"তারা জান্নাতুল ফেরদৌসের উত্তরাধিকারী হবে, তারা সেখানে চিরকাল থাকবে৷"
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৭:৪৯:০০ সন্ধ্যা
(উর্দু বয়ানুল কোরআনের বাংলা অনুবাদ)
সুরা আল মু’মিনূন রুকু;-১ আয়াত;-১-২২ পারা;-১৮
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
১/قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ
অর্থ;-ফুঁড়ে বার হয়েছে মুমিনগন৷
# ‘ফালাহ’ শব্দের অর্থ সাধারণতঃ সাফল্য বা সফলকাম হয়ে থাকে৷ এখানে কিছুটা ভিন্ন অর্থে ব্যবহার হয়েছে৷ মাটি ফুঁড়ে চারা বার হয়, আঁটি ফুঁড়ে আমের গাছ বেরিয়ে আসে, এখানেও ‘ফালাহ’ শব্দের ব্যবহার হয়৷ মওলানা আব্দুল কাদের রঃ এমন অর্থই করেছেন ও মওলানা শাইখুল হিন্দ রঃ তাঁকেই সমর্থন করেছেন৷
আমরা বলি; আমার হাত, আমার মাথা, আমার দেহ বা আমার শরীর৷ কিন্তু সেই আমিটা কে, কোথায় তার অবস্থান তা জানিনা৷ নিশ্চয় তিনি আছেন এবং অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সহ সমস্ত দেহটাকেই তার বলে দাবী করেন৷ সেই আমিটাই হল’ ‘রূহে রব্বানী’, যা শরীরের মোড়কে আল্লাহ ঢেঁকে রেখেছেন৷ আর এই দেহটি হল হায়ওয়ানী বা পাশবিক৷ সেই রূহটিই দেহকে আমার বলে থাকে৷ কিন্ত আমাদের পশু চরিত্র তাকে নিষ্ক্রিয় করে ঢেঁকে রাখে৷ যিনি সেই মোড়ক ফুঁড়ে রূহকে সঠিক স্থানে আনতে পেরেছেন, তিনিই হয়েছেন সফলকাম বা মুমিন৷ বলা হয়েছে, ‘মান আরাফা নাফসাহু, ফাকাদ আরাফা রাব্বাহু’, যে তার নিজেকে চিনেছে সে তার রবকেও চিনেছে৷ এই নিজেই সেই রুহে রব্বানী৷ পরের কয়েকটি আয়াতে এই মুমিনের বৈশিষ্ট বলা হয়েছে৷
২/الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ
অর্থ;-যারা নিজের নামাজে বিনম্র৷
# শুধুই নামাজের ওয়াক্ত আর রাকাত আদায় করেনা৷ নামাজে মুমিনের মেরাজ বা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ বলা হয়েছে৷ মুমিনের নামাজ সে মতই হয়৷
৩/وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ
অর্থ;-যারা অনর্থক কথা বার্তায় লিপ্ত নয়৷
# কার সময় কতটুকু কেউ তা জানেনা৷ মুমিন তার সময়কে অযথা ব্যয় নাকরে সঠিক পথে ব্যয় করে৷
৪/وَالَّذِينَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُونَ
অর্থ;-যারা আত্মশুদ্ধি করে৷
# জাকাত এখানে পবিত্রতা অর্থে ব্যবহার হয়েছে৷ কারণ তখনও জাকাতের বিধান আসেনি৷ অতএব যারা তার চরিত্রকে নির্মল রাখে৷
৫/وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ
অর্থ;-যারা নিজেদের যৌনাঙ্গ সংযত রাখে৷
৬/إِلَّا عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ
অর্থ;-তবে, তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভূক্ত দাস দাসীর ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তিরষ্কৃত হবেনা৷
৭/فَمَنِ ابْتَغَى وَرَاء ذَلِكَ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْعَادُونَ
অর্থ;-অতঃপর কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে সীমা লঙ্ঘনকারী হবে৷
# নিজ স্ত্রী ও মালিকানার দাস দাসীদের বেলায় সঙ্গম বৈধ, তবে নিয়ম নীতির বাইরে গেলে তা সীমা লঙ্ঘন হবে৷
৮/وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ
অর্থ;-আর যারা আমানত ও অঙ্গীকার সম্পর্কে হুশিয়ার থাকে৷
# যারা আমানতের খেয়ানত করেনা বা ওয়াদা ভঙ্গও করেনা, যথাযত পালন করে৷
৯/وَالَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ
অর্থ;-এবং যারা আপন নামাজের হেফাজত করে৷
# যারা রূহে রব্বানী কে খোলসমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে সেই মুমিনদের বৈশিষ্ট গুলি নামাজ দিয়ে শুরু হয়ে নামাজের মাধ্যমেই শেষ হল৷ তারা নামাজের বিষয়ে সজাগ থাকে, গাফিলতি করেনা, যথাযত নিয়মেতা পালনকরে, শুধুই আল্লাহকে সন্তুষ্টই তাদের কাম্য হয়৷
১০/أُوْلَئِكَ هُمُ الْوَارِثُونَ
অর্থ;-তারাই উত্তরাধিকার লাভ করবে৷
# এরাই হবে পৃথিবীর প্রকৃত উত্তরাধিকারী৷ আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনীধি৷
১১/الَّذِينَ يَرِثُونَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
অর্থ;-তারা জান্নতুল ফেরদাউসের উত্তরাধিকারী হবে, তারা সেখানে চিরকাল থাকবে৷
# আর এটিই হল আল্লাহ তায়ালার মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য৷
১২/وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ مِن سُلَالَةٍ مِّن طِينٍ
অর্থ;-আমি মানুষ কে মাটির নির্যাস থেকে সৃষ্টি করেছি৷
# মানুষের খাদ্য ও পানিয়ের যাবতীয় উপাদান, আমিষ নিরামিষ মূলতঃ মাটি হতেই আসে৷ আর তা থেকেই শুক্রের জন্ম হয়৷ তাই মানুষের মূল উপাদানকে মাটির সারাংশ বা নির্যাস বলা হয়েছে৷
১৩/ثُمَّ جَعَلْنَاهُ نُطْفَةً فِي قَرَارٍ مَّكِينٍ
অর্থ;-তার পর আমি তাকে শুক্র বিন্দু রূপে সুরক্ষিত আধারে স্থাপন করি৷
# মাতৃগর্ভ অত্যন্ত সুরক্ষিত যায়গা৷ সেখানেই শুক্রে স্থাপন করেন৷
১৪/ثُمَّ خَلَقْنَا النُّطْفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقْنَا الْعَلَقَةَ مُضْغَةً فَخَلَقْنَا الْمُضْغَةَ عِظَامًا فَكَسَوْنَا الْعِظَامَ لَحْمًا ثُمَّ أَنشَأْنَاهُ خَلْقًا آخَرَ فَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ
অর্থ;-তারপর আমি শুক্রকে (আলাকা) ঝুলন্ত জোঁকের আকার করি, অতঃপর আলাকাকে মাংস পিণ্ডে পরিনত করি, অতঃপর সেই মাংসপিণ্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করি, অতঃপর অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত করি, অবশেষে তাকে উন্নত রূপে দাঁড় করাই৷ নিপুনতম সৃষ্টি করতা আল্লাহ কত কল্যানময়৷
# উপরের তিনটি আয়াতে ‘সুম্মা’ শব্দ দ্বারা মানুষ সৃষ্টির প্রথমিক স্তরকে চারটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে৷ পবিত্র কোরআনে এ বিষয়টির বর্ণনার ক্ষেত্রে এ আয়াত কটিই যথাযত ভূমিকা পালন করে৷
প্রথম স্তর; মাটির নির্যাস থেকে শুক্র সৃষ্টি৷ দ্বিতীয় স্তর; শুক্রকে সুরক্ষিত আধারে সংরক্ষন৷ তৃতীয় স্তর টিতে কয়েক দফা অবস্থার পরিবর্তন যেমন; শুক্রকে ঝুলন্ত জোঁকের আকার দান, তাকে চর্বিত মাংস পিণ্ডের ন্যায় করণ, তাথেকে হাড়ের সৃষ্টি, হাড়ের উপর মাংসের আস্তরণ৷ আর চতুর্থ স্তর; সুন্দর পূর্নাঙ্গ মানব শিশু রূপে গঠন৷
