"শিশুতোষ শিক্ষনীয় গল্প" (স্মৃতি থেকে)
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ২১ আগস্ট, ২০১৩, ০৪:৩০:১২ রাত
খুব ছোট্ট বেলায় পড়া একটা গল্প আজকের সমাজের প্রেক্ষাপটে দারুন মানান সই, তাই বার বার ব্লগে শেয়ার করার জন্য মনের মাঝে গুঁতা মারছে৷ তাই লিখতেই হল৷
তার আগে একটু ভুমিকার প্রয়োজন মনে করি৷ আমার বা আমাদের পাঁচ ভাই বোনের হাতে খড়ি হয় আমার অল্প শিক্ষিত আব্বার ঘরের মেঝেতে পাটি বিছিয়ে৷ পাঁচ জনের মাঝে আমি ছিলাম তিন নম্বরে৷ আমার মরহুম আব্বা তাল পাতায় লিখে ধুয়ে আবার লিখতেন৷ আর আমাদের শুরু হয় শ্লেট পেন্সীলে৷ তাও মুছে বা ধুয়েই আমরা লিখতাম৷ ক্লাশ টুতে গিয়ে প্রথম খাতায় নিব হ্যাণ্ডেল কালীর দোয়াতে ডুবিয়ে লেখা শুরু করি৷ পরে অবশ্য ফাউন্টেন পেন বা ঝর্ণা কলম হাতে আসে৷ ডট পেন অনেক পরে আবিষ্কার হয়৷
পাঠ্য বই নিয়ে তখনও বানিজ্যিক টানা পোড়েন শুরু হয়নি, অর্থাৎ প্রতি বছর স্কুলের পাঠ্য বই বদল করে লেখক প্রকাশক পরিবেশক বা বিদ্যামন্ত্রীকে টু পাইস পাইয়ে দেবার বুদ্ধি মানুষের মাথায় আসেনি৷ তাই আমার বড় বোনের জন্য কেনা বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বর্ণ পরিচয় প্রথমভাগ ও দ্বিতীয় ভাগ, ছোট্ট বই দুখানি আমার উপরের দু ভাই বোনের কাছে সাবেক হয়ে আমার অধিকারে আসে৷ আমরা প্রত্যেকে তিন বছরের ব্যবধানে জন্মেছি৷ তখন প্রথম শ্রেণীতে ঐ বই দুখানির সাথে একটি ধারাপাতও থাকত৷ আমার আব্বার নিয়ম ছিল, নিজের তত্বাবধানে প্রথম শ্রেণী পাশ করিয়ে তবে স্কুলে সেই প্রথম শ্রেণীতেই ভর্তী করা৷ ফলে আমরা কেউই পিছলে পড়িনি বরং সীঁড়ির প্রথম ধাপেই সকলে থেকেছি৷ আল্লাহ ইচ্ছারও প্রশংসা করি৷
প্রথম ভাগে ছিল বর্ণ পরিচয় ও জল পড়ে, পাতা নড়ে জাতীয় ছোট খাট বাক্য৷ আর দ্বিতীয় ভাগে ছিল বাংলা সাহিত্যে ব্যবহৃত সকল ফলা জাতীয় শব্দ, সেই সাথে যাবতীয় যুক্ত অক্ষর আর শেষের দিকে ছিল কিছু নীতির বচন সম্বলিত ছোট শিশুতোষ গল্প৷ যা আজও মনে আছে ও থাকবে৷ তারই একটি শেয়ার করতে বসেছি৷ গল্পের নায়কের নাম, মাধব বা যাদব থেকে থাকবে যা ঠিক মনে নেই৷ যাই হোক আমি যাদব বলেই বলব৷ সংক্ষেপেই বলব৷
বিখ্যাত পেশাদার খুনি ও ডাকাত হিসেবে যাদব ধরা পড়েছে৷ কোর্টে সাক্ষী প্রমানে সে দোষী৷ বিচারক তার ফাঁসীর হুকুম দিলেন৷ যথা সময়ে তাকে ফাঁসীর মঞ্ছে আনা হল৷ প্রথা অনুযায়ী তাকে তার শেষ ইচ্ছার কথা জানাতে বলা হল৷ সে জানাল, তার মাসীর কানে কানে কিছু বলতে চায়৷ তার বাবা মা ছিলনা৷ এই মাসীর বাড়িই তার তত্বাবধানে তার শিক্ষা ও বেড়ে ওঠা ঘটে ছিল৷ মাসীকে আনা হল৷ যাদব তার মাসীর কানের কাছে মুখনিয়ে গিয়ে এক কামড়ে তার একটা কান কেটে নিয়ে আসলো৷ সবাই অবাক৷ গুরু দণ্ডের আসামীর জন্য এটা লঘু অপরাধ৷ এর শাস্তি আর হল না তবে কারণ জানতে চাওয়া হল৷ যাদব জানালো, ছোট বেলায় যখন সে মাসীর বাড়ি থেকে পাঠশালায় যেত প্রায়ই সে খড়ি পেন্সীল, চক, খাতা, বই প্রভৃতি ছোট খাট জিনিষ চুরিকরে আনতো৷ মাসী দেখেও কিছু বলত না৷ তাতেই তার সাহস আস্তে আস্তে বয়সের সাথে সাথে বাড়তেই থাকে৷ এক সময় সে চোর ও আরও পরে বিখ্যাত ডাকাত হয়৷ যার পরিনতি আজ ফাঁসী৷ মাসী যদি প্রথম দিনই তাকে এ কাজে বাধা দিত তবে আজ সে ডাকাত হতে পারত না৷ তাই মাসীকে শিক্ষা দিতেই আজ তার এ আচরণ৷
আজকের ঐশী কি তার বাবা মার কানের সাথে সমাজ ও আমাদের শিক্ষা ব্যস্থার সাথে আমাদের কান কেটে নিয়ে গেল না?
বিষয়: সাহিত্য
৩৮৮০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন