"হে ইমানদারগন, নিশ্চয়ই অধিকাংশ ওলামা ও দরবেশগন লোকদের মালামাল অন্যায় ভাবে ভোগ করে চলেছে, এবং আল্লাহর পথ হতে নিবৃত্ত রাখছে--"৷
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ১৭ এপ্রিল, ২০১৩, ০৮:৩৯:০৪ রাত
আত তাওবাহ রুকু; ৫ আয়াত;-৩০-৩৭
হজরত সুলাইমান আঃ এর পর ইহুদী সমাজের উপর চরম দূর্দিন নেমে এসেছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে তাওরাতও প্রায় নিশ্চিহ্ন হবার উপক্রম হয়৷ এমতাবস্থায় হজরত উজাইর আঃ তাকে পুণঃরুদ্ধার করে ইহুদীদের প্রভুত উপকার করেন৷ এরই বিনিময়ে তাঁকে অতিরিক্ত ভাল বাসা দেখাতে গিয়ে, হজরত উজাইর আঃ কে ঈশ্বর পুত্র বানিয়ে দেয়৷ যেমন টি খ্রীষ্টানেরা হজরত ইশা আঃ কে করেছেন।
৩০/ وَقَالَتِ الْيَهُودُ عُزَيْرٌ ابْنُ اللّهِ وَقَالَتْ النَّصَارَى الْمَسِيحُ ابْنُ اللّهِ ذَلِكَ قَوْلُهُم بِأَفْوَاهِهِمْ يُضَاهِؤُونَ قَوْلَ الَّذِينَ كَفَرُواْ مِن قَبْلُ قَاتَلَهُمُ اللّهُ أَنَّى يُؤْفَكُونَ
অর্থাৎ;-ইহুদীরা বলে, ‘উজাইর আল্লাহর পুত্র,’ এবং নাসারারা বলে, ‘মসীহ আল্লাহর পুত্র৷’ এ হল তাদের মুখের কথা৷ এরা কথা বলে তাদের মত যারা পূর্বে কুফরী করেছিল৷ আল্লাহ এদের ধ্বংস করুন, এরা কোন উল্টা পথে যাচ্ছে৷
মিশরে আদীকালে এমনই এক সম্প্রদায় ছিল যারা ঈশ্বরের তৃতত্ব বাদে বিশ্বাসী ছিল৷ তা ছিল; ঈশ্বর পিতা, ঈশ্বর পুত্র ও ঈশ্বর মাতা৷ সেন্ট পল যখন ঐ অঞ্চলে খ্রীষ্ট ধর্মের তবলীগ শুরু করেন তখন ঐ অঞ্চলের মানুষকে সহজে নিজ দলে আনার ইচ্ছায় তাদেরই প্রচলিত বিশ্বাসের অনুকরণে নিজ ধর্মকে উপস্থাপন করেন। এ আয়াতে সে কথাই বলা হয়েছে৷ সেই সঙ্গে এরা যে ভুল পথে ধ্বংসের দিকে চলেছে তাও বলা হয়েছে।
৩১/ اتَّخَذُواْ أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللّهِ وَالْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُواْ إِلاَّ لِيَعْبُدُواْ إِلَـهًا وَاحِدًا لاَّ إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ سُبْحَانَهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ
অর্থাৎ;-তারা তাদের ওলামা ও দরবেশদের পালনকর্তা রূপে গ্রহন করেছে, আল্লাহকে ছেড়ে৷ অথচ তারা আদিষ্ট ছিল এক মাত্র মাবুদের ইবাতের জন্য৷ তিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই৷ তারা তার শরিক সাব্যস্ত করে, তা থেকে তিনি পবিত্র৷
এ কথায় দাতা হাতেমতাঈ পুত্র, আদী ইবনে হাতেম, যিনি খ্রষ্টান হতে মুসলীম ধর্মে দীক্ষা নিয়েছিলেন, তিনি রসুল সঃ এর কাছে এর ব্যাখ্যা চেয়ে বলে ছিলেন, আমরাতো এমন করি বলে মনে হয়না৷ রসুল সঃ জবাবে বললেন, এ কথাতো সত্য যে তোমরা পোপের কথায় বিশ্বাস করে, তার নির্ধারিত জিনিষ বা নিয়মনীতিকে হারাম বা হালাল বলে মেনে নাও৷ যেটার অধিকার এক মাত্র আল্লাহই রাখেন৷ ইবনে হাতেম রাঃ তা মেনে নিলে রসুল সঃ বললেন, এ কথাই এ আয়াতে বলা হয়েছে।
স্মরণ করা যেতে পারে যে, দুই হাজার বছর খ্রীষ্টান গন জানতেন, ইহুদীরাই ঈশা আঃ এর খুনী৷ পোপের এক ফরমানে তা রাতারাতি বদলে গেল।
৩২/ يُرِيدُونَ أَن يُطْفِؤُواْ نُورَ اللّهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَيَأْبَى اللّهُ إِلاَّ أَن يُتِمَّ نُورَهُ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ
অর্থাৎ;-তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নির্বাপিত করতে চায়, কিন্তু আল্লাহ অবশ্যই তার নূরের পূর্ণতা বিধান করবেন, যদিও কাফেররা তা অপ্রীতিকর মনে করে৷
৩৩/ هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ
অর্থাৎ;-তিনিই সেই সত্তা যিনি স্বীয় রসুলকে প্রেরণ করেছেন হেদায়েত ও সত্য দ্বীন সহকারে, যেন সকল ধর্মের উপর এ দ্বীনকে জয়যুক্ত করেন, যদিও মুশরীকরা তা অপছন্দ করে৷
ইহুদীগন কখনই সামনা সামনি বিরোধিতায় নামেনি৷ সকল সময় তারা মোনাফেক ও মুশীকদের সাথে হাত মিলিয়ে পরামর্শ দিয়ে যোগ সাজশে ইসলামের বিরোধীতা করত৷ তাই আল্লাহ তাদের এ মুখের সহায়তাকেই ফুৎকার বলে ছেন৷
কেউ পছন্দ করুক আর না করুক, হাজার বিরোধিতা করলেও আল্লাহ তার রসুলের মাধ্যমে যে দ্বীন পাঠিয়েছেন তা তার দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠা করেই ছাড়বেন। তিনি সর্বশক্তিমান, তিনি শুধু মাত্র ‘কূন’ শব্দ দ্বারাই তা করতে পারেন। কিন্তু তার নিয়ম হল তার বান্দাদের দ্বারাই এ কাজ করানো৷ আর তারই সাফল্যের সাথে জুড়ে দিয়েছেন পরকালের অনন্ত জীবন। যুগে যুগে নবী পাঠিয়েছেন, সর্ব শেষে শেষ নবীর মাধ্যমে কেয়ামত পর্যন্ত এর কার্যক্রমকে চলমান রাখার ব্যবস্থা করেছেন৷ উপরের আয়াত দুটি প্রায় একই অবয়বে, একই সাথে পুনরায় সুরা ‘সাফ’ এ পাওয়া যাবে(৮,৯)৷
৩৪/ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ إِنَّ كَثِيرًا مِّنَ الأَحْبَارِ وَالرُّهْبَانِ لَيَأْكُلُونَ أَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ اللّهِ وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلاَ يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللّهِ فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ
অর্থাৎ;-হে ইমানদারগন, নিশ্চয়ই অধিকাংশ ওলামা ও দরবেশগন লোকেদের মালামাল অন্যায় ভাবে ভোগ করে চলেছে এবং আল্লাহর পথ হতে লোকদের নিবৃতও রাখছে৷ আর যারা সোনা ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করেনা, তাদের কঠোর আজাবের সু সংবাদ দিন৷
প্রথমেই একটি হাদিশের আলোচনা করা যেতে পারে, যাতে ব্যাপারটি সহজে বোধগম্য হয়৷ রসুল সঃ বললেন, আশংকা হয়, এমন একদিন আসবে যখন আক্ষরীক কোরআন আর আনুষ্ঠানিক ইসলামই অবশিষ্ট থাকবে, মসজিদ অনেক চাকচিক্যময় হবে, এবং তা আবাদও হবে৷ কিন্তু সে গুলোতে হেদায়েত থাকবেনা৷ ওলামাগন হবে আসমানের নীচে নিকৃষ্ট মানুষ৷ ফেতনা ফাসাদ তাদের মধ্য হতে বার হবে আর তাদের মাঝেই ডুবে যাবে৷
এ আয়াতের সাথে হাদিশটির মিল রয়েছে৷ যে কেউ ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখলেই হবে৷ আজ ওলামারা বেশীর ভাগই জঙ্গী নামে অবহিত৷ ইসলাম আজ আতঙ্কের বস্তু৷ অনেক পীর দরবেশ, আওলিয়া আল্লাহর নামে নজরাণা নিয়ে ব্যাক্তিগত সম্পদের মালিক হচ্ছে৷ তাদের কঠোর আজাবের সংবাদ দেওয়া হল৷ পরের আয়াতে আরও শাস্তির কথা বলা হয়েছে৷সেই সঙ্গে যখন কোন সত্য পথের পথিক সঠিক পথের সন্ধান নিয়ে হাজির হন, তখন এই দরবেশ, ওলামাগন আপন মুরীদদের কৌশলে সেখানে ভিড়তে না দিয়ে লোভ দেখিয়ে দূরে রাখেন।
৩৫/ يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَـذَا مَا كَنَزْتُمْ لأَنفُسِكُمْ فَذُوقُواْ مَا كُنتُمْ تَكْنِزُونَ
অর্থাৎ;-সেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তাদিয়ে তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে, বলা হবে, এ গুলো হল তা যা তোমাদের নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে৷ সুতরাং যা তোমরা জমা করে রাখতে তার স্বাদ আস্বাদন কর৷
রসুল সঃ এর ইন্তেকালের পর এ আয়াতে মত বিরোধের সৃষ্টি হয়৷ হজরত আবুজর গিফারী রাঃ ফতোয়া দেন, সোনা ও রূপা জমা করে রাখাই হারাম৷ এতেই মূলতঃ মত বিরোধ হয়৷ হজরত আবুজর গিফারী রাঃ তাঁর রায়ে অনড় থাকেন৷ তখন হজরত ওসমান রাঃ তাঁকে অন্যত্র গিয়ে বাস করতে বলেন৷ সিদ্ধান্ত হয়, হালাল উপায়ে উপার্জন করে, আল্লাহর হক, মানুষের হক আদায় করার পর সোনা রুপা জমা করায় বাধা নেই।
এ আয়াতে তাদের কথা বলা হয়েছে, যারা আল্লাহর দিনের জন্য নিজেদের নিবেদিত করেছেন, সেই মর্মে মানুষের কাছে নজরাণা, দান খয়রাত, উপঢৌকন নিতে থাকেন, সেখান থেকে তিনি তার নিজস্য চাহিদার অতিরিক্ত মালা মাল যদি ভবিষ্যত বংশধর দের জন্য জমা করে রাখেন তবেই তা হবে শাস্তি যোগ্য অপরাধ।
বর্তমানের পীর দরবেশদের হাল হকিকত খেয়াল করলেই এ আয়াত ও নবী সঃ হাদিশের প্রমান পাওয়া যাবে৷
৩৬/ إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِندَ اللّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَات وَالأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ فَلاَ تَظْلِمُواْ فِيهِنَّ أَنفُسَكُمْ وَقَاتِلُواْ الْمُشْرِكِينَ كَآفَّةً كَمَا يُقَاتِلُونَكُمْ كَآفَّةً وَاعْلَمُواْ أَنَّ اللّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ
অর্থাৎ;-নিশ্চয় মাস সমুহের সংখ্যা আল্লাহর কাছে বার মাস, সু নির্দিষ্ট রয়েছে আল্লাহর কিতাবে, সেদিন থেকে যেদিন সৃষ্টি করেছেন জমিন ও আসমান সমুহ৷ এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত৷ এটিই সু প্রতিষ্ঠিত বিধান৷ সুতরাং এ বিষয়ে তোমরা নিজেদের প্রতি জুলুম কোর না৷ আর তোমরা সমবেত ভাবে মুশরীকদের সাথে যুদ্ধ করবে যেমন তারা সমবেত ভাবে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে থাকে৷ আর মনে রেখো নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে রয়েছেন৷
সৃষ্টির আদী হতেই আল্লাহ তায়ালা বৎসরে বারমাস ও তার মধ্যে চারটি মাসকে সম্মানিত করে দিয়েছেন৷ মাস চারটি হল; রজব, জিলকদ, জিলহজ্জ ও মহররম৷ এ চারটি মাসে খুন খারাবী যুদ্ধ মারা মারি নিষিদ্ধ ছিল৷ কিন্তু মুশরীকরা নিজেদের প্রয়োজনে ও সুযোগমত এই মাস গুলোকে উল্টাপল্টা বা বদল করে নিত৷ যার ফলে হজ্জ সহ অন্যান্ন বিষয় গুলিও আসল সময় না হয়ে অন্য সময়ে চলে যেত৷ বিদায় হ্জ বা দশম হিজরীসনে মাস গুলি ঘুরে ফিরে ঠিক আল্লাহর বিধান অনুযায়ী অবস্থানে ছিল৷ নবী সঃ ঘোষনা দিলেন, এর পর আর কোন মতে এর হেরফের করা চলবেনা৷
৩৭/ إِنَّمَا النَّسِيءُ زِيَادَةٌ فِي الْكُفْرِ يُضَلُّ بِهِ الَّذِينَ كَفَرُواْ يُحِلِّونَهُ عَامًا وَيُحَرِّمُونَهُ عَامًا لِّيُوَاطِؤُواْ عِدَّةَ مَا حَرَّمَ اللّهُ فَيُحِلُّواْ مَا حَرَّمَ اللّهُ زُيِّنَ لَهُمْ سُوءُ أَعْمَالِهِمْ وَاللّهُ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ
অর্থাৎ;-মাসকে পিছিয়ে দেবার কাজতো শুধু কুফরীর মাত্রা বৃদ্ধি করে, যার ফলে কাফেরগন গোমরাহীতে পতিত হয়৷ এরা একে হালাল করে নেয় এক বছর আর হারাম করে অন্য বছর, যাতে তারা গননা পূর্ণ করে নেয়, আল্লাহর নিষিদ্ধ মাস গুলো৷ অতঃপর হালাল করে নেয় আল্লাহর হারাম কৃত মাস গুলোকে৷ তাদের মন্দ কাজ গুলো তাদের জন্য শোভনীয় করে দেওয়া হয়৷ আর আল্লাহ কাফের সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না।
বিষয়: বিবিধ
১৫৯৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন