"তবেকি তোমরা আখেরাতের পরিবর্তে পার্থিব জীবনে তুষ্ট হয়ে গেলে?"
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ১৯ মে, ২০১৩, ০৮:২১:৫২ সকাল
(ধারাবাহিক অনুবাদ, পূর্ব প্রকাশিতের পর)
আত তাওবাহ; রুকু;-৬ আয়াত;-৩৮-৪২
আমরা জানি রসুল সঃ এর রেসালাত দুইটি ধারায় বিভক্ত ছিল। হোদায়বিয়ার সন্ধীর সাথেই প্রথম ধারার সাফল্য নিরুপীত হয়। তার পর শুরু হয় পত্রদূত প্রেরণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় ধারা৷ এরই ধারাবাহিকতায় হজরত ইবনে উমাইয় আযাদী রাঃ কে পত্র সহ, রোমান রাজার নিযুক্ত বসরার গভর্নর ইবনে আমর গাস্সাসীর দরবারে পাঠান। গাস্সাসী পত্রদূতকে অপমানিত করে হত্যা করলে তা তৎকালীন নিয়মে যুদ্ধের আহবানে পরিনত হয়৷ তাই রসুল সঃ তিন হাজার মুমিনের এক বাহিনী কে হজরত যায়েদ বিন হারশার নেতৃত্বে প্ররণ করেন ও প্রয়োজনে দলপতি হওয়ার জন্য যথাক্রমে জাফর ইবনে আবু তালেব (রসুল সঃ এর চাচাতো ভাই) ও হজরত আবদুল্লাহ ইবনে রওয়াহা রাঃ এর নাম ঘোষনা করেন।
দুই লক্ষ রোমান বাহিনীর মোকাবেলায় তিন হাজার মুমিন মুজাহীদ পরামর্শের মাধ্যমে মোকাবেলারই সিদ্ধান্ত নেন ও সহজেই পর্যুদস্ত হন৷ রসুল সঃ মনোনিত তিন দলপতি একে একে শহীদ হন৷ তখন খালিদ বিন ওয়ালিদ নেতৃত্বের পতাকা হাতে নেন ও সৈন্য বাহিনীতে অবস্থান গত রদবদল করেন। তাতে শত্রুপক্ষ অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ মনেকরে বিভ্রান্ত হয়। এই সুযোগে মুমিন বাহিনী প্রত্যাবর্তন করে৷ এটাই ছিল মুতার যুদ্ধ৷ ফলাফলে মুসলীমদের অগ্রযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটে৷ তাকে পুনঃরুদ্ধার করতেই তাবুক অভিযান প্রয়োজন হয়ে পড়ে৷
গন্তব্য ছিল মদীনা হতে উত্তরে প্রায় সাড়ে তিন শত মাইলদূরে৷ উত্তপ্ত মরুপথ৷ হেজাজের শেষ প্রান্ত আর রোম সাম্রাজ্যের সীমানা শুরু৷ এদিকে মদীনা বাসীর একমাত্র ফষল খেজুর পেকেছে, গাছথেকে পাড়ার অপেক্ষা মাত্র৷ সারা বছরের আহারের সংস্থান৷ মহীলাদের দ্বারা তা সম্ভব নয়৷ এক কথায় মুমিন গন কঠিন অবস্থার সম্মুখীন৷
এ যাবৎ ছোট বড় কোন অভিযানেই মুমিনদের যোগদান বাধ্যতা মূলক ছিলনা, কিন্তু এ অভিযানে যোগদান বাধ্যতা মূলক করা হয়৷ কোন অভিযান, এমনকি মক্কা বিজয়ের অভিযানেও রসুল সঃ পূর্বে গন্তব্যের ঘোষনা না দিলেও এ অভিযানে ঘোষনা দিলেন।
সুরা তওবার বাকী এগারো রুকু রসুল সঃ এর রেসালাতের দ্বিতীয় ধারার সাথে সম্পৃক্ত, যার প্রথম চারটি তাবুক অভিযানের আগে, পরে ও তথায় অবস্থান কালে নাজিল হয়। বাকি সাতটি রুকু মোনাফেকদের মুখোশ উন্মোনের চুড়ান্ত তথ্য সমৃদ্ধ৷ সুরা নিসার প্রায় অর্ধেকে আমরা প্রাথমিক ভাবে জেনে এসেছি। সুরা নিসার মত এখানেও তাদের মুমীন বলেই সম্বোধন করা হয়েছে। কেননা তারা মুমীনেরই দাবীদার৷
৩৮/ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ مَا لَكُمْ إِذَا قِيلَ لَكُمُ انفِرُواْ فِي سَبِيلِ اللّهِ اثَّاقَلْتُمْ إِلَى الأَرْضِ أَرَضِيتُم بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا مِنَ الآخِرَةِ فَمَا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فِي الآخِرَةِ إِلاَّ قَلِيلٌ
অর্থাৎ;-ওহে যারা ইমান এনেছ! তোমাদের কি হল? যখন তোমাদের আল্লাহর পথে বের হতে বলা হয় তখন তোমরা ভারাক্রান্ত হয়ে মাটিতে ঝুঁকে পড়? তবেকি তোমরা আখেরাতের পরিবর্তে পার্থিব জীবনে তুষ্ট হয়ে গেলে? বস্তুতঃ আখেরাতের তুলনায় পার্থিব জীবন নিতান্তই অকিঞ্চিতকর৷
৩৯/ إِلاَّ تَنفِرُواْ يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا أَلِيمًا وَيَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ وَلاَ تَضُرُّوهُ شَيْئًا وَاللّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
অর্থাৎ;-যদি তোমরা অভিযানে বের না হও তবে আল্লাহ তোমাদের যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি দেবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন৷ তোমরা তার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা৷ আর আল্লাহ সর্ব বিষয়ে শক্তিমান৷
তোমরা যদি দুনিয়ার নেয়ামত যা আখেরাতের তুলনায় অতি তুচ্ছ, তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে মগ্ন থাক আর রসুলের সঃ ডাকে অভিযানে না যাও, তবে মনে রেখ তোমাদের জন্য রয়েছে কঠিন আজাব৷ এর আগে ছোটবড় যতই অভিযান ছিল তা ছিল ঐচ্ছিক, কিন্তু এ অভিযান ফরজ৷ ফরজ অমান্য করার শাস্তি পেতেই হবে আর তোমাদের বাদ দিয়ে আখেরাত কামাইএর জন্য আল্লাহ অন্য কোন জাতিকে বেছে নেবেন৷
৪০/ إِلاَّ تَنصُرُوهُ فَقَدْ نَصَرَهُ اللّهُ إِذْ أَخْرَجَهُ الَّذِينَ كَفَرُواْ ثَانِيَ اثْنَيْنِ إِذْ هُمَا فِي الْغَارِ إِذْ يَقُولُ لِصَاحِبِهِ لاَ تَحْزَنْ إِنَّ اللّهَ مَعَنَا فَأَنزَلَ اللّهُ سَكِينَتَهُ عَلَيْهِ وَأَيَّدَهُ بِجُنُودٍ لَّمْ تَرَوْهَا وَجَعَلَ كَلِمَةَ الَّذِينَ كَفَرُواْ السُّفْلَى وَكَلِمَةُ اللّهِ هِيَ الْعُلْيَا وَاللّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
অর্থাৎ;-তোমরা যদি তাকে সাহায্য না কর, আল্লাহ তাকে সাহায্য করেছেন যখন কাফেররা তাকে বহিষ্কার করেছিল৷ তিনি ছিলেন দুজনের দ্বিতীয় জন, যখন তারা গুহার মধ্যে ছিলেন,তখন তিনি আপন সঙ্গীকে বললেন, বিষন্ন হয়োনা, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন৷ আল্লাহ তার উপর আপন প্রশান্তি বর্ষণ করলেন এবং তাকে সাহায্য করলেন এমন বাহিনী দিয়ে যাদের তোমরা দেখনি৷ বস্তুতঃ আল্লাহ কাফেরদের মাথা নিচু করে দিলেন৷ আর আল্লহর বাণী সদাই সমুন্নত এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়৷
কাফেরদের অত্যাচারে, আল্লাহর আদেশে মক্কা ত্যাগ করে রসুল সঃ যখন মদীনায় হিজরত করে ছিলেন তখন হজরত আবুবকর রাঃ একমাত্র তাঁর সঙ্গী ছিলেন৷ সোজা পথে না গিয়ে ভিন্ন পথে রওয়ানা হয়ে পথে ‘সওর’নামক এক গুহায় আশ্রয় নিয়ে ছিলেন৷ ঘোষীত পুরষ্কার লাভের আশায় কাফেররা তাঁর সন্ধানে বার হয়৷ এক পর্যায়ে তারা গুহার সামনে এলে হজরত আবুবকর বিচলিত হয়ে বলেন, ওরা সামান্য ঝুঁকলেই আমাদের দেখে ফেলবে আর আমরা মাত্র দুজন৷ রসুল সঃ তাঁকে সাহস দিয়ে বললেন, ভয় পেওনা আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন৷ আল্লাহ তাদের মনে সাহস ও শান্তনা দিলেন ও অদৃশ্য এক বাহিনী দিয়ে সাহায্য করেছিলেন৷ এ কথাটা তাদের বলে মনে করিয়ে দিলেন যে, তোমরা সহযোগিতা না করলেও তার সাহায্যের অভাব হবেনা৷
৪১/ انْفِرُواْ خِفَافًا وَثِقَالاً وَجَاهِدُواْ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ فِي سَبِيلِ اللّهِ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
অর্থাৎ;-তোমরা বের হয়ে পড় স্বল্প বা প্রচুর সরঞ্জামের সাথে(স্বচ্ছ বা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে) এবং জিহাদ কর আল্লাহর পথে নিজেদের জান ও মাল দিয়ে৷ এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা জানতে৷
৪২/ لَوْ كَانَ عَرَضًا قَرِيبًا وَسَفَرًا قَاصِدًا لاَّتَّبَعُوكَ وَلَـكِن بَعُدَتْ عَلَيْهِمُ الشُّقَّةُ وَسَيَحْلِفُونَ بِاللّهِ لَوِ اسْتَطَعْنَا لَخَرَجْنَا مَعَكُمْ يُهْلِكُونَ أَنفُسَهُمْ وَاللّهُ يَعْلَمُ إِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ
অর্থাৎ;-যদি আশু লাভের সম্ভাবনা থাকত এবং সফরও সংক্ষিপ্ত হত, তবে তারা অবশ্যই আপনার সহযাত্রী হত৷ কিন্তু তাদের কাছে যাত্রাপথ দীর্ঘ মনে হল আর তারা এমনই শপথ করে বলবে, আমাদের সাধ্য থাকলে আমরা নিশ্চয়ই আপনার সাথে বের হতাম৷ তারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করেছে৷ আল্লাহ জানেন যে তারা মিথ্যাবাদী৷
রসুল সঃ ছিলেন নরম হৃদয়ের মানুষ৷ মিথ্যে অযুহাত দেখিয়ে মোনাফেকরা না যাবার অনুমতি আদায় করে নিতে থাকলে, আল্লাহ বললেন, অনেক দূরের অভিযান যদি না হত আর গনিমতের মাল পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকলে তারা অবশ্যই অভিযানে শরিক হত৷ মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে ওরা নিজেদের ক্ষতিই করল৷
বিষয়: বিবিধ
১৬৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন