"অতএব, তার চেয়ে অধিক জালিম কে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে অথবা তার আয়াত কে অস্বীকার করে"!

লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ০৩ অক্টোবর, ২০১৩, ০৯:৫২:৩৭ সকাল

(উর্দূ 'বয়ানুল কোরআনে'র ধারা বাহিক বাংলা অনুবাদ)

ইউনুস রুকু;-২ আয়াত;-১১-২০

ছোট খাট ভূল ত্রুটি যা অনেক সময় মানুষ না বুঝেই করে, এমন কিছু কথা নিয়েই এ সুরার দ্বিতীয় রুকুটি শুরু হতে যাচ্ছে৷

১১/وَلَوْ يُعَجِّلُ اللّهُ لِلنَّاسِ الشَّرَّ اسْتِعْجَالَهُم بِالْخَيْرِ لَقُضِيَ إِلَيْهِمْ أَجَلُهُمْ فَنَذَرُ الَّذِينَ لاَ يَرْجُونَ لِقَاءنَا فِي طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُونَ

অর্থ;-আর যদি আল্লাহ মানুষের ক্ষতি সাধনে তাড়া হুড়ো করতেন, যেমন তারা দ্রুত কল্যান লাভ করতে চায়, তবে তাদের নির্দিষ্ট সময় কবেই পূর্ণ করে দেওয়া হত৷ সুতরাং যারা আমার সাক্ষাত লাভের আশা রাখেনা, আমি তাদের ছেড়ে রাখি যেন তারা নিজের অবাধ্যতায় দিশেহারা অবস্থায় ঘুরে বেড়ায়৷

# আল্লাহ বলেন, মানুষ তার ভাল কাজের বদলা শিঘ্রই আশা করে, তেমনই যদি আমি তাদের খারাপ কাজের বদলা শিঘ্রই দিয়ে দিতাম তবে তাদের আয়ু অনেক আগেই শেষ হয়ে যেত৷ অতএব যারা আমার সাক্ষাত লাভের আশা রাখেনা আমি তাদের সেই অবাধ্যতার মধ্যে বা তাদের সেই খারাপ কাজের মধ্যেই রেখে দেই, যাতে তারা তাদেরই কৃত কর্মে দিশেহারা হয়ে ঘুরতে থাকে৷ অতএব, মানুষ যে সৎ পথের আশায় দিশেহারা হয়ে ঘুরে বেড়ায় তা তার নিজেরই কর্মফল বা ভ্রান্ত পথে পা বাড়ানোর ফল৷

##আজ বিশ্বের মুসলীম দিশেহারা, অপদস্থ, জুলুমের শিকার তা ও তাদেরই আপন কামাই, এ কথা বলাই যায়৷

১২/وَإِذَا مَسَّ الإِنسَانَ الضُّرُّ دَعَانَا لِجَنبِهِ أَوْ قَاعِدًا أَوْ قَآئِمًا فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُ ضُرَّهُ مَرَّ كَأَن لَّمْ يَدْعُنَا إِلَى ضُرٍّ مَّسَّهُ كَذَلِكَ زُيِّنَ لِلْمُسْرِفِينَ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ

অর্থ;-আর যখন কোন মানুষকে কোন বিপদ স্পর্শ করে তখন সে, শুয়ে, বসে, দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকতে থাকে৷ তার পর যখন আমি তার থেকে সে বিপদ দূর করে দেই তখন সে এমন হয়ে যায় যে, যেন সে কোনদিন আমাকে ডাকেইনি, সে বিপদ হতে মুক্তির জন্য যা তাকে স্পর্শ করেছিল৷ সীমা লঙ্ঘনকারীদের কাছে এমন কাজই শোভন বলে মনে হয়৷



# মানুষ যখন বিপদে পড়ে তখন অতি বিনয়ের সাথে, সব অবস্থাতেই আল্লাহর কাছে সেই বিপদ হতে উদ্ধারের জন্য প্রার্থনা করে৷ কিন্তু যখন আল্লাহ তাকে সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করেন বা বিপদ কেটে যায়, তখন সে বে মালুম আল্লাহকে ভূলে যায়৷ এমনকি পুনরায় আবার তার বিপদ হতে পারে তাও মনে রাখেনা৷ এটা অবশ্যই অকৃতজ্ঞতার নমুনা৷ শুধু আল্লাহর সঙ্গেই নয়, মানুষ মানুষের সঙ্গেও এমনই ব্যবহার করে থাকে৷ যদিও সকলে নয়৷ রসুল সঃ বলেন, যে মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ নয় সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞ হতে পারেনা৷

১৩/وَلَقَدْ أَهْلَكْنَا الْقُرُونَ مِن قَبْلِكُمْ لَمَّا ظَلَمُواْ وَجَاءتْهُمْ رُسُلُهُم بِالْبَيِّنَاتِ وَمَا كَانُواْ لِيُؤْمِنُواْ كَذَلِكَ نَجْزِي الْقَوْمَ الْمُجْرِمِينَ

অর্থ;-আর অবশ্যই আমি তোমাদের পূর্বে অনেক কওমকে ধ্বংস করে দিয়েছি যখন তারা জুলুম করেছিল, অথচ তাদের কাছে রসুলগন এসেছিলেন স্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে৷ কিন্তু তারা কিছুতেই ইমান আনার ছিলনা৷ এ ভাবেই আমি অপরাধী লোকদেরকে প্রতিফল দিয়ে থাকি৷

১৪/ثُمَّ جَعَلْنَاكُمْ خَلاَئِفَ فِي الأَرْضِ مِن بَعْدِهِم لِنَنظُرَ كَيْفَ تَعْمَلُونَ

অর্থ;-অতঃপর আমি তোমাদেরকে তাদের স্থলে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি, যেন আমি দেখে নেই তোমরা কিরূপ কাজ কর৷

# বিপথে চলা জনগোষ্ঠিকে সুপথে আনার জন্য আল্লাহ তায়ালা হজরত আদম আঃ এর সাথেই ওয়াদা করেছিলেন যে তিনি হেদায়েত পাঠাবেন৷ যারা সেই হেদায়েত গ্রহন করবে তাদের কোন ভয় থাকবে না৷ সেই মত তিনি যুগে যুগে নবী রসুলগনকে হেদায়েত দিয়ে পাঠিয়েছেন, কিন্তু অনেকেই তা অগ্রাহ্য করেছে৷ এবং আল্লাহ ও তার নিয়ম মোতাবেক তাদের ধ্বংস করেছেন৷ নতুন কওমের সৃষ্টি হয়েছে৷ আবারও বিপথে চলেছে, নবী এসেছেন, অবাধ্যরা ধ্বংস হয়েছে, এভাবেই বর্তমান কওম সামনে এসেছে৷ তাদের কাছেই রসুল সঃ এসেছেন৷ আল্লাহ দেখতে চান এরা কেমন কাজ করে৷

১৫/وَإِذَا تُتْلَى عَلَيْهِمْ آيَاتُنَا بَيِّنَاتٍ قَالَ الَّذِينَ لاَ يَرْجُونَ لِقَاءنَا ائْتِ بِقُرْآنٍ غَيْرِ هَـذَا أَوْ بَدِّلْهُ قُلْ مَا يَكُونُ لِي أَنْ أُبَدِّلَهُ مِن تِلْقَاء نَفْسِي إِنْ أَتَّبِعُ إِلاَّ مَا يُوحَى إِلَيَّ إِنِّي أَخَافُ إِنْ عَصَيْتُ رَبِّي عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ

অর্থ;-আর যখন তাদের কাছে আমার আয়াত সমুহ তেলাওয়াত করা হয়, তখন যারা আমার সাক্ষাত লাভের আশা রাখেনা তারা বলে, এটি ছাড়া অন্য কোন কোরআন নিয়ে এস বা একে বদলে দাও৷ আপনি বলে দিন, এ আমার কাজ নয় যে, এতে আমি আমার নিজের তরফ থেকে কিছু রদবদল করব, আমিতো কেবল তারই অনুসরণ করি যা আমার প্রতি ওহী করা হয়৷ আমি যদি আমার রবের না ফরমানী করি তবে, ভয় করি আমার রবের আজাবের৷

# যখনই মানুষের স্বার্থের ব্যঘাত হয় তখনই মানুষ ভিন্ন চিন্তা করে৷ মুশরীকদের বিশ্বাসে এমনই আঘাত এল যে তারা পবিত্র কোরআনকে বদলে অন্য সহজ কোরআন বা এতে কিছু রদ বদল করার পরামর্শ দিল৷ বলল “আমরা এ আপোষহীন কোরআন মানতে পারছি না৷ আসুন আপোষ করি, আপনি আমাদের কিছু মানবেন আর আমরা আপনার কিছু মানব”৷ (শুধু তখন নয় এমন দাবী যুগে যুগে এসেছে)৷ আল্লাহ রসুলের মাধ্যমে বললেন, “এতে নবীর করনীয় কিছুই নেই৷ তাঁর প্রতি যা নির্দেশ দেওয়া হয় তিনি তা করতে বাধ্য৷ বরং অন্যথা করলে বিচারের দিনে শাস্তিই হবে৷”

১৬/قُل لَّوْ شَاء اللّهُ مَا تَلَوْتُهُ عَلَيْكُمْ وَلاَ أَدْرَاكُم بِهِ فَقَدْ لَبِثْتُ فِيكُمْ عُمُرًا مِّن قَبْلِهِ أَفَلاَ تَعْقِلُونَ

অর্থ;-বলুন, যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তবে আমি এটা তোমাদেরকে শোনাতাম না এবং তিনিও এটা তোমাদেরকে জানাতেন না৷ জীবনের দীর্ঘ সময়তো আমি তোমাদের মধ্যে অবস্থান করেছি, তবেকি তোমরা এতটুকুও বোঝ না৷

# রসুল সঃ তাঁর জীবনের চল্লিশটা বছর তাদের মধ্যে কাটিয়েছেন৷ কোন দিন কোন মিথ্যা বলেন নি, কোন ছল চাতুরী করেননি, লোভ লালসা তাঁর মধ্যে স্থান পায়নি, তা এরা সবই জানে, দেখেছে৷ বিশ্বস্থতার জন্য তারাই তাঁকে আল আমিন উপাধী দিয়েছে, অতএব আজ তাদের তাঁকে বিশ্বাস করতে বাধা কোথায়? তিনি যে আল্লাহরই আদেশ মত তারই নাজিল কৃত আয়াত তাদের সামনে বয়ান করছেন, এটা বিশ্বাস করতে দ্বিধা কেন৷ এটাই বোঝাতে চাইলেন৷

১৭/فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللّهِ كَذِبًا أَوْ كَذَّبَ بِآيَاتِهِ إِنَّهُ لاَ يُفْلِحُ الْمُجْرِمُونَ

অর্থ;-অতএব তার চেয়ে অধিক জালেম কে যে, আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে, অথবা তার আয়াতকে অস্বীকার করে৷ অপরাধীরা কখনও সফলকাম হয়না৷

১৮/وَيَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللّهِ مَا لاَ يَضُرُّهُمْ وَلاَ يَنفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَـؤُلاء شُفَعَاؤُنَا عِندَ اللّهِ قُلْ أَتُنَبِّئُونَ اللّهَ بِمَا لاَ يَعْلَمُ فِي السَّمَاوَاتِ وَلاَ فِي الأَرْضِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ

অর্থ;-আর তারা উপাসনা করে আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কিছুর যা তাদের কোন ক্ষতিও করতে পারেনা এবং কোন উপকারও করতে পারেনা৷ তারা বলে, এরা আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী৷ আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহকে আসমান জমীনের এমন কিছুর সংবাদ দিচ্ছ যা তিনি জানেন না? তিনি পবিত্র এবং বহু উর্দ্ধে যা তারা শরিক করে৷

# এ আয়াতে যেমন জড় পদার্থকে দেবতা মানার অসারতা প্রমান করা হয়েছে, তেমনই মুশরীকদের শির্কের আসল রূপ বার হয়ে এসেছে৷ আমরা জানি, মক্কার মুশরীকরা সৃষ্টি কর্তা হিসেবে আল্লাহকেই জানত, তার পরও তারা পাথর দেবতাদেরও মান্য করত৷ তাদের ধারণা ছিল, এরা আল্লাহর অত্যন্ত প্রীয় জন, আমাদের অপরাধের জন্য এরাই আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করবে৷ আর এটাই শির্ক৷

সুপারিশ বা সাক্ষী সে বিষয়েই প্রয়োজন হয় যা বিচারক জানেন না৷ তাই আল্লাহ বলেন, তারাকি এমন কিছুর ব্যাপারে সুপারিশ করবে বা আমাকে জানাবে যা আমি জানিনা৷ অথচ বিশ্বে এমন কিছুই নেই যা আল্লাহর অগোচরে আছে৷ আয়াতুল কূরসীতেও আমরা এ বিষয়ে জেনে এসেছি৷

এই প্রসঙ্গে বলাযেতে পারে, যারা আপন পীর বা মুর্শীদ কে, তিনি জিবীত বা মৃত যাইহোন, নিজের গোনাহ মাফ বা মুক্তির জন্য সুপারিশ কারী মনে করেন, তারাও ঠিক মূর্তী পুঁজার মতই শির্ক করেন৷

১৯/وَمَا كَانَ النَّاسُ إِلاَّ أُمَّةً وَاحِدَةً فَاخْتَلَفُواْ وَلَوْلاَ كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِن رَّبِّكَ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ فِيمَا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ

অর্থ;-মানুষতো পূর্বে একই উম্মত ছিল, পরে তারা মতভেদ সৃষ্টি করে৷ আর আপনার রবের পক্ষ থেকে যদি একটি বাণী নির্ধারিত না হয়ে থাকত, তবেতো তাদের মধ্যে চুড়ান্ত মিমাংসা করে দেওয়া হত, সে বিষয়ে যা তারা মতভেদ করেছে৷

# সুরা বাক্বারার আয়াতুল এখ্তেলাফে (২১৩) আমরা এ কথা পড়ে এসেছি৷ হজরত আদম আঃ হলেন সকল মানুষের আদী ও পূর্ব পুরুষ৷ তাঁর বংশ ধরেরা সংখ্যায় বর্দ্ধিত হতে থাকলে মতভেদেও বর্দ্ধিত হতে থাকে৷ এর পর আল্লাহ তাদের মত ভেদ দূর করে সঠিক মতে ফিরিয়ে আনতে নবী পাঠালেন, কতেক নবীর পথে এলেও কতেক ভিন্নমতে ভিন্ন পথে রয়ে গেল৷ এ ভাবেই ক্রমশঃ মানুষ বিভিন্ন কওম বা জাতি বা উম্মতে পরিনত হল৷

আল্লাহ বলেন এদের তাৎক্ষনিক ভাবেই শেষ করে দেওয়া যেত যদিনা তিনি পূর্বেই তাদের একটা নির্দিষ্ট বয়স বা ‘আজল’ নির্ধারণ করতেন বা তাদের স্বধীন ভাবে চলে বিচারের মুখোমুখী করার ব্যবস্থা স্থির না করতেন৷ এখানে যেনে রাখা দরকার, মানুষের যেমন মেয়াদ কাল আছে তমনই প্রতিটি জাতিরও মেয়াদ কাল আছে৷ আবার সমগ্র পৃথিবীরও একটা মেয়াদ কাল আছে, যার বাইরে কেউই যেতে পারবেনা৷

২০/وَيَقُولُونَ لَوْلاَ أُنزِلَ عَلَيْهِ آيَةٌ مِّن رَّبِّهِ فَقُلْ إِنَّمَا الْغَيْبُ لِلّهِ فَانْتَظِرُواْ إِنِّي مَعَكُم مِّنَ الْمُنتَظِرِينَ

অর্থ;-আর তারা বলে, পরওয়ারদিগারের তরফ হতে তাদের কাছে কোন নিদর্শন নাজিল করা হয়না কেন৷ আপনি বলেদিন, গায়েবের খবরতো কেবল আল্লাহরই আছে, সুতরাং তোমরা প্রতিক্ষায় থাক, আমিও তোমাদের সাথে প্রতিক্ষায় থাকলাম৷

বিষয়: বিবিধ

১৫৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File