হায় ঢাকার যাত্রীসকল!!
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে হাসেম ১৯ আগস্ট, ২০১৫, ১২:২৫:২৫ দুপুর
হায় ঢাকাবাসী!!
ঢাকার গুলিস্তান থেকে উত্তরা কিংবা গাজিপুর যাওয়া যতটুকু না কষ্টদায়ক, তার চাইতে ঢাকা টু ফেনীর জার্নিটা মনে হয় দশগুন বেশী আরামদায়ক। কেম্নে কি, তাহলে বলি শুনুনঃ
* ঢাকা টু ফেনীর টিকেট কিনে বাসের নির্দিষ্ট সিটে আরামে বসে পড়ুন, কিন্তু ঢাকা টু উত্তরার বাসে সীট পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার অন্ততঃ ৫০/৬০ ভাগ যাত্রীর জন্য।
* ঢাকা টু ফেনীর জন্য নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে একবার টিকিট কিনে নিলেই সারা। কিন্তু গুলিস্তান টু উত্তরার যাত্রীদের তার গন্তব্যে পৌঁছা অবধি কতোবার যে কন্ডাকটরের নিকট থেকে ভাড়া দিন, ভাড়া দিন শুনতে হয় তার হিসাব করা কষ্টকর। এটা করতে গিয়ে অনেক সময়ই যাত্রীরা বিরক্ত হয়ে কন্ডাক্টরের সাথে বচসায় লিপ্ত হয়ে পড়ে। কেন যে এরা কোন কোন উন্নত যাত্রীসেবার বাসের মতো টিকেট দেয়ার সিস্টেম সবখানে চালু করেনা তা আমার বোধের অগম্য।
* সীট পাওয়া তো দূরের কথা, এসব বাসে যাত্রীদের আটার বস্তার চাইতে বেশী দাম দেয়না কন্ডাক্টররা। দাঁড়াবার জায়গা না থাকলেও যাত্রী তুলে ঠেলে ঠেলে, ঠেসে ঠেসে ভেতরে ঢুকাবে। ফলে যাত্রী সাধারণ গরমে আর ঘামে দম যায় যায় অবস্থা আর কি।
* আর জ্যাম এর কথা কি বলবো, গুলিস্তান টু উত্তরা যেতে নরম্যালি যদি আধা ঘন্টা লাগে তো জ্যামের কারণে বিশেষতঃ অফিস ডে-তে এ সময় আড়াই ঘন্টা থেকে তিন ঘন্টায় বর্ধিত হতে বাধ্য।
* এখানেই শেষ হলে কথা ছিল। এই সারাটি ক্ষণ কি আর আপনি নিরিবিলি থাকতে পারবেন? যাত্রী আর কন্ডাক্টরের মাঝে ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটি হতে শুরু করে, গালাগালি (মা বাপ তুলে), ধাক্কাধাক্কি এমন কি ঠেলে বাস থেকে নিচে ফেলে দেয়ার হুমকি ধামকির মাঝে আপনার শ্রবণেন্দ্রিয়কে ওদের কাছে বর্গা দিয়ে দিতে হবে, না চাইলেও। অবশ্য যারা মিউজিক লাভার, তারা এর একটা সমাধান বের করেছেন এভাবে যে, সারাক্ষণ তারা কানে হিয়ারিং এইড গুঁজে দিয়ে মোবাইল হতে গান শোনায় ব্যস্ত থাকে। অবশ্য ডাক্তারের মতে এতে কানের বারোটা বাজতে যে সময় নিবে না, এ ব্যাপারটি বোধহয় যাত্রীদের অনেকেই জানেন না।
* গুলিস্তান-উত্তরার বাসে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের সর্বক্ষণ এ ভয়ে থাকতে হয় কখন যে ব্যাটা পকেটমার তার মানিব্যাগটা হাতিয়ে নিয়ে যায়। তাই চোখ কান খোলা রাখার এক্সট্রা কসরত করতে হয় তার, যা কিনা ঢাকা-ফেনীর যাত্রীকে করতে হয়না।
* আরো একটা মানসিক যন্ত্রণার মাঝ দিয়েও গুলিস্তান-উত্তরার যাত্রীকে পার হতে হয় যতক্ষণ সে বাসে থাকে। সেটা হলো, মহিলা যাত্রীকে নিয়ে কন্ডাক্টর আর একশ্রেণীর যাত্রীদের দুর্ব্যবহার, ফাউল মন্তব্য আর তাদেরকে বাসে উঠানামার সময় হেলপারদের অহেতুক হাত ধরে টানাটানি। আবার কখনো কখনো কোন মহিলা যাত্রীর ভড়কে গিয়ে সমগ্র পুরুষকুলের গুষ্টি উদ্ধার করা মানহানিকর মন্তব্য শুনে ও আপনার নিজেকে ছোট মনে হতে পারে।
* মানসিক যন্ত্রণার আরো একটা কারণ এ হতে পারে যে, আপনি গুলিস্তান থেকে বাসে উঠে সীটের অভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। ভাবছেন হয়তঃ মৌচাক গিযে বা রামপুর গিয়ে সীট পেয়েও যেতে পারেন। কিন্তু এদিকে হলো কি নুতন যাত্রীদের গুঁতোগুতিতে আপনাকে আগের স্থান থেকে সরে যেতে হলো আরো ভিতেরের দিকে। অতঃপর নুতন কোন যাত্রী রামপুর হতে বাসে উঠেই আপনার আগের স্থানের কোন সীটে বসা যাত্রীর পরিত্যক্ত সীটে বসে পড়লো, যেহেতু সে তখন ঐ সীটের কাছাকাছি ছিল। এখন আপনার মানসিক অবস্থাটা অন্য কেউ না বুঝুক, আমি অন্ততঃ বুঝবো, কারণ আমি যে ভুক্তভোগী।
* ঢাকার বাসগুলোর আর এক বদঅভ্যাস হলো, তারা বাস স্টপে গিয়ে যাত্রী উঠানো নামানোর ধার ধারেনা। যেখানে সেখানে থেমে যাত্রী নিবে আর নামাবে। আবার বাস স্টপে গিয়ে যে শান্তিমতো থেমে যাত্রীকে নামিয়ে পরে নুতন যাত্রী উঠাবে সেই ব্যবস্থাও কেউ মানতে চায়না। চলন্ত অবস্থায়ই অনেক সময় যাত্রীকে নামিয়ে দেয়, ফলে যে কোন সময় বড় দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
এতসব বিবেচনায় এটা নিঃসন্দেহে বলা চলে যে ঢাকা টু ফেনী/চিটাগাং যাত্রীরা গুলিস্তান টু উত্তরার যাত্রীদের চাইতে বেশী ভাগ্যবান এবং আরামে ভ্রমন করতে পারেন।
বিষয়: বিবিধ
১৫২৭ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
রেখেছি ঢাকার বাইরে চাকরির ব্যবস্থা করতে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন