এবং তাই সরল পথ৷ আর এ পথে চললেই আল্লাহকে পাওয়া যাবে৷

৫৭/فَإِن تَوَلَّوْاْ فَقَدْ أَبْلَغْتُكُم مَّا أُرْسِلْتُ بِهِ إِلَيْكُمْ وَيَسْتَخْلِفُ رَبِّي قَوْمًا غَيْرَكُمْ وَلاَ تَضُرُّونَهُ شَيْئًا إِنَّ رَبِّي عَلَىَ كُلِّ شَيْءٍ حَفِيظٌ

অর্থ;-অতঃপর যদি তোমরা বিমুখ হও তা থেকে যা আমি তোমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি, তবে তোমাদের রব অন্য কোন জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন৷ তোমরা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না৷ নিশ্চয় আমার রব প্রত্যেক জিনিষ সংরক্ষনকারী৷



# ঘটনা চুড়ান্ত ফায়সালার পথে৷ আজাবের পূর্বাভাস দেওয়া হল৷

৫৮/وَلَمَّا جَاء أَمْرُنَا نَجَّيْنَا هُودًا وَالَّذِينَ آمَنُواْ مَعَهُ بِرَحْمَةٍ مِّنَّا وَنَجَّيْنَاهُم مِّنْ عَذَابٍ غَلِيظٍ

অর্থ;-আর যখন আমার আদেশ এল, আমি নিজ রহমতে হুদ ও যারা তাঁর সাথে ইমান এনেছিল তাদের উদ্ধার করলাম এবং তাদেরকে কঠিন আজাব থেকে রক্ষা করলাম৷



৫৯/وَتِلْكَ عَادٌ جَحَدُواْ بِآيَاتِ رَبِّهِمْ وَعَصَوْاْ رُسُلَهُ وَاتَّبَعُواْ أَمْرَ كُلِّ جَبَّارٍ عَنِيدٍ

অর্থ;-আর এই আদ জতি, যারা তাদের পালনকর্তার নিদর্শন সমুহ অস্বীকার করেছিল এবং তাদের রসুলদের অমান্য করেছিল, তারা অনুসরণ করত প্রত্যেক উদ্ধত সৈরাচারীর আদেশ৷



# লক্ষ্যনীয় এ আয়াতে ‘রুসুল’ যা ‘রসুল’ শব্দের বহু বচন তা ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ রসুল গন৷ আমরা জানি কোন কওমে কোন রসুলই হচ্ছেন প্রথম রসুল ও তিনিই শেষ৷ কেননা রসুল অমান্য করার পর কওমের স্থায়ীত্ব আর অবশিষ্ট থাকে না তাই পুনরায় রসুল আসার পথ থাকেনা৷ আমরা জানি এ শব্দটি অনেক সময় নবী শব্দের বদলেও ব্যবহার হয়৷ এখানেও তাই হয়েছে৷ রসুল আসার আগে অনেক নবী এসেছিলেন যাদের সহ রসুল হুদ আঃ কে তারা অস্বীকার করেই ধ্বংস হয়েছে৷

৬০/وَأُتْبِعُواْ فِي هَـذِهِ الدُّنْيَا لَعْنَةً وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ أَلا إِنَّ عَادًا كَفَرُواْ رَبَّهُمْ أَلاَ بُعْدًا لِّعَادٍ قَوْمِ هُودٍ

অর্থ;-এ দুনিয়ায় তাদের লাঞ্ছিত করা হয়েছিল এবং কেয়ামতেও করা হবে৷ মনে রেখো আদজাতি তাদের রবকে অস্বীকার করেছে, জেনে রেখো হুদের কওম, আদের জন্য রয়েছে অভিসম্পাত৷

# রুকুর উপসংহারে মুরশীক কোরাইশদের মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে, হুদ আঃ এর কওম, আদ জাতি আল্লাহকে ও তাদের রসুলকে অস্বীকার করার ফলেই ধ্বংস হয়েছে এবং তাদের জন্য রয়েছে কেয়ামতের শাস্তি৷ জনে রেখো, তারা অভিশপ্ত জাতি৷

বিষয়: বিবিধ

১১৬৪ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

204930
০৯ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১০:৫৪
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়রান Happy
০৯ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১৬
154100
শেখের পোলা লিখেছেন : আমিন!
204958
০৯ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১১:৫০
ধ্রুব নীল লিখেছেন : জাজাক আল্লাহ
০৯ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১৭
154101
শেখের পোলা লিখেছেন : সুম্মা আমিন!
205005
০৯ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ১২:৪৫
ফাতিমা মারিয়াম লিখেছেন : যাজাকাল্লাহ Praying
০৯ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১৭
154103
শেখের পোলা লিখেছেন : সুম্মা আমিন!
205483
১০ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০২:৫৫
ভিশু লিখেছেন : Praying Praying Praying
ভালো লাগ্লো...Happy Good Luck
১০ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১০:০৭
154446
শেখের পোলা লিখেছেন : ধন্যবাদ৷ আবার আসবেন৷
205501
১০ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৪:১১
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : আল্লাহ আপনাকে উত্তম যাযা দান করুন।
১০ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১০:০৮
154449
শেখের পোলা লিখেছেন : আমিন! আমাদের সবাইকে দিন৷ ধন্যবাদ৷
212477
২৪ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৪:০৯
সাদাচোখে লিখেছেন : ছোট ছোট টিকা সহযোগে এভাবে কোরআন পড়তে ভালই লাগলো। মনে হল যেন আমরা কয়েকজন গোল হয়ে বসেছি আর আপনি বুঝিবা আমাদেরকে কোরআন পড়ে শুনাচ্ছেন।

আপনি জিম্বাবুয়ের মুফতি মেন্ক এর 'Stories of Prophets' লেকচার শুনেছেন কিনা জানিনা - ওটা একটা চমৎকার সংকলন। ওখানে আমি প্রথম এ নবী ও রাসুলদের গল্প শুনেছি। ধন্যবাদ।
২৪ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৮:০২
160768
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনাকে ধন্যবাদ৷ লেখার গুটাই আমার কাছেও ভাল লেগেছিল তাই এটা আমি উর্দূ থেকে বাংলায় ধারা বাহিক ভাবে অনুবাদ করে চলেছি৷ দোওয়া করবেন৷
216844
০৩ মে ২০১৪ দুপুর ০১:১৩
আফরা লিখেছেন : আপনার সব লেখা একটু একটু করে পড়ব যাতে এর থেকে ফায়দা নেয়া আমার জন্য সহজ হয় ।আল্লাহ আপনাকে এর উত্তম প্রতিদান দান করুন দুনিয়াতে ও আখেরাতে ।আমীন ।
০৩ মে ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৪
165142
শেখের পোলা লিখেছেন : আফরা মনিকে স্বাগতম৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File