"হে নবী, জেহাদ করুন কাফের ও মোনাফেকদের বিরুদ্ধে এবং তাদের সাথে কঠোরতা অবলম্বন করুন"
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ৩০ জুন, ২০১৩, ০৭:৩১:৪৮ সকাল
[i](উর্দূ 'বয়ানুল কোর আনের' ধারাবাহিক অনুবাদ, পূর্ব প্রকাশিতের পর)৷
আত তাওবাহ রুকু;-১০ আয়াত;-৭৩-৮০
আগের চারটি রুকু ছিল রসুল সঃ এর তাবুক অভিযানের প্রস্তুতির ব্যাপারে, এখন তাবুকে অবস্থান ও যাতায়াতের পথে নাজিল হওয়া আয়াত নিয়ে আলোচনা
৭৩/ يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ جَاهِدِ الْكُفَّارَ وَالْمُنَافِقِينَ وَاغْلُظْ عَلَيْهِمْ وَمَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ
[i]অর্থাৎ;-হে নবী, জেহাদ করুন কাফের ও মোনাফেকদের বিরুদ্ধে এবং তাদের সাথে কঠোরতা অবলম্বন করন৷ জাহান্নাম হল তাদের ঠিকানা এবং তা হল নিকৃষ্ট ঠিকানা৷
তাবুক হতে ফেরার পথে এ আয়াতটি নাজিল হয়৷ রসুল সঃ বললেন, আমরা এখন ছোট জেহাদ শেষ করে বড় জেহাদে চলেছি৷ জেহাদ শব্দটি অনেক সময় কেতাল বা যুদ্ধের জন্যও ব্যবহার হয়৷ কিন্তু এ ক্ষেত্র কোন অবস্থাতেই তা কেতাল বলা যাবেনা৷ কারণ মোনাফেকদের সাথে মুমিনদের কোন দিনই যুদ্ধ হয়নি৷ আল্লাহ বললেন, জেহাদ করুন, মোনাফেক ও কাফেরদের সাথে৷ রসুল সঃ বললেন ছোট জেহাদ থেকে আমরা বড় জেহাদে চলেছি, রসুল সঃ বোঝাতে চাইলেন যে মোনাফেকরা হল ঘরের শত্রু, তাদের সাথে যুদ্ধ নয় তবে সংগ্রাম করতে হবে, এবং সেটা অনেক বড় জেহাদ৷ আল্লাহর এ আদেশ টি সুরা তাহরীমে ৯ নং আয়াতে আবার পাওয়া যাবে৷
অন্য এক হাদিশে জানা যায় রসুল সঃ নিজের নফ্স বা রিপুর সাথে সংগ্রামকেও বড় জেহাদ বলে ছেন৷ তাবুক হতে ফেরার পরই রসুল সঃ আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এর ষড়যন্ত্রের ঘাঁটি মসজিদে জেরার ভেঙ্গে দিয়েছিলেন৷
৭৪/ يَحْلِفُونَ بِاللّهِ مَا قَالُواْ وَلَقَدْ قَالُواْ كَلِمَةَ الْكُفْرِ وَكَفَرُواْ بَعْدَ إِسْلاَمِهِمْ وَهَمُّواْ بِمَا لَمْ يَنَالُواْ وَمَا نَقَمُواْ إِلاَّ أَنْ أَغْنَاهُمُ اللّهُ وَرَسُولُهُ مِن فَضْلِهِ فَإِن يَتُوبُواْ يَكُ خَيْرًا لَّهُمْ وَإِن يَتَوَلَّوْا يُعَذِّبْهُمُ اللّهُ عَذَابًا أَلِيمًا فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ وَمَا لَهُمْ فِي الأَرْضِ مِن وَلِيٍّ وَلاَ نَصِيرٍ
অর্থাৎ;-তারা আল্লাহর নামে কসম খেয়ে বলে যে, তারা এরূপ কথা বলেনি৷ অথচ তারাতো কুফরী কথা বলেছে, এবং তারা নিজেদের ইসলাম প্রকাশের পর কাফের হয়ে গেছে৷ আর তারা এমন বিষয়ে সংকল্প করেছিল যা তাদের নাগালে আসেনি৷ আর তারা প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল শুধু এ কারণে যে, আল্লাহ ও তার রসুল নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে ছিলেন৷ অনন্তর তারা যদি তওবা করে তবে তা, তাদের জন্য উত্তম হবে৷ কিন্তু যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে, আল্লাহ তাদের যন্ত্রনা দায়ক শাস্তি দেবেন দুনিয়া ও আখেরাতে৷ সুতরাং তাদের জন্য দুনিয়াতে কোন সাহায্যকারী নেই ও কোন সমর্থকও নেই৷
পিছনে বদনাম করার কথা আমরা আগেও জেনে এসেছি৷ এখানে এক যুবকের কথাকে অস্বীকার করে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করার দরুন এ আয়াতে আল্লাহ তাকে সত্যবাদী ও কথককে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করলেন৷ এছাড়া এআয়াতে আর একটি ভয়ংকর ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হওয়ার কথাও বলা হয়েছে৷ তাহল, নবী করীম সঃ তাবুক হতে ফেরার পথে একসময় একটি বিকল্প পথে যাচ্ছিলেন, রাস্তাটির উভয় দিকে পাহাড় থাকার কারণে অতিশয় সংকীর্ণ ছিল৷ পাশাপাশি দুটি উট চলাও কষ্টকর ছিল৷ সময় ছিল অন্ধকার রাত৷ ঐ সময় কয়েকজন মোনাফেক মুখে চাদর ঢেকে নবীর উপর আক্রমন চালায়৷ সঙ্গী দুজন সাহাবী হজরত হুজায়ফা রাঃ ও হজরত আম্মার ইবনে ইয়াসীর রাঃ তা প্রতিহত করেন৷ ঐ দুজনের কাছে রসুল সঃ আততায়ীদের নাম বলে অন্যকে বলতে বারণ করে ছিলেন৷ রসুলের জীবদ্দশায় তাঁরা আর কাউকে তা বলেননি৷ তাই অন্য সাহাবীরা তাঁদের নবীর গোপন তথ্যবাহী বলে জানত৷ আততায়ী ছিল, আবদুল্লাহ ইবনে উবাই৷ আল্লাহ বলেন, তিনি ও তাঁর রসুল সঃ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাব দূর করে ছিলেন বলেই অকৃতজ্ঞ মোনাফেক তার বদলা দিতে চেয়ে বিফল হয়েছে৷ তাদের বিরূপ মন্তব্য ও সমালোচনার মুখ বন্ধ করতে নবী সঃ বাইতুল মালের বন্টন কালে তাকে বেশীই দিতেন৷
আল্লাহ বলেন, এদের এখনও তওবা করে ফিরে আসার সুযোগ আছে৷ অবহেলা করলে দুনিয়ায় তাদের কোন সাহায্যকারী তো থাকবেই না পরন্তু আখেরাতে রয়েছে কঠিন আজাব৷
৭৫/ وَمِنْهُم مَّنْ عَاهَدَ اللّهَ لَئِنْ آتَانَا مِن فَضْلِهِ لَنَصَّدَّقَنَّ وَلَنَكُونَنَّ مِنَ الصَّالِحِينَ
অর্থাৎ;-তাদের মধ্যে কেউ কেউ রয়েছে যারা আল্লাহর সাথে ওয়াদা করেছিল যে, তিনি যদি নিজ অনুগ্রহে আমাদের দান করেন তবে, আমরা অবশ্যই সদকা দিতে থাকব ও সৎ কর্মশীলদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাব৷
৭৬/ فَلَمَّا آتَاهُم مِّن فَضْلِهِ بَخِلُواْ بِهِ وَتَوَلَّواْ وَّهُم مُّعْرِضُونَ
অর্থাৎ;-অতঃপর যখন তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে দান করলেন, তখন তারা তাতে কার্পন্য করল এবং মুখ ফিরিয়ে নিল, আর তারাতো মুখ ফেরাতে অভ্যাস্ত৷
৭৭/ فَأَعْقَبَهُمْ نِفَاقًا فِي قُلُوبِهِمْ إِلَى يَوْمِ يَلْقَوْنَهُ بِمَا أَخْلَفُواْ اللّهَ مَا وَعَدُوهُ وَبِمَا كَانُواْ يَكْذِبُونَ
অর্থাৎ;-এর পরিনতিতে তাদের অন্তরে মোনাফেকী পয়দা করে দিলেন, যা আল্লাহর সাথে তার সাক্ষাৎ দিবস পর্যন্ত থাকবে৷ কারণ তারা আল্লহর কছে কৃত ওয়াদা খেলাফ করেছিল এবং এ জন্য যে তারা মিথ্যা কথা বলত৷
আল্লাহ তায়ালা তাদের অন্তরে মোনাফেকী পয়দা করে দিয়েছেন, যারা আল্লাহর অনুগ্রহের দান পেলে তা থেকে যথাযথ ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা ভঙ্গ করেছিল৷ আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের দিন অর্থাৎ কেয়ামতের দিন পর্যন্ত তাদের অন্তরে এ মোনাফেকী বহাল থাকবে, মিথ্যা বলা আর ওয়াদা খেলাপ করার এটাই শাস্তি৷
এ আয়াতের আলোকে পাক ভারত বাংলা দেশের মুসলীমদের হৃতকম্প হওয়াই স্বাভাবিক৷ মুসলীম শুধু কলেমা নামাজ রোজা হজ্জ জাকাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকাই নয়৷ পবিত্র কোরআন ঘোষনা দেয় প্রকৃত মুমিনের এর পর আরও দুটি অতিরিক্ত করণীয় থেকে যায় যা হল, আল্লাহর দ্বীন কায়েমের পথে জান মাল দিয়ে জেহাদ করা৷(সুরা আনফাল ২ ও ১৪ নং আয়াত আর সুরা হুজরাত ১৫ নং আয়াত)৷ এ অঞ্চলের মুসলীম গন বিধর্মীদের অত্যাচার ও সংখ্যা লঘু হওয়ার কারণে দ্বীন প্রতিষ্ঠায় অপারগতা হেতু আল্লাহর কাছে আলাদা ভূ-খণ্ডের আবেদন জানিয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়৷ আল্লাহ তাদের আপন ভূ-খণ্ড দিলেন,ভারতে অবস্থান রত মুসলীমরা ভোটদিয়ে তাদের দায়ীত্ব শেষ করলেন৷ কিন্তু যারা নিজের ভূ-খণ্ড পেল, তারা ওয়াদা ভূলে গেল৷ পরিনতিতে আল্লাহ সেই মোনাফেকীই অন্তরে পয়দা করে দিয়েছেন, যার ফল আমরা ভোগ করে চলেছি৷ হয়তবা এখনও সময় আছে তওবা করার৷ আসুন আমরা তওবা করে প্রতিশ্রুতি পালন করার চেষ্টা করি৷
৭৮/ أَلَمْ يَعْلَمُواْ أَنَّ اللّهَ يَعْلَمُ سِرَّهُمْ وَنَجْوَاهُمْ وَأَنَّ اللّهَ عَلاَّمُ الْغُيُوبِ
অর্থাৎ;-তারাকি জানতনা যে, আল্লাহ তাদের মনের গুপ্ত কথা ও তাদের মনের গোপন পরামর্শ অবগত আছেন৷ এবং আল্লাহ যাবতীয় গায়েবের কথা সবিশেষ অবগত৷
৭৯/ الَّذِينَ يَلْمِزُونَ الْمُطَّوِّعِينَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ فِي الصَّدَقَاتِ وَالَّذِينَ لاَ يَجِدُونَ إِلاَّ جُهْدَهُمْ فَيَسْخَرُونَ مِنْهُمْ سَخِرَ اللّهُ مِنْهُمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
অর্থাৎ;-মুমিনদের মধ্যে যারা স্বতস্ফুর্ত ভাবে সদকা দেয়, এবং যারা নিজেদের পরিশ্রম লব্ধ বস্তু ছাড়া ব্যয় করার কিছুই পায়না৷ তাদের যারা দোষারোপ করে ও ঠাট্টা বিদ্রুপ করে, আল্লাহ তাদের বিদ্রুপ করেন৷ তার জন্য রয়েছে যন্ত্রনা দায়ক শাস্তি৷
রসুল সঃ জেহাদের কারণে যখন আল্লাহর পথে দান করার আহবান জানালেন, সাধ্য মত সকলে দান করতে থাকল৷ এক বেচারা দীন মজুর, আবু ওয়াকি আনসারী, কোন কৃষকের বাগানে সারা রাত কূয়ার পানি সেচে সকালে মজুরী বাবদ কিছু খেজুর পেলেন৷ অর্ধেক নিজ পরিবারের জন্য রেখে বাকী অর্ধেক হুজুরের খেদমতে হাজির করলে হুজুর বললেন, যাবতীয় মালের উপর এই খেজুর গুলি বিছিয়ে দাও, এ গুলি অনেক ভারী৷ তা দেখে এক মোনাফেক বিদ্রুপের ভাষায় অনেক কিছু বলেছিল৷ এ আয়াতে তারই জবাব দেওয়া হয়েছে৷
৮০/ اسْتَغْفِرْ لَهُمْ أَوْ لاَ تَسْتَغْفِرْ لَهُمْ إِن تَسْتَغْفِرْ لَهُمْ سَبْعِينَ مَرَّةً فَلَن يَغْفِرَ اللّهُ لَهُمْ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ كَفَرُواْ بِاللّهِ وَرَسُولِهِ وَاللّهُ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ
অর্থাৎ;-আপনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন অথবা তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা নাই করুন, যদি আপনি তাদের জন্য সত্তর বারও ক্ষমা প্রার্থনা করেন তবুও আল্লাহ তাদের কখনই ক্ষমা করবেন না৷ কারণ তারা কুফরী করেছে আল্লাহর সাথে ও তার রসুলের সাথেও৷ আল্লাহ ফাসেক লোকদের হেদায়েত দান করেন না৷
এমন কথা আমরা সুরা নিসায়ও আমরা পড়ে এসেছি৷ অতএব বলা যায় কাফেরদের যদি বা পথ আছে, মোনাফেকদের আর ফেরার পথ নেই৷
[/i][/i]
বিষয়: বিবিধ
১৫৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন