"যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে এ সুরা (তওবা) তাদের মলিনতার সঙ্গে আরও মলিনতা বৃদ্ধি করে এবং তারা কাফের অবস্থায়ই মৃত্যু বরণ করে"৷
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৫:৫২:৫৬ বিকাল
(উর্দু ডিভিডি বয়ানুল কোরআনের ধারা বাহিক বাংলা অনুবাদ৷)
আত তাওবাহ রুকু;-১৬ আয়াত;-১২৩-১২৯(শেষ)
আমরা জানি মোহাম্মাদুর রসুল সঃ এর নবুওত বা ইসলামী মিশনটি দুইটি ধারায় বিভক্ত, যার প্রথমটি সমগ্র আরব উপ-দ্বীপ ব্যাপী৷ অপরটি বহিরারবের জন্য৷ প্রথমটি কার্যকরী করার সময় বলা হয়েছিল; ‘যুদ্ধ কর যতক্ষন না আল্লাহর দ্বীন পূর্ণ রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়’৷
সেখানে পূর্ণ সফলতার পরই তিনি তাঁর দ্বিতীয় ধারাটি শুরু করেন৷ সেই ধারাটির সম্প্রসারণের পদ্ধতি নিয়েই আসছে এ রুকুর প্রথম আয়াত টি;-
১২৩/ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ قَاتِلُواْ الَّذِينَ يَلُونَكُم مِّنَ الْكُفَّارِ وَلِيَجِدُواْ فِيكُمْ غِلْظَةً وَاعْلَمُواْ أَنَّ اللّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ
অর্থাৎ;-হে ইমানদারগন, তোমরা যুদ্ধ কর তোমাদের নিকটবর্তী কাফেরদের সাথে৷ এবং তারা যেন তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখতে পায়৷ জেনে রেখ, আল্লাহ তো মুত্তাকীদের সাথে আছেন৷
# নিজ এলাকা, শহর বা দেশে ইসলাম কায়েম করেই ক্ষ্যান্ত হলে মুমিনদের চলবে না৷ তাদের অগ্রসর হতে হবে৷ প্রতিবেশী এলাকা বা দেশেও ইসলাম কায়েমের চেষ্টা করতে হবে৷ কেননা, নবী সঃ ছিলেন সমগ্র পৃথিবীর জন্য নবী৷ তাঁরই অসমাপ্ত মিশন এখন মুমিনদের জিম্মায়, যে মুমিনদের জান ও মাল বেহেশ্তের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে বাকীতে বিক্রী হয়ে গেছে৷ মুমিনদের নয়টি গুনাবলীর কথা আমরা ১১২নং আয়াতে পড়ে এসেছি, যার ছয়টি চারিত্রিক ও তিনটি সামাজিক৷ সামাজিক তিনটির শেষেরটি হল আল্লাহর নির্ধারিত সীমানা অতিক্রম করতে না দেওয়া৷ অর্থাৎ অবৈধ ব্যাপারে কঠোরতার সাথে বাধাদান ও বৈধ বিষয়ে আদেশ দেওয়া৷ এখানে সেই কঠোরতার কথাই মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ আর এ ভাবেই ইসলামকে অগ্রসর করতে হবে৷
এ আয়াতের আলোকেই সাহাবীদের বাহিনী সাধ্যমত ইসলামকে প্রসারিত করে গেছেন৷ আর এভাবেই এক দিন সারা পৃথিবীতেই ইসলাম প্রসারিত হবে৷ তাই যারা মনে করেণ, কলেমা, নামাজ, রোজা, হজ্জ্ব, জাকাত, দান খয়রাত সহ ভাল কাজের মাঝেই ইসলাম সীমাবদ্ধ, তাদের অবস্থান ভেবে দেখা দরকার৷
১২৪/ وَإِذَا مَا أُنزِلَتْ سُورَةٌ فَمِنْهُم مَّن يَقُولُ أَيُّكُمْ زَادَتْهُ هَـذِهِ إِيمَانًا فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُواْ فَزَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَهُمْ يَسْتَبْشِرُونَ
অর্থাৎ;-আর যখন কোন সুরা নাজিল করা হয় তখন তাদের মধ্যকার কেউ কেউ বলে, এ সুরাটি তোমাদের কার কার ইমান বৃদ্ধি করল? তবে, যারা ইমান এনেছে, এ সুরা তাদের ইমান বৃদ্ধি করেছে আর তারা আনন্দিতও হয়৷
# আগে বলা হয়েছে, যখন কোন সুরা নাজিল হয় তখন তা ইমানদারদের ইমান বৃদ্ধি করে৷ এ কথাটাকেই ব্যাঙ্গ করার ছলে কোন কোন মোনাফেক, নতুন সুরা নাজিল হলে এমন কথা বলত৷ আল্লাহ বলেন, যারা ইমান এনেছে তাদের ইমান ঠিকই বর্ধিত হয় আর তারা তাতে খুশীও হয়৷ পরের আয়াতে বলা হয়েছে বরং যাদের অন্তর মলিন, নতুন সুরায় তাদের সে ময়লা আরও বৃদ্ধি পায় আর তারা কাফের অবস্থাতের মৃত্যু বরণ করে৷
১২৫/ وَأَمَّا الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ فَزَادَتْهُمْ رِجْسًا إِلَى رِجْسِهِمْ وَمَاتُواْ وَهُمْ كَافِرُونَ
অর্থাৎ;-বস্তুতঃ যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে এ সুরা তাদের মলিনতার সাথে আরও মলিনতা বৃদ্ধি করে এবং তারা কাফের অবস্থায়ই মৃত্যু বরণ করে৷
১২৬/ أَوَلاَ يَرَوْنَ أَنَّهُمْ يُفْتَنُونَ فِي كُلِّ عَامٍ مَّرَّةً أَوْ مَرَّتَيْنِ ثُمَّ لاَ يَتُوبُونَ وَلاَ هُمْ يَذَّكَّرُونَ
অর্থাৎ;-তারাকি দেখেনা যে, তারা প্রতিবছর এক বার কি দু বার বিপর্যস্থ হয়৷ তবুও তারা তওবা করেনা এবং উপদেশ গ্রহন করে না৷
# প্রতি বছর দু এক বার মোনাফেকরা বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে, যা তাদের জন্য সতর্ক সংকেত, কিন্তু তারা তা গ্রাহ্য করেনা আর সাবধান হয়ে তওবাও করেনা৷
বর্তমান বিশ্বে মুসলীমদের বিভিন্ন ভাবে সে সংকেত দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু ‘চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী’৷ আল্লাহ আমাদের মাফ করুক৷
১২৭/ وَإِذَا مَا أُنزِلَتْ سُورَةٌ نَّظَرَ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ هَلْ يَرَاكُم مِّنْ أَحَدٍ ثُمَّ انصَرَفُواْ صَرَفَ اللّهُ قُلُوبَهُم بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لاَّ يَفْقَهُون
অর্থাৎ;-আর যখনই কোন সুরা অবতীর্ণ হয়, তখন তারা একে অপরের দিকে তাকায়,(বলে) কোন মুমিন তোমাদের দেখেছে কি? তার পর তারা সরে পড়ে৷ আল্লাহ তাদের অন্তরকে ফিরিয়ে দিয়েছেন, কেননা তারা নির্বোধ লোক৷
# নতুন কোন সুরা নাজিল হলে মোনাফেকরা পরষ্পর মুখ চাওয়া চাওয়ি করে ইশারায় কথা বলত৷ বিশেষ করে যুদ্ধের আয়াত নাজিল হলে, যেন তাদের কেউ দেখেনি এমন ভাব করে নীরবে সরে পড়ত৷ আল্লাহ বলেন, এদের অন্তরকেই বিগড়ে দেওয়া হয়েছে৷ এরা নির্বোধই রয়ে গেল৷
১২৮/ وَإِذَا مَا أُنزِلَتْ سُورَةٌ نَّظَرَ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ هَلْ يَرَاكُم مِّنْ أَحَدٍ ثُمَّ انصَرَفُواْ صَرَفَ اللّهُ قُلُوبَهُم بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لاَّ يَفْقَهُون
অর্থাৎ;-তোমাদের কাছে এসেছেন তোমাদেরই মধ্য হতে একজন রসুল৷ তার পক্ষে তোমাদের দুঃখ কষ্ট দুঃসহ৷ তিনি তোমাদের অতিশয় হিতকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, খুবই দয়ালু৷
# নবী সঃ ছিলেন তাদেরই মধ্য থেকে এক জন, তিনি বাইরে থেকে আসেননি বা তিনি জ্বীন ফেরেশ্তাও নন, তাদের মতই মানুষ৷ উম্মতের দুঃখ ব্যাথায় তিনি ব্যাকুল হন৷ উম্মতের জন্য সর্বদা শুভ কামনাই করেন৷ তিনি সবার প্রতি স্নেহশীল, সবার প্রতিই দয়ালু
১২৯/ فَإِن تَوَلَّوْاْ فَقُلْ حَسْبِيَ اللّهُ لا إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ
অর্থাৎ;-এ সত্বেও যদি তারা বিমুখ থাকে তবে, আপনি বলে দিন; আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট৷ তিনি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই৷ তাঁরই উপর আমি ভরসা করি এবং তিনিমহান আরশের অধিপতি৷
# উম্মতের চিন্তায়, তাদের কল্যানে যিনি ব্যাকুল হন৷ তাদের হিতের জন্য সর্বদা যাঁর চিন্তা৷ সেই মানুষটিকে অস্বীকার করে, তাঁর বাণীকে অগ্রাহ্য করে যদি কেউ বিমুখ হয়, তবে তার জন্য শেষ কথা, মহান আরশের মালিক আল্লাহই আপনার জন্য যথেষ্ট৷ আপনার নিয়ত, আগ্রহ ব্যকুলতা, প্রচেষ্টা সবই তিনি দেখেছেন, তিনিই একমাত্র মাবুদ৷
আল্লাহর অসীম অনুগ্রহে এখানেই শেষ হল রসুল সঃ নির্ধারিত সাত মঞ্জিলের দ্বিতীয় মঞ্জিল, আর এখানেই শেষ হল মক্কী মাদানী মিলিত সুরার দ্বিতীয় গ্রুপ৷
==========================x================================
বিষয়: বিবিধ
২২৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন