বিজ্ঞান মেলা-আশরাফ ইকবাল
লিখেছেন লিখেছেন ইকুইকবাল ১০ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১১:২০:৫৩ রাত
ঘুম থেকে উঠেই মোবাইল হাতে নেই। সহসা ক্ষুদ্র বার্তাটির প্রতি নজর আটকে গেল! সুমনের বার্তায় লেখা ‘আমি টাকা কালেক্ট করতে পারিনি, কিভাবে তোমার সাথে মেলায় যোগ দিব’। সেই ছোট বেলা থেকেই সুমনের সাথে আমার বেশ ভাব যাকে বলে গভীর বন্ধুত্ব। আসলে ওকে ছাড়া বিজ্ঞান মেলায় যাওয়া আমি কল্পনাই করতে পারি না। তাছাড়া ওর হাতে কোন টাকা নেই। কি করা! ভেবে কূল পাই না। রাতেই সুমনকে ক্ষুদে বার্তায় জানিয়েছি মেলার আয়োজক কালিদাস স্যার আমাদের ফোরামকে অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য দাওয়াত করেছেন। এতে দুজনই বেশ পুলকিত। আগপাছ না ভেবে সুমনকে কল দিয়ে বলে দিলাম, যে করেই হোক আজ অনুষ্ঠান মিস করা যাবে না। এটি বিক্রমপুরের সবচেয়ে আলোচিত ও সৃজনশীল অনুষ্ঠান। মিস করা ঠিকও হবে না। অগত্যা সুমন রওয়ানা দেয়। আমি ওর জন্য ওয়েট করি। সময় কাটছে না। লেপটপ অন করে সবার সাথে একটু যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। ফোরামের সদস্য জোনাক হুসাইনকে পেলাম। মেলায় আসার সম্মতি দিল। মনে মনে ভাবলাম পথে কবি উজ্জল দত্তর সাথে দেখা করে গেলে কেমন হয়। বিষয়টি সুমনকে বলে দেখব। আশা করি আমার কথা ফেলবে না। ভাবতে ভাবতে সুমন চলে এল। আমরা শ্রীনগর বাজারে চলে এলাম। ঠিক উজ্জল দত্তর দোকানে। আরে আপনারা আমার দোকানে! সে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে। পাশেই ছিল বিক্রমপুরের ডাকসাইটে সাহিত্যিক মুজিব রহমান। তিনি ব্যস্ত মানুষ। ব্যাংকের ম্যানেজারী। কয়েকটি সামাজিক সংগঠনও পরিচালনা করছেন। তাছাড়া কিছু নিয়মিত-অনিয়মিত সাময়িকীও বের করছেন। সবগুলিই জনপ্রিয়তায় বিক্রমপুরের শীর্ষে। মুজিব ভাইকে দোকানে আসার কথা বলে উজ্জল ভাই চা - এর অর্ডার করেন। আমরা আড্ডা দিচ্ছি আর কবি উজ্জল দত্তর সাথে ছবি তুলছি। তিনি আমাদেরকে জানালেন মুজিব ভাই ঢাকা থেকে আগত এক কবির সাথে আড্ডা দিচ্ছেন। তার কথা কেড়ে নিয়ে আমি বললাম তিনি ব্যস্ত মানুষ তার আসা লাগবে না। বরং আমরাই তার অফিসে যাই বলে বিদায় নিলাম উজ্জল দত্তর কাছ থেকে। আমরা বের হয়েছি ওমনি মুজিব ভাই ও ঢাকার কবির সাথে দেখা। পরিচয় না হলে আড্ডা জমে না। অনেকদিন ধরে বিভিন্ন সাহিত্য সাময়িকীতে কবি সান্দ্র মোহন্তর অসাধারণ কবিতা পড়ছি। মুজিব ভাইয়ের মাধ্যমেই তার সাথে ভার্চুয়াল জগতে যোগাযোগ হয়ে গেল এক প্রকারে। ‘প্রভাত’ নামে বিক্রমপুরের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে একটি সংকলন বের করতে যাচ্ছি। সান্ধ্র ভাই ওখানে দুটি কবিতা দিয়েছেন। তার সাথে দেখা করার ইচ্ছা দীর্ঘ দিনের। কিন্তু কারো কাছে বিষয়টি শেয়ার করা মোটেও শ্রেয় মনে করলাম না। তবে কে বুঝত আজই সেই কাঙ্খিত ব্যক্তির সাথে দেখা হবে! পরিচিত হবার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন আমি সান্ধ্র মোহন্ত। কবির মুখে এই কথাটি শুনে আমি থ হয়ে গেলাম। ধাতস্থ হওয়ার পর বললাম, আপনিই সেই প্রিয় কবি। আপনার কথা অনেকদিন ধরেই শুনছি। তাকে খুঁজছি মনে মনে। কিন্তু পাচ্ছি না। আমার কথা শুনে বুকে জড়িয়ে নিলেন সান্ধ্র ভাই। মুজিব ভাই আমাদের সবাইকে নিয়ে চা এর স্টলে গেলেন। সব স্টল লোকে লোকারণ্য। ব্যর্থ হয়ে ফিরে এলাম উজ্জল দত্তর দোকানে। অফ! আনন্দে সুমনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে ভুলে গেলাম। তবে সবার বেলায় এমন হলে আমার বেলায় হবে না কেন? এ হচ্ছে আমাদের বিক্রমপুরের মেধাবী ও জনপ্রিয় কবি সান্ধ্র মোহন্ত। সান্ধ্র ভাই, এ হচ্ছে আমাদের লেখক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুমন। গাদাগাদি করে বসলাম। বিভিন্ন বিষয় উঠে এল আমাদের আড্ডায়। জেনে নিলাম কে কোন ধরনের লেখা লেখি করে। আমার সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্যারিয়ার গাইডলাইন, গল্প, সমালোচনা ও প্রবন্ধ টাইপের লেখা লেখি করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করি সোজাসাপ্টা বলে দিলাম।
সময় তো দাড়িয়ে থাকেনা। সুমন বার বার ঘরি দেখছে। ১০ টায় শুরু হবে আলোচিত বিজ্ঞান মেলা। এখানে ভারত থেকে শিল্পী ও সাহিত্যিকেরা আসবে। তাদের সান্নিধ্য কি করে মিস করা যায়! ১২ টা বাজার পর মুজিব ভাই বললেন সমস্যা নেই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান। জগদীশ স্মারক সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন, সুমন্ত রায়ের লেখা অনন্য বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন, সেমিনার ও আলোচনা, ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সে অনেক সময়ের ব্যাপার। শুনে আমরা আশ্বস্ত হলাম। আড্ডা শেষে আমরা তার কাছ থেকে বিদায় নিলাম। এদিকে আমাদের ফোরামের কনিষ্ঠ সদস্য রবিউল বার বার সুমনকে কল দিচ্ছে কখন আমরা মেলায় যাব তা জানার জন্য। সুমন ভাবছে হয়ত মেলা শেষ হয়ে যাচ্ছে। সুমনের চেহারা তাই বলে। মুজিব ভাইও আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিল। কবি সান্ধ্র মোহন্ত আমাদের সঙ্গি হলেন। বেশ ভালই জমবে, মনে মনে ভাবলাম। তবে কাউকে বোঝতে দিলাম না। আমরা একটি অটো নিয়ে সরাসরি স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু কমপ্লেক্সে চলে এলাম। ভাড়া মিটিয়ে হাটা দিলাম গন্তব্যর দিকে। আরেক ডাকসাইটে লেখক আলম সহিদ ভাইয়ের সাথে দেখা হল। তিনি রামপাল কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক। সুমনের স্যার। তাকে দেখে সুমন থমকে দাড়াল। তার সাথে প্রয়োজনীয় কথা সেরে এক পা দু পা করে আগাতে থাকলাম। কালিদাস স্যারকে না দেখে কল দিতে মিস করলাম না। কবি সান্ধ্র মোহন্ত সতর্ক করে দিলেন যে তিনি বক্তব্য রাখছেন মঞ্চে। সাথে সাথে কলটি বিচ্ছিন্ন করে দিলাম। ঢুকেই দেখি স্যারের বক্তব্য শেষ। ধরতে গেলে পুরো অনুষ্ঠানই তার পরিচালনায় হয়েছে। মোটামুটি ব্যস্ত ছিলেন। দেখেও বুঝা যায়। যদিও এই প্রথম তার সাথে দেখা। মোবাইলেই তার সাথে পরিচয়। বাস্তবে আজই প্রথম দেখলাম। তাও কবি সান্ধ্র মোহন্তর সৌজন্যে। বলে নেওয়া ভাল সান্ধ্র ভাইয়ের পরিচিত সাহিত্যিক নোমান ভাই দোহার থেকে এসেছেন কবি মাহমুদ নাহিদকে সাথে করে। মেলাতেই কালিদাস স্যারের ছাত্র আমাদের ফোরামের সাংস্কৃতিক সম্পাদক বাবুলের দেখা পাই। তিনিই পরিচয় করিয়ে দেন কালিদাস স্যারের সাথে সুমন ও আমাকে। ওই সময় সান্ধ্র ভাই মোবাইলে ব্যস্ত ছিলেন। বড় মাপের সাহিত্যিক হওয়ায় তাকে মোবাইল রিসীভ না করার কথা বলতে সাহসে কুলায়নি। আমরা কালিদাস স্যারের সাথে একটি ফটোশেসন করে নিলাম। একে একে বিভিন্ন এলাকা থেকে সাহিত্যিকরা এসে মেলা মাতিয়ে তুলল। এখানে না এলে অনেক স্বাদই অপূর্ণ থেকে যেত। ভাগ্যিস কালিদাশ স্যার আমাকে অবহিত করেছেন। সে জন্য তার কাছে কৃতজ্ঞও বটে। ঘুরে ঘুরে দেখছি আর ছবি তুলছি। সুমনকে দেখে এক ছেলে হেড়ে গলায় ডাকছে, এই সুমন ভাই! এসেছেন এতক্ষণে। কাছে এসে বুঝা গেল আমাদের ফোরামেরই সদস্য রবিউল ইসলাম আকাশ। ওকে পরিচয় করিয়ে দিলাম সবার সাথে। স্টল ঘুরা শেষে আমরা এক সাইডে দাড়ালাম। হঠাৎ নোমান বিবাগী ভাইয়ের পরিচিত দুজন সাহিত্যিক মশিউর ও এম আজাদের সাথে দেখা। আমাদেরকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। বেশ ভালই লাগল তাদের সাথে জম্পেশ আড্ডা দিতে। তাদের সাথে ছবিও কম তোলা হয় নি! এভাবে কখন যে সময় গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল আমরা কেউ টেরই পাইনি। অথচ দুপুরে কেউ কিছুই খাইনি। এমনটি খুব কমই ঘটেছে আমার ক্ষেত্রে। আমরা ছোট-খাট একটি সাহিত্য আড্ডার ব্যবস্থা করলাম এক ছাউনি তলায়। সামনেই পুকুর। পাখির কিচির মিচির শব্দ। মাছের ঝাপটানি। উন্মুক্ত আকাশ। জায়গাটি বেশ মানিয়েছে কবিদের জন্য। সুমন ও বাবুল ছবি তোলার লোভ সংবরণ করতে পারল না। একে অপরের ছবি তোলায় ব্যস্ত। সান্ধ্র ভাইয়ের আয়োজনে সাহিত্য আড্ডায় স্বরচিত ছড়া-কবিতা আবৃতি হল। আমি ছাড়া সবাই ভাল আবৃত্তি করলেন। এটি জীবনের একটি অন্যতম মজাদার আড্ডা হল। মেলার প্রথম পর্ব শেষের পর্যায়ে। আমরা মঞ্চে চলে এলাম। উদ্দেশ্য আজকের অনুষ্ঠানের উদ্বোধক গবেষক ড. সিরাজুল হক চৌধুরী স্যারের সাথে দেখা করা। তার কাছে আমাদের ফোরাম সম্পর্কে ব্রিফ করা ও একটি লেখা চাওয়া। তার সাথে পরিচয় পর্বটি শেষ করে কিছুক্ষণ কথা হল। আমাদের সংকলনে লেখা দিবেন বলে কথাও দিলেন। সুমন বলল স্যার আপনার লেখার জন্য পরশুদিন যোগাযোগ করব। স্যার বললেন ঠিক আছে দিও। এলাকার পরিচিত মুখ জগদীশ চন্দ্র বসু স্কুলের শিক্ষক ডানু ভাই বললেন স্যার আপনার নাম্বারটা প্লিজ। এই সুযোগে আমরা সবাই স্যারের নাম্বারটি সংগ্রহ করে নিলাম। স্যারকে বিদায় দিয়ে আমরা যার যার মত করে আড্ডা দিতে লাগলাম। ডানু ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় ঘটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাস কমিটির পক্ষ থেকে একটি শিক্ষা সফরে স্যার জগদীশচন্দ্র বসু কমপ্লেক্সসহ বিক্রমপুরের ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় জায়গায় আসার সুবাদে। তারপর থেকে দীর্ঘদিন তাকে আর দেখিনি। হঠাৎ আজ পাওয়া গেল তাকে। চমৎকার মানুষ তিনি। আমাদেরকে এক মনোরম আড্ডায় মাতিয়ে তুললেন। তবে সবকিছুর বিল তিনিই মিটিয়ে দিলেন। তার ব্যস্ততা থাকায় আমাদের প্রভাতে পৃষ্ঠপোষকতা করবেন বলে কথা দিয়ে বিদায় নেন। খাওয়া-দাওয়া পর্ব সেরে আমরা আবার বিজ্ঞান মেলার দ্বিতীয় পর্বে যোগ দিলাম। ভারতীয় সঙ্গিত শিল্পী রুবী ঘোষালের সুললিত কন্ঠে গান শুনে অনুষ্ঠানের প্রতি আকর্ষণ ফিরে আসে সবার। এরি মাঝে আমাদের মধ্যমণি কবি সান্ধ্র মোহন্ত বিদায় নিলেন। এতে বেশ কষ্টই পেলাম বটে। এভাবে একে একে সবাইকে বিদায় দিলাম। ফোরামের সাংস্কৃতিক সম্পাদকের বাইকে করে আমরা শ্রীনগর বাজারে চলে এলাম। বিদায় নিব ঠিক সেই মুহূর্তে কালিদাস স্যারের সাথে দেখা। তিনি কাকে যেন খুঁজছেন। সামনে গিয়ে আমি হাক দিতেই মাথা ঘুরিয়ে আমাকে দেখলেন। তাকেও বিদায় দিলাম। বাবুল ভাইকেও বিদায় দিলাম। আমি আর সুমন এবার যার যার নিড়ে ফিরে যাব। সারাদিন ঠিক মত খাওয়া হয়নি। দুজনের নান রুটি খুব প্রিয়। বেশির ভাগ আমরা সবজি দিয়েই খাই। আজও এর ব্যতয় ঘটেনি। খাওয়ার মাঝে মাঝে আমরা বিভিন্ন ছবি পোস্ট দিতে লাগলাম আমাদের ফোরামের গ্রুপ ও পেইজে। খাওয়া-দাওয়া শেষে আমরা একটি বেবি নিয়ে চলে এলাম। ভাবলাম আবার কবে পাব এমন মেলা হৃদয়ে দিব দোলা!
লেখক: সভাপতি, মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুর লেখক ফোরাম
বিষয়: সাহিত্য
১৫৮২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চাকরির জন্য মুন্সিগঞ্জের অনেক জায়গায় গিয়েছি জগদিশ চন্দ্র বসুর বাড়িটা দেখার ইচ্ছা ছিল।
বিঃদ্রঃ আকিকা ছাড়া নাম পরিবর্তন গ্রহনযোগ্য নয়!!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন