"ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ"র সব টুকুই আল্লাহর পথে ব্যয় হবে, সদকার প্রকৃত হকদার কারা জেনে নিন৷
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ৩০ মে, ২০১৩, ০৬:৫৬:২৮ সকাল
(ধারাবাহিক অনুবাদ, পূর্ব প্রকাশিতের পর)
আত তাওবাহ, রুকু;-৮ আয়াত;-৬০-৬৬ পারা দশ
“ইনফাক্ ফি সাবিলিল্লাহ” বা আল্লাহর পথে দান, তার সবটুকুই দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে ব্যয় হবে৷ কিনতু জাকাত সদকার প্রকৃত হকদার কারা তা নিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে এ রুকু৷
৬০/ إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاء وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِّنَ اللّهِ وَاللّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
অর্থাৎ;-জাকাত তো শুধুই ফকীর-মিসকীন, জাকাত আদায়কারী, যাদের চিত্ত আকর্ষন প্রয়োজন, দাস মুক্তি, ঋণগ্রস্থ, আল্লাহর পথে এবং মুসাফীরদের জন্য৷ এটা আল্লাহর নির্ধারিত বিধান৷ আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়৷
সদকা বা জাকাত মূলতঃ গরীব মিসকীনদের জন্য, যিনি তা আদায় ও বন্টনে শ্রম দেবেন, তার বেতন এখান থেকে দেওয়া যাবে৷ সমাজের ক্ষতিকারক বিরূপ সমালোচনা কারীর মুখ বন্ধ করতেও ব্যবহার হতে পারে, তবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা পাবার পর তা রোহিত করা হয়েছিল৷ প্রয়োজনে আবারও চালু হতে পারে৷ দাসমুক্তির জন্যও ব্যবহার হতে পারে, এমন ঋণে জর্জরিত, যেখান থেকে উঠে আসার সাধ্য যদি না থাকে, এমন মানুষের জন্যও ব্যবহার হতে পারে৷ এ গুলো মেটাবার পরও যদি অবশিষ্ট থাকে তবে আল্লাহর পথেও খরচ হতে পারে আর মুসাফীরদেরও দেওয়া যেতে পারে৷ এটিই আল্লাহর বিধান৷ এ বর্ণনা সুরা নিসাতেও এসেছে৷
৬১/ وَمِنْهُمُ الَّذِينَ يُؤْذُونَ النَّبِيَّ وَيِقُولُونَ هُوَ أُذُنٌ قُلْ أُذُنُ خَيْرٍ لَّكُمْ يُؤْمِنُ بِاللّهِ وَيُؤْمِنُ لِلْمُؤْمِنِينَ وَرَحْمَةٌ لِّلَّذِينَ آمَنُواْ مِنكُمْ وَالَّذِينَ يُؤْذُونَ رَسُولَ اللّهِ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
অর্থাৎ;-তাদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যারা নবীকে ক্লেশ দেয় এবং বলে ‘উনি কান সর্বস্য’৷ আপনি বলেদিন, কান সর্বস্য হলেও তা তোমাদের মঙ্গলের জন্য৷ তিনি আল্লাহর প্রতি ইমান রাখেন এবং মুমিনদেরকে বিশ্বাস করেন৷ আর তোমাদের মধ্যে যারা মুমিন তাদের জন্য রহমত বিশেষ৷ আর যারা নবীকে কষ্টদেয়, তাদের জন্য রয়েছে বেদনা দায়ক আজাব৷
দয়াল নবী সবার কথাই শুনতেন৷ মিথ্যা ওজর আপত্তিতে প্রতিবাদ করতেন না৷ ফলে মোনাফেকরা বলত, উনার কান শুধু শোনার জন্যই৷ আমি মিথ্যা ওজরে ছুটি পেয়েছি, তোমরাও যাও পাবে৷ নবী সঃ বুঝতেন না তা নয়৷ মুমিনদের জন্য বলা হয়েছে; “হুয়া ইয়ানজুরু বে নুরিল্লাহে” সে আল্লাহর নূরের সাহায্যে দেখে৷ অতএব একজন নবীর এটা না বোঝার কথা নয়৷ আল্লাহ মোনাফেকদের বলেন, এ কান তোমাদের মঙ্গলের জন্য৷ উনি আল্লাহর উপর ইমান রাখেন আর মুমিনদের বিশ্বাস করেন৷ তোমরা যারা নবীর হৃদয়ে ব্যাথা দাও তাদের জন্য জাহান্নাম রয়েছে৷
‘ইমান’ শব্দ ‘বে’ সহযোগে এলে ইমান হয়, আর ‘লাম’ সহযোগে এলে মেনে নেওয়া বা বিশ্বাস বলে গন্য হয় তা আর একবার প্রমান হল৷
৬২/ يَحْلِفُونَ بِاللّهِ لَكُمْ لِيُرْضُوكُمْ وَاللّهُ وَرَسُولُهُ أَحَقُّ أَن يُرْضُوهُ إِن كَانُواْ مُؤْمِنِينَ
অর্থাৎ;-তারা তোমাদের সামনে কসম করে তোমাদের সন্তুষ্ট করার জন্য৷ অথচ আল্লাহ এবং তার রসুল এ বিষয়ে বেশী হকদার যে, তারা তাকেই সন্তুষ্ট করে৷ যদি তারা মুমিন হয়ে থাকে৷
মিথ্যাবাদী মোনাফেকরা অন্যের মনে বিশ্বাস জন্মানোর জন্য কসম করে কথা বলে, যাতে তারা বিশ্বাস করে৷ আল্লাহ বলেন, তারা যদি প্রকৃত মুমিন হত তবে তারা আল্লাহ ও তার রসুলের বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা আগে করত৷
৬৩/ أَلَمْ يَعْلَمُواْ أَنَّهُ مَن يُحَادِدِ اللّهَ وَرَسُولَهُ فَأَنَّ لَهُ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدًا فِيهَا ذَلِكَ الْخِزْيُ الْعَظِيمُ
অর্থাৎ;-তারা কি এ কথা জানে না যে, যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও তার রসুলের বিরোধিতা করে তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন৷ সেখানে সে অনন্তকাল থাকবে৷ এটিই হল বড় লাঞ্ছনা৷
এ আয়াতে পরিষ্কার বলা হয়েছে; যারা আল্লাহ ও তার রসুলের বিরোধিতা করবে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন৷ যেখানে অনন্তকাল থাকতে হবে। আমরা যারা নিজেকে মুসলীম বলে দাবী করি, শেষ নবীর উম্মত বলে কেয়ামতে তাঁর সুপারিশের প্রত্যাশা করি, তারাকি একবারও ভেবে দেখেছি আমাদের অবস্থান কোথায় আর বিনিময়ে আমরা কি পেতে পারি?
৬৪/ يَحْذَرُ الْمُنَافِقُونَ أَن تُنَزَّلَ عَلَيْهِمْ سُورَةٌ تُنَبِّئُهُمْ بِمَا فِي قُلُوبِهِم قُلِ اسْتَهْزِؤُواْ إِنَّ اللّهَ مُخْرِجٌ مَّا تَحْذَرُونَ
অর্থাৎ;-মোনাফেকরা ভয় করে, পাছে না এমন সুরা নাজিল হয় যাতে তাদের অন্তরের কথা মুমিনদের জানিয়ে দেয়৷ বলুন, তোমরা ঠাট্টা বিদ্রুপ করতে থাক, নিশ্চয় আল্লাহ তা প্রকাশ করবেন তোমরা যা ভয় কর৷
আমরা কে কোথায় তা যেমন অনুমান করতে পারি, তেমনই মোনাফেকরাও তাদের অন্তরের কথা জানত এবং ভয়ে ভয়ে থাকত যে কবে না জানি এমন সুরা নাজিল হয় যাতে আমাদের স্বরূপ প্রকাশ পায়৷ আল্লাহ তাদের আশ্বাস দিলেন, তা একদিন প্রকাশ করা হবে৷
৬৫/ وَلَئِن سَأَلْتَهُمْ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلْعَبُ قُلْ أَبِاللّهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنتُمْ تَسْتَهْزِؤُونَ
অর্থাৎ;-আর আপনি যদি তাদের প্রশ্ন করেন তবে, তারা অবশ্যই বলবে, ‘আমরা তো কেবল হাঁসি তামাসাই করছিলাম’৷ বলুন, তবে কি তোমরা আল্লাহ ও তার বিধি বিধানের সাথে আর তার রসুলের সাথে ঠাট্টা বিদ্রুপ করছিলে?
মোনাফেকরা রসুলের অগোচরে ইসলামের বিরূপ সমালোচনা করত, যদি কোন মুমিন শুনে রসুলের কাছে বলতেন, আর রসুল সঃ তাদের ডেকে জিজ্ঞেস করতেন উত্তরে তারা ভাল মানুষ সেজে বলত, আমরাতো হাঁসি তামাশার ছলেই এমন বলছিলাম, কেউ সিরিয়াস মনে করে আপনাকে বলে থাকবে৷
৬৬/ لاَ تَعْتَذِرُواْ قَدْ كَفَرْتُم بَعْدَ إِيمَانِكُمْ إِن نَّعْفُ عَن طَآئِفَةٍ مِّنكُمْ نُعَذِّبْ طَآئِفَةً بِأَنَّهُمْ كَانُواْ مُجْرِمِينَ
অর্থাৎ;-তোমরা এখন ওজর পেশ কোরনা, ইমান প্রকাশ করার পর তোমরাতো কুফরী করেছ৷ তোমাদের কোন দলকে ক্ষমা করলেও অবশ্যই কিছু লোককে সাজাও দেব, কেননা তারা ছিল অপরাধী।
[/i]
বিষয়: বিবিধ
৪৭৭২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন