ব্যক্তিত্বের বিকাশ-শেষ পর্ব

লিখেছেন লিখেছেন ইকুইকবাল ২৩ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৯:০৪:৫৪ রাত

ব্যক্তিত্ব বিকাশের পঞ্চম উপাদান এর বাকি অংশ:

ব্যক্তির কিছু বৈশিষ্ট যেমন ক্ষমতা, মেধা, অভ্যাস, আবেগ, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ইত্যাদির সমন্বয়ে ব্যক্তিত্ব গঠিত হয়। যুগপৎ বুদ্ধির অনুশীলন ও আত্মার পরিচর্যাই মানুষকে প্রকৃত মনুষ্যত্বে ম-ন্ডিত করে। মন মুক্ত, স্বাধীন এবং সৃজনী ক্ষমতার অধিকারী। সৃজনশীলতাকে মেধার চূড়ান্ত অভিব্যক্তি বলা হয় (Clark, 1983) । মানুষ কেবল শক্তি, ক্ষমতা, জনপ্রিয়তা বা অর্থের লোভেই কিংবা কাম বসেই কাজ করেনা। প্রত্যেক মানুষের গভীরতম কামনার বস্তু হচ্ছে শুখ ও শান্তি। আর ব্যক্তিত্বের বিকাশের জন্য অনেক সময়ের প্রয়োজন ও বিস্তর একটি বিষয়। আমরা রাতারাতি আমাদের ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন করতে পারিনা। আমরা বর্তমানে ‘যা’ হয়েছি, তার পশ্চাতে রয়েছে আমাদের সারা জীবনের অভিজ্ঞতা। যদি আমরা নিজেদের ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন করতে চাই, তাহলে গভীর ধৈর্যের প্রয়োজন। তাই বলে আমাদেরকে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হবে না। তবে আমাদের ব্যক্তিত্বের পরিবর্তনের জন্য স্বাভাবিক বা ন্যায়সঙ্গতভাবে বৈজ্ঞানীক পন্থা অবলম্বন করতে হবে। যার অনেকটাই আমার গবেষণায় উদ্ভাবিত ‘ব্যক্তিত্বের বিকাশ’ থেকে পেয়ে যাব আশা রাখি ইনশা আল্লাহ। এমন লোক কি কেউ আছেন, যিনি তার ব্যক্তিত্বকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে চান না? আমরা সব সময় নিজেকে অন্যের চেয়ে বুদ্ধিমান, যোগ্য ও শ্রেষ্ঠ হিসেবে তুলে ধরার জন্যে সচেষ্ট থাকি। (যেমন-৬০ বছর গোসল না করে থাকার রেকর্ড, ৫ হাজার মেয়ের স্তন স্পর্ষ করে প্রেসিডেন্ট এর সাথে দেখা করা, নিজেকে বাঘ ও কুকুরের আকৃতি দেয়া, ১ লক্ষ ছেলের সাথে দৈহিক সম্পর্কের ঘোষণা দেয়া, টেমস নদী পায়ে হেটে পাড়ি দেয়া, ভায়াগ্রা জলপ্রপাত কেবলের উপর হেটে পাড়ি দেয়া, নিজের লিঙ্গ পরিবর্তন করা তো নস্যি, ) কারণ বর্তমান যুগ হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বিতার যুগ, প্রতিযোগিতার যুগ। নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করতে না পারলে আমরা অন্যদের পেছনে পড়ে যাচ্ছি। এই প্রচেষ্টায় আমরা কখনও কখনও সফল হচ্ছি, মারহাবা-করতালি পাচ্ছি, ফুলের মালা পাচ্ছি, আনন্দে বুক স্ফীত হচ্ছে, চেহারা উজ্জ্বল হচ্ছে। কিন্তু রাতে যখন বিছানায় একা ঘুমুতে যাচ্ছেন, নিজেকে নিয়ে যখন একান্তে ভাবছেন তখন আপনি নিজেও স্বীকার করবেন যে আপনার নিজেরও ব্যক্তিত্ব উন্নয়ন ও বিকাশের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। অনেক গুণ আছে যা আপনি কাজে লাগাননি, অনেক কৌশল রয়েছে যা আপনি আয়ত্ত করতে পারেননি। মেধার অনেক ক্ষেত্রকে বিকশিত করতে পারেননি। তাই নিজের উন্নয়নের সুযোগও রয়েছে। এর ফলে আমরা প্রতিদিন বিকশিত হওয়ার চেষ্টা করি, আমরা পরিবর্তিত হই। আর এই পরিবর্তনের লক্ষ্য সব সময় থাকে আরও ভাল মানুষ হওয়ার। প্রতিদিনই আমরা চাই আমাদের ব্যক্তিত্ব আরও আকর্ষণীয় হোক, আরও সুন্দর হোক, প্রভাব বলয় আরও বাড়–ক। আমরা আমাদের ভুল ভ্রান্তিগুলো কাটিয়ে উঠতে পারলেই আমাদের ব্যক্তিত্ব আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। আসুন আমরা মনটাকে কাজ দিয়ে বুদ্ধির অনুশীলন ও আত্মার পরিচর্যা করে ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটাই। (বি: দ্র:- মাসিক বিক্রমপুর এপ্রিল-মে সংখ্যায় ১ম পর্ব ও জুন সংখ্যায় ২য় পর্ব প্রকাশিত হয়েছে।)

আমি কেন সফল হব

1.স্বপ্ন, উদ্দেশ্য, ও লক্ষ্য আছে

2.কাজ করি ও ধৈর্য ধরি

3.বই পড়ি, ট্রেনিং করি ও সিস্টেম মানি

4.আত্ম-বিশ্বাসী, আন্তরিক, কৌশলি, সৎ, সাহসী, সত্যবাদি, শিক্ষিত, কঠোর পরিশ্রমী, পজিটিভ ও প্রো-এক্টিভ

5.জীবন থেকে ও অতীত থেকে শিক্ষা নেই

6.পরিকল্পনা মাফিক কাজ করি


নিজেকে সঠিকভাবে উপস্থাপনা করার পদ্ধতি:-

1.শামুকের মত খোলসের ভেতর নিজেকে লুকিয়ে রাখলে মানুষ আপনাকে চিনবে না। লার্নিং এন্ড শেয়ারিং করুন।

2.সবসময় এবং অফিসে হাসি-খুশি থাকুন।

3.নাম মনে রাখুন অর্থাৎ সবার সাথে মিশুন ও পরিচিত হোন।

4.রিহার্সেল অনুষ্ঠানে কিছু বলার জন্য পূর্বেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন।

5.বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত হোন (সিবিএফ, আইএফসি, চাঁদেরহাট ইত্যাদি)।

6.বিভিন্ন পত্রিকা, ম্যাগাজিন, ব্লগ, পেইজ ও গ্রুপে লেখালেখি করুন।

7.কারো প্রতি ঘৃণা, রাগ-ক্ষোভ, হিংসা-বিদ্বেষ ও গর্ব-অহংকার একদম করবেননা।

8.কোনো প্রকার নেশা (ঘুম, মেয়ে,মদ) করবেননা।

9.আপনি অনেক কিছু জানেন এটি জাহির করার মানষিকতা থেকে বিরত থাকুন।

10.অতি আবেগ, রাগ, লজ্জা ও ভয় দূর করুন এবং স্বাভাবিকতা বজায় রাখুন।



ব্যক্তিত্ব একটি আপেক্ষিক, বিমূর্ত ধারণা হওয়ায় ব্যক্তিত্ব গঠনের উপাদান সমূহ চিহ্নিত করা বেশ জটিল বিষয়। তথাপিও বিভিন্ন মনোবৈজ্ঞানিক অভীক্ষায় ব্যক্তিত্ব বিকাশের বিভিন্ন উপাদান চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হল:-

১.জৈবিক উপাদান (Biological Factor)

ক) বংশগতি ও ব্যক্তিত্ব ((Heredity and Personality)

খ) দৈহিক গঠন (Body Structure)

গ) জৈব রাসায়নিক উপাদান (Bio-Chemical Substances)

২.মনস্তাত্ত্বিক উপাদান (Psychological Factor)

৩.পরিবেশগত উপাদান (Environmental Factor)

ব্যক্তির আকৃতি, গঠন, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, শিক্ষণ, বুদ্ধি, চরিত্র, অভ্যাস, মেজাজ, আচার-ব্যবহার, অনুভূতি, মনোভাব, প্রেষণা, তাড়না, প্রবণতা, উপলব্দি, আকাঙ্খা, আবেগ, আগ্রহ, অনুরাগ, দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ, আদর্শ ও বিশ্বাস সবকিছুর সমন্বিত রূপই ব্যক্তিত্ব। যা তাকে অনন্যতা দান করে। মনোবিজ্ঞানী ক্রাউডার এবং অন্যান্যদের মতে- ‘ব্যক্তিত্ব হল ব্যক্তির মনোদৈহিক প্রক্রিয়া সমূহের এক গতিময় সংগঠন যা পরিবেশের সাথে তার অনুপম অভিযোজন নির্ধারন করে’। এছাড়াও অন্যান্য মনোবিজ্ঞানী গণ বিভিন্নভাবে ব্যক্তিত্বের ধারণা প্রদান করেছেন। সার কথা হল- কতগুলো বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলীর সংগঠনকে ব্যক্তিত্ব বলে। জৈব, মানসিক, সামাজিক বিষয়াবলীর পারস্পরিক ক্রিয়া ব্যক্তিত্ব সংগঠনের নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে।

এক কথায় বলতে গেলে ব্যক্তিত্ব হচ্ছে অভিজ্ঞতার ঝুলি, আর এই ঝুলিতে রয়েছে আমরা প্রতিনিয়ত যা বলি, যা করি, যা অনুভব করি, যা ভাবি, যা আশা করি, যা বিশ্বাস করি। সঙ্গে রয়েছে চলার পথে আমরা কোন পরিস্থিতিতে কী প্রতিক্রিয়া দেখাই সে সবকিছু।

এই পর্বের তথ্যসূত্র: ১.বিকাশ মনোবিজ্ঞান-ড. কাজী আফিফা সুলতানা, ২.বুদ্ধির ফসল আত্মার আশিশ-শাহেদ আলী, ৩.ব্যক্তিত্বের বিকাশ-দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, ৪.আত্মনির্মাণ-মহাজাতক ও ৫.ইন্টারনেট।

সমাপ্তি: সময়ে সল্পতা, জ্ঞানের অপিরিপক্কতার কারণে যেভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করার কথা ছিল সেভাবে হয়ে উঠেনি বিধায় সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের জন্য সমস্যা হলে আমার প্রিয় পাঠকদের সুবিধার্থে একটি ব্লগ লিংক দিচ্ছি- আমার ব্লগ ভবিষ্যতে সময় পেলে ভুল শোধরিয়ে আমার প্রিয় পাঠকদের কাছে আবার হাজির হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে বিদায় নিচ্ছি আল্লাহাফেজ।

বিষয়: সাহিত্য

১৯৪৩ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

166463
২৩ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:৩৫
মোঃজুলফিকার আলী লিখেছেন : সুন্দর লাগলো। অনেক ধন্যবাদ।
২৩ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:৫২
120585
ইকুইকবাল লিখেছেন : আপনার মন্তব্যও সুন্দর লাগল। আপনাকে ডাবল ধন্যবাদ।
দ্বিতীয় কথা হল গঠনমূলক মন্তব্য করলে খুশি হতাম
166467
২৩ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:৫০
হলুদ রঙ মেঘ লিখেছেন : বাস্তবসম্মত ও সৃজনশীল লিখনি।ভাল লাগলো
২৩ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:৫২
120586
ইকুইকবাল লিখেছেন : মেঘ ভাই আপনাকে আমার ব্লগে মনে হয় এই দেখলাম। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
166480
২৩ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:০৮
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : নিজেকে সঠিকভাবে উপস্থাপনা করার পদ্ধতি:-

1.শামুকের মত খোলসের ভেতর নিজেকে লুকিয়ে রাখলে মানুষ আপনাকে চিনবে না। লার্নিং এন্ড শেয়ারিং করুন।

2.সবসময় এবং অফিসে হাসি-খুশি থাকুন।

3.নাম মনে রাখুন অর্থাৎ সবার সাথে মিশুন ও পরিচিত হোন।

4.রিহার্সেল অনুষ্ঠানে কিছু বলার জন্য পূর্বেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন।

5.বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত হোন (সিবিএফ, আইএফসি, চাঁদেরহাট ইত্যাদি)।

6.বিভিন্ন পত্রিকা, ম্যাগাজিন, ব্লগ, পেইজ ও গ্রুপে লেখালেখি করুন।

7.কারো প্রতি ঘৃণা, রাগ-ক্ষোভ, হিংসা-বিদ্বেষ ও গর্ব-অহংকার একদম করবেননা।

8.কোনো প্রকার নেশা (ঘুম, মেয়ে,মদ) করবেননা।

9.আপনি অনেক কিছু জানেন এটি জাহির করার মানষিকতা থেকে বিরত থাকুন।

10.অতি আবেগ, রাগ, লজ্জা ও ভয় দূর করুন এবং স্বাভাবিকতা বজায় রাখুন।
অনেক ভালো লেগেছে ভাই ,ধন্যবাদ।
২৩ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:১২
120595
ইকুইকবাল লিখেছেন : ধন্যবাদ শাহিন ভাই
166567
২৪ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০২:৪৪
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : আপনি খুব গুছিয়ে পয়েন্টগুলো তুলে এনেছেন। ভালো লাগলো।
২৫ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১২:১৪
121019
ইকুইকবাল লিখেছেন : মাশাআল্লাহ বৃত্তের বাইরের লোকজনও আমার ব্লগ পাড়ায় আসে ধন্যবাদ
166645
২৪ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৮:০৩
আলোকিত ভোর লিখেছেন : ধন্যবাদ Rose
২৫ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১২:১৫
121020
ইকুইকবাল লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ফুলের সুভেচ্ছা
166661
২৪ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:১২
শাফিউর রহমান ফারাবী লিখেছেন : অনেক ভাল একটা লেখা ভাই
২৫ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১২:১২
121018
ইকুইকবাল লিখেছেন : বিশিষ্ট ব্লাগার, মিডিয়া মুখ, ইসলামী ব্যক্তিত্ব আমার লেখা পড়ায় ধন্য হলাম।
167138
২৫ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:২০
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : রীতিমত গবেষণা প্রসূত লেখা। আপনার এ সিরিজ প্রবন্ধটি বেশ শিক্ষণীয়।
২৫ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০১:৩০
121174
ইকুইকবাল লিখেছেন : উৎসাহ পেলাম
167288
২৫ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৩০
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : ভাইয়া মাঝে মাঝে হঠাৎ প্রচন্ড রেগে যাই ।
এই অতিরিক্ত রাগ মাঝে মাঝে বেশ ক্ষতির কারন হয়।Good Luck
এখন চেষ্টা করছি রাগটাকে দমানোর জন্য।
আপনার পোষ্টটি অবশ্যই প্রেরনা যোগাবে। Thumbs Up Thumbs Up Thumbs Up
বেশ শিক্ষনীয় একটি পোষ্ট।
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
২৮ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৩২
122775
ইকুইকবাল লিখেছেন : তোমাকে অনেক ধন্যবাদ প্রিয় ইসলামি গল্পকার সাহেব

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File