"তাদের চক্ষু দিয়ে অশ্রু বিগলিত হচ্ছিল, এই দুঃখে যে, তারা এমন কিছু পাচ্ছেনা যাব্যয় করতে পারে"৷
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ২৯ জুলাই, ২০১৩, ১১:২৬:১৪ রাত
(উর্দু বয়ানুল কোরআনের ধারাবাহিক অনুবাদ, পূর্ব প্রকাশিতের পর)
আত তাওবাহ রুকু;-১২ আয়াত;-৯০-৯৯
৯০/ وَجَاء الْمُعَذِّرُونَ مِنَ الأَعْرَابِ لِيُؤْذَنَ لَهُمْ وَقَعَدَ الَّذِينَ كَذَبُواْ اللّهَ وَرَسُولَهُ سَيُصِيبُ الَّذِينَ كَفَرُواْ مِنْهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
অর্থাৎ;-আর বেদুইনদের মধ্য থেকে কিছু ওজর পেশকারী লোক এল, যেন তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়৷ আর বসেই রইল তাদের সাথে, যারা আল্লাহ ও তার রসুলের সাথে মিথ্যা বলে ছিল৷ তাদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে, তাদের উপর অচিরেই যন্ত্রনাদায়ক আজাব আপতিত হবে৷
# মানুষ দেখেও শেখে৷ কোন কালেই এমন মানুষের অভাব ছিলনা৷ ওজর পেশ করে অভিযানে ছুটি পাওয়া যাচ্ছে দেখে, মিথ্যা ওজরের প্রবনতা বাড়তে লাগল, এমনকি বেদুইনদের মাঝের অনেকেও মিথ্যা বাহানা করে না যাবার অনুমতি চাইতে লাগল আর অনুমতি পেয়ে রয়ে যাওয়া দের সাথে রয়েই গেল৷ সত্যি কারের অসুবিধা অনেকের ছিল, কিন্তু বাহানা কারীদের কঠোর আজাবের ঘোষনাও এ আয়াতে দেওয়া হল৷
৯১/ لَّيْسَ عَلَى الضُّعَفَاء وَلاَ عَلَى الْمَرْضَى وَلاَ عَلَى الَّذِينَ لاَ يَجِدُونَ مَا يُنفِقُونَ حَرَجٌ إِذَا نَصَحُواْ لِلّهِ وَرَسُولِهِ مَا عَلَى الْمُحْسِنِينَ مِن سَبِيلٍ وَاللّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
অর্থাৎ;-দূর্বল, রুগ্ন, ব্যয়ভার বহনে অসমর্থ লোকদের জন্য কোন অপরাধ নেই, যদি আল্লাহ ও রসুলের প্রতি তাদের আন্তরিকতা থাকে৷ নেককারদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন পথ নেই৷ আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল ও দয়ালু৷
# সমাজে এমন লোকও ছিল যারা, বৃদ্ধ বা রোগাক্রান্ত হেতু দূর্বল, বা এমন লোক যাদের ব্যয় ভার বহন করার মত সামর্থ নেই৷ অথচ তাদের আল্লাহ ও তার রসুলের প্রতি আনুগত্য আছে৷ আছে উৎসাহ উদ্দিপনা৷ মিথ্যা ওজুহাত পেশ করছেনা৷ এমন লোকদের জন্য কোন অভিযোগ নেই৷ আর এরা কারা তা আল্লাহ ও তার রসুলের অজানা ছিলনা৷ ক্রমান্বয়ে তা জানা যাবে৷
৯২/ وَلاَ عَلَى الَّذِينَ إِذَا مَا أَتَوْكَ لِتَحْمِلَهُمْ قُلْتَ لاَ أَجِدُ مَا أَحْمِلُكُمْ عَلَيْهِ تَوَلَّواْ وَّأَعْيُنُهُمْ تَفِيضُ مِنَ الدَّمْعِ حَزَنًا أَلاَّ يَجِدُواْ مَا يُنفِقُونَ
অর্থাৎ;-আর তাদের কোন অপরাধ নেই, যারা আপনার কাছে এসেছিল যেন আপনি তাদের বাহন দেন৷ আপনি বলেছিলেন, আমার তো এমন কোন বাহন নেই যার উপর তোমাদের সওয়ার করাব৷ তখন তারা ফিরে গেল, আর তাদের চোখদিয়ে অশ্রু ঝরছিল, এ দুঃখে যে, তারা এমন কিছু পাচ্ছেনা যা ব্যয় করতে পারে৷
# সমাজে সবাই যে সামর্থবান ছিল তা নয়, অনেক সামর্থবান যেমন পিছু হটেছিল আবার অনেক গরীব দুঃখী যাদের কোন উট বা এমন কিছুই ছিলনা যাতে চড়ে এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দেবে৷ তারা রসুলের কাছে এসে ছিল, যদি তিনি তাদের কোন বাহন বা কারোও সাথে তার বাহনে যাবার ব্যবস্থা করে দিতে পারেন৷ রসুল সঃ যখন তাদের তেমন কিছু করতে পারলেন না, তখন তারা নিরাশ হয়ে মনোকষ্ট নিয়েই ফিরে গেল৷ তাদের আন্তরিকতা ছিল কিন্তু সামর্থ ছিলনা৷ এদের না যাওয়াতে কোন অপরাধ নেই, কেননা এরা সত্যই অসহায়৷
৯৩/ إِنَّمَا السَّبِيلُ عَلَى الَّذِينَ يَسْتَأْذِنُونَكَ وَهُمْ أَغْنِيَاء رَضُواْ بِأَن يَكُونُواْ مَعَ الْخَوَالِفِ وَطَبَعَ اللّهُ عَلَى قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لاَ يَعْلَمُونَ
অর্থাৎ;-অভিযোগের পথতো রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে যারা আপনার কাছে অব্যাহতি চায় অথচ তারা বিত্তশালী৷ তারা আনন্দিত হয়েছে অন্তঃপূরবাসিনীদের সাথে থেকে যেতে পেরে৷ আর তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেওয়া হয়েছে, ফলে তারা তা জানেই না৷
# মিথ্যা কথা বলে থেকে যেতে পেরে তারা বেশ গর্বিত ও আনন্দিত, তারা অন্যকেও এ ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছে, তাও আমরা পড়ে এসেছি৷ কিন্তু তারা জানে না এতে তাদের কি ক্ষতি হল৷ মিথ্যা বলার দরুন আল্লাহ এদের অন্তরকে ব্লক করে দিলেন৷ ভবিষ্যতে এরা আর এমন কাজে যোগ দেবার আগ্রহই অনুভব করবে না৷
৯৪/ يَعْتَذِرُونَ إِلَيْكُمْ إِذَا رَجَعْتُمْ إِلَيْهِمْ قُل لاَّ تَعْتَذِرُواْ لَن نُّؤْمِنَ لَكُمْ قَدْ نَبَّأَنَا اللّهُ مِنْ أَخْبَارِكُمْ وَسَيَرَى اللّهُ عَمَلَكُمْ وَرَسُولُهُ ثُمَّ تُرَدُّونَ إِلَى عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
অর্থাৎ;-তারা তোমাদের কাছে ওজর পেশ করবে, যখন তোমরা তাদের কাছে ফিরে আসবে৷ আপনি বলে দিবেন, তোমরা ওজর পেশ কোরনা, আমরা কখনও তোমাদের বিশ্বাস করব না৷ আল্লাহ তো তোমাদের অবস্থা সম্পর্কে আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন৷ আর আল্লাহ ও তার রসুলই লক্ষ্য রাখবেন তোমাদের কার্যকলাপ৷ তার পর তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে সেই গোপন অগোপন বিষয় অবগত সত্তার কাছে৷ তিনিই তোমাদের বলে দেবেন যা তোমরা করেছিলে৷
# এ আয়াতটি তাবুক হতে ফেরার আগে বা পরে দু অবস্থাতেই নাজিল হবার সম্ভাবনা রয়েছে৷ এখানে ফেরার আগে মনে করেই ভবিষ্যত কালের অর্থ করা হয়েছে৷ আর যদি ফেরার পর ধরা হয় তবে অর্থটিও বর্তমানের করাতেও দোষ নেই৷ যাই হোক, মোনাফেকদের মাঝে একটা সন্দেহ ছিল, না জানি কবে কোন আয়াত তাদের শাস্তি ঘোষনা দিয়ে বসে৷ আয়াত নয়, তবে আল্লাহ আপাততঃ ওহীর মাধ্যমেই তাদের স্বরূপ তার নবীকে বলে দিয়েছেন, বোঝা গেল৷
৯৫/ سَيَحْلِفُونَ بِاللّهِ لَكُمْ إِذَا انقَلَبْتُمْ إِلَيْهِمْ لِتُعْرِضُواْ عَنْهُمْ فَأَعْرِضُواْ عَنْهُمْ إِنَّهُمْ رِجْسٌ وَمَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ جَزَاء بِمَا كَانُواْ يَكْسِبُونَ
অর্থাৎ;-তারা তোমাদের সামনে আল্লাহর নামে কসম খাবে, যখন তোমরা তাদের কাছে ফিরে যাবে, যেন তোমরা তাদেরকে ক্ষমা করে দাও৷ সুতরাং তোমরা তাদের থেকে বিরত থাক৷ তারাতো অপবিত্র৷ আর তাদের বাসস্থান হল জাহান্নাম৷ এটা তারা যা কামাই করত তার প্রতিফল৷
৯৬/ يَحْلِفُونَ لَكُمْ لِتَرْضَوْاْ عَنْهُمْ فَإِن تَرْضَوْاْ عَنْهُمْ فَإِنَّ اللّهَ لاَ يَرْضَى عَنِ الْقَوْمِ الْفَاسِقِينَ
অর্থাৎ;-তারা তোমাদের সামনে কসম করবে যাতে তোমরা তাদের প্রতি রাজি হয়ে যাও৷ যদি তোমরা তাদের প্রতি রাজি হয়ে যাও, তবুও আল্লাহ সে সব ফাসেকদের প্রতি রাজি হবেন না৷
# অভিযানে বিরত থাকা লোকেরা, যোগদান কারীরা যখন ফিরে আসবে তখন তাদের কাছে নিজেদের মিথ্যা ওজুহাত ঢাঁকার জন্য মিথ্যা কসম খেয়ে মিথ্যাকে সত্য করার চেষ্টা করবে, যাতে সবাই তাদের কথা বিশ্বাস করে তাদের দূর্নাম থেকে মুক্তি দেয়৷ আল্লাহ বলেন তোমরা যদি তাদের কথা মেনেও নাও বা বিবাস করে তাদের ক্ষমা করে দাও তবু তিনি তাদের মাফ করবেন না৷
৯৭/ الأَعْرَابُ أَشَدُّ كُفْرًا وَنِفَاقًا وَأَجْدَرُ أَلاَّ يَعْلَمُواْ حُدُودَ مَا أَنزَلَ اللّهُ عَلَى رَسُولِهِ وَاللّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
অর্থাৎ;-বেদূইনরা কুফর ও মোনাফেকীতে অত্যন্ত কঠোর হয়ে থাকে এবং এরা এসব আইন কানুন না জানারই উপযুক্ত যা, আল্লাহ তার রসুলের উপর নাজিল করেছেন৷ আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও হেকমত ওয়ালা৷
৯৮/ وَمِنَ الأَعْرَابِ مَن يَتَّخِذُ مَا يُنفِقُ مَغْرَمًا وَيَتَرَبَّصُ بِكُمُ الدَّوَائِرَ عَلَيْهِمْ دَآئِرَةُ السَّوْءِ وَاللّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
অর্থাৎ;-মরুবাসীদের মধ্যে কেউ কেউ, তারা যা খরচ করে তাকে জরিমানা বলে মনে করে এবং আপনাদের প্রতি দূর্দিনের প্রতিক্ষায় থাকে৷ দূর্দিন তাদেরই উপর আসুক৷ আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ৷
# বেদুইন বা মরুবাসী যাযাবরদের স্বভাব শহর বাসীদের থেকে আলাদা৷ কারণ তাদের প্রকৃতির সাথে লড়াই করেই টিকে থাকতে হয়৷ শহরীয় আইন কানুন তাদের কাছে অচল৷ আরব ভূখণ্ডে ইসলাম বিজয়ী হওয়ার দরূণ তাদের ইসলামের আওতায় আসতেই হয়েছে৷ তারা তাদের থেকে আলাদা, তারা হয় ইসপর নয় উসপর৷ যারা রসুলের সাহচর্যে দীর্ঘদিন বাস করে এসেছে, রসুলকে বোঝে, জানে৷ ইসলামকেও অতি কাছের থেকে দেখেছে৷ বেদুইনদের মধ্যে যারা ইসলাম গ্রহন করেছিল তাদের কিছু ইসলামের আইন কানুন,বীধি বিধানকে কঠোর মনে করত৷ যারা জিজিয়া করদিয়ে ইসলামের বশ্যতা স্বীকার করে ছিল, তারা এটাকে জরিমানা বলে মনে করত৷ স্বভাবতই তারা চাইত ইসলামের পতন হোক আর তারা স্বাধীন হয়ে যাক৷
৯৯/ وَمِنَ الأَعْرَابِ مَن يُؤْمِنُ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَيَتَّخِذُ مَا يُنفِقُ قُرُبَاتٍ عِندَ اللّهِ وَصَلَوَاتِ الرَّسُولِ أَلا إِنَّهَا قُرْبَةٌ لَّهُمْ سَيُدْخِلُهُمُ اللّهُ فِي رَحْمَتِهِ إِنَّ اللّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
অর্থাৎ;-আর কোন কোন বেদুইন হল, তারা ইমান রাখে আল্লাহর উপর এবং শেষ দিনের প্রতি, আর যা তারা ব্যয় করে তা আল্লাহর নৈকট্য লাভের ও রসুলের দোওয়া লভের উপায় বলে গন্য করে৷ জেনে রাখ, নিশ্চয়ই তা তাদের জন্য নৈকট্য লাভের উপায়৷ অচিরেই আল্লাহ তাদেরকে নিজ রহমতের মধ্যে দাখিল করে নেবেন৷ আল্লাহতো পরম ক্ষমাশীল পরম দয়ালু৷
# বেদুইনদের মধ্যে যারা ইসলামকে মনেপ্রানে গ্রহন করে নিয়েছিল, তারা এর কোন বিধানকেই অর্থাৎ, নামাজ রোজা, দান সদকা,ফি সাবি লিল্লাহয় দান, সব কিছুকেই গ্রহন করে ছিল৷ বরং তারা জানত বা মানত এ সবের দ্বারায়ই আল্লাহ নৈকট্য পাওয়া যাবে আর রসুলের অনুকম্পা বা তার দোওয়া পাওয়া যাবে৷ আল্লাহ বলেন, তাদের এ ধারণা বিফল হবেনা শিঘ্রই আমি তাদের আমার রহমতের আওতায় নিয়ে নেব৷
এ আয়াত গুলির পিছনে আল্লাহর আরও একটা উদ্দেশ্য হল, ভবিষ্যতের জন্যও মুমিনদের অবহিত করা যে, এমন দিন আসবে যখন তারা এ অবস্থার সম্মুখীন হবে৷ এবং তা আমাদের মাঝে উপস্থিত৷ তাই দাঈরা যেন নিরাশ না হয়৷ স্বয়ং রসুল যেখানে তার সততা পাহাড় সমান ব্যক্তিত্ব, আল আমিন এর বিশ্বস্থতা নিয়েও এমন অবস্থার মাঝে পড়েছেন, তখন অন্যের কাছে এ অবস্থাকে স্বাভাবিকী করণ৷
বিষয়: বিবিধ
১৬৭৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন