হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দকে বলছি, আপনারা সরকারী ষড়যন্ত্রে পা দিবেন না।

লিখেছেন লিখেছেন ইবনে হাসেম ০১ এপ্রিল, ২০১৩, ০৬:৩৯:১৯ সকাল

হেফাজতে ইসলামের অশীতিপর বৃদ্ধ নেতা মাওঃ শাহ আহমদ শফিকে আমাদের সবার শ্রদ্ধা ও সালাম। তিনি অত্যন্ত ঠিক সময়ে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচীর ঘোষনা দিয়েছেন। ৬ই এপ্রিলের ঢাকামূখী লংমার্চ আশা করি জাতীয় জীবনে এক চূড়ান্ত দিক নির্দেশনার ভূমিকা রাখায় সফল হবে। সত্য আর মিথ্যা যে দীর্ঘদিন একসাথে চলতে পারেনা, তেমনি ৯০% মুসলিমের দেশে নাস্তিক আর মুনাফিকরা যে আস্ফালন করে যাবে আর তা বিনা চ্যালেঞ্জ এ চলতে থাকবে এটা অসম্ভব ব্যাপারই। তাই ৬ই এপ্রিলের লংমার্চ এর দিকে দেশের তৌহিদী জনতার দৃষ্টি নিবদ্ধ।

নাস্তিকদের দুধ কলা দিয়ে পোষা এবং তাদের গায়ে দেশপ্রেমিক, দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ আর মুক্তিযোদ্ধার তমঘা পরানোর দায়ে দোষী এই ফ্যাসিস্ট সরকারের তাই এখন চোখের ঘুম হারাম। দেশের মানুষের মতিগতি দেখে এখন তাদের পরনের কাপড় নষ্ট করার অবস্থা। তাই তৌহিদী জনতার এই কর্মসূচীকে বানচাল করতে তারা এখন ষড়যন্ত্রের পর ষড়যন্ত্র করেই চলেছে। ধামাধরা মৌ-লোভী ফরিদ চোরা দিয়ে মহাসমাবেশ নাটকটির মহাফ্লপের ধকল কাটিয়ে উঠার চেষ্টায় চরমোনাইয়ের পীরের মহাসমাবেশটিকে বিনা বাধায় তারা পার করে দেয়। যদি তাতে ইসলামপ্রিয়গন সরকারের প্রতি একটু সহানুভূতিশীল হয়। কিন্তু সে মহাসমাবেশ থেকে নাস্তিক মুরতাদদের দমনে যে কঠোর দাবী দাওয়া পেশ করা হয়, তা তাদের জন্য এখন গোদের উপর বিষফোঁড়ের কাজই করছে।

তাই জনগনের দৃষ্টি ৬ই এপ্রিলের লং মার্চের থেকে সরিয়ে নিতে সরকার দেশের স্থানে স্থানে তার পেটোয়া বাহিনী দিয়ে চরম সন্ত্রাস এবং উত্তেজনা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে, এবং এসব করে এগুলোর দায়ভার বরাবরের মত জামায়াত শিবিরের কাঁধে চড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের এই জঘন্য কাজে তারা তাদের কেনা গোলাম হলুদ সাংবাদিকদের যাচ্ছেতাই ভাবে ব্যাবহারও করছে। এমন হলুদ সাংবাদিকতার দাসানুদাস 'প্রথম আলো' পত্রিকায় তাই পুলিশের নিজ হাতে গ্রেনেড বিস্ফোরণের ফলে নিজ দু হাত উড়ে যাওয়াকে শিবিরের কাজ বলে কি জঘন্য মিথ্যাচারই না তারা করল। শিবিরের বা অন্য কারো ছোঁড়া গ্রেনেড দ্বারা যে পুলিশের কেবল দুহাতে কব্জি উড়ে যাবে, বাকি অংশ অক্ষত থাকবে, এমন কথা যে একমাত্র বদ্ধ পাগল ছাড়া অন্য কেউ বিশ্বাস করবেনা, তা প্রথম আলো গংরা না বুঝলেও বাকি সবাই বুঝে। ওরা তো গোলামী করতে নাক ঘষে দাসখত দিয়েছে সরকারের কাছে, তাই ওরা বুঝেও না বুঝার ভান করছে।

ওদিকে দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে, জামায়াত নেতাদের বাড়িতে আগুন দিয়ে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে হিন্দুদের মন্দির, শহীদ মিনার ইত্যাদিতে ভাংচুর ও সন্ত্রাস করে, বিএনপি নেত্রীর অফিসে রাতের গভীরে সন্ত্রাসীদের দিয়ে গোলাগুলি করে, সব কাজের দায় জামায়াত শিবিরের কাঁধে চড়াবার যতোই তারা চেষ্টা করছে ততোই যেন সব লেজে গোবরে অবস্থায় নিপতিত হচ্ছে। তারা ভেবেছিল এমনি ভাবে দেশের জনগনের দৃষ্টি ৬ই এপ্রিল থেকে সরিয়ে দেয়া যাবে। কিন্তু যতোই দিনটি এগিয়ে আসছে ততোই জনগন সেই দিনটিকে কাছে পেতে আকুল হয়ে উঠছে। সরকারী এসব দুই পয়সার নাটক কিছুতেই আর তাদের আকর্ষণ করছে না।

মনে হলো সরকার এ পর্যায়ে এসে একটু কৌশল বদলাতে চেয়েছে । তাই শেখ হাসিনা, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী চট্টগ্রামের সন্তানকে মাওঃ শাহ আহমদ শফি সাহেবের নিকট আপোষ রফার ফর্মূলা দিয়ে পাঠিয়েছে। মনে মনে একটু আশা ছিল, চট্টগ্রামের সন্তান ঐ বিশেষ মন্ত্রীর কথায় যদি চিড়ে ভিজে। প্রস্তাবও ছিল এমন যে, তা পাঠ করে মামা বাড়ির আব্দারই মনে হলো। যেই বিশেষ দিনটিকে সামনে রেখে দেশময় হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দ সবকিছু গুটিয়ে এনেছেন, তাদের আব্দার ছিল লংমার্চটি যেন সেদিন না করে কিছুদিন পিছনে হটিয়ে দেয়া হয়। তাদের ভাবনা, এতে যদি তারা নূতন কোন ষড়যন্ত্র আঁটার বা অন্ততঃ দেশের কোন প্রান্তে অন্য কোন ভীষন সন্ত্রাসী কান্ড ঘটিয়ে দেশবাসীর চিন্তা চেতনাকে সেই দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে লং মার্চের কথা ভূলিয়ে দেয়া যায়। কিন্তু সংগ্রামী নেতৃবৃন্দকে অভিনন্দন, তাঁরা সরকারের এই ফাঁদে পা দেন নি, এবং মন্ত্রী মহোদয়কে খালি হাতেই ফেরত আসতে হয়েছে।

মন্ত্রী মহোদয় ইসলামী নেতৃবৃন্দের সাথে মত বিনিময়ের সময় নাকি বলেছেন, আমরা আপনাদের দাবীর সাথে একমত আছি তবে জামায়াত শিবির যাতে আপনাদের এ দাবী ও কর্মসূচীতে বাধা না দিতে পারে সে ব্যাপারে সজাগ থাকবেন। আহাহা, কত যে উনার দরদ, ইসলামী কর্মসূচীর জন্য। জামায়াত বা শিবিরের এই কর্মসূচীকে সরাসরী সমর্থন না দেয়াটা যে কত বড় দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যাপার তা এই নব্য মন্ত্রীর কথায় সবার নিকট স্পষ্ট হওয়া উচিত। অনেক ইসলামপ্রিয় ভাইদের দেখেছি এই ব্লগেও অভিযোগ করতে কেন জামায়াত বা শিবির হেফাজতে ইসলামের এ কর্মসূচীকে প্রকাশ্যে সমর্থন করছে না। তাদের এসব কথা পাঠে এক সময় আমার মনের কোনেও প্রশ্নটি স্থান করে নিয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী মন্ত্রীর কথা দ্বারা এটা এখন দিনের মতো পরিষ্কার, কেন জামায়াত প্রকাশ্যে সমর্থনের কথা বলে নি। কারণ তাঁরা তাঁদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দ্বারা এটা স্পষ্ট বুঝেছিলেন যে, যদি এতে প্রকাশ্য সমর্থন দেয়া হতো, তাহলে সরকার এটাকে দেশের আপামর তৌহিদী জনতার আন্দোলন না বলে জামায়াতের আন্দোলন বলে চিহ্নিত করতো এবং সে ভাবে দমনের চেষ্টা করতো, যেমন সরকার পুলিশ বাহিনীকে জামায়াত শিবিরের কর্মীকে রাস্তায় দেখলেই গুলি করার লাইসেন্সই দেয়ে রেখেছে।

এখন কিন্তু সরকারী পুলিশ লংমার্চকে বাধা দিতে ঐভাবে গুলি ছোঁড়ার খোলা লাইসেন্স পাবে না। আমি তাই জামায়াতের এই দূরদর্শীতাকে স্যালুট করছি। যদি গুলি ছুঁড়েও তা দেশে বিদেশে চরম সমালোচনার শিকার হবে। জামায়াত শিবির সব সময়ই সব ইসলামী আন্দোলনের সাথে আছে, এবং থাকবে। সেটা যে প্রকাশ্য সমর্থন দিয়ে করতে হবে, তা কিন্তু নয়, প্রয়োজনে হেকমত অবলম্বন করে কার্যসিদ্ধি করাও আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হাজার গুনে সহায়ক।

আর একটি কথা, শিবিরের সভাপতিকে গ্রেফতার করে সরকার এ মূহুর্তে আবার শিবিরের কর্মীদের উসকে দিতে চাইছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামকে দেশে থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার হুমকি সম্বলিত একটি প্রচারপত্রও নাকি ফেসবুকে শিবিরের প্যাডে দিয়েছে। এটার মাঝেও কিন্তু আমি সরকারী ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি, যেটা ৬ই এপ্রিলের লং মার্চকে লক্ষ্য করেই নিবেদিত। তাই শিবিরের তরুনদের বলছি, আপনারা যাই করুন, ৬ই এপ্রিলের লংমার্চের পরে করুন। এ কয়দিন যদি ধৈর্য্য ধরেন, তাতে কিছু একটা ক্ষতি হবে বলে মনে করিনা। মাত্র কয়েক দিনের ব্যাপার।

জাতির এই সন্ধিক্ষণে তাই দেশের আপামর তৌহিদী জনতার প্রতি এই নাখান্দার আহবান আপনার ধৈর্য্য ধরে এগিয়ে যান, চোখ কান খোলা রেখে সব ষড়যন্ত্রকে দু পায়ে দলে কর্মসূচী বাস্তবায়নে এগিয়ে চলুন। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাঁর খালিস বান্দাদের সাহায্যার্থে তাঁর ফেরেশতাকুলকে পাঠাবেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। আল্লাহ আমাদের সহায়।

বিষয়: বিবিধ

১২৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File