`নিঃসন্দেহে তারাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে যারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎকে অস্বীকার করেছে আর তারা সৎপথ প্রাপ্ত ছিলনা`৷

লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৯:৩৩:৪৫ রাত



ইউনুস রুকু;-৫ আয়াত;-৪১-৫৩

৪১/وَإِن كَذَّبُوكَ فَقُل لِّي عَمَلِي وَلَكُمْ عَمَلُكُمْ أَنتُمْ بَرِيئُونَ مِمَّا أَعْمَلُ وَأَنَاْ بَرِيءٌ مِّمَّا تَعْمَلُونَ

অর্থ;-আর যদি তারা আপনার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে তবে, আপনি বলুন; আমার জন্য আমার কর্ম এবং তোমাদের জন্য তোমাদের কর্ম৷ তোমরা সে বিষয় থেকে দায়মুক্ত যা আমি করি, এবং আমিও দায় মুক্ত তাথেকে যা তোমরা কর৷



# আল্লাহ ভাল করেই জানেন, কারা ইমান আনবে আর কারা শত চেষ্টা করেও তা আনবে না৷ আল্লাহ বলেন, হে নবী, আপনার এত চেষ্টা করার পরও যদি তারা আপনার কথা অবিশ্বাসই করে, তবে বলে দিন, তাদের দায় দায়িত্ব তাদেরই থাক, আপনার উপর তাদের কোন দায় নেই৷ ঠিক তেমনই আপনার কোন কাজের দায়ভার তাদের উপরও থাকবেনা৷

৪২/وَمِنْهُم مَّن يَسْتَمِعُونَ إِلَيْكَ أَفَأَنتَ تُسْمِعُ الصُّمَّ وَلَوْ كَانُواْ لاَ يَعْقِلُونَ

অর্থ;-আর তাদের মধ্যে কতক এমন লোকও আছে যারা, মনযোগ সহ আপনার কথা শোনে৷ তবেকি আপনি বধিরকে শোনাতে চান, যদিও তারা না বোঝে?

# বিশিষ্ট জনদের মধ্যে এমন কিছু লোক ছিল, যারা সাধারণ লোকদের প্রতিনিধি রূপে রসুল সঃ এর মজলিশে এসে এমন ভান করত যে তারা খুব মনযোগ দিয়ে শুনছে৷ কিন্তু আসলে এরা শুনতো না৷ শুধুই মানুষকে উল্টো সিধে বুঝিয়ে দলে রাখার চেষ্টা করত মাত্র৷ আল্লাহ এদের বধির বা কানে শোনেনা এমন লোক বলেছেন৷

৪৩/

وَمِنهُم مَّن يَنظُرُ إِلَيْكَ أَفَأَنتَ تَهْدِي الْعُمْيَ وَلَوْ كَانُواْ لاَ يُبْصِرُونَ

অর্থ;-তাদের মধ্যে কেউ কেউ আপনার দিকে তাকিয়ে থাকে৷ আপনি কি অন্ধকে পথ দেখাতে চান, যদিও তারা মোটেও দেখেনা?



# আর কিছু লোক আছে, মজলিশে বসে শুধু তাকিয়েই থাকে, কিন্ত চাক্ষুস তাকিয়েে থাকলেও তাদের অন্তরের চোখ বন্ধই থাকে৷ আসলে তারা কিছুই দেখেনা৷ আল্লাহ এদেরকে অন্ধ বলেছেন৷ যে শোনেনা তাকে শোনানোর চেষ্টা করা আর যে দেখেনা তাকে দেখানোর চেষ্টা করা উভয়ই বেকার৷

৪৪/إِنَّ اللّهَ لاَ يَظْلِمُ النَّاسَ شَيْئًا وَلَـكِنَّ النَّاسَ أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ

অর্থ;-নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি বিন্দুমাত্র জুলুম করেন না, বরং মানুষই নিজেদের প্রতি জুলুম করে৷



# আল্লাহ কারও উপরেই কোন রকম বাড়া বাড়ি বা জুলুম করেন না৷ মানুষ নিজেই বাড়াবাড়ি করে তার কর্মফল ভোগকরে৷

৪৫/وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ كَأَن لَّمْ يَلْبَثُواْ إِلاَّ سَاعَةً مِّنَ النَّهَارِ يَتَعَارَفُونَ بَيْنَهُمْ قَدْ خَسِرَ الَّذِينَ كَذَّبُواْ بِلِقَاء اللّهِ وَمَا كَانُواْ مُهْتَدِينَ

অর্থ;-আর যেদিন তাদেরকে সমবেত করা হবে, যেন তারা অবস্থান করেনি, তবে দিনের এক দণ্ড মাত্র, একে অপরকে চিনবে৷ নিঃসন্দেহে তারাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, যারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে অস্বীকার করেছে আর তারা সৎপথ প্রাপ্ত ছিলনা৷



# কেয়ামতের দিন যখন সকলকে সমবেত করা হবে, সে দিনটি এতই লম্বা হবে যে সে তুলনায় দুনিয়ায় ও কবরে অবস্থানকে অতি সামান্য, দিনের একটি দণ্ডের সমান মনে হবে৷ সেখানে একে অপরকে চিনতে পারবে৷ আর যারা দুনিয়ায় সঠিক পথ অবলম্বন করেনি তারা সেদিন ক্ষতির সন্মুখীন হবে, এতে কোন সন্দেহ নেই৷

৪৬/وَإِمَّا نُرِيَنَّكَ بَعْضَ الَّذِي نَعِدُهُمْ أَوْ نَتَوَفَّيَنَّكَ فَإِلَيْنَا مَرْجِعُهُمْ ثُمَّ اللّهُ شَهِيدٌ عَلَى مَا يَفْعَلُونَ

অর্থ;-আর তাদের সাথে আমি যে শাস্তির ওয়াদা করেছি তার কিছু যদি আপনাকে দেখাই বা আপনাকে ওফাত দান করি, যাই হোক আমার কাছেই তাদের ফিরে আসতে হবে৷ তার পর তাদের কৃত কর্মের জন্য আল্লাহই সাক্ষী৷



# রসুল সঃ জীবদ্দশায় বা তাঁর ওফাতের পর যখনই হোক তাদের কিছু শাস্তি দেখানো হতেও পারে আবার নাও হতে পারে৷ সে যাই হোক সকলকে সেই আল্লাহর কাছে ফিরে যেতেই হবে, যিনি সকলের সকল কর্মের সাক্ষী৷ এবং তখনই তাদের কৃত কর্মের শাস্তি নিতেই হবে৷

৪৭/وَلِكُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولٌ فَإِذَا جَاء رَسُولُهُمْ قُضِيَ بَيْنَهُم بِالْقِسْطِ وَهُمْ لاَ يُظْلَمُونَ

অর্থ;-প্রত্যেক উম্মতের জন্য রয়েছে একজন রসুল৷ আর যখন তাদের রসুল এসেগেছে তখন তাদের মাঝে ন্যায় ভাবে মিমাংসা করা হয়েছে৷ এবং তাদের প্রতি জুলুম করা হয়নি৷



# নবী নয় রসুলের কথা বলা হয়েছে৷ প্রত্যেক কওমের জন্য রসুল নির্দিষ্ট ছিল৷ যখন রসুল তাদের মাঝে এলেন, সর্বশেষ প্রচেষ্টা দিয়েও যাদেরকে সুপথে আনতে বিফল হলেন, তখনই তারা শাস্তি যোগ্য হয়ে গেল৷ এমন অনেক কওমের কথা আমরা জেনে এসেছি৷ হজরত নূহ আঃ সাড়ে নয় শত বৎসর তাঁর কওমকে সুপথের দাওয়াত দিয়ে মত ভেদে মাত্র আশি জনকে সুপথে আনতে পেরে ছিলেন, বাকীদের ধ্বংস হতে হয়ে ছিল৷ এমনই আদ জাতী, সামুদ জাতী, সদুম আমুরার অধিবাসীগন, হজরত লূত, শোয়াইব আঃ এর কওমের অবাধ্যজনদের শাস্তির কথা আমরা জানি৷ আল্লাহ বলেন, কারও উপর কোন রকম জুলুম বা বাড়াবাড়ি বা অন্যায় করা হয়নি৷ মক্কার মুশরীগনের এ সব জানা হয়ে গেছে৷ তার পরও তারা আজাব দেখতে চায়৷

তবে অন্য সব কওমের সাথে এ কোরাইশদের কিছুটা ভিন্নতা আছে৷ হজরত আবুবকর, ওমর, তালহা, যুবায়ের, হামজা রাঃ গন, এদেরই বিশিষ্ট জনেরা, ইতি মধ্যে মুমিন হয়েছেন৷ আমরা এ কওমের অবাধ্য জনদের সাজা, যা দুই কিস্তিতে দেওয়া হয়েছে তা জেনে এসেছি৷ এবং তা রসুল সঃ এর জীবদ্দশাতেই দেওয়া হয়েছে৷

৪৮/وَيَقُولُونَ مَتَى هَـذَا الْوَعْدُ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ

অর্থ;-আর তারা বলে, এ ওয়াদা কবে আসবে? যদি তোমরা সত্যবাদী হও৷

৪৯/قُل لاَّ أَمْلِكُ لِنَفْسِي ضَرًّا وَلاَ نَفْعًا إِلاَّ مَا شَاء اللّهُ لِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٌ إِذَا جَاء أَجَلُهُمْ فَلاَ يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً وَلاَ يَسْتَقْدِمُونَ

অর্থ;-আপনি বলেদিন, আমি আমার নিজের ক্ষতি কিংবা লাভের মালিক নই, আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া৷ প্রত্যেক উম্মতের জন্য রয়েছে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ৷ যখন তাদের নির্দিষ্ট সময় আসবে তখন তারা মুহূর্তকাল পিছনে সরতে পারবেনা এবং অগ্রসর হতেও পারবেনা৷



# আগে বলা হয়েছে, প্রত্যেক কওমের জন্য একজন রসুল আছেন, রসুল না আসা পর্যন্ত তাদের শাস্তি হয়নি৷ এখানে বলা হচ্ছে, প্রত্যেক কওম বা উম্মতের জন্য রয়েছে একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ, ব্যক্তিগত পর্যায়ে যাকে আয়ু বলা হয়৷ সেই নির্দিষ্ট সময়ের আগেও কাউকে শাস্তি দেওয়া হয়না৷ আবার নির্দিষ্ট সময়টি এসে গেলে এক মুহূর্ত তা সামনে পিছনে নড়াচড়া করবে না৷ এটাই আল্লাহর নিয়ম৷ তাই আজাব দেখতে চাইলেই তা দেখা যাবেনা৷ কিন্তু সময় মত ঠিকই এসেছিল৷ প্রথমবার বদরের যুদ্ধে আর দ্বিতীয়টি নবম হিজরীতে, যা সুরা তওবার শুরুতেই ঘোষণা করা হয়েছে৷

৫০/قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَتَاكُمْ عَذَابُهُ بَيَاتًا أَوْ نَهَارًا مَّاذَا يَسْتَعْجِلُ مِنْهُ الْمُجْرِمُونَ

অর্থ;-বলুন, তোমরা কি ভেবে দেখেছ, যদি রাতে কিংবা দিনে তার আজাব এসে পড়ে, এর মধ্যে কি আছে যার কারণে অপরাধীরা ত্বরান্বিত করতে চায়৷



৫১/أَثُمَّ إِذَا مَا وَقَعَ آمَنْتُم بِهِ آلآنَ وَقَدْ كُنتُم بِهِ تَسْتَعْجِلُونَ

অর্থ;-তবেকি তা এসে যাবার পর বিশ্বাস করবে? হাঁ, এখন স্বীকার করলে, তখন তোমরা এরই তাগাদা করতে৷

৫২/ثُمَّ قِيلَ لِلَّذِينَ ظَلَمُواْ ذُوقُواْ عَذَابَ الْخُلْدِ هَلْ تُجْزَوْنَ إِلاَّ بِمَا كُنتُمْ تَكْسِبُونَ

অর্থ;-অতঃপর জালীমদের বলা হবে, অনন্ত আজাবের স্বাদ গ্রহন করতে থাকো৷ তোমরা যা করতে তার বদলা ছাড়া আর কিছু নয়৷



# আল্লাহ রসুল সঃ কে জানতে বলেন, তারা যে আজাব আনো আজাব আনো বলে ব্যস্ত হচ্ছে, কি এমন জিনিষ আছে যার বলে তারা এ সাহস দেখাচ্ছে৷ তারা কি মনে করে, আজাব দেখে, তার গুরুত্ব অনুভব করে তবে ইমান আনবে৷ তখন বড়ই দেরী হয়ে যাবে৷ সে সময় পাবেনা৷ বরং তখন বলা হবে, এই সেই আজাব৷ যার জন্য অপেক্ষায় ছিলে, তা এখন ভোগ কর৷ আর এটা তোমাদেরই কর্মফল৷

৫৩/وَيَسْتَنبِئُونَكَ أَحَقٌّ هُوَ قُلْ إِي وَرَبِّي إِنَّهُ لَحَقٌّ وَمَا أَنتُمْ بِمُعْجِزِينَ

অর্থ;-আর তারা আপনার কাছে খবর জানতে চায়, এটা কি সত্য? আপনি বলেদিন, হাঁ, আমার রবের কসম, এটা অবশ্যই সত্য৷ আর তোমরা তা রদ করতে পারবেনা৷

# অনেক ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, কোরআন সার্চিং প্রশ্ন করে৷ ঠিক তেমই একটা সার্চিং প্রশ্ন মুশরীকরা রসুলের কাছে করেছে যে, আজাব সত্যই কি আসবে! আল্লাহর কথা মত রসুল সঃ ও তেমনই জোর দিয়ে উত্তর দিচ্ছেন, আমার রবের কসম, এটা অবশ্যই সত্য৷ আর তা রদ করার সাধ্য তোমাদের নেই৷

বিষয়: বিবিধ

১৪৬৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File