বিয়ে প্রসঙ্গ : আর একজনের অনুভূতি-ফেবু থেকে

লিখেছেন লিখেছেন ইবনে হাসেম ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৫:০২:০৩ সকাল

বিয়ে জিনিসটাকে বিভীষিকাময় করে তুলছে - পার্লার, ফটোগ্রাফার আর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের চেংড়া পোলাপানগুলা। প্রি-ওয়েডিং, পোস্ট-ওয়েডিং, মুখের মধ্যে ময়দা পেইন্টিং - হাবিজাবি বলে নিমিষেই দেড় দুই লাখ গায়েব করে দেয়। হলুদে- টিকাটুলির মোড়ের হল, ঢাকার পোলার স্মার্টনেস নিয়ে, ড্রেস ম্যাচিং করে নাচানাচির ভিডিও ফেইসবুকে আপলোড না করলে আজকাল বিয়েই হয় না। বিয়ের সময় আসলেই, শো অফ করার একটা অশুভ কম্পিটিশনে নেমে পড়ে সবাই।

জীবনে একবারইতো বিয়ে করবি, একটাইতো স্মৃতি, এইটাইতো আমার শেষ নাতির বিয়ে, এইসব বলে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে। সামাজিক প্রেসারে পড়ে বাধ্য হয় ধার দেনা করতে, ব্যাংক থেকে লোণ নিতে। পাঁচ ছয় বছর চাকরি করেও অনেকেই বিয়ের খরচ যোগাতে পারেনা।

বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসলে শুরু হয় দর কষাকষি - গোল্ড কতটুকু দিবে, আংটি কিন্তু হীরার হইতে হবে, হাতঘড়ি বিদেশ থেকে আনতে হবে। কোন পার্লারে সাজবে, ফটোগ্রাফির কোন প্যাকেজ, কাবিন কত হবে, লেহেঙ্গা কোন দেশ থেকে আনা হবে, শেরওয়ানীর দাম কত হবে, বিয়ের পোগ্রাম কই হবে, কত শত লোক খাবে?

প্রোগ্রাম যত বড় হবে, সমাজে মাথা তত উঁচু হবে। ওমুকের ছেলের বিয়ে ওই খানে হইছে, আমার ছেলের বিয়ে তার চাইতে বড় হবে। এইটা আমার ছোট মেয়ে, মহা ধুম ধামে বিয়ে দিব। দুই মিনিট সময় নিয়ে একটু ভেবে দেখে না - মিডল ক্লাসের একটা ছেলে চাকরি করে বছরে কয় টাকা জমাইতে পারে। বড় জোর এক লাখ টাকা। আর ফ্যামিলি সাপোর্ট করা লাগলে, ছোট ভাই বোনের পড়ালেখার খরচ দেয়া লাগলে, বছর শেষে ফুটা পয়সাও থাকে না। দুই এক মাসের বাসা ভাড়া বাকি থেকে যায় কারো কারো।

মেয়ের বাপের তিল তিল করে সঞ্চয় করা টাকা, ছেলের সিএনজিতে না উঠে লোকাল বাসে করে অফিস গিয়ে বাঁচিয়ে রাখা পয়সা অযথা নষ্ট করবেন না। পয়সা দিয়া, লাইট ক্যামেরা একশন শুনার মাঝে মাঝে যতটুকু সময় পাওয়া যায় তাকে বিয়ের প্রোগ্রাম বলে না, টিভি সিরিয়ালের শুটিং বলে। এই শুটিং, এই শো-অফ করে ফতুর হবার করাল গ্রাস থেকে মিডল ক্লাস মুক্তি পাক। নব্য দম্পতির জীবনের নতুন অধ্যায়টা ব্যাংক লোণের মাসিক কিস্তি বা ফেইসবুকের প্রোফাইল পিকচারের লাইক সংখ্যার উপর ভর করে নয় বরং একটু আর্থিক সচ্ছলতা নিয়ে শুরু করতে দিন।

সাধ্যের বাইরে খরচ করে, অতিরিক্ত শো অফ করে, জামাই-বউকে বিয়ের পরেরদিন বাটি হাতে রাস্তায় নামায় দিবেন না।

লিখেছেন Shohidul Islam ...>>>

বিষয়: বিবিধ

১৮০৪ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

340801
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ০৫:২০
শেখের পোলা লিখেছেন : খাঁটি কথা৷ এটাই এখন হয়ে চলেছে৷ এর পরিনাম ভাল হওয়ার নয়৷ ধন্যবাদ৷
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০৪:২৮
282768
ইবনে হাসেম লিখেছেন : আপনার অবজার্ভেশন এর সাথে সম্পূর্ণ সহমত।
"মেয়ের বাপের তিল তিল করে সঞ্চয় করা টাকা, ছেলের সিএনজিতে না উঠে লোকাল বাসে করে অফিস গিয়ে বাঁচিয়ে রাখা পয়সা অযথা নষ্ট করবেন না। পয়সা দিয়া, লাইট ক্যামেরা একশন শুনার মাঝে মাঝে যতটুকু সময় পাওয়া যায় তাকে বিয়ের প্রোগ্রাম বলে না, টিভি সিরিয়ালের শুটিং বলে। এই শুটিং, এই শো-অফ করে ফতুর হবার করাল গ্রাস থেকে মিডল ক্লাস মুক্তি পাক। নব্য দম্পতির জীবনের নতুন অধ্যায়টা ব্যাংক লোণের মাসিক কিস্তি বা ফেইসবুকের প্রোফাইল পিকচারের লাইক সংখ্যার উপর ভর করে নয় বরং একটু আর্থিক সচ্ছলতা নিয়ে শুরু করতে দিন।"
340819
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ০৯:২৪
ফরিদুল ইসলাম তুষার লিখেছেন : এইসব না করলে মান সম্মান থাকে না।
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০৪:৩০
282771
ইবনে হাসেম লিখেছেন : যাকে বলে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলিং।
"জীবনে একবারইতো বিয়ে করবি, একটাইতো স্মৃতি, এইটাইতো আমার শেষ নাতির বিয়ে, এইসব বলে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে। সামাজিক প্রেসারে পড়ে বাধ্য হয় ধার দেনা করতে, ব্যাংক থেকে লোণ নিতে। পাঁচ ছয় বছর চাকরি করেও অনেকেই বিয়ের খরচ যোগাতে পারেনা।"
340841
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:০৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এই সমম্ত অপচয় এর জন্য বিয়ে কঠিন হচ্ছে। বেশিরভাগ বাবা-মা ই এখন ছেলের বিয়ের খরচ বহন করাকে মনে করেন নিজের দায়িত্ব নয়।
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০৪:৪৩
282773
ইবনে হাসেম লিখেছেন : ব্ল্যাকমেইলিং এর অনেক ধরণ আছে। যেমন ছেলের পক্ষ শুরুতে বলবে, 'আমাদের যথেষ্ট আছে, মেয়ের পক্ষ থেকে আমাদের কিছু চাইনা, শুধু মেয়েটাকে সাজিয়ে দিলেই হবে'। কিন্তু এনগেজমেন্ট/ফর্দ হয়ে যাবার পর শুরু হয় তাদের চেহারা থেকে পর্দার উম্মোচন। 'সে আমাদের সবার ছোট ভাই, তাই তার বিয়েতে আমরা আমাদের সব আনন্দ করতে চাই। তাছাড়া ব্যবসায়ী মানুষ, অনেক ক্লয়েন্ট, তাই, বরযাত্রায় অন্ততঃ ৮/৯ শত লোক তো মিনিমাম হবেই (দেখা গেল প্রকৃতপক্ষে তা হাজারের উপরে হয়ে যায়); বরের পাতে গোটা ছাগলের রোষ্ট না হলে মান সম্মান একেবারেই থাকেনা, বৌ পড়ালেখা করতে চায়? সমস্যা নাই, প্রয়োজনে তার জন্য আলাদা গাড়ী রাখা হবে, তবে একটা কথা, আজকাল ছেলেকে সাজিয়ে দেয়াটা রেওয়াজ হয়ে গেছে, ছেলের সেরওয়ানী, অন্ততঃ গোল্ডের একটা চেইন ব্লা, ব্লা. ব্লা ইত্যাদি না হলে মান সম্মান থাকেনা... হা.হা. হা. হা. (সাম্প্রতিক এক অভিজ্ঞতা থেকে)।
দেখা যাবে যৌতুক চাইয়া তারা যা না ওসুল করতো, এই প্রক্রিয়ায় তার চাইতে ডাবল তিন ডাবল উসুল করে নিচ্ছে
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:৫০
282900
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : কোন পক্ষেই এই বিষয়ে কম না!!
আমার বিয়েতে বরের টেবিলে আলাদা রোষ্ট দেওয়া যাবেনা বলা তে উনারা বিপুল অপমান বোধ করেছিলেন। ওয়ালিমা তেও স্পেশাল কিছু না দেওয়ায় তারা অপমানে ঘেউ ঘেউ করছিলেন!!
340994
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০১:৫৮
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ।
খুব বাস্তব কিছু কথা উঠে এসে এসেছে! আশাকরি সমাজের মানুষ এই অহেতুক অপসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসবে!

জাযাকাল্লাহু খাইর।
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০৪:৪৫
282774
ইবনে হাসেম লিখেছেন : বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসলে শুরু হয় দর কষাকষি - গোল্ড কতটুকু দিবে, আংটি কিন্তু হীরার হইতে হবে, হাতঘড়ি বিদেশ থেকে আনতে হবে। কোন পার্লারে সাজবে, ফটোগ্রাফির কোন প্যাকেজ, কাবিন কত হবে, লেহেঙ্গা কোন দেশ থেকে আনা হবে, শেরওয়ানীর দাম কত হবে, বিয়ের পোগ্রাম কই হবে, কত শত লোক খাবে?
341029
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ০৯:৪৪
হতভাগা লিখেছেন : বেশী দেন মোহর না ধরলে মেয়ে ও তার ফ্যামিলি আত্মীয় সজন ও প্রতিবেশীদের কাছে মুখ দেখাতে পারবে না
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০৪:৪৬
282775
ইবনে হাসেম লিখেছেন : এইটা আমার ছোট মেয়ে, মহা ধুম ধামে বিয়ে দিব। দুই মিনিট সময় নিয়ে একটু ভেবে দেখে না - মিডল ক্লাসের একটা ছেলে চাকরি করে বছরে কয় টাকা জমাইতে পারে। বড় জোর এক লাখ টাকা। আর ফ্যামিলি সাপোর্ট করা লাগলে, ছোট ভাই বোনের পড়ালেখার খরচ দেয়া লাগলে, বছর শেষে ফুটা পয়সাও থাকে না। দুই এক মাসের বাসা ভাড়া বাকি থেকে যায় কারো কারো।
353964
১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:৫৬
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : এক বোনের মন্তব্য, "ভাইয়া, আমার কাছে মনে হয়, এই ব্লগটা এখন অর্ধ মৃত"। তিনি যথার্থই বলেছেন, আপনাদের সম্মিলিত অনুস্পস্থিতি বিডিটুডের ভবিষ্যৎ নিয়ে পাঠকদের খুব ভাবাচ্ছে। আগের সেই সরগরম অবস্থা এখন আর নেই, এ আসেনা, ও আসেনা, সে আসেনা, তাই আমারও আসতে ভালো লাগে না, অতঃপর নিরুত্তাপ... এমন প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসা উচিৎ।
প্লিজ, কারো দিকে আর তাকিয়ে থাকা নয়, কেউ আসুক অথবা নাই আসুক, আপনি আসছেন, লিখছেন, ভালো কিছু উপহার দেয়ার চেষ্টা করছেন, এটাই নিশ্চিত করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File