# ‘সুম্মা’ শব্দ দ্বারা স্তরগুলোকে আলাদা করা হয়েছে, আবার ‘ফা’শব্দ দ্বারা আকৃতি প্রকৃতির পরিবর্তন বোঝানো হয়েছে৷
‘আলাকা’ বলতে এ যাবৎ জমাট রক্তকেই বলা হয়েছে, কেননা ঐ অবস্থায় দৈবাৎ গর্ভপাত হলে তেমনই কিছু দেখাযেত৷ কিন্তু প্রযুক্তি উন্নয়নে আজ মানব দেহের অভ্যান্তরে কোথায় কি কেমন আছে তা আর অজানা নেই৷ ডঃ কিসেল মূর বলেন, গর্ভাশয়ে মানব ভ্রুণের অবস্থার পরিবর্তণের এমন নিখুঁত বর্ণনা এর চাইতে সঠিক আর হতেই পারেনা৷
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ এক হাদীশের বরাতে বলেন; মাতৃগর্ভে শিশুর প্রথম স্তর গুলি প্রতি চল্লিশ দিনের হয়ে থাকে৷ তিন স্তর পূর্ণ হলে, আল্লাহ তায়ালা ফেরেশ্তার মাধ্যমে একটি রুহ সেখানে স্থাপন করেন৷ পূর্বে তাকেই জান বা প্রাণ বলে ধারণা করা হত৷ কিন্তু আমরা জানি শুক্রও জীবন্ত আর তা সর্বাবস্থায় জীবন্তই থাকে৷ সেটি পাশবীক জীবন৷ তার সাথে রূহের সংমিশ্রনেই সৃষ্টি হয় মনুষ্য জীবন, সৃষ্টির সেরা জীব৷
১৫/ثُمَّ إِنَّكُمْ بَعْدَ ذَلِكَ لَمَيِّتُونَ
অর্থ;-এর পর তোমরা মৃত্যুবরণ করবে৷
১৬/ثُمَّ إِنَّكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ تُبْعَثُونَ
অর্থ;-অতঃপর কেয়ামতের দিন তোমরা পুনরুত্থিত হবে৷৷
১৭/وَلَقَدْ خَلَقْنَا فَوْقَكُمْ سَبْعَ طَرَائِقَ وَمَا كُنَّا عَنِ الْخَلْقِ غَافِلِينَ
অর্থ;-আমি তোমাদের উপর সপ্তপথ সৃষ্টি করেছি৷ আর আমি সৃষ্টি সম্পর্কে গাফেল নই৷
# এ আয়াতটি মোতাশাবেহাতের অন্তর্গত৷
১৮/وَأَنزَلْنَا مِنَ السَّمَاء مَاء بِقَدَرٍ فَأَسْكَنَّاهُ فِي الْأَرْضِ وَإِنَّا عَلَى ذَهَابٍ بِهِ لَقَادِرُونَ
অর্থ;-আর আমি আসমান থেকে পরিমান মত পানি বর্ষণ করে থাকি৷ অতঃপর আমি তা জমীনে সংরক্ষন করি এবং আমি তা অপসারণ করতেও সক্ষম৷
১৯/فَأَنشَأْنَا لَكُم بِهِ جَنَّاتٍ مِّن نَّخِيلٍ وَأَعْنَابٍ لَّكُمْ فِيهَا فَوَاكِهُ كَثِيرَةٌ وَمِنْهَا تَأْكُلُونَ
অর্থ;-অতঃপর আমি তা দ্বারা তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান সৃষ্টি করি৷ তোমাদের জন্য এতে প্রচুর ফল আছে এবং তোমরা তা থেকে আহার করে থাক৷
২০/وَشَجَرَةً تَخْرُجُ مِن طُورِ سَيْنَاء تَنبُتُ بِالدُّهْنِ وَصِبْغٍ لِّلْآكِلِينَ
অর্থ;-আর সৃষ্টি করেছি সেই বৃক্ষ যা তূরে সিনাইতে জন্মায় ও আহারকারীদের জন্য তৈল ও ব্যঞ্জন উৎপন্ন করে৷
২১/وَإِنَّ لَكُمْ فِي الْأَنْعَامِ لَعِبْرَةً نُّسقِيكُم مِّمَّا فِي بُطُونِهَا وَلَكُمْ فِيهَا مَنَافِعُ كَثِيرَةٌ وَمِنْهَا تَأْكُلُونَ
অর্থ;-আর তোমাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তু সমূহের মধ্যে চিন্তা করার বিষয় রয়েছে৷ আমি তোমাদেরকে তাদের উদরস্থিত বস্তু থেকে পান করাই এবং তোমাদের জন্য তার মধ্যে প্রচুর উপকারিতা রয়েছে৷ তোমরা তাদের কতককে ভক্ষণ কর৷
# উদরস্থিত বস্তু হতে বলতে দুধের কথা বলা হয়েছে, যাতে প্রচুর উপকারিতা আছে৷ সুরা নাহল এ বলা হয়েছে; তাদের পেটের গোবরও রক্তের মধ্যহতে দুধের সৃষ্টি করেন৷
২২/وَعَلَيْهَا وَعَلَى الْفُلْكِ تُحْمَلُونَ
অর্থ;-তাদের পিঠে ও জলযানে আরোহন করে তোমরা চলাফেরা করে থাক৷
বিষয়: বিবিধ
১২৩৭ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন