"আর আমাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে এ কাফের কওমের কবল থেকে রক্ষা কর!"
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৮:১৮:৩১ সকাল
(উর্দূ বয়ানুল কোরআনের ধারা বাহিক বাংলা অনুবাদ)
ইউনুস রুকু;-৯ আয়াত;-৮৩-৯২
আগের রুকুতে হজরত নূহ আঃ এর নিরাশ হওয়ার কথা শুনে এসেছি, আলোচ্য রুকুতে হজরত মূসা আঃ এর নিরাশ ও অতিষ্ঠ হয়ে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদের কথা পাওয়া যাবে৷
৮৩/فَمَا آمَنَ لِمُوسَى إِلاَّ ذُرِّيَّةٌ مِّن قَوْمِهِ عَلَى خَوْفٍ مِّن فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِمْ أَن يَفْتِنَهُمْ وَإِنَّ فِرْعَوْنَ لَعَالٍ فِي الأَرْضِ وَإِنَّهُ لَمِنَ الْمُسْرِفِينَ
অর্থ;-মুসার প্রতি, তার কওমের কতিপয় যুবক ছাড়া কেউ ইমান আনলনা, এ আশংকায় যে, ফেরাউন ও তার সর্দারদের নির্যাতনের ভয়ে৷ আর ফেরাউনতো সেদেশের কর্তৃত্বের শিখরে আরোহন করে ছিল, এবং সে ছিল অন্যতম সীমা লঙ্ঘনকারী৷
# অন্যেরা তো নয়ই, মুসা আঃ এর নিজ কওম বণী ইস্রাঈলের মাত্র কিছু যুবক ছাড়া অন্যেরা মুসা আঃ ও তাঁর কথায় আল্লাহর প্রতি ইমান আনেনি৷ তার কারণ, ফেরাউন তখন অত্যন্ত প্রতাপশালী নির্যাতনকারী বাদশা রূপে বিরাজ করছিল, সেই ফেরাউনের ভয়ে আর বণী ইস্রাঈলের কিছু হোমরা চোমরা প্রভাবশালী, যারা ফেরাউনের খয়েরখা হিসেবে তার দরবারে স্থান পেয়েছিল তাদের ভয়ে৷ এরা বণী ইস্রাঈলের মাঝেই বাস করত আর ফেরাউনের প্রভাব খাটাত৷ ঠিক যেমন, অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসকরা আমাদের দেশের বেশ কিছু গন্যমান্য লোকদের বিভিন্ন খেতাব, যেমন, খান বাহাদুর, রাজা সাহেব উপাধি দিয়ে বশ করে তাদের দিয়েই সমাজকে আয়ত্বে রাখত৷
বয়ষ্করা যেমন চিন্তা ভাবনা নাকরে কোন সিদ্ধান্ত নেয়না, যুবকরা ঠিক তেমন নয়৷ তারা চটজলদি সিদ্ধান্ত নিতে সর্বকালেই অগ্রগামী, তাই কিছু যুবকই মুসা আঃ এর কথায় ইমান আনতে পিছপা হয়নি৷
৮৪/وَقَالَ مُوسَى يَا قَوْمِ إِن كُنتُمْ آمَنتُم بِاللّهِ فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُواْ إِن كُنتُم مُّسْلِمِينَ
অর্থ;-মুসা বললেন, হে আমার কওম, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ইমান এনে থাক, তবে তারই উপর ভরসা কর, যদি তোমরা মুসলীম হয়ে থাক৷
৮৫/فَقَالُواْ عَلَى اللّهِ تَوَكَّلْنَا رَبَّنَا لاَ تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِّلْقَوْمِ الظَّالِمِينَ
অর্থ;-তারপর তারা বলল, আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করলাম৷ হে আমাদের রব, আমাদেরকে জালীম কওমের নির্যাতন ক্ষেত্র বানিওনা৷
#মুসলীম মানেই আল্লাহতে আত্মসপর্পণ করা৷ তাই মুসা আঃ তার সাথীদের বললেন, তোমরা যখন আল্লাহতে সমর্পীতই হয়েছ তখন কাউকে ভয় নাকরে আল্লাহর উপর ভরসা করেই থাক৷ সাহাবীরা তাই হোক বলে আল্লাহর কাছে একটা অনুরোধ জানালেন যেন তাদেরকে জালীমের নির্যাতন ক্ষেত্র না বানানো হয়৷ আমরা জানি, আবু জেহেলের পরীক্ষার কথা, যা নির্যাতন হয়ে হজরত ইয়াসীর ও সুমাইয়া রাঃ এর উপর চলেছিল৷ এমন যেন তাদের প্রতি না হয়, তারই আবেদন জানাল৷ সেই সঙ্গে আরও জানাল;
৮৬/وَنَجِّنَا بِرَحْمَتِكَ مِنَ الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
অর্থ;-আর আমাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে এ কাফের কওমের কবল থেকে রক্ষা কর৷
৮৭/وَأَوْحَيْنَا إِلَى مُوسَى وَأَخِيهِ أَن تَبَوَّءَا لِقَوْمِكُمَا بِمِصْرَ بُيُوتًا وَاجْعَلُواْ بُيُوتَكُمْ قِبْلَةً وَأَقِيمُواْ الصَّلاَةَ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ
অর্থ;-আর আমি ওহী পাঠালাম মুসা ও তার ভাইয়ের প্রতি যে তোমরা উভয়ে মিশরে কয়েকটি ঘর নির্ধারণ কর তোমাদের কওমের জন্য৷ তোমাদের ঘরগুলিকে কেবলা মুখী কর এবং নামাজ কায়েম কর আর মুমিনদেরকে সু-সংবাদ দাও৷
# আয়াতে নামাজ কায়েমের কথায় বোঝা যায় নামাজ তখনও ছিল, হয়ত ভিন্ন আঙ্গীকে, যাই হোক৷ নামাজের জন্যতো বটেই, আপোষে শলা পরামর্শের জন্যও একটি নির্দিষ্ট জায়গার প্রয়োজন৷ ফেরাউনের রাজ্যে তা সম্ভব হয়তো ছিলনা৷ তাই আল্লাহ তাদের বসবাসের মত করেই কিছু ঘর যা কেবলামুখী হবে এমন করে বানাতে বললেন, যাতে কাঙ্খীত কাজগুলি করা যাবে৷ আমরা জানি রসুল সঃ এমনই বৈঠকের জন্য দারে আরকাম নামে একটি ঘর বানিয়ে ছিলেন৷
এ আয়াতে কেবলার কথা বলা হয়েছে৷ তাওরাতের বর্ণনায় পাওয়া যায় এ কেবলা বর্তমানের বাইতুল্লাহই ছিল৷ কেননা মুসা আঃ অন্ততঃ হাজার বছর পর, হজরত সুলায়মান আঃ বাইতুল মোকাদ্দাস বা হায়কলে সুলায়মানী বানিয়েছিলেন৷ জানা যায় সে সময়ে তাদের কোরবানী গুলোও বাইতল্লাহমুখী হত৷
৮৮/وَقَالَ مُوسَى رَبَّنَا إِنَّكَ آتَيْتَ فِرْعَوْنَ وَمَلأهُ زِينَةً وَأَمْوَالاً فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا رَبَّنَا لِيُضِلُّواْ عَن سَبِيلِكَ رَبَّنَا اطْمِسْ عَلَى أَمْوَالِهِمْ وَاشْدُدْ عَلَى قُلُوبِهِمْ فَلاَ يُؤْمِنُواْ حَتَّى يَرَوُاْ الْعَذَابَ الأَلِيمَ
অর্থ;-মুসা বললেন, হে আমার রব, তুমি পার্থিব জীবনে ফেরাউন ও তার সর্দারদের আড়ম্বরের সামগ্রী ও নানা প্রকার ধন সম্পদ দান করেছ এজন্য যে তারা তোমাহতে (তোমার পথ) বিপথগামী করবে? হে আমার রব, তাদের ধন-সম্পদ ধ্বংস করে দাও এবং তাদের অন্তরগুলোকে কঠিন করে দাও যাতে কঠিন আজাব প্রত্যক্ষ্য না করা পর্যন্ত ইমান না আনে৷
# একজন নবী বা রসুল নিজ কওমের জন্য অবশ্যই সূহৃদ হন৷ কিন্ত এখানে মুসা আঃ এমন নিরাশ বা হতাশা গ্রস্থ ও অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেন যে তিনি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করলেন, যে ধন-সম্পদ ও প্রতিপত্তির কারণেই ফেরাউন আর তার সভাসদেরা দম্ভ ভরে তোমারবাণী অস্বীকার করে যাচ্ছে আর আমার সকল শ্রম বিফল হচ্ছে৷ তুমি তাদের সম্পদ ধ্বংস করে দাও আর আমার শ্রম যাতে বিফল না করতে পারে তার জন্য তাদের অন্তর কঠিন করে দাও যাতে আজাব চাক্ষুস করার আগে যেন ইমান না আনতে পারে৷ কেননা তার আগে যদি ইমান আনে তবে তাদের সব অন্যায়ই আল্লাহ মাফ করে দেবেন৷ কিন্তু আজাব আসার পর ইমান আনলেও আর মাফ হবে না৷
৮৯/قَالَ قَدْ أُجِيبَت دَّعْوَتُكُمَا فَاسْتَقِيمَا وَلاَ تَتَّبِعَآنِّ سَبِيلَ الَّذِينَ لاَ يَعْلَمُونَ
অর্থ;-তিনি (আল্লাহ) বললেন, তোমাদের দু জনের দোওয়া কবুল হয়ে গেছে৷ তবে, তোমরাও অটল থাকো এবং কখনও মুর্খের পথ অনুসরণ কোরনা৷
# আল্লাহ তাদের প্রার্থনা মঞ্জুর করে নিলেন আর তাদেরও অটল থাকতে বললেন এ বিষয়ে যে, যখন আজাব আসবে, তারা শাস্তি ভোগ করবে দেখে যেন তোমাদের মন বিগলিত না হয় আর আমার কাছে আজাব বন্ধের আবেদন না করো৷
৯০/وَجَاوَزْنَا بِبَنِي إِسْرَائِيلَ الْبَحْرَ فَأَتْبَعَهُمْ فِرْعَوْنُ وَجُنُودُهُ بَغْيًا وَعَدْوًا حَتَّى إِذَا أَدْرَكَهُ الْغَرَقُ قَالَ آمَنتُ أَنَّهُ لا إِلِـهَ إِلاَّ الَّذِي آمَنَتْ بِهِ بَنُو إِسْرَائِيلَ وَأَنَاْ مِنَ الْمُسْلِمِينَ
অর্থ;-আর আমি বণী ইস্রাঈলকে নদী পার করিয়ে দিলাম৷ তার পর তাদের পশ্চাদ অনুসরণ করলো ফেরাউন ও তার সৈন্য বাহিনী নিপিড়ন ও নির্যাতনের উদ্দেশ্যে৷ আর যখন নিমজ্জিত হতে লাগল বলল, আমি বিশ্বাস করলাম যে, কোন মাবুদ নেই তিনি ছাড়া, যার প্রতি ইমান এনেছে বণী ইস্রাঈল এবং আমি একজন তারই অনুগতদের অন্তর্ভূক্ত৷
# আমরা এ ঘটনা আগেই জেনে এসেছি যে, মুসা আঃ ও তাঁর সঙ্গীরা নদীর আড়াআড়ি শুকনা রাস্তাদিয়ে নদী পর হয়ে গেলেন আর ফেরাউন ও তার লসকরেরা ডুবে মরেছিল৷ বাড়তিটুকু হল, ঐ সময় ফেরাউন ইমানের ঘোষনা দিয়েছিল, জবাবে আল্লাহ বললেন;
৯১/آلآنَ وَقَدْ عَصَيْتَ قَبْلُ وَكُنتَ مِنَ الْمُفْسِدِينَ
অর্থ;-ও এখন! অথচ তুমি পূর্ব মুহূর্তে না ফরমানী করছিলে এবং পথ ভ্রষ্ঠদেরই অন্তর্ভূক্ত ছিলে৷
৯২/فَالْيَوْمَ نُنَجِّيكَ بِبَدَنِكَ لِتَكُونَ لِمَنْ خَلْفَكَ آيَةً وَإِنَّ كَثِيرًا مِّنَ النَّاسِ عَنْ آيَاتِنَا لَغَافِلُونَ
অর্থ;-আজ আমি তোমার শরীরকে রক্ষা করব, যাতে তুমি তোমার পরবর্তী লোকদের জন্য উপদেশ গ্রহনের বস্তু হয়ে থাক৷ আর বাস্তবিক পক্ষে অনেক লোক আমার নিদর্শন সন্মন্ধে অজ্ঞ রয়েছে৷
# আল্লাহ তায়ালা মুসা আঃ এর দোওয়া মোতাবেক কাজ করলেন, ফেরাউন আজাব দেখেই ইমান আনলো, তার সকল সম্পদের সাথে সেও শেষ হল৷ ইমান আনার বদৌলতে তার শরীরটাকে সংরক্ষন করলেন সাক্ষী হিসেবে৷ যা আজও আছে৷ অত্যাচারীর পরিনতির নিদর্শন, কিন্তু অত্যাচারীরা এ থেকে শিক্ষা গ্রহন করেনা৷
বিষয়: বিবিধ
১২৯৪ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেকদিন বসা হয়না।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
যারা আল্লাহর নিদর্শন সম্মন্ধে অজ্ঞ তারাই দুনিয়ার দেশে দেশে মানবিক বিপর্যয়ের প্রধান ভিলেন হিসেবে পরিচিত। আমাদের দেশেও এসব ভিলেনদের অস্থিত্ব বিদ্বমান। আমাদের দেশীয় ভিলেনরা ঈমানদারদের ঈমানে মরিচিকা ধরে যাওয়ার সুযোগে দজ্জালীয় ফিতনা বাস্তবায়ন করে সমাজটাকে তসনস করে দিচ্ছে। এর থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে ঈমানদের ঈমানকে মরিচিকামূক্ত করা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন