ভূতের রাজ্য

লিখেছেন লিখেছেন ইকুইকবাল ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৫:১২:১৪ বিকাল



আজকে নয়া দিগন্তে ভূতের রাজ্য নামে গল্পটি প্রকাশ করেছে

গভীর ভুতুরে বনের ভেতর এত সুন্দর পুরাতন রাজভবন দেখে সবাই থ হয়ে গেলাম। বিকট আওয়াজের সাথে সাথে সহসা ফটক খুলে যাওয়ার অদ্ভুত দৃশ্য। কিছুক্ষণ আমরা ইতিউতি তাকালাম। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছেয়ে গেলো। আমাদের অন্তরাত্মা শুকিয়ে কাঠ। ভয়ে আর বিস্ময়ে সবার শরীর যেন হিমশীতল হয়ে গেল। কারো মুখে কোনো কথা নেই। মাঝে কোটাল হিসেবে এক অপরূপা ডানাকাটা পরী দাড়াঁনো। স্বর্গের অপ্সরা দেখিনি, হয়ত এমনই হবে। তার কুহকে আমি আটকা পড়ে গেলাম।

পরীর ধবধবে আলোর সরপোশে পুরো পৃথিবী যেন বন্দী হয়ে গেছে। অভ্যাগত দেখে মাথা নেড়ে হাত বাড়িয়ে আমাদেরকে ভিতরে আসার সাদর আমন্ত্রণ জানাল। জংলা জায়গাটা নির্জন-বিজন হওয়ায়; ভূতের ভয়ে অনেকেই পড়িমরি দে ছুট! কেউ না গেলেও আমি একদম লোভ সংবরণ করতে পারলামনা। ওদিকে বন্ধু হাবিব বিষয়টি আঁচ করতে পেরে মানা করলেও আমলে নিলাম না। আমি পরীর হাত ধরে ভেতরে আসতেই আচানক ফটকটি বন্ধ হয়ে গেল। এতক্ষণ ভয় কাজ না করলেও এখন তা হারে হারে টের পাচ্ছি। বিভিন্ন ধরনের হাতিয়ার সমেত বলবত্তর সান্ত্রীরা দাড়িয়ে গেল। কেউ কোন টুঁ শব্দ ও একদম নড়াচড়া করলনা। আমি ডানপিটে হলেও মনের রাজ্যটি অনেক অজানা শঙ্কা ও ভয় নামক ভূতেরা দখল করে নিল। সামনে পদসঞ্চার করতেই দেখা গেল তখতে তাউসে উপবিষ্ট বিশাল কলেবরে এক রাজা। পরীটি কোন কথা না বলে আমার হাত ধরে সামনে আগাচ্ছে। পরীর হাতের ছোঁয়ায় এক অন্যরকম আবেশ তৈরি হলো আমার মনে। আমরা মালঞ্চের ভিতর দিয়ে যাচ্ছিলাম। বিচিত্র ফুলের ঘ্রাণে মাতাল হল আমার হৃদয়। অদূরেই দাড়িয়ে আছে চোখ জুড়ানো মন কাড়ানো নানা রঙবেরঙ্গের বিশাল বিশাল দালান-কোঠা। রাজ্যটিকে এক কল্পপুরী মনে হল। পরী আমাকে নিয়ে জোরছে হাটছে। কী উদ্দেশ্যে আমাকে নিয়ে যাচ্ছে, কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কিছুই বলছেনা। পরীর কাছে ধরাশায়ী হয়ে মতিচ্ছন্ন হলেও হিম্মত সঞ্চার করে একবার চারদিকে ঝটিতি চোখের সার্চলাইট বুলাইয়া লইলাম। ওদের রাজ্যের একমাত্র বদ্যির কাছে আমাকে সমর্পণ করেই পরী হাওয়া। তারপর কি হল কিছুই খেয়াল নেই।

জ্ঞান ফিরার পর আমি পুরাতন অট্টালিকার সরু গলিতে ভূতুরে অন্ধকারের ভেতরেই আনমনে হাঁটছি আর হাটছি। আশপাশে ভূতুরে জঙ্গল দেখায় ভয়ে গা ছমছম করে উঠল। কিছুদূর যেতে না যেতেই আচমকা দাউ দাউ করে জ্বলে উঠা আগুনের রুমে ঢুকে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লাম।

কিম্ভূতকিমাকার দশাসই চেহারার এক ভূতের উদয় হল আমার সামনে। হঠাৎ বাজখাঁই রকমের আওয়াজ ছাড়ল। আমি ভেবেই নিলাম একদম তাদের রাজ্যের গ্যাঁড়াকলে আটকে গেছি। নিজেকে শত চেষ্টা করেও ভূতের নিগড় থেকে বের করতে পারছিনা। ভয়ে জড়সড় হয়ে কথা বলা শুরু করে দিলাম ভূতের সাথে। আমার কথা ভাল লাগায় কোনো ক্ষতি করল না।

অনেকদিন ভূতটির সব অদ্ভুত কর্মবিধি পর্যপেক্ষণ করলাম। একদিন বিশাল বড় এক কড়াই নিয়ে কয়েক টন তেল ঢেলে চুলায় আগুন দিয়ে গরম করছে। আর অনেক উঁচুতে দুই গাছের সাথে ডাল বেধে ফাঁসির মঞ্চ তৈরি করছে। উদ্দেশ্য অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়া। বুঝা গেল ভূতটি দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। সে অনেক বিশাল কাহিনী এখানে বলা অবান্তর। একপর্যায়ে তার সাথে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠল। তাদের রাজ্য ঘুড়ে দেখার অভিপ্রায় ব্যক্ত করায় আমাকে মাটির নিচে একটি সুরঙ্গপথ দেখিয়ে দিল। বিদায় মুহূর্তে বলে রাখল বিপদ ঘটলে আমার নাম বলবে তখন সব ঠিক হয়ে যাবে। তার নাম শুললে সবাই ভয়ে থরথর করে কাঁপে। এমনকি রাজাও তাকে শাস্তি দিতে ভয় পায়। তার নামটিও বেশ অদ্ভুতÑ হাওরং। আমি এঁদো গলিতে মশাল হাতে অসিম সাহস নিয়ে হাটছি। একটিই আমার উদ্দেশ্য, ভূত কোথায় থাকে, কিভাবে থাকে, কী খায় ও কী করে তা নিজের চোখে দেখা। সামনে আগাতেই ইয়া বড় এক ছাদ দেখতে পেলাম। ধারণা করলাম ব্যবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান এমনই হবে। নিচেই অনেকগুলো ভূত একসাথে বসে আছে। অনেকগুলো চিৎকার-চেচামেচি, হুড়োহুড়ি করছে। অনেকগুলো আমার দিকে তেড়ে আসছে। সসঙ্কোচে বন্ধুর নাম বললাম। তারাও আমাকে কিছু করলনা। ওদের রাজ্যে অতিথিদের তুলসীপাতা দিয়ে আপ্যায়ন করে। আমাকে এক ভূত অনেকগুলি তুলশিপাতা এনে দিল। আমি কাচাই কচকচ করে চিবিয়ে খেলাম। কষ্ট ও ঘৃণাবোধ কিছুই কাজ করছিলনা তখন। তুলসীপাতা ভুঞ্জন শেষে কোথা থেকে যে হাতে এসে হাড়গোড় জমা হলো তা টের না পেলেও ভয় ঠিকই পেলাম। নিয়ম হল এগুলি তাদের কবরে রেখে আসতে হবে। কবরটি ভূতের আস্তানার একসাগর পরেই। আমি সাগর পার হয়ে তাদের কবরে পৌঁছলাম। ঠিক আমাদের মতোই কবর। তবে কোনো মাটি নেই সবকটি পাকা করা। কবরস্থানে গিয়েই বিভিন্ন ধরনের অদ্ভুত শব্দ ও গুমরে কাঁদার আওয়াজ কর্ণকুহরে পৌঁছল। আমি হাড়গোড় রেখে ওদের রেস্ট হাইজে গিয়ে বসলাম।

একটি প্রবেশদ্বার ছাড়া আলো-বাতাস ঢোকার মতো কোন বাতায়ন-ঘুলঘুলি লক্ষ্য করা গেলনা। অনেক দিন হল কোন ঘুম নেই। এখানে অবস্থান নেয়ার পর কেন যেন খুব করে ঘুম পেয়ে বসল। কোথা থেকে উৎকট হৃদয় নাড়ানো ঘ্রাণে মাতোয়ারা হয়ে তড়াক করে উঠে বসলাম। সেই নগরের কোটাল পরীর দেখা পেয়ে কিছুটা আশ্বস্ত হলাম। পরী আমাকে সাগরের কিনারে নিয়ে গেল। দুজনেই জম্পেশে বসে মাছের খেলা ধুলা উপভোগ করতে লাগলাম।

আমার ইচ্ছা জাগল পরীর মতো নীল আকাশে উড়তে। তা কি সম্ভব? মানুষের ঘ্রাণ পেয়ে একদল কবর রক্ষী ভূত গিলোটিন নিয়ে আমাকে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। ঘোর বিপদের মুহূর্তে ভূত বন্ধুর নামটি বেমালুম ভুলে গেলাম। পরী আমাকে দুটি পাখনা দিয়ে চলে গেল। আর ফিরে এলো না।

পরীর সাথে এটিই শেষ দেখা হবে আমি কল্পনাও করিনি। মানুষের চেয়েও মোটা মোটা তীর আমার দিকে তাক করে আছে ভূতের কমান্ডো বাহিনী। আমি তো ডানপিটে দমবার পাত্র নই! ওদের তীর আমার দিকে আসতেই খপ করে ধরে ওদের দিকেই ফিরিয়ে দেই। আমার দেয়া তীরে ওদের অনেকে ধরাশায়ী হয়ে তড়পাতে থাকল।

অনেকেই মারা পড়ল। ভূতদের অবস্থা বেগতিক দেখে ওদের আস্তানায় খবর পাঠায়। দলে দলে ভূত আসতে দেখে পরীর দেয়া ডানা মেলে দিলাম নীল আকাশে ঝাঁপ। এবার সত্যি সত্যি আমি আকাশে উড়ছি। পরীর রাজ্যে ফিরে যাবো। ভাবছি আর পুলকিত হচ্ছি। মায়ের ডাকা ডাকিতে ঘুম থেকে উঠলাম। মনে মনে ভাবলাম ইশ! মা তুমি আমার স্বপ্নটাই শেষ করে দিলে। ফজরের নামাজ শেষে মাকে স্বপ্নে যা যা দেখছি আদ্যোপান্ত খুলে বললাম।

সিরাজদিখান, মুন্সিগঞ্জ

বিষয়: বিবিধ

১৮৪৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File