"অতঃপর তোমরা শিঘ্রই প্রত্যাবর্তিত হবে যিনি গোপন ও প্রকাশ্য বিষয়ে অবগত তার কাছে"৷

লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ০৭ আগস্ট, ২০১৩, ০৩:০৭:৪০ রাত

(উর্দু বয়ানুল কোরআনের বাংলা ধারাবাহিক অনুবাদ, পূর্ব প্রকাশিতের পর)

আত তাওবাহ রুকু;-১৩ আয়াত;-১০০-১১০

ইমান ও তাকওয়ার উপর ভিত্তি করে মুমিনদের চারটি স্তরের কথা আমরা জেনে এসেছি, তা হল, আম্বিয়া, সিদ্দিকীন, শুহাদা ও সালেহীন৷ এ রুকুর প্রথম আয়াতটিতে মুমিনদের সাহস, হিম্মত ও উদ্দিপনার উপর ভিত্তি করে, দুটি স্তরের একটি দলের কথা বলেছেন৷ উভয় দলের জন্য তার সন্তুষ্টি ও বেহেশেতের ঘোষনা দিয়েছেন৷

১০০/وَالسَّابِقُونَ الأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللّهُ عَنْهُمْ وَرَضُواْ عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ

অর্থাৎ;-মোহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা অগ্রগামী ও প্রথম এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুগমন করেছে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তার প্রতি সন্তুষ্ট৷ তিনি তাদের জন্য এমন জান্নাত প্রস্তুত করে রেখেছেন, যার তলদেশে নহর সমুহ প্রবাহিত হয়৷ তারা সেখানে অনন্তকাল থাকবে৷ এটা মহা সাফল্য৷



# মোহাজির ও আনসার উভয় সাহাবীদের মধ্যে কিছু এমন লোক ছিলেন যাদের অন্তর ছিল নিঃষ্কলুষ, তাদের সামনে সত্য উদ্ঘাটন হবার সাথেই তারা আগে পিছে না ভেবে, কোন রকম সংশয় না করে ইমান এনে ছিলেন৷ এটি ছিল প্রথম স্তর৷ আর যারা একটু চিন্তা ভাবনা করে, আগে পিছে ভেবে ইমান এনেছিলেন, এরা হল দ্বতীয় স্তর৷ যেমন বিক্ষোভ মিছিলে অনেকেই শামিল হয় কিন্তু সকলেই সামনে থাকেনা৷ এদের সাহস, হিম্মত বা উৎসাহ উদ্দিপনা প্রথম স্তরের মত তাৎক্ষনিক নয়৷ আল্লাহ উভয় স্তরের এ দলটিকে তার সন্তুষ্টি ও তাদের জন্য বেহেশ্তের ঘোষণা দিলেন৷ এরা যেমন আল্লাহর প্রীয় পাত্র, আল্লাহও তেমন এদের প্রীয় পাত্র হলেন৷ এবং এরা সাফল্য। অর্জন করল৷

রসুল সঃ বলেছেন, মানুষ তার নিজ স্বভাবেরই হয়৷ অর্থাৎ যাকে যেমন জিন দেওয়া হয়েছে তেমনই হয়৷ ময়লা সোনাকে পরিষ্কার করলে সোনাই হয়৷ আর রুপাকে পরিষ্কার করলে রূপাই হয়, সোনা হয়না৷ এখানেও তাই হয়েছে৷

১০১/وَمِمَّنْ حَوْلَكُم مِّنَ الأَعْرَابِ مُنَافِقُونَ وَمِنْ أَهْلِ الْمَدِينَةِ مَرَدُواْ عَلَى النِّفَاقِ لاَ تَعْلَمُهُمْ نَحْنُ نَعْلَمُهُمْ سَنُعَذِّبُهُم مَّرَّتَيْنِ ثُمَّ يُرَدُّونَ إِلَى عَذَابٍ عَظِيمٍ

অর্থাৎ;-আর তোমাদের আশ পাশের মরুবাসীদের মধ্য থেকে কিছু লোক, মোনাফেক ও মদীনাবাসীদের মধ্য হতে কিছু লোক, তারা মোনাফেকীতে অনঢ়৷ আপনি তাদের জানেন না, আমি তাদের জানি৷ আমি তাদেরকে দুবার শাস্তি দেব৷ এবং পরে তাদেরকে ভীষণ আজাবের দিকে প্রত্যাবর্তিত করা হবে৷



# আগের আয়াতে উত্তম মানুষদের কথা বলা হয়েছে, আর এ আয়াতে অধম মানুষদের কথা বলা হচ্ছে৷ মদীনার আশ পাশের বেদুইনদের মাঝের কিছু লোক আর মদীনা বাসী ও মোনাফেকদের মাঝের কিছু লোক, যারা মোনাফেকীর চরমে পৌঁছে গেছে৷ এদের আল্লাহ দুবার শাস্তি দেবেন অর্থাৎ; তাদের অনিচ্ছাতেই ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করবেন আর তাদের অনিচ্ছাতেই তাদের ধন সম্পদে অন্যের অধিকার ন্যাস্ত করবেন৷ জাকাত, সদকা, খয়রাত ও জিজিয়াকে বোঝানো হয়েছে৷ পরে এদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম৷ এখানে একটা বিষয় লক্ষ্যনীয় তা হল, মোহাজিরদের মধ্যে কোন মোনাফেক চিহ্নিত হয়নি৷ এদের সূচনা মদীনাতেই হয়৷

১০২/وَآخَرُونَ اعْتَرَفُواْ بِذُنُوبِهِمْ خَلَطُواْ عَمَلاً صَالِحًا وَآخَرَ سَيِّئًا عَسَى اللّهُ أَن يَتُوبَ عَلَيْهِمْ إِنَّ اللّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

অর্থাৎ;-আরও কিছু লোক আছে, যারা নিজেদের পাপ স্বীকার করেছে৷ তারা নেক কাজের সাথে বদ কাজ মিশ্রিত করেছে৷ আশা করা যায় আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন৷ নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু৷

# উপরের দু আয়াতে উত্তম ও অধম লোকদের কথা বলা হয়েছে, এ আয়াতে যাদের কথা বলা হল এরা মধ্যম দলের৷ এরা মোনাফেক নয়, তবে ভাল কাজের সাথে মন্দ কাজ মিশিয়ে ফেলে অপরাধী হয়েছে৷ তার জন্য তাদের অন্তরে অনুশোচনা আছে৷ আর অনুশোচনা আছে বলেই এরা মোনাফেক নয়৷ কারণ মোনাফেকদের কৃত কর্মের জন্য অনুশোচনা নেই৷

শানে নুজুল এর বিবেচনায় এখানে সাহাবী আবু লুবাব আনসারী রাঃ এর ঘটনার কথাই অনুমান করা হয়৷ তিনি রসুল সঃ এর তাবুক অভিযানে যোগদান করেননি৷ কোন ওজরও ছিলনা৷ পরে অন্যায় বুঝে অনুশোচনায় কাতর হয়ে নিজেকে মসজিদে নববীর খুঁটির সাথে বেঁধে রাখেন ও ঘোষনা দেন আমার কৃত অপরাধের তওবা আল্লাহ দরবারে কবুল হওয়ার খবর দিয়ে, রসুল সঃ যদি আমার বাঁধন নিজের হাতে খুলে না দেন তবে এভাবেই নিজেকে শেষ করব।

তওবার খবর ১০৪ নং আয়াতে আসবে৷ তাবুক হতে ফিরে রসুল সঃ তার বাঁধন খুলে তাকে মুক্ত করেন৷ মুক্ত হওয়ার খুশীতে তিনি অনেক মাল সদকা হিসেবে নিয়ে আসেন৷ পরের আয়াতে তার গ্রহণ যোগ্যতার কথাও পাওয়া যাবে৷

১০৩/خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ إِنَّ صَلاَتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ وَاللّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

অর্থাৎ;-আপনি তাদের মাল থেকে সদকা গ্রহন করুন, যাতে তা দিয়ে আপনি তাদের পবিত্র করবেন এবং পরিশুদ্ধ করবেন৷ আর আপনি তাদের জন্য দোওয়া করুন৷ নিশ্চয় আপনার দোওয়া তাদের জন্য সান্ত্বনা স্বরূপ৷ আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ৷

# মোনাফেকদের কোন সদকা গ্রহন করা হবেনা তা আমরা আগেই ৫৩ নং আয়াতে পড়ে এসেছি৷ যেহেতু এরা মোনাফেক নয় অতএব এরা যা সদকা দেয় তা গ্রহণ করার আদেশ দিলেন৷ এবং তাদের জন্য দোওয়া করতে বললেন, যাতে তারা অন্তরে সান্ত্বনা পায় যে, আল্লাহ তাদের মাফ করেছেন৷

১০৪/أَلَمْ يَعْلَمُواْ أَنَّ اللّهَ هُوَ يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهِ وَيَأْخُذُ الصَّدَقَاتِ وَأَنَّ اللّهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ

অর্থাৎ;-তারাকি জানেনা যে, আল্লাহই তার বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং তিনি সদকা গ্রহন করেন৷৷ আর একমাত্র আল্লাহই তওবা কবুল কারী, পরম দয়ালু৷

# রসুল সঃ তাঁর নিজের ও পরিবারের জন্য সদকা গ্রহন করাকে হারাম ঘোষণা করেছিলেন৷ সারা বিশ্বের সকল সম্পদের একছত্র অধিকারী, আল্লাহ বলেন তিনি সদকা গ্রহন করেন৷ আর তিনিই একমাত্র তওবা কবুলকারী৷ মানুষকে সাময়ীক ভাবে ভোগ করার জন্য আল্লাহ ধন সম্পদ দিয়েছেন৷ এতে তার পরীক্ষাও রয়েছে৷ মানুষ সম্পদের আসল মালিক নয়৷ নিঃশ্বাস বন্ধের সাথেই মালিকানা শেষ৷

১০৫/وَقُلِ اعْمَلُواْ فَسَيَرَى اللّهُ عَمَلَكُمْ وَرَسُولُهُ وَالْمُؤْمِنُونَ وَسَتُرَدُّونَ إِلَى عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ

অর্থাৎ;-আর আপনি বলেদিন, তোমরা কাজ করে যাও, তারপর আল্লাহ দেখবেন তোমাদের কাজ এবং তার রসুল ও মুমিনগন দেখবে৷ অতঃপর তোমরা শিঘ্রই প্রত্যাবর্তিত হবে যিনি গোপন ও প্রকাশ্য বিষয়ে অবগত তার কাছে৷ তখন তিনি তোমাদের জানিয়ে দেবেন যা তোমরা করতে৷

# মধ্যপন্থি লোক যারা মোনাফেক নয় কিন্তু ভুল করে অনুশোচনা করেছিল, তাদের অপরাধ মাফের ঘোষণা দেওয়া হল, তবে তা একটা শর্ত সাপেক্ষে৷ তা হল, ভবিষ্যত তাদের কার্যকলাপ আল্লাহ, তার রসুল ও মুমিনগনও নজরদারী করবেন৷ তার পর তারা আল্লাহর কাছেই ফিরে যাবে, তখন আল্লাহ তাদের সব কিছুর ব্যাপারে জানিয়ে দেবেন৷ তিনিই সব কিছুর বিষয়ে দেখেন শোনেন৷

১০৬/وَآخَرُونَ مُرْجَوْنَ لِأَمْرِ اللّهِ إِمَّا يُعَذِّبُهُمْ وَإِمَّا يَتُوبُ عَلَيْهِمْ وَاللّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ

অর্থাৎ;-আর অপর কতকের ব্যাপারে আল্লাহর আদেশের প্রতিক্ষায় সিদ্ধান্ত মুলতুবী রইল-হয়ত তাদের শাস্তি দেবেন অথবা তাদের তওবা কবুল করবেন৷ আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও হেকমত ওয়ালা৷

# তাবুক হতে ফেরার পর রসুল সঃ অভিযানে যোগ না দেওয়া লোকদের কারণ দর্শাতে বলেন৷ মিথ্যা ওজুহাত দেওয়ারা আবারও বাহানা দেখিয়ে পার পেয়ে গেলে, সাহাবী কাব ইবনে মালেক আনসারী রাঃ এর পালা এল৷ রসুল সঃ মুচকি হেঁসে তার কারণ জানতে চাইলে, তিনি জানালেন, আমি মিথ্যা অজুহাত দেবনা৷ আমার না যাবার কোনই কারণ ছিল না৷ আমার টাকাপয়সা অন্য সময়ের চাইতে বেশীই ছিল৷ সুস্থও ছিলাম৷ আমার দ্রুতগামী উঠও ছিল, আমার ধারণা ছিল, রসুল সঃ ত্রিশ হাজারের কাফেলা নিয়ে রওয়ানা হয়েছেন৷ অবশ্যই গতি ধীর হবে আর আমি যদি কয়েকদিন পরও হওয়ানা হই তবে ঠিকই কাফেলায় যোগ দিতে পারব৷ শয়তান এ ভাবে আমায় আরও দেরী করিয়ে দেয়৷ তখন আমি ভাবলাম, এখন আর কোন মতেই কাফেলাকে ধরতে পারব না৷ তার সাথে আরও দুই সাহাবী ছিলেন, তাঁরা হলেন, হেলাল ইবনে উমাইয়া ও মুরারাহ ইবনে রুবাই৷ ১১৮ নং আয়াতে তাঁদের অপরাধ ক্ষমা করার পর তারা আনন্দে আত্মহারা হয়ে অনেক মাল সদকা হিসেবে নিয়ে এসেছিলেন৷ রসুল সঃ তার কিছু রেখে বাকী ফেরত দিয়ে ছিলেন৷

অপরাধের অনুশোচনা ছিল না বা রসুল জানতে চাওয়ার আগে অপরাধ নিজে থেকে স্বীকারও করেন নি৷ আল্লাহ তাদের ব্যপারটা মুলতুবী রাখলেন৷ রসুল সঃ তাদের সাজা দিয়ে ছিলেন৷ তা হল সামাজিক বয়কট৷ পঞ্চাশ দিন কোন সাহাবী তার সাথে কথা বলবেন না৷৪০ দিন পর তার স্ত্রীকেও আলাদা করা হয়ে ছিল৷ তিনি বলতেন, আমিতো মোনাফেক নই তা সবাই জানো, আমার কথা শোনো৷ উত্তরে অন্য সাহাবীরা বলতেন, আল্লাহ আর তার রসুল ভাল জানেন, বলে সরে পড়তেন৷

সাহাবী কাব ইবনে মালেক সমাজের গন্যমান্যদের একজন ছিলেন৷ তার অর্থ সম্পদ ও কম ছিলনা৷ মর্মাহত অবস্থায় দিন কাটতে থাকে৷ এ হেন দুঃসহ মনোবেদনার মাঝে বাদশা গাস্সান দূত মারফত তার কাছে পত্র পাঠিয়ে তাকে উচ্চ মর্যাদা দেবার প্রলোভন দেখালে তিনি সে পত্র ছিঁড়ে ফেলে বলেন, এ আর এক মুসিবত৷ পরে অবশ্য তাদের তওবা কবুলের খবর এসেছিল৷ ১১৮ নং আয়াতে৷

ঘটনাটি একটি লম্বা হাদিশে পাওয়া যায়৷ তাকে সাধারন কোরআন পাঠকের গোচরে আনার জন্য মওলানা মওদূদী সাহেব, তার তাফহীমুল কোরআনে তৎকালীন সামাজিক অবস্থা৷ কিভাবে রসুল বিচার আচার করতেন, তা সুন্দর ভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন৷

১০৭/وَالَّذِينَ اتَّخَذُواْ مَسْجِدًا ضِرَارًا وَكُفْرًا وَتَفْرِيقًا بَيْنَ الْمُؤْمِنِينَ وَإِرْصَادًا لِّمَنْ حَارَبَ اللّهَ وَرَسُولَهُ مِن قَبْلُ وَلَيَحْلِفَنَّ إِنْ أَرَدْنَا إِلاَّ الْحُسْنَى وَاللّهُ يَشْهَدُ إِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ

অর্থাৎ;-যারা মসজিদ নির্মান করেছে ইসলামের ক্ষতি সাধনের জন্য, কুফরী করার জন্য, মুমিনদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য এবং ঐ ব্যাক্তির জন্য ঘাঁটি স্বরূপ ব্যবহারের উদ্দেশ্যে, যে পূর্ব থেকেই আল্লাহ ও রসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আসছে৷ এবং তারা অবশ্য কসম করে বলবে; আমরাতো কেবল মঙ্গলই চেয়েছি৷ কিন্তু আল্লাহ স্বাক্ষ্য দিচ্ছেন, অবশ্যই তারা মিথ্যাবাদী৷

#এ মসজিদটির নাম ‘মসজিদে জিরার’ বা জেদের মসজিদ৷ মদীনার উপকন্ঠে মদীনার মোনাফেকদের দ্বারায় এটি নির্মিত হয়৷ যদিও তারা হলফ করে বলে, নামাজর জন্য আমাদের বেশ দূরের মসজিদে যেতে হয়, বৃষ্টি বাদলে অসুধা হয় তাই এটা বানানো হয়েছে৷ কিন্তু তা নয়৷ এর পিছনে একজন লোকের কথা এ আয়াতে বলা হয়েছে, যার নাম ছিল আবু আমের রাহীব খাজরাজী৷ রসুল সঃ এর মদীনায় আগমনের আগে, পণ্ডিত ও সাধু হিসাবে তার অনেক খ্যাতি ছিল৷ লোকটি ছিল খ্রীষ্টান সাধু৷ শুরু থেকেই সে ছিল ইসলামের দুশমন৷ মোনাফেকদের মন্ত্রনা দাতা, গুরু৷ বদরের যুদ্ধে কোরাইশদের পরাজয়ের পর সে মক্কায় গিয়ে অবস্থান করে ও কোরাইশদের মুসলীমদের বিরুদ্ধে উস্কানী দিতে থাকে৷ ওহোদের যুদ্ধেও তার ভুমিকা ছিল৷ সে যুদ্ধের ময়দানের অদূরে মজমা জমিয়ে তার পূর্বখ্যাতি কাজে লাগিয়ে আনসারদের ভাগিয়ে নিতে চেয়ে বিফল হয়৷ হুনায়েনের যুদ্ধ ও মক্কা বিজয়ের পর সে শাম দেশে চলে যায়, কিন্ত তার ষড়যন্ত্র চলতেই থাকে৷ এই ষড়যন্ত্রের ঘাঁটি বা মোনাফেকদের সাথে তার পত্রদূতের আনাগোনা ও অবস্থানের জন্যই একটু দূরে মসজিদের নামে এই ঘাঁটি তৈরী হয়৷ এর প্রধান স্থানীয় পৃষ্ঠপোষক ছিল আব্দুল্লাহ ইবনে ওবাই৷ এরা নবীঃ কে ঐ মসজিদে একবার গিয়ে নামাজ পড়ার অনেক অনুরোধ করে৷ কিন্তু আল্লাহ তায়ালা আয়াতের মাধ্যমে এ কাজে নিষেধাজ্ঞা দেন, যা পরের আয়াতে পাওয়া যাবে৷ তাবুক অভিযানের শেষে আব্দুল্লা ইবনে ওবাইয়ের মৃত্যু হয় ও নবী সঃ এ মসজিদ ভেঙ্গে দেন৷

এ প্রসঙ্গে আর একজন খ্রীষ্টান সাধুর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে, নবীসঃ ররেসালাত প্রাপ্তিতে তাঁর মধ্যে কিছু অস্বভাবিকতা দেখে হজরত খাদিজা রাঃ নবীসঃকে তার কাছে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান৷ ঘটনা শুনে তিনি তাঁর নবুওত লাভের ভবিষ্যত বাণী দেন৷ সঙ্গে দুঃখ করে এও বলেন যে, আফসোস আমি হয়ত সেদিন থাকব না যেদিন তার কওম তাকে দেশ ছাড়া করবে৷ এতে নবী সঃ বিচলিত হয়ে জানতে চান, আমার কওম আমাকে দেশছাড়া করবে৷ উত্তরে তিনি জানান, হাঁ এমনই প্রায় সব নবীর বেলায় হয়েছে৷ তাঁর নাম ছিল, বারকা ইবনে নওফেল৷

১০৮/لاَ تَقُمْ فِيهِ أَبَدًا لَّمَسْجِدٌ أُسِّسَ عَلَى التَّقْوَى مِنْ أَوَّلِ يَوْمٍ أَحَقُّ أَن تَقُومَ فِيهِ فِيهِ رِجَالٌ يُحِبُّونَ أَن يَتَطَهَّرُواْ وَاللّهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِينَ

অর্থাৎ;-আপনি কখনও সে মসজিদে দাঁড়াবেন না৷ যে মসজিদের ভিত্তি প্রথমদিন থেকেই তাকওয়ার উপর স্থাপিত, সে মসজিদই আপনার দাঁড়াবার জন্য অধিক যোগ্য৷ সেখানে এমন লোক রয়েছে যারা খুব ভাল রূপে পবিত্রতা অর্জন করাকে ভাল বাসে৷ আর আল্লাহ উত্তম রূপে পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন৷

# এখানে আর একটি মসজিদ যা তাকওয়ার উপরই নির্মিত হয়েছিল বলা হয়েছে৷ এ মসজিদটির নাম, মসজিদে কুবা৷ এ মসজিদকেই আল্লাহ নবী সঃ এর জন্য যোগ্যতর বললেন৷ আর মসজিদে জেরারে নামাজ না পড়ার আদেশ দিলেন৷ এটি মসজিদে জেরারের অদূরে মদীনার উপকন্ঠে তিন মাইল দূরে অবস্থিত৷ মদীনায় হিজরত করে নবী সঃ যেখানে প্রথম অবতরণ করেছিলেন, ঠিক সেখানেই এ মসজিদটি তৈরী হয়ে ছিল৷ আল্লাহ তায়ালা এর মুসুল্লীদের পবিত্রতার সুখ্যাতি করেছেন৷ এবিষয়ে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে, তারা জানান, তারা এস্তেঞ্জায় কুলুপ ও পানি উভয়ই ব্যবহার করেন৷

১০৯/أَفَمَنْ أَسَّسَ بُنْيَانَهُ عَلَى تَقْوَى مِنَ اللّهِ وَرِضْوَانٍ خَيْرٌ أَم مَّنْ أَسَّسَ بُنْيَانَهُ عَلَىَ شَفَا جُرُفٍ هَارٍ فَانْهَارَ بِهِ فِي نَارِ جَهَنَّمَ وَاللّهُ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ

অর্থাৎ;-তবেকি সে ব্যাক্তি উত্তম, যে স্বীয় গৃহের ভিত্তি আল্লাহ ভীতির উপর ও তার সন্তুষ্টি বিধানের উপর স্থাপন করেছে, না কি ঐ ব্যাক্তি উত্তম যে, তার গৃহের ভিত্তি স্থাপন করেছে এক গর্তের পতনোন্মুখ কিনারায়, ফলে সে গৃহ তাকে নিয়ে জাহান্নামের আগুনে পতিত হয়? আল্লাহ জালিম কওমকে পথ দেখান না৷

১১০/ لاَ يَزَالُ بُنْيَانُهُمُ الَّذِي بَنَوْاْ رِيبَةً فِي قُلُوبِهِمْ إِلاَّ أَن تَقَطَّعَ قُلُوبُهُمْ وَاللّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ

অর্থাৎ;-তাদের ইমারত যা তারা নির্মান করেছে, তাদের অন্তরে সদা সন্দেহের উদ্রেক করে যাবে যে পর্যন্ত না তাদের অন্তর চৌচির হয়ে যায়৷

# আল্লাহ তায়ালা তাদের এমসজিদ নামের ইমারতটিকে তুলনা করেছেন, এমন নির্বোধ লোকের বানানো ইমারতের সাথে, যে গর্তের কিনারে ঝুলন্ত মাটির উপর ইমারত বানায়, যা যে কোন সময়ে তাকে নিয়েই গর্তে ভেঙ্গে পড়তে পারে৷ মোনাফেকদের বানানো এমসজিদটিও তাদের নিয়েই জাহান্নামে ধ্বসে পড়বে৷

মোনাফেকী এদের অন্তরে এমন ভাবে বিস্তার লাভ করেছে যা এদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌঁছে গেছে৷ যা সন্দেহের আকারে এদের সর্বদাই তাড়াকরে ফিরবে৷ মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তা চলতেই থাকবে৷

বিষয়: বিবিধ

১৫১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File