ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থায় অসহনীয় পরিস্থিতি।
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে হাসেম ০৫ মার্চ, ২০১৬, ০৭:৪০:৪৫ সকাল
ঢাকা শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থা বলতে আদৌ কোন কিছুর অস্তিত্ব আছে কিনা এ নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। যারা নিত্যদিন শহরের রাস্তায় চলাফেরা করেন তাঁদের অধিকাংশই আমার সাথে একমত হবেন বলে আমার বিশ্বাস। কেন আমার এই সন্দেহ তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার আগে মোটা দাগের কিছু অসংগতি অথবা অব্যবস্থার কথা বলে নিতে চাই, যেমনঃ
* কোথাও জেব্রা ক্রসিং এর অস্তিত্ব নেই, দু এক জায়গায় যাও দেখা যায়, তাকে জেব্রা ক্রসিং না বলে বরং 'জেব্রা ক্রসিং এর ফসিল' বললে অত্যুক্তি হবে না।
* ট্রাফিক লাইট ব্যবস্থার অধীনে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কোন ব্যবস্থা বর্তমান নেই। কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে যদিও ওগুলোর অস্তিত্ব দেখা যায়, তবে সেগুলো কি কারণে এবং কি উদ্দেশ্যে সেখানে তাদের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে তা বের করতে হলে রীতিমত গবেষণার প্রয়োজন হবে।
* বহু পূর্বে এটা দস্তুর ছিল যে, পায়ে চালিত রিক্সাগুলো রাস্তার কিনার ধরে চলবে। বর্তমানে রিক্সার জন্যে সেই দস্তুরের কোন বালাই নেই। যে যেমনে পারে, রাস্তার ডান, বাম কিংবা মাঝখান দিয়ে এবং উল্টোপথে বীরের মতো রিক্সা চালিয়ে যায়, তাদের কে কখনো পুলিশের প্রশ্নের সম্মূখীন হতে দেখিনি একান্ত দু একটা ব্যতিক্রম ছাড়া। অতএব বলা চলে, রিক্সাঅলাদের জন্য রাস্তার কিনার ধরে এগিয়ে যাবার পূর্বের সেই দস্তুর রদ করা হয়েছে। কি কারনে, কখন এবং কোন বিশেষ আইনে এ নূতন ব্যবস্থার প্রবর্তন হয়েছে, তা জানতে মন চায়।
* মধ্যবিত্তের বাহন বলে সুপরিচিত মাঝারি ও বড় সাইজের বাসগুলো নিজ ইচ্ছেমত যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানো ও নামানোয় রত। এ ব্যাপারে কখনো কেউ সাহসী হয়ে প্রতিবাদ করলেও তাতে পূর্বের মতো বাকী যাত্রীদের সাড়া পাওয়া যায়না বলে সেই প্রতিবাদটি সহসাই অরণ্যে রোদনে পরিণত হয়।
* একটু বেশী ভাড়া দিয়ে সিটিং সার্ভিস বলে এই ৫/৬ বছর পূর্বেও বাসযাত্রীদের জন্য যে বিশেষ আরামদায়ক চলাচলের ব্যবস্থা ছিল তার অস্তিত্বও দিন দিন বিলীন হতে চলেছে। একমাত্র মিরপুর-গুলিস্তান রুটে এখনো সেগুলোর কিছু অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। বাকীগুলোতে বাস ড্রাইভার ও কন্ডাক্টরগন নিজ ইচ্ছেমত গাদাগাদি করে যাত্রী তুলে নেয়, অনেকটা কোরবানীর সিজনে ট্রাকে করে গাদাগাদি করে গরু পরিবহনের মত। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে যাত্রীদের নিকট হতে পূর্বের মতো বর্ধিত ভাড়া আদায় করা হয়। গরমকালে এ/সি ব্যবস্থা সম্বলিত বাসগুলোর সংখ্যা ও ক্রমেই শূণ্যের কোঠায় নেমে আসছে।
* অধিকাংশ বাসের অবস্থা (বলা যায় প্রায় ৯০ শতাংশ) একান্ত করুণ এবং বেহাল দশা। পরীক্ষা করলে দেখা যাবে যে এই ৯০ শতাংশ বাসই ঢাকার মতো একটি মেট্রোপলিটন শহরের রাস্তায় চলাচলের মতো যোগ্যতা হারিয়েছে বহু পূর্বেই। কিন্তু হলে কি হবে, এ দিকটি দেখার মতো ঢাকায় এমন কোন অভিভাবক আছে কিনা সে ব্যাপারটিই এখন প্রশ্নের সম্মূখীন।
* কার আগে কে যাবে, এমন প্রতিযোগিতার কারণে (এ ক্ষেত্রেও ট্রাফিক পুলিশগুলোকে কোন ভূমিকা গ্রহনে আগ্রহী দেখা যায়না) প্রায়শঃই যাত্রী সাধারণ ও গাড়িঘোড়াকে দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে। বিশেষ করে রাস্তার টার্নিং পয়েন্টগুলোতে এই প্রতিযোগিতার কবলে পড়ে রিক্সা-কার-ভ্যান-লরি এবং বাসে মিলে এমন জগাখিচুড়িময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যে সেই জট ছোটাতে ঘন্টার পর ঘন্টা সময়ের অপচয় হয়। প্রতিদিন এ ভাবে সাধারণ জনগণের কত হাজার কর্মঘন্টার যে অপচয় হয় তার হিসেব কষতে গেলে নাক ও চোখের পানিতে একাকার হতে হবে।
* বাস ড্রাইভার গুলোর লোভের পরিমান এমন যে, তারা স্থানে অস্থানে বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী নেয় ঠিকই, কিন্তু যাত্রী নামানোর সময় যেন তাদের সময়ের দারুণ ঘাটতি হয়ে পড়ে। তাই তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাস চালু রেখেই যাত্রীকে বাম পা আগে নীচে রাখার পরামর্শ দিয়ে তাকে বাস থেকে নামতে বাধ্য করে। এতে করে যাত্রীরা, বিশেষতঃ মহিলা যাত্রী ও বৃদ্ধ যাত্রীরা বার বার দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়েও ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের কোন মাথাব্যথা নেই।
* বহুদিন পর সিএনজি চালকদেরকে মিটার ব্যবস্থার অধীনে আনা হলেও, মাত্র মাসখানেক এ ব্যবস্থার অধীন থাকার পর এখন অাবার তারা ধীরে ধীরে তাদের পূর্বের অবস্থানে চলে যেতে শুরু করেছে। মানে মিটারে কোথাও যাবার চাইতে যাত্রীর সাথে চুক্তিতে যাত্রী নেয়ার পুরনো কৌশলকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। কেউ কেউ ততদূর না বাড়লেও তারা যাত্রীর থেকে মিটারের উপরে ২০ টাকা বাড়তি দাবী করে তবে তাকে গাড়িতে তুলছে।
* ওয়ান ওয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থা বলতে যে একটা জিনিষ আছে কোন কোন রাস্তায় উভয় দিক থেকে গাড়ি চলাচল (বিশেষতঃ রিক্সা) করতে দেখলে সেই ওয়ান ওয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থার জন্য প্রাণটা হুহু করে উঠে। রিক্সাগুলোর বেপরোয়া গতির ফলে পথচারীকে প্রায়ই রাস্তা পারাপারের সময় দূর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে, কারণ সে তো ধরেই নিয়েছে যে এখানে গাড়ী একমূখী। তাই রাস্তা পেরুনোর সময় সে যেদিক থেকে গাড়ী আসার কথা সেদিকটাকেই প্রাধান্য দেয়। কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে তাকে অন্য দিক থেকে অবৈধভাবে আসা গাড়ি কিংবা রিক্সার ধাক্কা খেতে হয়।
* চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আপনি যদি আপনার গাড়িটা কখন পুুলিশের সিগন্যাল পাবে তা ক্রস করার, সেটার জন্য অপেক্ষা করতে করতে হতাশ হয়ে পড়েন, তাহলে একটু গুলশান -১ চৌরাস্তাটায় একবার এসে পর্যবেক্ষণ করুন। দেখবেন পশ্চিম দিক থেকে (মহাখালীর দিক থেকে) যে গাড়িগুলো আসছে, বা পূর্বে লিংক রোড় হয়ে যে গাড়িগুলো পশ্চিমে যাচ্ছে, সেগুলো সিগন্যালে দাঁড়িয়ে পরবর্তী ক্লিয়ারেনস্ পেতে প্রায় ১০/১২ মিঃ নেয় প্রতিবারে। কিন্তু মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো মাত্র কয়েক মিনিট (২/৩ মিঃ) পরেই আবার এদিকের গাড়িগুলোকে থামিয়ে উত্তর -দক্ষিণের গাড়িগুলোকে যাবার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। এতে করে নূতন কেউ একজন যদি এই ঝামেলার শিকার হয়, তাহলে তার মনে স্বাভাবিকভাবেই এ প্রশ্ন জাগবে যে, North-South গামী গাড়ির প্রতি ট্রাফিক পুলিশের এই বিশেষ প্রীতির আসল রহস্য কি? কিন্তু ভেবে কোন লাভ হবেনা, শুধু ক্লান্তি বাড়ানো ছাড়া। এমনটি আর কোনখানে হচ্ছে কিনা জানিনা, কারণ আমিতো ভূক্তভোগী এই গুলশান-১ চৌরাস্তায়।
*সবশেষে বাসের কন্ডাক্টরদের উদ্দেশ্য করে বলতে চাই, আপনারা আপনাদের অতি লোভী নীচু মন থেকে নিজেদের বাঁচাতে চেষ্টা করুন, এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মানুষকে মানুষ মনে না করে খোঁয়াড়ের গরুর ট্রিটমেন্ট দেয়া থেকে বিরত থাকুন। আপনাদেরও ঘরে মা-বোন আছে, নাকি নেই? সেদিন নির্দিষ্ট স্টপেজে বাস থেকে নামতে গিয়ে কি অসহায় পরিস্থিতিরই না শিকার হয়েছিলাম। যে দোর দিয়ে নামবো সেই দোরগোড়ায় একজন সুপুষ্ট নারী এমনভাবে দোর আগলে দাঁড়িয়েছেন যে, তাঁকে এভয়েড করে বা গা বাঁচিয়ে নামবো সেই পরিস্থিতি নেই। এদিকে কন্ডাক্টর তো আর আমার জন্য বাস দাঁড় করিয়ে রাখতে পারবেনা। অগত্যা সেই মহিলার গা ঘেঁষেই (বিশেষ উর্বর অংগ) আমাকে নামতে হলো। কি বিচ্ছিরি অবস্থা......... আল্লাহ আমাকেও ক্ষমা করুন আর এই অব্যবস্থার সাথে জড়িত সবাইকেও।
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৪ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ট্রাফিক সমস্যা দূর করতে হলে প্রসস্থ রাস্তা ও গণ সচেতনতা জরুরি। আশা করি জনসাধারণ ও কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে।
এসব ট্রাফিক পুলিশেরা যোগ্যতা দিয়ে নয় টাকা ঢেলে পদাসীন হয় । কাজের বেলায় তো লবডন্কা হবেই ।
আপনি অফিস টাইমের পর পল্টনের মোড়ের জ্যাম মনে হয় উপভোগ করেন নি । যেই পথ হেঁটে পার হতে ১৫ মিনিট লাগে জ্যামের কারণে সেটা ৪৫ মি. থেকে ১০৫ মি. পর্যন্ত লেগে যায়।
ভিআইপি মুভমেন্ট ঢাকা শহরের জ্যামের অন্যতম প্রধান কারণ । এদেরকে রাস্তা করে না দিলে গুলি চালায় মাঝে সাঝে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন